#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ২
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা
আমি মেসেজ দেওয়ার পর রিপ্লাই আসলো একটা ভয়েজ। আমি ভয়েজটা অন করে শুনলাম একটা মেয়ে এই ভয়েজটা পাঠিয়েছে। আমি আবার ভয়েজটা শুনলাম। ভয়েজে বলেছে,
” এই মেয়ে তুমি কে । আমার বরকে জান বলো ? তোমাকে সামনে পেলে একদম খুন করে ফেলবো ।
এই মেয়ে আবার কে ? রিয়ান ভাইয়াকে বর কেন বলছে ? রিয়ান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড নিশ্চয়ই ! তা না হলে রিয়ান ভাইয়ার আইডিতে কীভাবে আসবে ? তিন্নি তো বলে ,
“রিয়ান ভাইয়ার মতো নাকি ছেলেই হয় না । কোনো মেয়ের সাথে রিলেশন তো দূরের কথা মেয়েদের সাথে নাকি কথাই বলতে পারে না !
কথা যদি বলতেই না পারে তাহলে এইগুলো কী ? মনে মনে ভাবলাম কালকে কলেজে গিয়ে তিন্নিকে ভয়েজটা শুনাবো । এখন আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে কানের কাছে এলার্মটা বাজতেছে । ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও চোখ খুলে তাকালাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ৯ টা বাজে। এই এলার্ম তো দেখি কোনো কাজেরই না। ঠিক টাইমে আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিলো না । আমি মনে মনে এলার্মটাকে বকে ফ্রেশ হতে গেলাম। তারপর একেবারে রেডি হয়ে নিচে নেমে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
কলেজে এসে দেখি তিন্নি এখনো আসেনি। আমি তিন্নির নাম্বারে কল দিলাম। তিন্নি কল রিসিভ করে জানালো আজকে নাকি কলেজে আসবে না। আমার ও কলেজে তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই। তিন্নিকে ছাড়া একা একা ভালো লাগছে না কিছু। আমি একটা ক্লাস করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে এলাম। আমাদের কলেজ থেকে কিছু দূরে একটা পার্ক আছে। অনেক বাচ্চারা পার্কে খেলতে আসে । আমার ও বাচ্চাদের সাথে খেলতে ভালোলাগে । তাই ভাবলাম পার্কে যাই।
পার্কে গিয়ে তো আমি অবাক। রিয়ান ভাইয়া আর একটা মেয়ে পাশাপাশি বসে আছে। একজন আরেকজনকে চিপস খাইয়ে দিচ্ছে । আমি রিয়ান ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। রিয়ান ভাইয়ার পাশে থাকা মেয়েটা অসম্ভব সুন্দর। একটা স্বচ্ছ গোলাপের মতো । রিয়ান ভাইয়া আমাকে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
” তুমি এখানে কি করছ ?
আমি রিয়ান ভাইয়ার কথার উত্তর না দিয়ে কোমরে দুহাত রেখে গোয়েন্দাদের মতো বললাম,
” আপনি কি করছেন এখানে ? এই মেয়েটি কে ? কালকে কি এই মেয়েটি ভয়েজ দিছিলো ?
কি বলে ফেললাম আমি ? এখন তো বুঝে ফেলবে কাল রাতে আমি ভয়েজ দিয়েছিলাম । আমার কথায় রিয়ান ভাইয়া বলে উঠলো,
” তারমানে তুমি কালকে মেসেজ দিয়েছিলে ? তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে এই মেসেজ দেওয়ার ? ডাফার ?
” আমি তো দুষ্টামি করে দিয়েছিলাম !
আমার কথায় রিয়ান ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো । পারলে আমাকে উনার চোখের আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিবে । আমার দিকে এভাবে তাকাতে দেখে মেয়েটা বলল,
” রিয়ান তুমি ওর দিকে এভাবে তাকাচ্ছো কেন ? বলছে তো দুষ্টামি করে মেসেজ দিয়েছে।
” নিলা তুমি দেখনি কী মেসেজ দিয়েছে আমাকে ?
” দেখেছি। আমার ওকে খুব ভালো লেগেছে দেখতে কি মিষ্টি।
মেয়েটির নাম নিলা। আমার থেকে প্রায় ৩ বছরের বড় হবে । আপুর কথা বলার ধরন অনেক সুন্দর। আপুর সাথে রিয়ান ভাইয়া আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। আর এটাও বলে দিলো , আমি যেন কাউকে তাদের সম্পর্কে না বলি ! বিশেষ করে তিন্নিকে। তিন্নি জানলে এখনই আন্টিকে গিয়ে সব বলে দিবে। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো কাউকে কিছু বললাম না। আপুর সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হয়। আপু আমাকে ছোট বোনের মতো অনেক ভালোবাসে।
রিয়ান ভাইয়ার মতো রাগি মানুষকে আপু খুব সহজেই শান্ত করে ফেলে। দুজন দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসে। একজন ছাড়া আরেকজন বাঁচতেই পারবে না। একদিন রাতে আমি শুয়ে আছি। তখন নিলা আপু কল দিলো । আমি কল রিসিভ করতেই আপু বলে উঠলো,
” কেমন আছো বর্ষা ?
” ভালো আপু ! তুমি কেমন আছো ?
” আমার হাতে আর সময় নেই। এখন হসপিটালে ভর্তি আছি। আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি প্লিজ রিয়ানকে দেখে রেখো !
” এসব তুমি কি বলছো । তোমার কিছু হবে না আপু। তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে ।
” বর্ষা প্লিজ বলতে দাও আমায় । ডক্টর বলে দিয়েছে আমার হাতে আর কয়েক ঘণ্টা সময় আছে । তুমি আমার হয়ে রিয়ানকে আগলে রেখো । রিয়ানের কিছু হলে আমি যে মরেও শান্তি পাবো না ।
আমি আপুর সাথে আর কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। সিদ্ধান্ত নিলাম কাল সকালে হসপিটালে গিয়ে আপুকে দেখে আসবো । সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি হসপিটালে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে। রিয়ান ভাইয়া পাথরের মতো বসে আছে। নিলা আপুর বাসার সবাই চিৎকার করে কান্না করছে । আমি রিয়ান ভাইয়ার কাছে গিয়ে উনার কাঁধে হাত রাখলাম। রিয়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমার নিলা আমায় কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আমাকে বলেছিল সারাজীবন আমার সাথে বাঁচবে কিন্তু আমাকে একা করে স্বার্থপরের চলে গেলো । আমায় শেষ করে দিলো বর্ষা।
রিয়ান ভাইয়া বাচ্চাদের মতো করে কান্না করতে লাগলো। আপুর মৃত্যুর পর রিয়ান ভাইয়া ভিতর থেকে একদম ভেঙে গিয়েছে। আগের মতো আর কারো সাথে কথা বলে না, হাসে না। কেউ কিছু বললেই রেগে উঠে। এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল। রিয়ান ভাইয়ার আম্মু রিয়ান ভাইয়ার টেনশনে দিন দিন অসুস্থ হয়ে উঠছো । রিয়ান ভাইয়ার এই পরিবর্তনের কারণ শুধু আমি আর ভাইয়া জানি।
একদিন বিকেলে আম্মু একটা লাল বেনারশি আর কিছু গহনা এনে আমার হাতে দিয়ে বলল,
” এগুলো পড়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে ।
” এইসব তো বিয়ের পোশাক আমাকে কেন এইগুলো পড়তে বলছো ?
” আজকে তর বিয়ে !
” আমার বিয়ে ! কিন্তু কার সাথে ?
” রিয়ানের সাথে ।
আম্মুর কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। রিয়ান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ? এটা কিভাবে সম্ভব ! রিয়ান ভাইয়া এখনো নিলা আপুকে অনেক ভালবাসেন । উনি কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি হবেন না। আমি আম্মুকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আম্মু আমার কোনো কথাই বুঝলো না । আমি ভাইয়াকে গিয়েও বললাম আমি এই বিয়ে করবো না। ভাইয়া আমায় বলল ,
” প্লিজ বোন রাজি হয়ে যা। তুই একমাত্র রিয়ানকে আগের মতো করতে পারবি। রিয়ানকে আবার ও আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে পারবি ।
কেউ আমার কথা শুনলো না । জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল রিয়ান ভাইয়ার সাথে। কিন্তু রিয়ান ভাইয়া , উনি কি আমায় মেনে নিবে নিজের বউ হিসাবে। কোনোদিন দেবে কি বউয়ের অধিকার ?
#চলবে