#তোমাকে_চাই
#পর্বঃ০৫
#মারিয়া_আক্তার
দীপ্ত ভাইয়াদের ছাদ থেকে এসে চোখেমুখে কতক্ষণ পানি ছিটালাম। মাথাটা কেমন যেন ভোঁভোঁ করে ঘুরছে। আজকে একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম। সেই হিসেবে দীপ্ত ভাইয়া আমায় শাস্তি একটু কমই দিলেন।
সকালে দীপ্ত ভাইয়াকে ডেকে আমি দীপ্ত ভাইয়াদের ড্রয়িংরুমে আম্মু আর ফুফুর কাছে এসে বসলাম। আমি অচেনা মানুষের সামনে যেতে একটু লজ্জাই পাই তবে আজকে লজ্জাকে সাইডে রেখে সেখানে এসে বসলাম। কারণ আমি আসল কাহিনীটা জানতে চাইছি।লোকগুলোকে দেখে আমার মনে হলো এরা যেন কোনো সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে। তাহলে কি দীপ্ত ভাইয়ার জন্য? এখানে দু’জন পুরুষ একজন মহিলা এবং একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। শুনে যতদূর বুঝলাম মেয়েটা আর ছেলেটা সম্পর্কে ভাইবোন। আর এখানে তাদের বাবা মা আর এক মামা এসেছে। আর আমি যা ভেবেছি তাই এই মেয়েটার সাথে দীপ্ত ভাইয়ার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়েই ওনারা এসেছেন। এতদিন দেখতাম ছেলের বাড়ির লোকেরা ছেলেসমেত মেয়ের বাড়িতে মেয়ে দেখতে যায়। এখানে দেখি পুরাই উল্টা। মেয়েটা তার ফ্যামিলি নিয়ে দীপ্ত ভাইয়াকে দেখতে এসেছে। ভাবা যায় এগুলা। কথায় কথায় শুনলাম মেয়েটা দীপ্ত ভাইয়াকে ভার্সিটিতে দেখেই পছন্দ করে ফেলে। তারপর দীপ্ত ভাইয়ার বায়োড্যাটা জোগাড় করে আজ এখানে এসেছে। মেয়েটার নাম তমা। আমাদের ভার্সিটিতে মাস্টার্সে পড়ে। দীপ্ত ভাইয়ার ব্যাচের হলেও ওনাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা। মেয়েটা খুব মিষ্টি দেখতে। দীপ্ত ভাইয়াকে পছন্দ না করে আমার অন্যকোনো কাজিনকে যদি পছন্দ করতো তাহলে আমি এই মেয়েকে এখনই ভাবি বানিয়ে ফেলতাম। কিন্তু দীপ্ত ভাইয়ার বউ হিসেবে কেন যেন মানতে পারছি না। তমা আপুর ভাইটার নাম তীর। মেডিকেলে পড়ছেন। ছেলেটাও তমা আপুর মত সুন্দর। চেহারায় কেমন যেন একটা মায়া আছে। ছেলেটা কতক্ষণ পরপর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটায় আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। তাও মুখে সৌজন্যতার হাসি ফুঁটিয়ে ওদের সাথে কথা বলছি। খানিকক্ষণ বাদেই দেখলাম দীপ্ত ভাইয়া ড্রয়িংরুমে এসেছেন। এসেই সর্বপ্রথম আমার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকালেন। তার কারণটা হল আমি তীর নামক ছেলেটার সাথে কথা বলছি। আমি আর কি করবো ছেলেটা সেই কখন থেকে আমার সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। তাই সৌজন্যতার খাতিরে আমিও টুকটাক কথা বলছি।
– ওইতো দীপ্ত চলে এসেছে।
বড়ফুফুর কথায় আমরা সবাই দীপ্ত ভাইয়ার দিকে তাকাই। দীপ্ত ভাইয়াকে দেখেই তমা আপুর মুখটা কেমন লাল হয়ে গেল। মেয়েটা কি লজ্জা পেল নাকি।
– আমাকে কেন ডেকেছো আম্মু?
– আমি তোমায় বলছি দীপ্ত। এইযে ওনারা তোমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। ওর নাম(তমা আপুকে উদ্দেশ্য করে) তমা। ও তোমায় তোমাদের ভার্সিটিতে দেখে পছন্দ করেছে।তোমায় বিয়ে করতে চায় ও। সেজন্য ওর বাবামাকে সঙ্গে করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। এবার তুমি কথা বলো ওনাদের সঙ্গে।
আম্মুর কথার বিপরীতে দীপ্ত ভাইয়া কিছু বললেন না। একনজর আমার দিকে তাকালেন। তারপর সোফায় গিয়ে বেশ ভদ্রতার সহিত বসেন। হাসিমুখে সবার সাথে কুশল বিনিময়ও করলেন। খানিকক্ষণ বাদে গলা খাঁকারি দিয়ে তমা আপুর মামা আর বাবার উদ্দেশ্যে বলেন,
– আপনারা যদি কিছু না মনে করেন তাহলে আমি ওনার সঙ্গে একা কিছু কথা বলতে চাই।
দীপ্ত ভাইয়া কথাটা বলা মাত্রই তমা আপু তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালেন। দীপ্ত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– ইয়াহ!সিউর। চলুন তাহলে।
আমিতো পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। দীপ্ত ভাইয়া তমা আপুর বাবা আর মামার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তমা আপু তাদের কথা শোনার আগে নিজেই উঠে দাঁড়ালেন। কি ফাস্ট মেয়েরে বাবা।
– আচ্ছা বাবা। ওকে নিয়ে তুমি বরং ছাদে চলে যাও। সেখানেই নাহয় নিজেদের মধ্যে কথা সেরে নাও।
তমা আপুর বাবার কথার পিঠে দীপ্ত ভাইয়া কিছু বললেন না। তিনি সিঁড়ির দিকে চলে গেলেন। ওনার পিছুপিছু তমা আপুও ছুঁটলেন। পিছনে ফিরে একবার আমাকে চোখ মেরে চলে গেলেন। আমি ভ্যাবলার মত ওনাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওনারা কি কথা বলছেন তা শোনার জন্য মনের মধ্যে আকুপাকু করছে। তাই তীর নামক ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
– এই যে শুনছেন?
তীর অবাক হয়ে বললেন,
– আপনি আমাকে বলছেন?
– জ্বী আমি আপনাকেই বলছি। শুনুন না চলুন আমরাও ছাদ থেকে ঘুরে আসি।
মূহুর্তেই ওনার মুখটা প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। খানিকবাদে মুখটাকে পাংশুটে করে বলল,
– না ছাদেতো যাওয়া যাবে না। সেখানেতো আপু আর দীপ্ত ভাইয়া আছে। চলুন আমরা অন্য কোথাও ঘুরে আসি।
ইহ। অন্য কোথাও ঘুরতে যাবো তেনার সাথে। আমিতো ঘুরতে ফুরতে চাইছিনা। আসলে দীপ্ত ভাইয়া আর তমা আপু কি কথা বলছে সেটাই দেখবো। একা একা গেলে যদি সবাই উল্টাপাল্টা ভাবে তাইতো এই তীর ফীরকে নিতে চাইছি। এর ইনি কিনা অন্য কোথাও ঘুরার কথা বলছে। এসব কিছুই আর তীরকে বললাম না।
– না। আমি ছাদেই যেতে চাইছিলাম।অন্য কোথাও এখন যাবো না। থাক যাওয়া লাগবেনা।
তীর কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো। তারপর উৎপল্লতার সাথে বললো,
– চলুন ছাদেই যাই। ওরা ছাদের যে পাশে থাকবে আমরা না হয় তার উল্টোপাশে থাকলাম। কি বলুন।
এইতো ব্যাটা এতক্ষণে লাইনে আসছোত।
– হুম। হুম। চলুন।
____________________________
আমি আর তীর অনেক্ষণ ধরে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। আমি হাত দিয়ে ছাদের ফুলগাছগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি। পাশেই তীর এটাসেটা বলছে কিন্তু আমার তাতে বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই। আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ আমাদের অপোজিটে দাঁড়ানো দীপ্ত ভাইয়া আর তমা আপুর উপরে। তারা আসলে কি বলছে সেটা জন্য মনটা কেমন আকুপাকু করছে। কিন্তু এখান থেকেতো কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। হঠাৎ দেখি তমা আপু আমাদের কাছে আসছেন। তা দেখে আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তীরের সাথে কথা বলা শুরু করলাম যাতে তমা আপু বুঝতে না পারে আমার এখানে আসার আসল উদ্দেশ্যটা।
– বাসায় চল তীর।
তমা আপুর কথায় আমি আর তীর চমকে তার দিকে তাকাই। তমা আপুর নাকটা লাল হয়ে রয়েছে। ওনার চোখও পানিতে টলমল করছে তাহলে উনি কান্না করছেন। তীর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তমা আপু দপাদপ পা ফেলে ছাদ ত্যাগ করলেন। এদিকে আমি আর তীর আহাম্মকের মত একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি।আমরা বুঝতে পারছিনা ওনার হঠাৎ কি হলো। এতক্ষণ কেমন এক্সাইটেড ছিলেন দীপ্ত ভাইয়ার সাথে কথা বলবেন বলে। তাহলে কি ওনাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে? দীপ্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমি এগিয়ে দীপ্ত ভাইয়ার কাছে যেতে নিলে তীর তার দিয়ে আমায় আটকে দেন। তা দেখে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেল কারণ সামনে যে আমার যম দাঁড়িয়ে আছে। আজকে না জানি আমার কি অবস্থা হয়।
– আরে কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম? আপুর হঠাৎ কি হলো কে জানে। আমি দেখছি। আপনি দাঁড়ান না আপনার সাথে কিছু ছিল আমার। একটু সময় দিবেন আমাকে প্লিজ।
– ভাই প্লিজ তোর যা বলার তা আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বল। ছাড়না হাতটা। আজকে আমার হাতটার সাথে যা হবে তার জন্য তুই দায়ী থাকবি।
আফসোস! ভদ্রতার জন্য তীরকে কিছু বলতে পারলাম না। মনে মনেই বললাম।হাতটা ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দিলাম। তা দেখে তীর মৃদু হেসে আমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো।আবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই দীপ্ত ভাইয়া আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তারপর ওনার হাতটা এগিয়ে নিয়ে তীরের হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে দিলেন। বেশ নম্রভাবে কিন্তু তাও তার কন্ঠে রাগ ফুটিয়ে তীরের উদ্দেশ্যে বললেন,
– তোমার বোন তোমায় যেতে বলেছে। শুনতে পেয়েছিলে নিশ্চয়ই। যাও। আর যখন তখন যার তার পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়ার চেষ্টা করো না। আমি আবার খুব একটা ভালো মানুষ নই ভাই। নিজের জিনিসে অন্য কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করতে পারি না।
তীর প্রথমে খানিকটা অবাক হয়ে দীপ্ত ভাইয়ার দিকে তাকালেন। পরে হঠাৎ করে ভ্রুঁ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলেন। বিষয়টা আমার খুব অদ্ভুত লাগলো দীপ্ত ভাইয়া একবার বলাতে ও চলে গেল কেন? কোনোরূপ দ্বিরুক্তি করলো না কেন? আর দীপ্ত ভাইয়া কি বললেন মাত্র ওনার জিনিস। কি ওনার জিনিস? উনি আমাকে বুঝাতে চাইছিলেন নাকি। কিন্তু তা কেন হবে? আমাকে উনি ওনার পার্সোনাল জিনিস ভাবতে যাবেন কেনো?
– ছাদের মাঝখানে গিয়ে কান ধরে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকবি। আর হ্যাঁ বাম পা তুলে দাঁড়াবি। গো ফাস্ট।
কথাটা বলতে বলতে দীপ্ত ভাইয়া ছাদের একপাশে গাছের ছায়ার নিচে একটা চেয়ারের উপর বসে পড়লেন। পায়ের উপর পা তুলে বসে মোবাইলটা স্ক্রল করতে লাগলেন। আমি জানতাম আমার কপালে আজকে দুঃখ ছিল। কেন যে ছাদে আসতে গেলাম? যেটার জন্য আসলাম সেটারতো কিছুই হলো না। উল্টে শাস্তি ভোগ করো। এই রোদের মধ্যে ছাদের মাঝখানে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার অবস্থা আজ বেগতিক হয়ে যাবে। কিন্তু কি আর করার কানতো আমায় ধরতেই হবে। এখন কান ধরে দাঁড়িয়ে তীরের গোষ্ঠী উদ্ধার করছি আমি।
– ভাইয়া দেখেন আজকে কিন্তু আমি কোনো অন্যায় করিনি। তীর নামের ওই ছেলেটাইতো আমার হাত ধরলো আমি কি ওকে বলছি নাকি আমার হাত ধরতে। ও হাত ধরেছে তাতে আমার দোষ কি বলো?
দীপ্ত ভাইয়া ফোন থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকান।
– তোর মুখ কোথায় ছিল? ছেলেটা তোর হাত ধরেছে তুই কিছু বলতে পারিসনি। আর তাছাড়া অচেনা একটা ছেলের সাথে তোর এত কথা কিসের?
– অচেনা কোথায়? তমা আপু যদি তোমার বউ হয় তাহলেতো তীর আমার বেয়াই হবে। তার সাথে কথা বলতে দোষ কোথায়?আপন..।
দীপ্ত ভাইয়া আমার দিকে ফিরে এমন চাহনী দিলেন তা দেখে আমার বাকি কথা মুখেই রয়ে গেল। দীপ্ত ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। বড়বড় পা ফেলে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।
– কি বললি তুই? আমার বউ হবে। ওই কি যেন নাম মেয়েটার?
– তমা।
– ওহ হ্যাঁ তমা। তা তুই বলতো তোর এটা কেন মনে হলো আমি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করবো?
– মনে না হওয়ার কি আছে শুনি। মেয়েটার কোনোদিক থেকে কোনোকিছুর কমতি আছে নাকি। আপনার জন্য পার্ফেক্ট।একদম মেইড ফর ইচ আদার।
– ঠাঁটিয়ে দিবো এক চড়। মেইড ফর ইচ আদার! ( আমাকে ভেঙ্গিয়ে বললেন এটা) এই তুই কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবি পাক্কা একঘন্টা। টু শব্দ করলে শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেবো।
– না ভাইয়া প্লিজ একঘন্টা দাঁড়াতে পারবো না। দশ মিনিটই দাঁড়াই?
খানিকটা গলা খাঁকারি দিয়ে আবারো বললাম,
– ভাইয়া! আচ্ছা আমি শুধু একটা প্রশ্ন করবো। করি।
একটু ঢং করে টেনে কথাটা বললাম। দীপ্ত ভাইয়া আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকান। তারপর নিজের চুলগুলো একহাতে টেনে ধরে বলেন,
– খুব চালাক হয়ে গেছিস না। আমার দুর্বলতাও খুঁজে পেয়েগেছিস। আচ্ছা বল কি বলবি। এটাই কিন্তু লাস্ট।
– আচ্ছা। বলছিলাম কি তখন তমা আপু এরকম দেখাচ্ছিল কেন?আপনি ওনাকে কি বলেছিলেন।
– যা তার প্রাপ্য ছিল তাই বলেছি। শেষ? নো মোর কোয়েশ্চন।
– আরে প্রশ্নেরতো উত্তরই ঠিকভাবে পেলা..।
দীপ্ত ভাইয়ার চোখ রাঙ্গানো দেখে আমার কথা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেল।
#তোমাকে_চাই
🖤বোনাস পর্ব🖤
#মারিয়া_আক্তার
আধাঘণ্টা ধরে রুমের মধ্যে পায়চারি করছি। কিছুতেই শান্ত হতে পারছি না। দীপ্ত ভাইয়া তমা আপুকে ঠিক কি বলেছেন সেটা এখনো অব্দি জানতে পারলাম না। আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম আম্মুও কিছু বললো না। ভাল্লাগে না।
কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর মাথায় আসলো আমি বড়ফুফুর কাছে গেলেইতো সব জানতে পারবো। যেই ভাবা সেই কাজ। এক দৌঁড়ে ছুটলাম বড়ফুফুর বাসায়। ফুফুদের সদর দরজাটা খোলা। তাই ড্রয়িংরুমের মধ্য দিয়ে দৌঁড় দিলাম। আমার ঠাডামার্কা কপাল ড্রয়িংরুমের মাঝখানে কেউ মনে হয় পানি ফেলেছে তাতেই আমি পা পিছলে চিৎপটাং। আমি সর্বশক্তি দিয়ে এক চিৎকার করে উঠি। আমার চিৎকারে দীপ্ত ভাইয়া আর বড়ফুফু রুম থেকে দৌঁড়ে আসেন। আমাকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে দু’জনেই অবাক হয়ে যান। তারা তাড়াহুড়া করে আমাকে ধরে উঠান। তারপর আমায় সিঙ্গেল সোফায় নিয়ে বসান। বড়ফুফু উদ্ধিগ্ন হয়ে বলেন,
– কিভাবে পড়লি তুই ফ্লোরে? বেশি ব্যাথা পেয়েছিস মা?
পা টা আমি নাড়াতেই পারছি না।তাও কোনোরকমে বলি আমার ডান পায়ে ব্যাথা করছে। আমার কথার মাঝেই হুট করে দীপ্ত ভাইয়া এসে আমার ডান পায়ে জোরে একটা মোচড় দিলেন। এবার আমি দ্বিগুন জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। খুব ব্যাথা পেয়েছি এতে। ছলছল চোখে দীপ্ত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনি আমায় এভাবে ব্যাথা দিলেন কেন? অভিমানে দু’চোখ ফেঁটে জল আসছে। এবার ডানপা নাড়িয়ে দেখি ওমা ডান পায়ে আর তেমন একটা ব্যাথা নেই। কিছুটা ব্যাথা থাকলেও আগের মত সেই ব্যাথাটা আর নেই। এজন্যই তাহলে দীপ্ত ভাইয়া আমায় পায়ে এভাবে মোচড় দিলেন।
– আম্মু এখানে দেখেতো কি আছে কিসের সাথে পিছলে মৌ ফ্লোরে পড়েছে?
দীপ্ত ভাইয়ার প্রশ্নে ফুফু সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে ফ্লোর চেক করতে যান।
– দীপ্ত এখানেতো পানি পড়ে আছে। এখানে পানি ফেলেছে কে?
দীপ্ত ভাইয়া কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে ভাবলেন। তারপর এদিক সেদিক তাকিয়ে বলেন,
– কিভাবে পড়লো সেটাতো বলতে পারছি না। তবে এটুকু মনে হচ্ছে কাজটা রিক্তর। দাঁড়াও আমি রিক্তর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি।
দীপ্ত ভাইয়া খানিকটা এগিয়ে আবার পিছনে ফিরে ফুফুর দিকে তাকিয়ে বলেন,
– ওর পায়ে খানিকটা ব্যাথা এখনো রয়ে গেছে। পায়ে একটু মলম লাগিয়ে ম্যাসাজ করে দিও।
দীপ্ত ভাইয়া চলে গেলেন। ফুফু একবার ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। তারপর আমার কাছে এসে পায়ে মলম লাগিয়ে ম্যাসাজ করে দিলেন। এখন ব্যাথাটা মনে হয় আরো একটু কমলো। এই সুযোগে আমি ভাবলাম ফুফুকে দীপ্ত ভাইয়া আর তমা আপুর ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করবো। আমি মুখটাকে কাছুমাছু করে ফুফুর উদ্দেশ্যে বললাম,
– ফুফু! তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল। করবো?
– কর। ফুফকে কিছু বলতে গেলে অনুমতি নিতে হবে বুঝি?
– আসলে ফুফু। বলছিলাম কি তখন দীপ্ত ভাইয়া তমা আপুকে কি বলেছিলেন?কেন তমা আপু কান্না করে চলে গেছিলেন। তমা আপু তখন যাওয়ার আগে কি বলে গিয়েছিল?
অনেক কষ্টে আমতাআমতা করে কথাটুকু বললাম। ফুফু মৃদু হেসে বলেন,
– শুনবি?
ওমা কি কথা! যেটা শোনার জন্য এতকিছু করলাম, আমার পা’টা মচকালো সেটা নাকি শুনতে চাইবো না।
– হুম শুনবো।
– তখন তমা নিচে এসে ওর বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলেছিল সে নাকি এখনি বাড়ি যাবে। ওনাদের যদি যাওয়ার থাকে তাহলে এখনই আসে। ওর বাবা-মা জিজ্ঞেস করছিলেন কেন এখন বাড়ি যাবে। আর দীপ্তর সাথে কি কথা হয়েছিল। বিয়ের ব্যাপারে ওদের কথাবার্তা কতদূর এগুলো। ও তখন রেগে গিয়ে বলে কোনো বিয়ে হবে না। ওই দীপ্তকে আমি বিয়ে করবো না। ও আমায় বলে আমার কি যোগ্যতা আছে ওকে বিয়ে করার। দীপ্ত পেয়েছেটা কি হ্যাঁ? এই তমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। বাড়িবয়ে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছি বলে ওর দাম বেড়ে গিয়েছে। ও এই তমাকে চেনে না আমি এক ছুটকি মারলে শ’শ ছেলে আমার পিছনে লাইন লাগিয়ে দিবে।
– আচ্ছা ফুফু দীপ্ত ভাইয়া ওনার যোগ্যতা নিয়ে বললো কেন? তমা আপুরতো দীপ্ত ভাইয়ার বউ হওয়ার সব যোগ্যতা আছে। তাহলে?
– আসলে দীপ্ত প্রথমে ওকে সরাসরি বলেছিল বিয়ে করতে পারবে না কিন্তু ওই নাছোড়বান্দা মেয়ে ওকে ছাড়ছিলোই না। তমা বারবার বলছিল ও বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে সাথে সুন্দরী সেখানে তাকে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়? দীপ্ত তখন বলেছিল আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না একবারইতো বলে দিলাম। তাহলে এত কথা কেন বলা হচ্ছে। আপনি বড়লোক বাবার মেয়ে হলেও আমার স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আপনি এখনো অর্জন করেননি। তখনই তমা নামের মেয়েটা রেগে গেল।
– ও এই ব্যাপার। তবে দীপ্ত ভাইয়া এটা কেন বললো যে ওনার যোগ্য নয় তমা আপু?
– আমার ছেলের মন পড়ে রয়েছে অন্য কোথাও। তমা নামের মেয়েটাকে কি করে ভালো লাগবে ওর।
ফুফু মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন রুমে। আর আমি ভ্যাবলাকান্তের মত সোফায় বসে রইলাম। দীপ্ত ভাইয়ার মন অন্যকোথায় পড়ে রয়েছে মানে অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসেন। আচ্ছা কোনোভাবে আমাকে নয়তো? ছি ছি কি ভাবছি। মৌ তুই দিনদিন খুব নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস।
চলবে…