তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব ১৮

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -১৮
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা

বন্ধুদের সাথে তিন দিনের ট্যুর শেষে ঢাকায় ব্যাক করছি আজ। বাহিরে তুমুল বেগে বর্ষণ হচ্ছে। মাঝ পথে এমন এক বর্ষণের শিকার হবো ভাবতেই পারি নি আমরা। সকাল বেলা ও কড়া রোদ্দুর ছিল প্রকৃতি জুড়ে। মাঝ রাস্তায় ঝুম বৃষ্টি তার উপর রাস্তায় বড় এক বট গাছ উপরে পড়ে আছে। পুরো রাস্তায় ব্লক হয়ে গেছে গাছটা পড়ে। সরাতে প্রায় ঘন্টাখানেক লাগবে। এই ঘন্টাখানেক কোনোভাবেই এই বর্ষার মাঝে অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তখনি ফুহাদ উতসাহিত কন্ঠে বলে উঠল,,,

—দোস্ত এদিকে খানিক টা দূরে গ্রাম সাইডে একটা রিসোর্ট আছে। আজ নাহয় এখানেই থেকে যায় আমরা। শুনেছি গ্রামের এই ছোট খাটো রিসোর্টের পরিবেশ টা খুবই মনোরম।

ফুহাদের কথায় সম্মতি জানিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে গেলাম গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে রিসোর্টের দিকে। রাস্তায় কাঁদার ছড়াছড়ি। গাড়ি ও আর সামনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। বাকি পথ নাকি হেঁটেই যেতে হবে। মেজাজ খারাপ হয়ে এলো আমার। জীবনে কখনও গ্রামে আসি নি। তার উপর এই কাঁদা তে হাটতে ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার। ফুহাদ কে গালি দিতে দিতে গাড়ি এক সাইডে রেখে হাঁটতে হাঁটতে একটা জাম গাছ থেকে কিছুটা দূরে এসে দাঁড়ালাম সবাই। ভিজে বেহাল অবস্থা সবার। তবে বৃষ্টি আমার পছন্দ। খুব বেশিই পছন্দ। সামনে এগিয়ে যেতেই একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে থমকে গেলাম আমি। শুভ্র রঙের থ্রি পিছ পড়া একটা মেয়ে। পিছন টা দেখা যাচ্ছে শুধু। গায়ের জামা টা ভিজে লেপ্টে আছে শরীরে। খালি পা দুটো কাদায় মাখামাখি। সাথে একটা ছেলে ও একটা মেয়ে। জাম গাছের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। মনে তীব্র আগ্রহ জাগ্রত হলো মেয়েটার চেহারা টা এক পলক দেখার। তিহান,,ফুহাদ,,আয়ুশ চলে গেলেও দাঁড়িয়ে রইলাম আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ে দেখে থমকেছি। মেয়েটার মুখশ্রী না দেখেই পাগল প্রায় আমি। কয়েক মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন মেয়েটার মুখশ্রী দর্শন হলো না তখন এক রাশ হতাশা নিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমি। মন কে মানাতে না পেরে মস্তিষ্কের বিরুদ্ধে গিয়ে এক পলক পিছন ফিরে তাকাতেই বুকের বা পাশ টা ধুক করে উঠল প্রচন্ড বেগে । উত্তাল ঢেউ গর্জে উঠলো হৃদয় কুঠিরে। চোখে ভাস্যমান এক বৃষ্টিস্নাত কন্যা যে এক নিমিষেই বর্ষণ হয়ে আঁচড়ে পড়ছে আমার মন, হৃদয়, মস্তিষ্কে। মুহূর্তেই চারদিক অন্ধকার মনে হতে লাগল আমার কাছে। প্রকৃতির মাঝে এক শুভ্রপরী ব্যাতিত কিছুই দৃশ্যমান হচ্ছিল না আমার দু নয়নে। এক অজানা ভ্রম, এক অজানা ঘোর ঘিরে ধরল । সেখানে আর এক সেকেন্ড ও না দাড়িয়ে চলে এলাম রিসোর্টে।

রিসোর্টে আসতেই জানতে পারলাম আমাদের কলেজ লাইফের পরিচিত এক বন্ধু এখানকার মেনেজার। এ গ্রামেই তার বসবাস। বিকেলের দিকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মগ্ন ছিলাম সেই শুভ্রময়ীতে। হঠাৎ চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠল সেই মেয়ে। কল্পনা ভেবে বেলকনিতে থেকে নিচে এসে বাগান এড়িয়া তে যেতেই আবারও সেই শুভ্র কন্যা। এবার সাদা নয় কালো এক ড্রেস পরিহিত মেয়েটা। একটা লোক এসে মেয়েটা কে তাড়া দিতেই মুচকি হেসে লোকটার সাথে চলে গেল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আমি। মেয়েটা আমার হৃদয়ে যার পিছনে মেয়েরা ঘুরে বেড়ায় সেই তূর্য চৌধুরীর হৃদয়ে প্রখরভাবে ঘায়েল করেছে,,স্পর্শ করেছে। মেয়েটা কে আমার চাই ই চাই। মেয়েটা কে ছাড়া নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছিল। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমার সেই ফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস করতেই জানালো মেয়েটা ওদেরই গ্রামের। ঢাকা তে থাকে। নাম শ্রেয়সী। ব্যাছ এতটুকুই এনাফ ছিল আমার জন্য। বাকি ইনফরমেশন বের করা আমার কাছে কঠিন কিছু ছিল না।

ঢাকা ব্যাক করার পর থেকেই প্রতিদিন সকাল বিকাল নিয়ম করে আড়ালে দাঁড়িয়ে শুভ্রপরী কে এক নজর দেখার জন্য ছুটে যেতাম সব ফেলে। রাত জেগে চিরকুট লিখতাম আমার হৃদয়স্পর্শীর নামে। নিদ্রা আমার দু চোখে কোনোভাবেই ধরা দিত না।সারাক্ষণ শুধু চিন্তা লেগেই থাকতো কবে আমার শুভ্রপরী কে বন্দী করতে পারব আমি নিজের বাহুডোরে। সিদ্ধান্ত নিলাম শুভ্রপরীর ফাইনাল এক্সাম শেষে একেবারে নিয়ে আসবো নিজের কাছে। আড়ালে থেকে শুভ্রপরী কে প্রটেক্ট করে ও এক কুত্তার বাচ** হাত বাড়িয়েছে আমার কলিজায়। পুরো এক ঘন্টা ইচ্ছে মতো মেরেছি জানোয়ার টা কে। যে হাতে স্পর্শ করেছে আমার হৃদপিণ্ডে সে হাত অক্ষম করে দিয়েছি আমি। কোনো ছেলেকে কাছে ঘেষতে দেয় নি আমার শুভ্রময়ীর । শুভ্রপরী থেকে দূরে থাকা টা প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরাচ্ছিল আমার মনে। দহন হতো আমার হৃদয়ে তবুও নিজেকে সামলে রেখেছি তাকে নিজের করে পেতে। কিন্তু কখনও ভাবি নি আমার শুভ্রপরী-ই আমার হৃদয়ে আঘাত হানবে এতো কঠোরভাবে।ক্ষত বিক্ষত করে দিবে আমার মনটা কে। ধোকা দিয়ে হয়ে যাবে অন্য কারো।


তূর্যর মুখে সবকিছু শুনে থম মেরে বসে রইলাম আমি ।কিন্তু শেষ বাক্যটা আমার হৃদয়ে এসে বিঁধল করুনভাবে। মুহুর্তেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়তে লাগল অজস্র অশ্রুকণা। ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি। তাড়াতাড়ি করে নিজের বাহুতে আমায় আগলে নিলেন তূর্য। তূর্যর বুকে মাথা রেখে কান্নায় দলা কাঁপানো কন্ঠে বললাম,,,

–আমি আপনাকে ধোঁকা দেয় নি তূর্য। আপনাকে ধোঁকা দেয় নি আমি। আপনার শুভ্রপরী মরে যাবে তবুও আপনায় ধোঁয়া দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আপনাকে। আপনার হৃদয় কুঠিরে যেমন আমি শুভ্রপরী হিসেবে বিরাজ করছি তেমনি শুরু থেকেই আপনি আমার হৃদপিন্ডে চিরকুট লেখক হয়ে বিচরণ করছেন। আপনাকে ঠকানো আমার সাধ্যের বাহিরে তূর্য।

তূর্যর চোখে ও অশ্রু। শ্রেয়া কে শক্ত করে জরিয়ে নিয়ে বলল,,,

—তাহলে তুই কিভাবে আমার না হয়ে অন্য কারো হলি?তুই কি আমার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারিস নি? তোকে ছাড়া পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি । নিঃশ্বাস নেওয়া টা ও দায় হয়ে পড়েছিল। তোকে আমার ভালোবাসায় বন্দিনী বানাতে গিয়ে নিজে বন্দি হয়ে ছিলাম অন্ধকারে। কিন্তু আমার হৃদপিন্ডে রক্ত ঝরিয়ে তুই দিব্যি থেকেছিস অন্য কারো সাথে। অন্য কারো বববউ হয়ে।

কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো তূর্যর। বুক থেকে মাথা তুলে তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম আমি। পুরো মুখ লাল হয়ে আছে। মানুষ টা খুব ভালোবাসেন আমায় তা আজ চিরকুটে নয় মানুষটার সাথে থেকেই অনুভব করতে পারছি তীব্রভাবে। নিজের কম্পিত হাত টা ধীরে ধীরে ওনার গালে রাখলাম আমি। আমার হাত টা চেপে ধরলেন তূর্য। মুখটা এগিয়ে এনে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিল আমার কপালে সযত্নে। এক ফালি ভালোবাসা দোলা দিয়ে গেল পুরো মন জুড়ে। কান্নামিশ্রিত গলায় আমি বলে উঠলাম,,,,

—পরীক্ষার শেষ হওয়ার পরের দিন আমি কলেজের সামনে এসেছিলাম তূর্য। চাচার,,,,

আমি কথাটা বলার আগেই তূর্যর ফোনটা বেজে উঠল শব্দ করে। চমকে উঠলাম দু’জনেই। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করল তূর্য। হ্যালো বলতেই মুখে নেমে এলো বিষাদের ছায়া। ফোন পেকেটে রেখে দাড়িয়ে পড়লেন ওনি। গায়ের জ্যাকেট টা পড়তে পড়তে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,,,

–পরিপাটি হয়ে নাও শ্রেয়া। আমাদের এখুনি ঢাকা ব্যাক করতে হবে।

তূর্য ভাইয়ার কথায় অবাক হলাম আমি। হঠাৎ কি হলো যে এতো বিচলিত হয়ে পড়েছেন ওনি? আর মুখটাও কেমন মলিন হয়ে আছে? কে ফোন করেছিল? আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলেন তূর্য। ওনার বন্ধু কে বিধায় জানিয়ে চলে এলেন সেখান থেকে। সারা রাস্তা একটা কথাও বলেন নি তূর্য। বাইক ও খুব স্পিডে চালাচ্ছিলেন । আমি নীরব দর্শকের মতো শুধু চেয়ে রইলাম।


হসপিটালে আইসিউও রুমের সামনে বসে আছি আমি মিথি আপু কে জরিয়ে ধরে। মেয়েটা কেঁদেই যাচ্ছে সেই কখন থেকে। ওনাকে শান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষা আমার নেই। ফুহাদ ভাইয়া বাইক এক্সিডেন্টে করেছেন। অবস্থা খুব একটা ভালো না। বিয়ের দু দিনের মাথায় স্বামীর এমন পরিণতি কোন মেয়েটাই বা সহ্য করতে পারবে! ভালোবাসার মানুষ টা কে হারিয়ে ফেললে বুঝা যায় কেমন কষ্ট হয়। আয়ুশ ভাইয়া হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালের সাথে। তূর্য গিয়েছেন রক্তের ব্যাবস্থা করতে। তিহান ভাইয়া খবর দিয়েছেন ফুহাদ ভাইয়ার ফ্যামিলি কে। কেউ না দেখলেও আমার দৃষ্টি এড়ায় নি ওনাদের তিন জনের চোখের জল। এতো স্ট্রং মানুষ গুলো ও কেমন ভেঙে পড়েছে বন্ধুর জন্য। ওনাদের না দেখলে আর এমন এক পরিস্থিতিতে না পরলে কখনও এতো সুন্দর এক বন্ধুত্বের বন্ধন দেখার সুযোগ আমার কখনোই হতো না। ফুহাদ ভাইয়ের ব্লাড গ্রুপ “ও-নেগেটিভ”। হসপিটালের ব্লাড ব্যাংকে এ গ্রুপের রক্ত নেই। তাই তূর্য অন্য কোথাও গিয়েছেন রক্তের খোজে। ডক্টর একবার তাড়া দিয়ে গেছেন রক্তের জোগাড় তাড়াতাড়ি করার জন্য। আয়ুশ ভাইয়া ও আর তূর্যর অপেক্ষায় না থেকে বেরিয়ে পড়লেন হসপিটাল থেকে। আয়ুশ ভাইয়া যেতেই হসপিটালে এসে উপস্থিত হলেন ফুহাদ ভাইয়ার বাবা- মা ও খালাতো ভাই।

ফুহাদ ভাইয়ার মা আসতে না আসতেই দোষারোপ করতে লাগলেন মিথি আপু কে। অপয়া বলে অজস্র গালি দিতে লাগলেন। মিথি আপু নিরবে শুধু কেঁদেই যাচ্ছেন। অবাক হলাম আমি। ছেলে আইসিইউ তে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে অথচ ওনার এখনো মিথি আপু কে নিয়ে প্রবলেম। জীবনে এমন এক পরিস্থিতিতে তো আমিও পড়েছিলাম। শাশুড়ী মা পাশে থাকলেও জা দের,, আত্মীয় স্বজনদের কটুক্তির শিকার হয়েছি। অপয়া নামক শব্দটা ও সেদিন জুড়ে দিয়েছিল আমার সাথে। আমি মিথি আপুর কষ্ট টা ফিল করতে পারছি কিন্তু বড়দের মুখের উপর কিছু বলা ঠিক হবে না আমার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধৈর্য টা ধরে রাখতে পারলাম না আমি। মিথির আপুর শাশুড়ির একটা কথা খুব খারাপ এবং অনুচিত বলে মনে হলো আমার।

–কতোবার বলেছি এই এতিম মেয়েকে বিয়ে না করতে। এতিম মেয়ে তার উপর অপয়া। জোর করে আমার ছেলেটা কে কেঁড়ে নিল আমার কাছ থেকে। অপয়া মেয়ে বিয়ের দু দিনের মাথায় গিলে ফেললি আমার ছেলেটা কে। কাল নাগিনী। তোর উপর আমার অভিশাপ লাগবে। নিজের বাবা মারে ছোটবেলায় খাইয়া এখন আমার ছেলেটারে ও খাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস।

ডুকরে কেঁদে উঠল মিথি আপু। উঠে দাঁড়ালাম আমি। আন্টির কিছুটা কাছে এসে বিনয়ের সাথে বলে উঠলাম,,

–আন্টি আপনার ছেলে আইসিইউ তে। আপনার ছেলের জন্য কষ্ট অনুভব হচ্ছে না? শুনেছি ছেলে সন্তানের কিছু হলে মা’র শ্বাস টুক বন্ধ হয়ে আসে তবে আপনি কিভাবে এমন সিচুয়েশনে মিথি আপু কে গালা গালি করছেন আন্টি? এটা অন্যায়। প্লিজ এমন করবেন না। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন ভাইয়া যেন ঠিক হয়ে যায়। কেউ অপয়া হয় না আন্টি। আমাদের সাথে যা হয় আল্লাহর মর্জিতে হয়। ধরুন এই মুহুর্তে আংকেলের কিছু হয়ে গেল তাহলে আমরা সবাই কি আপনাকে অপয়া বলে দাবি করবো? করবো না তাই না? কারণ আপনি তো আর তার জন্য দায়ী থাকবেন না। তেমনি ফুহাদ ভাইয়ার এক্সিডেন্টের পিছনে ও আপুর কোনো হাত নেই। কোনো নারী স্বামী হারিয়ে ববববিধবা হতে চাই না। স্বামী যেমনই হোক প্রত্যেক নারীই স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করে। ভুল কিছু বললে ক্ষমা করে দিবেন।

কথাটা শুনে মুখটা কালো হয়ে গেলো আন্টির। ফুহাদ ভাইয়ার খালাতো ভাই তীব্র রাগ নিয়ে তেড়ে এলেন আমার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,,

—এই মেয়ে তোর সাহস কি করে হলো খালামণি কে এসব বলার? কে তুই এসব বলার হে? তোর সাহস আজ বের করেই ছাড়ব আমি।
কথাটা বলেই ওনি হাত তুলতেই চোখ খিঁচে মুখটা সরিয়ে নিলাম আমি। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও গালে কোনো স্পর্শ না পেয়ে চোখ দুটো মেলে তাকালাম আমি। তূর্য দাঁড়িয়ে আমার সামনে। আমার দিকে তোলা ছেলেটার হাত টাকে খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছেন তূর্য। হাতের ব্যাথায় চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেছে ছেলেটার। তূর্যর চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।এই বুঝি আগুনের ফুলকি ঝড়ে পড়বে চোখ থেকে। চোয়াল শক্ত করে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলেন তূর্য,,,,

—–কতটা কাপুরষ তুই তার প্রমাণ দিচ্ছিলি? ওকে থাপ্পড় মারতে যাচ্ছিলি? তূর্য চৌধুরীর শুভ্রপরী কে আঘাত করতে যাচ্ছিলি? আমার শুভ্রপরী কে আঘাত করার সাহস তো আমি কাউকেই দেই নি। তাহলে তোর এতো সাহস হলো কিভাবে? এই মেয়েটা কে চোখে চোখে রাখি তোর মতো কাপুরুষের হাতে থাপ্পড় খেতে? আজ যদি ফুহাদ আইসিইউ তে না থাকতো তবে তোকে এখানেই খতম করে দিতাম। বেঁচে গেলি আজ ফুহাদের উছিলায়। আজকের পর থেকে কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলতে দশবার ভাববি।

কথাটা বলেই ছেলেটার হাত মুচড়ে ধরলেন তূর্য। কটমট আওয়াজ করে উঠল হাতের হাড্ডি। সাথে সাথেই ছেলেটা কে ছেড়ে দিয়ে আন্টি কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

–আপনাদের আমি খুব সম্মান করতাম আংকেল আন্টি। ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ও কষ্টের লেশমাত্র নেই আপনাদের মাঝে। হাই সোসাইটি,, সম্মান এসব নিয়ে পড়ে আছেন এখনো। এসব নিজের ছেলের থেকে ও বড় হয়ে গেল তাই না আংকেল? আমি তূর্য দেখে দম নিব কতদিন পর্যন্ত পারেন বেঁচে থাকতে হাই সোসাইটির বড়াই নিয়ে।

আংকেল আন্টি কোনো কথা না বলে বসে পড়লেন পাশের বেঞ্চিতে। পুরো পরিবেশ টা একদম থমথমে হয়ে রইল। তূর্য ছুটে গেলেন ডক্টরের কেবিনে।

চলবে,,,,

(আসসালামু আলাইকুম রিডার্স। কেমন আছেন সবাই? গল্পের মাঝের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা যেহেতু অতীত কে ঘিরে তাই ধীরে ধীরে অতীত গুলো তুলে ধরবো আমি। অনেকের গল্পটা সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন আছে। আজ একটা প্রশ্নের উত্তর দিলাম যে তূর্য কিভাবে শ্রেয়া কে দেখল। আরও দুটো প্রশ্ন এখনো বাকি রইল। শ্রেয়া কিভাবে জানল তূর্যই চিরকুট লেখক আরেকটা শ্রেয়ার বিয়ের সময় তূর্য কোথায় ছিল। এই দুটো প্রশ্নের উত্তর আস্তে আস্তে পরবর্তী পর্বগুলোতে দেওয়া হবে।😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here