#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(৭)
ড্রইং রুমে বসে আছে রিশাদ সাহেব,রাহিমা বেগম,ইরফান,মোহনা সকলে।বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন রাহিমা বেগম। রিশাদ সাহেব এবার রেগে বলল,,
“হয় জ্ঞানে থাকো নাহলে অজ্ঞান হয়ে থাকো। এই বার বার মুর্ছা যাচ্ছো কেন?”
“তুমি আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার বউমার কি হবে?আম…”
কথা বলা শেষ না হতেই রাহিমা বেগম আবারো মুর্ছা গেলেন।
এবার রিশাদ সাহেবের মেজাজ আরও খারাপ হচ্ছে।
“ইরফান এই মহিলার মাথায় পানি ঢাল.।”
“মোহনা আম্মুর মাথায় পানি ঢালো আমি ডক্টরকে ফোন দিচ্ছি।”
আনিশার বাবা মা ও ইয়াশদের বাসায় আছে।আনিশার বাবা মা এখনো বলেনি যে আনিশাও পালিয়েছে।ইয়াশ পালিয়েছে শুনেই রাহিমা বেগম ৩ বার মুর্ছা গেলেন আনিশাও পালিয়েছে শুনলে না জানি কি হয় এই জন্য আনিশার বাবা মা এটা বলেনি।
বেল বেজে উঠলো হঠাৎ,,
মোহনা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
পিছন থেকে ইয়াশের বাবা বলল,,
“কে এসেছে বউমা?”
“বাবা ইয়াশ এসেছে।”
কথাটা বলতে দেরি রিশাদ সাহেনবের দৌড়ে দরজার সামনে আসতে দেরি হয়নি।
দরজার সামনে আসতেই থ হয়ে গেলেন রিশাদ সাহেব।
আনিশার বাবা মাও এগিয়ে এলো সকলেই থ হয়ে ওদের দেখছে।
রিশাদ সাহেব চেচিয়ে বললেন,,
“এসব কি ইয়াশ?আর বউমা তুমি ওর সাথে নিশ্চয়ই ওকে রাস্তা থেকে এনেছো কই যাচ্ছিলো ও? আমার জুতা কই নিয়ে আসো কেউ ওকে কয়টা বারি দেই।”
“বাবা আম…”
ইয়াশকে বলতে না দিয়ে ইরফান বলল,,
“বাবা আমাদের উচিত ভিতরে গিয়ে কথা বলা।এভাবে বাহিরে দাড়িয়ে কথা বললে প্রতিবেশিরা কি ভাব্বে?”
সকলে ভিতরে এলো রাহিমা বেগম বসে আছেন। রিশাদ সাহেব রাহিমা বেগমকে বসে থাকতে দেখেই বললেন,,
“এ কি! এই মহিলা দেখি জ্ঞানে আছে?ওমাগো।”
আনিশার বাবা বলে,,
“বেয়াই মশাই এখন ঝগড়া রাখুন শুনি আগে কি হয়েছে।”
“ঠিক আছে।কিন্তু সব শোনার আগেই যদি এই মহিলা আরেকবার মুর্ছা গিয়ে আমার বুকের ধরফরানি বাড়িয়ে দেয় তাহলে কিন্তু বাড়ি ত্যাগ করবো আমি।”
” সেকি আহা বেয়াই মশাই বসুন। নিন পানি খান।”
রিশাদ সাহেব পানি খেয়ে নিলেন।
ইয়াশকে উদ্দেশ্য করে ইরফান সর্ব প্রথম প্রশ্ন করল,,
“কি হয়েছিলো তোর?এভাবে বাড়ি থেকে পালালি কেনো?তাও আবার বিয়ের আগের দিন।”
“আসলে ভাইয়া হয়েছে কি…”
“কি হয়েছে আবার নিশ্চয় কোনো মেয়ে নিয়ে কাহিনী আছে। সব বাপের সভাব পেয়েছে।”
রাহিমা বেগমের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন রিশাদ সাহেব।রেগে বললেন,,
“সব বিষয় আমার দোষ টানা কি তুমি বাদ দিবে রাহিমা?”
রাহিমা বেগম মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।তার অভিমান হয়েছে এই মুহুর্তে ছেলের উপর।
রিশাদ সাহেব এবার আনিশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“মা তুমি বলো এই গাধাটাকে কোথায় পেয়েছো?আর তোমার বাবা বলল তুমি নাকি পার্লারে গিয়েছিলে সেখানেই কি এই গাধা ছিলো?”
আনিশা বেশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল,,
“আঙ্কেল হয়েছে কি আমি পার্লার থেকে আসার সময় দেখি রোড সাইডে বসে কান্না করছেন উনি।”
আনিশার কথায় ইয়াশের কাশি উঠে গেলো।কোনোরকম নিজেকে সামলে চোখ বড় বড় করে আনিশার দিকে তাকালো। আনিশা আবারো বলল,,
“উনি যার সাথে পালিয়েছিলেন সে ওনার সব নিয়ে ভেগে গেছে।”
“মানে?”
আনিশার বাবার প্রশ্নে আনিশা ঢোক গিলল।
ইয়াশ বলে “মানেটা আমি বলছি আঙ্কেল। ”
“বলো বাবা।”
“আমি যার সাথে পালিয়েছিলাম সে একটা চুরেল ছিলো। আমার পকেট মেরে পালিয়ে গেছে।তাই রোডে বসে শোক পালন করছিলাম।”
আনিশা রাগি চোখে ইয়াশের দিকে তাকালো।কিন্তু কিছু বলতে পারলো না।কারণ কিছু বললেই এখন ফেসে যাবে।আর বাজে দিকে চলে যেতে পারে ব্যাপারটা।
রিশাদ সাহেব কপাল চাপরে বলেন,,
“শেষে কি’না পকেট মার মেয়ের প্রেমে পড়েছিলে তুমি! ছি ছি ছি।”
ইরফান বলে,,
“তোকে কত ভালেবাসতাম সবসময় ব্যান্ডেড জিনিস কিনে দিতাম আর সেই তুই কিনা।”
“আব…আঙ্কেল এটা বাদ দিন না যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।”
ইরফানও বলে,,
“হুম বাবা এটা নিয়ে পরে কথা বলবে। কাল বিয়ে আঙ্কেল আন্টি আপনাদের কি কোনো সমস্যা আছে বিয়েতে?”
“না। ”
আনিশার মা আনিশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।
সবাই বেশ চুপচাপ হয়ে বসে আছে।ইয়াশ একাই অ/প/রা/ধী/র মতো বসে আছে।আনিশা এ যাত্রায় বেচে গেছে বলে সেই খুশি।
হঠাৎ নাক ডাকার ভয়ংকর শব্দে সকলে চমকে ওঠে।
রিশাদ সাহেব বলেন,,
“এই মহিলা আর ঘুমুনোর সময় পায়না।”
“থাক বাবা, মা ক্লান্ত অনেক চিন্তা করেছেন আজ।”
“মোহনা মা এভাবেই এই মহিলার সাফাই গেয়ো না।আমার পিলে চমকে গিয়ে ছিলো ভেবেছিলাম ষাড় এলো কইথেকে এখানে।”
“বাবা মা শুনলে তোমার খবর ছিলো।”
ইরফানের কথায় দমে গেলেন রিশাদ সাহেব।
আনিশার বাবা মা’র সাথে কথা বললেন রিশাদ সাহেব। আগামীকালই ইয়াশ আনিশার বিয়ে হবে।
আর ইয়াশের করা ব্যবহারের জন্য রিশাদ সাহেব মাফ চাইতে গেলে আনিশার বাবা বাধা দেন।তারপর বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে আনিশারা ওদের বাড়ি চলে যায়।
___________________________________
পরেরদিন,,
সকাল সকল ঘুম ভাঙে আনিশার। বিয়ে আজ ওর।মনে মনে খারাপও লাগছে আবার ভয়ও লাগছে কালকের ঘটনাটার জন্য।
আনিশার আম্মু রুমে এসে আনিশার কাছে বসলো,,
“আনু কি ভাবছো মা?”
“না মানে আম্মু…”
“কালকে তুমি যার সাথে পালিয়েছিলে সেটা ইয়াশই ছিলে তাই না?”
আনিশা অবাক হয়ে ওর মায়ের দিকে তাকালো।
“আমি তোমার মা আনিশা। আমি জানিনা কেনো তোমরা এই কাজ টা করেছো। তবে জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো তাই আমি চুপ ছিলাম।কালকে পালানর সময় ইয়সশের ড্রেস আমি খেয়াল করেছিলাম।”
“সরি আম্মু আমি চাইনি তোমাকে কষ্ট দিতে।”
“ইটস ওকে বাচ্চা।এমনটা আর করো না।”
“করবো না।”
আনিশার আম্মু আনিশার কপালে চুমু দিলো।
দুপুরের দিকে কনে সহ অনেকে বেরিয়ে গেলো পার্লারের উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে দুপুর ১টা বাজে,,
ইয়াশ কম্বল মুরি দিয়ে ঘুম।রাহিমা বেগম ছেলের রুমে এসে ফ্যানের সুইচ অন করে দিলেন।
তারপর কম্বল সড়িয়ে গায়ে পানি ঢেলে দিলো।
লাফিয়ে উঠে বসলো ইয়াশ।
“আম্মু কি করলা এটা?”
“তোর আজকে বিয়ে তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস কেনো?”
“বিয়ে! কার ধুর সপ্ন দেখছি।”
“ইয়াশ আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে।”
“কেনো?”
রাহিমা বেগম ইয়াশের মুখে পানি দিলেন।
“মনে পড়লো কিছু?”
“হ্যা হ্যা।”
“হুম এবার উঠে রেডি হয়েনে ১ঘন্টার মধ্যে।”
বলে রাহিমা বেগম রুম ত্যাগ করেন।
ইয়াশ ফেসবুকে ঢুকে Messenger চেক করলো।নাহ কোনো নিউ ম্যাসেজ নেই।ইয়াশ রেডি হতে চলে গেলো।
বিকেলে,,
৩:৪৫,,
বরযাত্রী এলো।সব রিচুয়ালস কমপ্লিট করে ইয়াশরা ভিতরে গেলো।
আনিশাও পার্লার থেকে চলে এসেছে।
সকলে গল্প করছে।তখনই কাজি এলো।
ইয়াশ আর আনিশার মাঝে একটি পর্দা দেওয়া তাই কেউ কারোর মুখ দেখতে পারেনি এখনো।
কাজিকে দেখার জন্য দু’জনই সামনে তাকালো। কাজি আর কেউ না। রেদোয়ান। ইয়াশ আনিশা দু’জনে একসাথে বলল,,
“নোওওওওওওওও🫠”
চলবে…!!
( ডাবল বিয়ের দাওয়ার সকল রিডার্সকে🫰)#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(৮)
কাজিকে দেখে দুজন এমন করে চিল্লিয়ে উঠলো যে সবার নজর এখন ওদের দিকে।
রাহিমা বেগম বললেন,,
“ষাড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেনো?”
ইয়াশের মুখ চুপসে গেলো।
আনিশার আম্মু রিমা বেগম আনিশার দিকে রেগে তাকাতেই আনিশার মুখও চুপসে গেলো।
রেদোয়ান নিজের চশমা ঠিক করতে ব্যস্ত।কাল রাতে তার বাসায় চোর এসেছিলো। চোর ধরতে যাওয়ার সময় তার চশমা ঠাস করে নিচে পরে গেছে।
তারপর থেকে সে বেশ ভালো করে চমশমাকে দেখছে।
এখন তার কাছে চশমা কেনার টাকা নেই। মাসের শেষ। তাই এটাই তার শেষ সম্বল।
রেদোয়ান চশমা ঠিক করে সামনে তাকাতেই মুখ হা করে ফেলে।
সে এটা কি দেখছে যাদের বিয়ে দিয়েছিলো আগামীকাল তারা আজ আবারো বিয়ে করছে।
বিষয় বস্তু কিছুই বুঝতে পারছে না রেদোয়ান।
রেদোয়ান কিছু বলবে তখনই মনে পড়ল তার সুগার আছে।আর যখন তখন ওয়াশরুম পেয়ে যায় তার।এই মুহুর্তে তার ওয়াশরুম যাওয়াটা জরুরি।
কিন্তু সমস্যা হলো সে তো কিছু চিনেনা।
রেদোয়ানের পাশে দাড়িয়ে ছিলো তোরশার হাসবেন্ড অনিক।রেদোয়ান তাকেই করল,,
“বাবা আমাকে একটা হেল্প করো।”
“হ্যা বলুন।”
“ওয়াশরুম টা কোনদিকে?”
“চলুন আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
অনিক রেদোয়ানকে নিয়ে গেলো।
এদিকে সেই থেকে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে ইয়াশ।ইয়াশের কলেজ ফ্রেন্ড আবির মজা করে বলে,,
“কি রে এমন করছিস কেনো?”
আরেক ফ্রেন্ড নিলয়,সে বলে,,
“আমার কি মনে হয় বল তো আবির ইয়াশ ভয় পাচ্ছে। আরে ভয় পাস না।আমরা আছিনা।”
ইয়াশ নিলয়ের পেটে কনুই দিয়ে গুতা দিয়ে বলল,,
“চুপ বে।আমার কপাল থেকে শনি যাচ্ছে না আর তুই আছিস এসব নিয়ে।”
আবির সিরিয়াল ভঙ্গিতে বলে,,
“তোর কি লুজ মোশন হয়েছে?”
বলে হাহা করে হাসতে লাগলো নিলয় আর আবির।
ইয়াশ বিরক্ত হয়ে চোখ ফিরিয়ে দেখতে লাগলো সামনে।কাজিকে দেখতে না পেয়ে শান্তির নিশ্বাস ফেলল।
ঘেমে গেছে ভয়ে একেবারে।একটু মুখ টা ধোয়া দরকার।ভালে লাগবে।
ইয়াশ আবিরের হাত ধরে নিচু করিয়ে কানে কানে কি জানি বলে।
তখন আবির ওকে নিয়ে বিয়ের আসর থেকে সাইডে আসে।
“বল কি হয়েছে?বিয়ের আসর থেকে চলে এলি কেনো?”
“দোস্ত আমি ওয়াশরুম যাবো। তুই একটু এদিকটা ম্যানেজ করিস।”
“ওহ ওকে। ”
ইয়াশ ওয়াশরুমের দিকে গেলো।ইয়াশ শেরওয়ানীর হাত ফোল্ড করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকতেই এক চিৎকার দিলো।রুমের দরজা সাউন্ড প্রুফ হওয়াতে বাহিরে আওয়াজ যায়নি।
“ছি ছি ছি আপনি কি দরজা লক করতে পারেন না।নাউজুবিল্লাহ। ”
রেদোয়ান রেগে চোখের চশমা ঠিক করতে করতে বলল,,
“তুমি দেখি নিজে ভুল করে আমাকেই দোষ দিচ্ছো।বলি এই ছোকরা তুমি কিছু দেখোনিতো?”
“সব দেখেছি।”
“🫠”
“বাহিরে গিয়ে সবাইকে বলবো।”
“কি বলবে তুমি?”
“যা দেখেছি।”
” আয়হায় না এইটা করোনা।আমার একটা সম্মান আছে।”
“ওকে বলবো না।তবে একটা শর্ত আছে।”
“কি শর্ত?”
“আমি আর আনিশাকে কালকে আপনি দেখেছেন এবং বিয়ে পরিয়েছেন এই কথা যেনো কেউ না জানে।”
“ওমা,! কেনো বলবো না?তোমরা এখন বিয়ে করছো তাহলে কাল ওমন করে মিথ্যা বললে কেনো?”
“সেটা আমি আপনাকে পরে বুঝিয়ে বলবো।এখন যা বলছি তাই করুন।না হলে আমি গেলাম বলতে এখনি যা দেখেছি।”
“না। আমি কাউকে কিছু বলবো না।”
“হুম।থাকুন হালকা হয়ে আসি।”
বলে ইয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে অন্য ওয়াশরুমে গেলো।
রেদোয়ান ঘাম মুছে নিলো।
____________________________
রিফাত সাহেব এবার বিরক্ত হচ্ছেন।কাজিকে সবাই খুজে চলেছে তার খোজ নেই।গেলো কই?
অনিক এক সাইডে দাড়িয়ে কাটলেট খাচ্ছিলো তোরশা এসে বলল,,
“তুমি এখানে খাচ্ছো!ওদিকে এক কান্ড হয়ে গেছে।”
“কি হলো?”
“কাজিকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
“না পাওয়ার কি আছে?উনি তো ওয়াশরুমে গিয়েছেন।”
কাটলেট মুখে দিতে দিতে বলল অনিক।
তোরশা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,,
“তুমি জানো তাহলে এতোক্ষণ বলোনি কেন?সবাই চিন্তায় কি অবস্থা.।”
“তুমি কি আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে যে বলবো?খাওয়ার মাঝে জালিয়েও না।”
“তোমার সাথে কথা বলাই বেকার।”
তোরশা চলে গেলো।বিয়ের আসরে গিয়ে দেখলো কাজি চলে এসেছে।
আনিশা ভয়ে আছে কাজি না কালকের কথাটা বলে দেয়।কিন্তু না বলল না।আনিশা বেশ শস্তির নিশ্বাস নিলো।
বিয়ে সম্পন্ন হতেই কাজি চলে গেলো।এরপর আনিশার কাজিনরা বেশ মজা করল।এবার এলো বিদায়ের পালা।
ইয়াশে প্রচুর ঘুম পেয়েছে আজ সারাদিন বেশ ধকল গেছে।
আনিশাকে কান্না করতে দেখে নিজের অজান্তেই ইয়াশের খারাপ লাগতে শুরু করলো।
সকলকের কাছে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ইয়াশের পাশে আনিশা বসানো হলো। ইয়াশ আনিশার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
গাড়ি চলতে লাগলো আপন গতিতে।
একটি গাড়িতে শুধুই আনিশা আর ইয়াশ। বাকি গাড়িতে অন্যরা।
আনিশার কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গেছে।
ইয়াশ আর চুপ থাকতে পারল না।
আনিশার কাধে হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো।
আনিশা অবাক হলেও কিছু বলল না।
ইয়াশদের বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে আনিশা ঘুমিয়ে গেলো।
ইয়াশদের বাসায় এসে গাড়ি থামতেই সকলে এসে ভীর করে নতুন বউ দেখতে।বাড়ি ভর্তি মেহমান।
অনেক মানুষের হইচই শুনে আনিশার ঘুম ভেঙে গেলো।
চোখ খুলতেই দেখলো ও ইয়াশের বুকে। তারাতারি করে সরে গেলো।ইয়াশ শান্ত গলায় বলল,,
“রিলাক্স। আমি কিছু মনে করিনি।গিল্ট ফিল করো না।”
রাহিমা বেগম সব নিয়ম কানুন মেনে আনিশাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।
আনিশার পাশে মোহনা বসে আছে।মোহনার মন খারাপ তবুও হাসছে।বিষয়টা আনিশা খেয়াল করেছে।
মোহনা আনিশার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,,
“তুমি অনেক লাকি আনিশা। ইয়াশের মতো হাসবেন্ড পেয়েছো।আমার ভাই তোমার অনেক খেয়াল রাখবে।”
আনিশা উত্তরে শুধু হাসলো।এবার আনিশার সাথে দেখা করতে এলো ইয়াশের দাদি ফাতেমা বেগম।
যার জন্য বিয়েটা তারাতারি করতে হয়েছে।
নাহলে আনিশার এইচএসসির পরই বিয়েটা হতো।
ফাতেমা বেগম অসুস্থ। তার শেষ ইচ্ছা ইয়াশের বিয়েটা দেখার।
ফাতেমা বেগম অনেক আদর করেন আনিশাকে।আনিশাকে এক জোড়া বালা পড়িয়ে দেয় আর বলে,,
“এইটা এই চৌধুরী পরিবারের ঐতিহ্য। আমার শাশুড়ী আমাকে দিসিলো আমি আমার বউমাকে দিসি।আর এটা তোমাকে দিলাম। চৌধুরীরাণীরাই পায় এটা। ”
আনিশার বেশ অবাক লাগলো একটা বিষয় তা হলো ফাতেমা বেগম একবারো মোহনার সাথে কথা বলল না।
কারণ টা বুঝলো না আনিশা।ফাতেমা বেগম আরও কিছুক্ষণ আনিশার সাথে গল্প করে ঘরে গেলেন।
উনি বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না।কোমড়ে টান অনুভব করেন।
________________________________
রাত ১২:০৪,,
ফুলে সজ্জিত বিছানায় বসে আছে আনিশা।ঘুমে ঢুলে পড়ছে।ইয়াশকে আটকে দিয়েছে তার বন্ধুরা।
তাই এখনো আসতে পারেনি।
অবশেষে ইয়াশ এলো।এসে দেখে আনিশা ঘুমে ঢুলছে।
ইয়সশের পায়ের শব্দে তন্দ্রা ভাবটা কেটে যায় আনিশার।ও উঠে সালাম করে ইয়াশকে।ইয়াশ বলে,,
“বিবিজান দেখি ভদ্র হয়ে গেছে।”
ইয়াশের মুখে বিবিজান কথাটা শুনে অবাক হলো আনিশা।ইয়সশের দিকে অবাক নয়নে তাকালো।
ইয়াশ স্মিত হেসে বলল,,
“আজ থেকে তোমায় বিবিজান বলবো। আজ থেকে আমি তোমার পথ চলার সাথি আর তুমি আমার।চলো নতুন জীবনের সূচনাটা আল্লাহ ইবাদতের মাধ্যমে শুরু করি।নামাজ পড়ে নেই।”
আনিশা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
দু’জনে ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলো।
নামাজ শেষ করে আনিশা আয়নার সামনে দাড়ালো।পড়নে হালকা আকাশি রঙের কামিজের সাথে সাদা পাজামা। সাদা ওরনা।
নিজেকে নিজের কাছে অন্যরকম লাগছে আজ। কারণ কি? বিয়ের পর কি সত্যি তবে মেয়েদের পরিবর্তন হয়?আকাশ কুসুম ভাবনার ছেদ পড়ে কারো চিৎকারের আওয়াজে।
ইয়াশ ফোনে কি জেনো করছিলো চিৎকারের আওয়াজে ইয়াশ আনিশা দু’জন একসাথে রুম থেকে বের হলো।
চিৎকারের আওয়াজ এসেছে ইরফানের রুম থেকে।
দ্রুত সেখানে গিয়ে পা থমকে যায় আনিশার।
মোহনার হাত দিয়ে র/ক্ত পড়ছে।নিচে পড়ে আছে ও।ইরফান রুমে এসে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করেছে।
চলবে…!!
(মোহনার কি হলো হঠাৎ 🤔সু/ই/সা/ই/ড করল কেনো?আপনাদের কি মনে হয়?)