তোমাকে শুধু তোমাকে চাই
নবম পর্ব
গাড়িতে উঠে অনিমার মেজাজ আরো খারাপ হল I মুনির পিছনের দিকের গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছে ওঠার জন্য I এসব আলগা আদিখ্যেতা অসহ্য লাগছে I পেছনের সিটে অনিমার একপাশে নাজমা বসেছে I অন্যপাশে আরেকজন কাজিন ,তাকে অনিমা চেনেনা I ড্রাইভিং সিটের পাশে রাবেয়া আপার ছেলে শুভ্র বসেছে I গাড়ি বড় রাস্তায় ওঠার কিছুক্ষণ পর শুভ্র বলল
– ভাই সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালান I শুধু পেছনে তাকালে তো এক্সিডেন্ট হবে
মুনির হাসতে হাসতে বলল
– জীবনে ভালো ড্রাইভাররা শুধু সামনে তাকায় না I আগে পেছনে তাকায় তারপর সামনে এগিয়ে যায় I
– ব্রো ,আপনার সাথে কথায় পারবো না
– আমার সঙ্গে কথায় শুধু একজনই পারত I
অনিমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে I ইচ্ছা করছে গাড়ি থেকে নেমে যেতে I কিংবা বলতে ওকে বাড়িতে নামিয়ে দিতে I এখন আর সেটা সম্ভব না I কারণ গাড়ি উল্টো দিকের রাস্তায় যাচ্ছে I অনিমা চোখমুখ শক্ত করে কোনোমতে বসে রইল I
বাড়িতে ঢোকার পর নাজমা ওকে নিয়ে দোতলার একটা ঘরে গেল I দোতলা তিনতলা মিলিয়ে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট I একতলাটা ভাড়া I তখনো সবাই এসে পৌঁছায়নি I নাজমার মাথা ব্যথা করছিল বলে ও আগেই চলে এসেছে I নাজমা অনিমাকে একটা বাসন্তী হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ি দিয়ে বলল
– আপু তুমি তো ড্রেস নিয়ে আসোনি I চেঞ্জ করে এটা পড়ে নাও I
– এটা কার শাড়ি ?
– গায়ে হলুদে সবাইকে দেওয়ার জন্য কেনা হয়েছিল Iঅনেক শাড়ি আছে এখনো I
অনিমা চেঞ্জ করে নিল I শাড়ির এটাই সুবিধা I সাইজের কোন বালাই নেই I সবাই পড়তে পারে I নাজমা নিজেও চেঞ্জ করে নিল I কিন্তু শাড়ি পরল না I আটপৌরে সালোয়ার-কামিজ পড়ে আলমারিতে কি যেন খুঁজতে লাগল I
– তুমি কি খুঁজছো ?
– মাথা ব্যথার ওষুধ
– আমার কাছে আছে I এই নাও I
অনিমা হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে দিল I নাজমা কাছে এসে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– আপু তুমি ঠিক আগের মতই আছো I
– আচ্ছা হয়েছে Iএখন ওষুধ খাও I
– আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর করে মেহেদী পড়িয়ে দেবো I একদম আগের বারের মত করবোনা
অনিমা হেসে ফেললো I তারপর অবাক হয়ে বলল
– বাসায় আর কেউ নেই ?
– সবাই আসছে I ভাইয়া আনতে গিয়েছে I
অনিমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল I
-চা খাবে অনিমা আপু ?
– তুমি খাবে ?
– হ্যাঁ I চা-টা খেলে মাথা ব্যথা কমবে
– আমি বানিয়ে দেই ? কোথায় কি আছে আমাকে দেখিয়ে দাও
– তুমি বানাবে ? আচ্ছা বানাও
মুনির বাড়িতে ঢুকে দেখল অনিমা রান্নাঘরে কিছু করছে I ও আস্তে আস্তে গিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়াল I হলুদ শাড়িতে কি মিষ্টি লাগছে ওকে I কেমন বউ বউ লাগছে I খোপার মধ্যে একটা সোনালি কাটা , ছোট্ট একটা ঝুমঝুমি দেয়া I মৃদু ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে নড়াচড়ায় I মুনির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল I ওর নিরব উপস্থিতি অনিমা টের পেল না I মুনির আস্তে আস্তে বলল
– চা বানানো হচ্ছে মন হয়
অনিমা চমকে তাকালো I জবাব দিল না I
– আমি কি এক কাপ পেতে পারি ? সন্ধ্যা থেকে ড্রাইভার এর ডিউটি দিতে দিতে মাথা ধরে গেছে I
অনিমা চায়ের কাপ মুনিরের হাতে দিল I নিজের আর নাজমার কাপ নিয়ে ঘরে চলে গেল I একটা কথা ও বলল না I নাজমা চা পেয়ে খুশি খুশি গলায় বলল
– চলো আপু ছাদে গিয়ে চা খাই
ছাদটা বেশ বড় I দেখে বোঝা যায় বেশ যত্ন করা হয় I অনেক ফুলের গাছ I বাড়িটা একটু ভেতরের দিকে বলে রাস্তার কোলাহল তেমন শোনা যায় না I রাত অনেক হয়েছে I চারিদিক সুনসান I মেঝেতে বড় একটা মাদুর পাতা I ওরা দুজন আরাম করে বসলো I চা শেষ হতে হতে বাকিরাও চলে এলো I রাবেয়া আপা অনিমাকে দেখে বললেন
– বাহ ! তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে I আমি তোমার জন্যই এই হলুদ শাড়িটা তুলে রেখেছিলাম I তুমিতো হলুদে আসতে পারোনি I কাল দেবো ভাবছিলাম I ভালো হয়েছে নাজমা দিয়ে দিয়েছে I অনিমা একটু হাসল I কিছু বলল না I নাজমা ততক্ষনে অনিমার একটা হাত নিয়ে তাতে মেহেদী পড়ানো শুরু করেছে I নাজমার অনেক উন্নতি হয়েছে I চমৎকার ডিজাইন করছে I অনিমার এখন আর অস্বস্তি হচ্ছে না I চারপাশে প্রচুর লোকজন I রাবেয়া আপা আরেক প্রস্থ চা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন I হাসাহাসি ,গল্পগুজব হচ্ছে I কয়েকজন গান শুরু করেছে I রাবেয়া আপার ছোট মেয়ে গান ধরেছে I ভারী মিষ্টি গলা I
সখী, বহে গেল বেলা,
শুধু হাসিখেলা
এ কি আর ভালো লাগে।
সখী, বহে গেল বেলা,
আকুল তিয়াষ, প্রেমের পিয়াস,
প্রাণে কেন নাহি জাগে॥
সখী, বহে গেল বেলা।
কবে আর হবে থাকিতে জীবন আঁখিতে আঁখিতে মদির মিলন।
কবে আর হবে থাকিতে জীবন আঁখিতে আঁখিতে মদির মিলন।
মধুর হুতাশে মধুর দহন নিতি-নব অনুরাগে॥
সখী, বহে গেল বেলা,
শুধু হাসিখেলা
এ কি আর ভালো লাগে।
এই গানটা অনিমা গেয়েছিল শেষের দিন I যার জন্য গেয়েছিল সে সেদিন শুনেও শোনেনি I অনিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল I পাশে তাকিয়ে দেখল মুনির রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে I বারবার কপালের মাঝখান ,এক হাতে চেপে ধরেছে I এইমাত্র না চা খেল ? এখন আবার কফি খাচ্ছে I মাথা ধরেছে নিশ্চয়ই I একটা ওষুধ খেলেই পারে I শুধু শুধু ব্যথা নিয়ে বসে আছে I অনিমার ব্যাগে ওষুধ আছে I নাজমাকে বললে দিয়ে আসবে I কিন্তু বলতে ইচ্ছা করছে না I একটু পরে মুনির নিজে এসেই বলল
– নাজমা তোর কাছে কি মাথা ব্যথার ওষুধ আছে ?
– আমার কাছে নেই I অনিমা আপুর কাছে আছে
অনিমা ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে দিল I মুনির ওষুধটা নিল I তারপর অনিমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল
– এটা কি এঁকেছিস ? গন্ডার আঁকতে পারলি না ?
– না I ওটা তোর হাতে আঁকবো I তুই চা শেষ করে আয় I
অনিমা খিল খিল করে হেসে উঠল I অনেকদিন পরে এভাবে হাসলো I
মুনির কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল I আর কিছু বললোনা I মেয়েটা একটার পর একটা গান গেয়ে যাচ্ছে I অনিমা মগ্ন হয়ে শুনতে শুনতে হঠাৎ খেয়াল করলো নাজমা ও দুই হাতেই এপাশ-ওপাশ মেহেদী পরিয়ে দিয়েছে I অনিমা তাকিয়ে বলল
– এটা কি করলে ? একটা পাশ ফ্রী রাখা উচিত ছিল
– কিছু হবে না আপু I শুকিয়ে যাবে
অনিমার খোপার কাটা খুলে গেছে I চুল এলোমেলো হয়ে মুখের কাছে চলে আসছে I ঠিক করতে পারছে না I অনেকক্ষণ থেকে পিপাসা পেয়েছে I পানি খাবে , এখন সেটাও সম্ভব I রাবেয়া আপা বললেন
– অনেক রাত হয়ে গেছেI সবাই ঘুমাতে চলে যাও I নাজমা তুই আমার সঙ্গে কাপগুলো নিয়ে চল
একে একে সবাই নেমে যেতে লাগলো I অনিমার পায়ে ঝি ঝি ধরে গেছে I এইভাবে শাড়ি সামলে দুই হাতে মেহেদি নিয়ে উঠে দাঁড়াতেও পারছেনা I নাজমা আর একটু থাকলে ভালো হতো I
– তোমার কোন হেল্প লাগবে ?
অনিমা চমকে পিছন ফিরে তাকালো I মুনির এখনো যায়নি তাহলে I বিরক্ত কন্ঠে বলল
– না
– পানি খাবে ?
অনিমা ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইল I কোন জবাব দিল না
– অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি তুমি পানির জগের দিয়ে তাকিয়ে আছো I দাঁড়াও আমি দিচ্ছি
মুনির গ্লাসে পানি ঢেলে ওর মুখের কাছে ধরলো I এভাবে কেউ পানির গ্লাস মুখের কাছে ধরে রাখলে না করা যায় না I অনিমা পানিটা খেলো I তারপর কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালো I মুনির হঠাৎ বলল
– একটু এদিকে আসবে ? তোমার সঙ্গে কথা ছিল
অনিমা অনিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে গেল I রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ,অন্য দিকে মুখ করে বলল
– কি বলবে বলো
– তুমি আমার মেসেজের জবাব দাও নি কেন অনিমা ?
– কোন মেসেজ ?
– তুমি যাওয়ার পরে আমি তোমাকে কতবার ফোন করেছি , মেসেজ করেছি
– আমার ফোন হারিয়ে গিয়েছিল
– ফোন হারিয়ে গেলে যোগাযোগ করা যায় না ?
– তখন আমার ওই অবস্থা ছিল না I আর যাইহোক, এতদিন পর এইসব কথার মানে কি ?
– মানে নেই ?
– না নেই I কোন কিছুই আর আগের মত নেই
মুনির হঠাৎ অন্যরকম গলায় বলল
– তুমি ঠিকই বলেছ, কোন কিছুই আর আগের মত নেই I আমি নিজেই আগের মতন নেই I আমার সবটা ওলট-পালট হয়ে গেছে I
অনিমা প্রাণপণ চেষ্টা করছে যেন চোখে জলটা না আসে Iমুনির আবারো বললো
– তুমি আর আমাকে ভালোবাসো না অনিমা ?
– আমি নিচে যাব
– আমার প্রশ্নের জবাব দিয়ে তারপর যাও
– এসব কথার এখন আর কোন মানে নেই
– এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না
– কেন বিরক্ত করছো? কি চাও তুমি ?
– তোমাকে
– কি বললে ?
– শুধু তোমাকে চাই
অনিমা চুপ করে গেল I তারপর কাটা কাটা গলায় বলল
– এটাই তো লিখেছিলে সেদিন তাই না ? ওই চিঠিটার মধ্যে I কিন্তু ওটাতো আমার জন্য ছিল না I
– তাহলে শুধু তোমার জন্য কিছু বলি ?যেটা এর আগে কোনদিন কাউকে বলিনি I বলবো ?
অনিমা জবাব দিল না I অন্য দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল I মুনির এগিয়ে এসে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো I কপালের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলল
প্রাণে জ্বলে ওঠে গগনচুম্বী
বাসনা ঢেউ
তোমাকে পাবে না পরান ভরিয়া
আমি ছাড়া কেউ
অনিমা হতভম্ব হয়ে গেল I এই ছেলের সমস্যা কি ?
চলবে……….
আগামী পর্ব বুধবারে আসবে ইনশাআল্লাহ I অনেকেই বলেছেন পর্ব খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে I তাদের জন্য বলব আমার পেইজে ফলো দিয়ে রাখতে I অনেকেই আছে যাদেরকে আমি ইনভিটেশন পাঠিয়েছি I ফলো দিয়ে রাখলে নোটিফিকেশন চলে যাবে Iতোমাকে শুধু তোমাকে চাই
দশম পর্ব
মুনির ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে I ওর সেই দৃষ্টির সামনে কেমন কুঁকড়ে গেলো অনিমা I ওর রাগ, অভিমান ,কষ্ট ,হতাশা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল বিস্ময় I মুনির এসব কি বলছে ? মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না I দূরে কোথাও একটা মিষ্টি সুর বাজছে I খুব চেনা I কিন্তু মনে পড়ছে না I হঠাৎই চমক ভাঙলো ওর I খেয়াল হলো এটা মিষ্টি সুর, নয় ওর ফোনের রিংটোন I অনিমা চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল
– সরো, আমার ফোন বাজছে
মুনির ফোনটা রিসিভ করে ওর কানে ধরলো I ওপাশ থেকে কথা শুরু হতেই অনিমা ফোনটা হাতে নিয়ে সরে গেল I তখনও ওর হাতের মেহেদি শুকায়নি I মুনির লক্ষ্য করলো , অনিমা ফোনটা কাঁধে চেপে ধরে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে যাচ্ছে I মুনির ডাকলো কয়েকবার কিন্তু খেয়াল করলো না I
নিচের তলায় সবাই তখন ঘুমানোর আয়োজন করতে I অনিমাকে দেখে রাবেয়া আপা বললেন
– অনিমা তুমি নাজমার সাথে ঘুমিয়ে পড়ো
– ম্যাডাম আমাকে বাসায় যেতে হবে I বাবার শরীর হঠাৎ খারাপ করেছে I
– ও আচ্ছা I তাহলে তো যেতেই হবে I তোমাকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
– সমস্যা নেই ম্যাডাম I আমি একটা উবার নিয়ে চলে যাব I
পেছন থেকে মুনির বলল
– এত রাতে উবার নিয়ে যাবার দরকার নেই I আমি নামিয়ে দিচ্ছি
রাত প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে I অনিমা তাই আর আপত্তি করলো না Iগাড়িতে উঠে মুনির একবার ও বাসার ঠিকানা জানতে চাইলো না I অনিমা একটু অবাক হলো I যদিও তখন এসব ভাবার মতন অবস্থা নেই ওর I অনেক দিন হল বাবার তো কখনো এরকম হয়না I পুরো পথ কোন কথা বলল না ও Iমুনির ও আর কিছু জিজ্ঞেস করল না I
বাড়ি থেকে একটু দূরেই ওকে নামিয়ে দিতে বললো অনিমা Iমুনিরকে ওর বাড়ির দৈন্যদশা দেখাতে ইচ্ছে করছিল না I গত পাঁচ বছরে বাড়ি বদল করেনি ওরা I আজকাল এত কম ভাড়ায় বাড়ি পাওয়া যায় না I অনেকদিন ধরেই ভাবছিল চাকরিটা পার্মানেন্ট হলে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেবে I লিফট জেনারেটর থাকলে বাবার হুইল চেয়ার নিয়ে ঢুকতে সুবিধা হবে I তাছাড়া নতুন বাড়িতে গেলে আরো অনেক কিছু কিনতে হবে I তাই বাড়ি না বদলে একটু একটু করে টাকা জমা করছিল I গলির মাথায় থামতে বলায় মুনির একটু অবাক হয়ে বলল
– এখানে কেন ? গেটে নামাচ্ছি
– না তোমার গাড়ি ঘোরাতে সমস্যা হবে
– সমস্যা নেই I বস চুপচাপ
গাড়ি থেকে নেমে অনিমা বলল
– তুমি এবার চলে যেতে পারো I অনেক দেরি হয়ে গেছে
– আগে ভেতরে চলো I যদি হসপিটালে নিতে হয়
অনিমা আর কিছু বলল না I চিন্তিত মুখে কলিং বেল চাপল I
দরজা খুলে রুবিনা বললন
– তোকে তো আসতে নিষেধ করেছিলাম I শুধু খবরটা দিয়েছিলাম তা না হলে এসে রাগারাগি করবি তাই
– সমস্যা নেই I এমনিতেই তো কয়েক ঘন্টা পর চলেই আসতাম I বাবা কেমন আছে ?
– ঘুমের ওষুধ দিয়েছি I ঘুমাচ্ছে I
মুনির রুবিনা কে সালাম দিল I অনিমা পরিচয় করিয়ে দিল ওর ইউনিভার্সিটির সহপাঠী বলে I রুবিনা বললেন
– আচ্ছা তুমি মুনির I অনেক শুনেছি তোমার কথা I অনিমা বাড়ি আসলে তোমার অনেক গল্প করতো I ভিতরে এসে বসো I
অনিমা চট করে একবার বাবার ঘর থেকে ঘুরে এলো I পানির গ্লাস মুনিরের হাতে দিয়ে বলল I
– অনেক রাত হয়েছে I
স্পষ্টই চলে যেতে বলার ইঙ্গিত Iমুনির পাত্তা দিল না I পানির গ্লাসে চুমুক দিল I রুবিনা ভেতরে চলে গেছে I মুনির বলল
-কাল একবার আমার সঙ্গে দেখা করবে ?
– শনিবারে আমি খুব ব্যস্ত থাকি I কাল বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে I
– বিকেলে ?
– বিকেলে একটা স্টুডেন্ট পড়াই
– তাহলে সোমবার ?
– কেন ? জরুরী কিছু ?
– যদি বলি খুবই জরুরী তাহলে দেখা করবে ?
অনিমা জবাব দিল না I মুখ নামিয়ে বসে রইল I মুনির আবারো বললো
– সোমবারে তোমার ক্লাস কয়টা পর্যন্ত ?
– চারটা
– তাহলে আমি চারটার পর তোমাকে পিক করে নেব I আজকে আসি I কোন প্রয়োজন হলে ফোন কোরো I আমি নাম্বারটা পাঠিয়ে দেবো I
অনিমা মুনিরকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল I দরজার কাছে গিয়ে বলল
– থ্যাংক ইউ মুনির I অনেক কষ্ট করলে
মুনির কিছু বলল না I হাসল একটু I ওর হাসিটা ঠিক আগের মতই আছে I একটু বিষণ্নতা এসেছে কি ? হয়তো বা I আগে এই হাসি দেখলে ক্লান্তি দূর হয়ে যেত I
মনে আছে যেদিন ওদের বাসায় ছিল I সেই জ্বরের রাতে I ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে জল এসে গেছিল I চমক ভেঙেছিল রেহানা বেগম এর ডাকে I উনি কাছে এসে কপালে হাত রেখে বলেছিলেন
– এখন জ্বর কেমন মা ?
– জি ঠিক আছে I আপনাদের অনেক ঝামেলায় ফেলে দিলাম
– ঝামেলা কি ? আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম I যাও হাত মুখ ধুয়ে নাও I কিছু খাবে I আমি মুনির কে তুলে দেই I সারারাত এখানেই বসে ছিল I
রেহানা বেগম অনিমাকে খাবার তুলে দিলেন I মনির একেবারে তৈরি হয়ে খেতে এসেছে I ওকে আটটার ক্লাস ধরতে হবে Iঅনিমা অবাক হয়ে বললো
– কোথায় যাচ্ছো ?
মুনির জবাব দিল না I কাছে এসে কপালে হাত রেখে বলল
– যাক , জ্বর তাহলে নেমেছে I কি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাদের I
অনিমা একটু লজ্জা পেয়ে বলল
– তোমাদেরকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি
– তাতো দিয়েছই I তোমার নাম অনিমা হাসান না হয়ে ঝামেলা হাসান হওয়া উচিত ছিল I
রেহানা বেগম ছেলেকে বকলেন I বললেন
– ও কেমন কথা ?
– ঠিক বলেছি মা I দেখবে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হবে ওর বিয়ের দিন I
রেহানা বেগম চা আনতে উঠে গেলেন I অনিমা কপট রাগ দেখিয়ে বলল
– আমার বিয়ের দিন ঝামেলা হবে কেন ?
– তোমার তো সব কিছুতেই ঝামেলা হয় I পরীক্ষার দিন রিকশা থেকে পড়ে গেলে I পিকনিকে গিয়ে পা কাটলে I বিয়ের দিন যেন কি করো I
অনিমা হাসতে হাসতে বলল
– তুমি তো থাকবেই আমাকে উদ্ধার করার জন্য I আমার আর চিন্তা কি ?
– বিয়ের দিন আমাকে থাকতে হবে এটা বললেই হত I
– সব কিছু আমি বলবো ? তুমি ও কিছু বল
মুনির অবাক হয়ে বলল
– কি বলবো ?
– কিছু না
– তোমার অর্ধেক কথাই বুঝতে পারিনা I
সেদিন সত্যিই বুঝতে পারেনি মুনির I এই কষ্ট এতগুলো বছর ধরে কুরে কুরে খাচ্ছে ওকে I অনিমা যদি একবার বলতো তাহলে তো আর এত বড় ভুলটা হতো না Iঅনিমা কি জানে ও চলে যাবার পর কি ভয়ঙ্কর কষ্টের মধ্যে দিনগুলো কেটেছে ওর I
মুনির চলে যাবার পর একটা মেসেজ এলো অনিমার ফোনে I একটা টেলিফোন নাম্বার আর তার সঙ্গে লেখা
– জানি আমার নাম্বার তোমার কাছে নেই I সেভ করে রেখো I
অনিমা নাম্বারটা সেভ করে রাখল I এর পরপরই আরেকটা ম্যাসেজ এলো
– তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাওনি I আমি অপেক্ষা করে আছি I
তোমাকে পাবার জন্য সহস্র বছর ধরে অপেক্ষায় আছি
সত্যিই সহস্র বছর
কারন তোমাকে ছাড়া আমার প্রতিটি মুহূর্তই এক যুগ
প্রতিটি দিন এক শতাব্দি…..
চলবে ……