তোমাতেই পূর্নতা পর্ব -১২

#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ১২
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

পশ্চিম আকাশে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে শুভ‌। সূর্য অস্ত যাওয়ার অপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হচ্ছে । হঠাৎ ফোনের রিংটোনে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার থেকে কল আসছে । শুভ ভ্রু কুঁচকে নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে রইল । কলটা কেটে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে কল রিসিভ করে কানে দিয়ে নিশ্চুপ থাকল । ওপাশ থেকেও কোনো কথা আসছে না । শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে । কয়েক মিনিট পর শুভ বলল ,

” কে বলছেন ?

ওপাশ থেকে কেউ কথা বলল না । শুভ আবারও বলল ,

” কথা বলছেন না কেন ?

ওপাশে থাকা মানুষটাকে যেন নিশ্চুপতায় ঘিরে রেখেছে । টু শব্দও শোনা যাচ্ছে না । কেবলই নিঃশ্বাসের শব্দ । শুভ আবারও বলল ,

” কথা না বললে কল দিয়েছেন কেন ? শুধু শুধু কাউকে বিভ্রান্ত করার মানে কি ? আমি কল কাটছি দ্বিতীয় বার আর কল দিবেন না !

কল কাটার কথা বলতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো ,

” আমি তো ইচ্ছে করে ফোন দেইনি ! বাধ্য হয়ে দিয়েছি। আমার অবাধ্য মন আপনাকে ফোন দিতে বাধ্য করেছে। কি করবো বলুন ? আমার অবুঝ মনটা আপনার কন্ঠ শোনার জন্য আকুল হয়ে ছিল । ফোন দিয়ে কি কোনো ভুল করেছি ?

একাধারে কথাগুলো বলে থামল তিন্নি । শুভ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলল ,

” অবশ্যই ভুল করেছো ! আমাকে ফোন না দিয়ে তোমার অবাধ্য মনটাকে বাধ্য করা উচিত ছিল ।

” বাধ্য করতে চেয়েছিলেন কিন্তু মন যে বাধ্য হতে নারাজ !

নিশ্চুপে হাসল শুভ । পরক্ষনে গম্ভীর কণ্ঠে বলল ,

” মনকে রাজি করিয়ে অতি দ্রুত বাধ্য করে নাও । নয়তো সাংঘাতিক ভুল হয়ে যাবে ।

” হোক না কিছু ভুল ! ভুল হলে যদি মনে শান্তি মেলে তাহলে ভুল করাই শ্রেয় !

” ভুল করলে যে ভুলের মাশুল গুনতে হবে ।

” উফঃ ! আপনি তো বড্ড কথা প্যাচান ।

শুভ হো হো করে হেসে ফেললো । হাসতে হাসতেই বলল ,

” তুমিও তো বড্ড মুখে মুখে কথা বল ।

মুচকি হাসল তিন্নি ! ওদের কথা চলতে লাগল । তিন্নি মনে মনে বলছে ,

” সময়টা যদি এখানে থেমে যেত তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত ?

তিন্নি ও শুভ কথা বলছে । তিন্নির হাসির তালে তালে দেয়াল গুলো হেসে উঠছে । ইশশশ কি সুন্দর মূহুর্ত !
মূহুর্তটা যদি ছবির মতো বন্দি করা যেত তাহলে মূহুর্তটা তিন্নি আজীবন বন্দি করে রেখে দিত !

বর্ষা তিন্নির কাছে আসছিল । তিন্নির রুমে ঢুকে দেখে তিন্নি বাম হাতে বারান্দার গ্রিল ধরে ডান হাতে মোবাইল কানে নিয়ে মনের সুখে কথা বলছে । এখন হাসছে তো এখনই মুখ ভার করে কথা বলছে । বর্ষা মনে মনে বলল ,

” তিন্নি তো কারো সাথে এভাবে কথা বলে না । কোনো প্রেমিক ও নেই ! তাহলে কার সাথে এভাবে কথা বলছে তিন্নি ?

মনের মধ্যে অজানা প্রশ্নের উত্তর পেতে নিঃশব্দে তিন্নির দিকে এগিয়ে গেল বর্ষা । তিন্নি কথায় এতটাই বিভোর ছিল তিন্নির পিছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে ও পারল না । বর্ষা খপ করে তিন্নির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে দিল । তিন্নি হা করে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে ! ফোন কানে দিয়ে শুভর কন্ঠ শুনে বর্ষা অবাক কন্ঠে শুভকে বলল ,

” ভাইয়া তলে তলে এতো কিছু ? আমাকে না জানিয়ে আমারই ননদের সাথে প্রেম-ট্রেম করে ফেলছো ! এটা তো ভারী অন্যায় !

হঠাৎ ফোনের ওপাশ থেকে বর্ষার কন্ঠ শুনে ভরকে গেল শুভ । তথা সম্ভব নিজেকে সামলিয়ে বর্ষাকে বলল ,

” কি যা – তা বলছিস ? আমি কেন তোর ননদের সাথে প্রেম-ট্রেম করতে যাব ?

” তাহলে কি করছিলে শুনি ?

” জাস্ট কথা বলছিলাম ।

বর্ষা সুর টেনে বলল ,

” ওহহহ আচ্ছা ! দেখো জাস্ট কথা বলা থেকে যেন প্রেম-ট্রেম না হয়ে যায় !

বলেই মুচকি হাসল বর্ষা । ওপাশ থেকে নিঃশব্দে হেসে শুভ বলল ,

” প্রেম হলে কি খুব বড় অন্যায় হয়ে যাবে ?

” হবে বৈ কি , নিশ্চয়ই হবে ! অন্যায় কারী দুজনকেই শাস্তি পেতে হবে । একেবারে কঠিন শাস্তি । শাস্তি পেয়ে গেলে সেই শাস্তি থেকে মুক্তি মিলবে না ! সারাজীবন শাস্তি ভোগ করতে হবে ।

” তাহলে সেই শাস্তি মাথা পেতে নিব !

রুম থেকে রিয়ানের ডাক পড়ল । বর্ষা শুভকে বলল ,

” তোমরা তাহলে জাস্ট কথা বলো , আমি যাই !

তিন্নির হাতে ফোনটা দিয়ে ছুটে চলে গেল বর্ষা ! তিন্নি ফোন কানে দিয়ে করতে লাগলো সুখময় আলাপ !
____________________

” রাতুল কবে থেকে তোকে বিয়ের কথা বলছি ! তোর কি কথা কানে যায় না ? আমি আর কতদিন একা একা সংসার সামলাবো , বল তো ?

খাবার টেবিলে চেয়ারে বসতে বসতে রাতুল কে প্রশ্ন করল রাতুলের মা ! রাতুল আয়েশী ভঙ্গিতে খেতে খেতে বলল ,

” আহ্ আম্মু ! বিয়ের সময় হলে তো বিয়ে করবোই । সব সময় এতো বিয়ে-বিয়ে করো কেন ?

” তা কি আর সাধে করি ! আমার ও তো ইচ্ছে করে ছেলের বউ দেখার । আমার কোনো মেয়ে নেই তাঁকে নিয়েই তো মেয়ের অভাব পূরণ করবো ।

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাতুলের মা আবারও বলল ,

” তোর কাউকে পছন্দ থাকলে বল আমি বিয়ের ব্যবস্থা করছি ।

আচমকা এমন কথা শুনে কাশতে লাগলো রাতুল । রাতুলকে পানির গ্লাস দিয়ে পানি খেতে বলল রাতুলের মা । রাতুল ঠিক হতেই আবারও একই প্রশ্ন করলেন রাতুলের মা । আজ উনি একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন । রাতুল আমতা আমতা করে মাথা নুইয়ে বলল,

” একটা মেয়েকে ভালোলাগে ।

রাতুলের মা খুশিতে আত্মহারা হয়ে জিজ্ঞেস করল ,

” নাম কি ? বাসা কোথায় ?

” নাম বর্ষা । বাসার ঠিকানা জানিনা ।

” পছন্দ করিস অথচ বাসার ঠিকানাই জানিস না ! আচ্ছা যত দ্রুত সম্ভব ঠিকানা জেনে আমাকে জানা। আমি তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করবো ।

রাতুল আচ্ছা বলে খাবার খেয়ে খুশি মনে চলে গেল । কিন্তু সে কি জানে তার খুশির চাবিকাঠি অন্য কারো । অন্য কারো নামে , অন্য কারো অধিকারে ।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here