#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
(১৩)
পরেরদিন সকালে,,
ইয়াশ এখন আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে।ইরফান ইয়াশের সাথে আছে।ইয়াশের জ্ঞান ফিরলে ঘুমের মেডিসিন দেওয়া হয় তাই ও এখনো কাউকে দেখেনি।
আনিশা বসে আছে পাশে ওর আম্মু। ইয়াশের মা এবারো মূর্ছা গিয়েছেন আদরের ছোট ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে।তার পাশেই রিশাদ সাহেব নাক মুখ কুঁচকে বসে আছেন।ইরফান মায়ের কেবিনে এসে বাবাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বিচলিত কন্ঠ বলে,
“কি হয়েছে বাবা? কোনো অসুবিধা?এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো যে?”
রিশাদ সাহেব ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন।ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,
“তোমরা আমাকে শান্তি দিবে না বলে ঠিক করেছো হ/ত/চ্ছা/ড়া গুলো।।তুমি হারিয়ে গেলে, তারপর তোমার ভাই এমন করল,এখন তোমার মা মূর্ছা গিয়েছে।আমি কেনো এখনো সুস্থ আছি বুঝতে পারছিনা?”
ইরফান বুঝলো আবহাওয়া ভালোনা।কিছু করতে হবে।ইরফান বাবাকে তেল দিতে বলল,,
“আব্বু তুমি হলে ইয়াং। তুমি আমাদের থেকেও শক্তিশালি।আর তাই এখনো ভালো আছো।।”
“হ/ত/চ্ছা/ড়া বের হ এখান থেকে।আর তোর ভাইয়ের জ্ঞান ফিরলে ডাকবি আমায় একটা থা/প্প/ড় দেবো।আমার হার্টের প্রবলেম বাধানোর জন্য কাহিনী শুরু করেছে সব।”
ইরফান চুপিসারে বেরিয়ে এলো।বাবার মেজাজ সেই লেভেলের খারাপ।কিছু বললেই ছ্যাত করে উঠছেন।কাল অবদি চুপসে ছিলো।যেই ভোর রাতে শুনেছে ইয়াশ ভালো আছে।ব্যাস আগের ফর্মে ফিরেছেন।
এদিকে মুখ কাঁদো কাঁদো করে ইয়াশের পাশে বসে আছে আনিশা।ইয়সশের জ্ঞান ফিরতেই চোখ পিটপিট করে তাকায়।আনিশাকে দেখে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে।আনিশা ইয়াশের জ্ঞান ফিরতে দেখে ডক্টরকে ডাকে।
ডক্টর ইয়াশকে চেকআপ করে চলে যায়।ইরফান,আনিশা,আনিশার বাবা, রিশাদ সাহেব এখন ইয়াশের কেবিনে উপস্থিত। আনিশা ইয়াশের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
“কেমন লাগছে এখন তোমার?”
“কে আপনি?”
ইয়াশের প্রশ্নে সকলের কপালে ভাজ পড়লো।
” তুমি আমায় চিনতে পারছো না?”
“আব্বু দেখো এই মহিলা আমায় তুমি করে বলছে।”
আনিশার মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে।
রিশাদ সাহেব বুঝতে পারছেন না তার ছেলে কেনো নিজের বউকে চিনতে পারছে না তাজ্জব ব্যাপার!
ইরফান ডক্টরকে ডেকে আনলো।ডক্টর জানালো,,
“ওনার মাথায় আঘাত লেগেছে। আর তাই মেমোরি লস হয়েছে।যাকে বলে শর্ট টাইম মেমোরি লস।রিসেন্ট হওয়া বিষয়গুলো উনি ভুলে গেছেন।”
বলে ডক্টর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।রিশাদ হাসেব মাথায় হাত দিয়ে কেবিনে থাকা সোফায় বসে পড়েন।
ইরফান কি বলবে ভাবছে।কারন তার মা এ কথা শুনলে আবারো জ্ঞান হারাবেন।
আনিশা আর পারলো না শব্দ করে কেঁদে উঠলো।রিফাত সাহেব মেয়েকে শান্তনা দিচ্ছেন।আর ইয়াশ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
আনিশা কাঁদতে কাঁদতে বলছে,,
“এটা কেমন কথা বাবা! বিয়ের পর ৬ মাস সংসারই করতে পারলাম না।এখন সবটা ঠিক হলো আর উনি এভাবে সব ভুলে গেলো!।”
ইয়াশ রিশাদ সাহেবের দিলে তাকিয়ে বলে,,
“বাবা এই মহিলাকে যেতে বলো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছে শুধু।আমার রাগ লাগে মেয়েদের ন্যাকা কান্না দেখলে।”
আনিশা কান্না থামিয়ে বলল,,
“আপনি আমায় মহিলা বলছেন কেনো? আমি এখনো মহিলা হইনি।আর নিজের বউকে চিনেন না! আর কি দেখতে হবে আমায়?এই জন্য বিয়ে করতে চাইনি।”
ইয়াশ ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,,
“আমি আপনাকে বিয়ে করিনি তো।”
আনিশা এবারো জোড়েই কেঁদে উঠলো।ইরফান কি করবে ভাবছে।কারণ এর মধ্যে নার্স এসে বলে গেছে রাহিমা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে এবং সে ইয়াশের সাথে দেখা করতে চায়।
রিশাদ সাহেবের পাশে গিয়ে ইরফান বলল,,
“বাবা আম্মুর জ্ঞান ফিরেছে।”
রিশাদ সাহেব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলের দিকে।যেনো সে এক অদ্ভুত কথা বলেছে।হঠাৎ ই ইয়াশ বলল,,
“আম্মু। ”
সকলের দৃষ্টি এখন রাহিমা বেগমের দিকে।
রাহিমা বেগম ইয়াশের কাছে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।ইয়াশ ও মাকে জড়িয়ে ধরে।রাহিমা বেহম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,,
“আমাকে মাফ করে দে বাবা অনেক কথা বলেছি।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তোরা ২জনই যে আমার কলিজার টুকলো।তোদের কারোর কিছু হলে যে আমার বুকে এসে লাগে।”
“আম্মু এমনভাবে বলছো কেনো?”
ইয়াশ আর রাহিমা বেগম কথা বলছেন। রিশাদ সাহেব ইরফানের হাত ধরে নিচু করে কানে কানে বলেন,,
“একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করো তোমার মায়ের বসার জন্য।”
“কেনো আব্বু?আম্মুতো ভাইয়ার বেডের পাশেই বসে আছে।পড়ে এখানে এসে বসবে।চেয়ার লাগবে না।”
“ওরে হ/ত/চ্ছা/ড়া…”
আর বলতে পারলেন না তার আগেই সোরগোল শুরু হলো রাহিমা বেগম আবারো মূর্ছা গেছেন।ছেলে তার বউকে চিনতে পারছে না।এমনকি তাকেও সন্দেহ করছে।সে নাকি আগের থেকে শুকিয়ে গেছে।তাই সে তার মা কি না এটা নিয়ে ইয়াশ সন্দেহ করছে।
রাহিমা বেগম এই শক নিতে পারেননি তাই আবারো মূর্ছা গেলো।
ইরফান অসহায় ভাবে বাবার দিকে তাকালো।রিশাদ সাহেব ঝাঁজালো কন্ঠে বলেন,,
“বলে ছিলাম না আমি।”
_______________________________
১৫ দিন পর।
আজ ইয়াশকে বাসায় আনা হয়েছে।সবই ঠিকঠাক। তবে রাহিমা বেগম মুখ ভার করে আনিশাকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে আছেন।আনিশাও ভাবছে এ কেমন জামাই হলো তার! নিজের বউকে ভুলে গেলো কি সাঙ্ঘাতিক কথা!
ইয়াশ এসে রুমে গিয়ে দরজা দিয়েছে।রিশাদ সাহেব মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছেন।ইরফান কফির মগ হাতে নিয়ে গার্ডেনের দিক থেকে আসতেই সবাই এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে ফে/লে।
“আম্মু!ভাবী?”
কেউ কোনো জবাব দেয় না।রিশাদ সাহেব বলেন,,
“বাড়িটা সার্কাস হয়ে গেছে।এখন আরও কি কি দেখবো কে জানে?”
ইরফানের হাসি পেলো তবুও কন্ট্রোল করল।রাহিমা বেগম বললেন,,
“তুমি এসব রাখো। আমার কথা হলো ডক্টরটকে কেনো কিছু বললে না?ওই ডক্টর কিছু করেছে।নাহলে আমার ওমন ভোলাভালা ছেলে এভাবে বউ আর মাকে কেনো ভুলবে?”
“তোমার কি মনে হয় ইয়াশের মা আমি কোনো ষ/ড়/য/ন্ত্র করেছি? ”
“করতেই পারো।ছেলে মা পাগল কি না তোমার তো সহ্য হয়না।তাই বলে এই মাসুম বউমাটার কথা ভাব্বে না?”
ইরফান কপাল চাপড়ালো।কেনো এসে কথা বলল? এখন এরা ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।
যদিও ভালই লাগছে বাড়িটা আগের মতো হয়ে গেছে।
বিকেল ৫টা।
ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে এসে দেখে সবাই ঘুম।আনিশা সোফায় বসে মুভি দেখছে।ইয়াশ এসে ওকে বলে,,
“এই যে আপু আমায় খাবার বেড়ে দিন তো।”
আনিশা একবার ইয়াশের দিকে তাকালো।তারপর পাশে রাখা নিজের ফোন স্ক্রিনে নিজেকে একবার দেখে
নিলো। নাহ তাকে তো আপু বা মহিলা এমনটা লাগছে না।তাহলে কেনো ইয়াশ তাকে বার বার এমন করে বলছে?দুঃখি দুঃখি মুখ নিয়ে গেলো খাবার গরম করতে।
ইয়াশ খাচ্ছে আনিশা পাশে বসে আছে।একটু পর পর নাক টেনে কান্না করছে।ইয়াশ খাওয়া রেখে আনিশার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপনি কি ছ্যা/কা খেয়েছেন আপু?আপনার বয়ফ্রেন্ড আপনাকে ছেড়ে গেছে?তাই এভাবে কাঁদছেন?”
আনিশা ছ্যাত করে উঠলো ইয়াশের কথায়।
“লজ্জা লাগে না হ্যা?নিজের বউকে চিনেন না?”
“আমি বিয়ে করিনি তো।আর যদি আপনি আমার বউ হতেন তুমি করে বলতেন আপনি না তাই না।”
“কি খা/চ্ছোর আপনি🙂।হসপিটালে তুমি বলেছিলাম বলে কম কথা শোনান নি।আমি বুঝে গেছি আমাকে দিয়ে সংসার হবে না।”
আনিশা উঠে চলে গেলো।ইয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,
“নারী মানেই এক অদ্ভুত চরিত্র। আমি ভালো কথা বলেছিলাম আর আমাকেই ঝাড়ি দিলো! ভালো মানুষের দাম নেই সমাজে।”
বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ইয়াশ।
______________________
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে ঘুমাতে গেছে।আনিশাও ইয়াশের রুমে এসে কাবাড থেকে একটা গোলাপি রঙের ২পিস নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলো।ইয়াশ বারান্দায় তখন।
চেঞ্জ করে এসে দেখে ইয়াশ সুয়ে পরেছে।আনিশা লাইট অফ করে ইয়াশের পাশে গিয়ে সুয়ে পরে।
রাত প্রায় সাড়ে তিনটের কাছাকাছি তখন এক চিৎকারে লাফিয়ে উঠে আনিশা।ইয়াশ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আনিশা জিজ্ঞেস করে,,
“কি হয়েছে?চেচাচ্ছেন কেনো এতো রাতে?”
“আপনি তো আপু সুবিধার না! এতো রাতে আমার রুমে কেন?আমার সব কেড়ে নিতে এসেছেন?ছি ছি পুরুষ নির্যাতন আইন নেই বলে এভাবে আপনি আমার রুমে আসবেন!”
আনিশা তবদা খেয়ে গেছে ইয়াশের কথা শুনে।এটা কি বলল এই লোক।আনিশা বলে,,
“আপনি তো আচ্ছা ব/দ লেক হ্যা।বউ আমি আপনার এসব আপবাদ একদম দিবেন না।আর যদি একটা আওয়াজ ও করেছেন তো সত্যি আপনার সব কেড়ে নিবো ব/দ লেক একটা।ঘুমান।”
আনিশা কথা গুলো বলে পাশ ফিরে সুয়ে পড়ে।ইয়াশ মনে মনে বলে,,
“মেয়ে মানুষ ভালোনা কথায় কথায় ছ্যাত করে উঠে হুহ।”
ঘুমিয়ে পড়ে ও।
পরেরদিন সকাল ৯টা বাজে।আনিশা দরজার পাশে ওয়েট করছে কখন ইয়াশ বাসায় ঢুকবে আর ও হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ওর মাথায় বারি দিবে।আনিশা শুনেছে আঘাত লাগা স্থানে আবারো আঘাত পেলে সৃতি ফিরে আসার সম্ভবনা আছে।ইয়াশ ৭টায় উঠে জগিং করতে গিয়েছে।ফেয়রার সময় প্রায় হয়ে গেলো।
আনিশা দরজার বাহিরে উকি গিয়ে দেখলো একটা ছায়া এদিকেই আসছে।আনিশা বিসমিল্লাহ বলে দিলো এক বারি।তারপর যা দেখলো তাতে ওর মাথা ঘুরে উঠলো 🙂🙂।#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
অন্তিম পর্ব
আনিশা যাকে বারি মে//রে/ছে সে আর কেউ নয় রিশাদ সাহেব।আনিশা কি করবে ভেবে পায়না।রিশাদ সাহেব ওকে দেখার আগেই দৌড়ে রুমে চলে যায়।
এদিকে রিশাদ সাহেবের মাথায় আলু উঠে গেছে।
কিছুক্ষণ পর,,
রাহিমা বেগম দেখেই সন্দেহ গলায় বলেছেন,,
“কাকে টিজ করতে গিয়ে গ/ণ/ধো/লা/ই খেয়ে এসেছো?”
রিশাদ সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।মাথায় বরফ ধরে বসে আছেন।চুপ করে আছেন।এখন কথা বলে কথা বাড়াতে উনি চান না।
ইয়াশ এসেছো একটু পরে।।
আনিশা হল রুমে আসতেই রাহিমা বেগম বলে উঠেন,,
“দেখো বউমা এই বয়সে বধহয় আমার কপাল পুড়বে।কিছু বুঝতে পারছিনা এই লোক কি চায়।অসভ্য। ”
রিশাদ সাহেব দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলেন,,
“একদম বাজে কথা বলবে না রাহিমা। ”
“অন্যায় করে আমার আমাকেই ধমকাচ্ছেো!”
রাহিমা বেগম বকবক শুরু করলেন।আনিশা শস্তির শ্বাস নিলো যাক কেউ ওকে দেখেনি।পড়ে শশুর মশাইয়ের থেকে মাফ চেয়ে নিবে।
২মাস পর,,
ইয়সশ এখন পুরোপুরি সুস্থ সবাই চিনতে পেরেছে কিন্তু আনিশাকে চেনেনা। আনিশাকে আপু বলে।আর আনিশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
এমনি একদিন।আনিশা ড্রইং রুমে বসে রাহিমা বেগলের সাথে গল্প করছিলেন তখনই কলিং বেল বাজে।আনিশা দরজা খুলে দিতেই একটি মাঝ বয়সি মেয়ে দৌড়ে গিয়ে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে।আনিশা থ হয়ে তাকিয়ে আছে।ইয়াশও অবাক হয়েছে। মেয়েটি ইয়াশকে বলে,,
“মিস ইউ রে কতদিন দেখি না তোকে হুম।ভাব নিস বেশি।আগে কল দিতি এখন তাও দিস না।ঢং।”
ইয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ঝাড়ু এসে সামনে পড়ে ওর।ইয়াশ সহ মেয়েটি তাকিয়ে দেখে আনিশা হাতে আরো ২ টা ঝাড়ু নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
“আমার জামাইয়ের থেকে সরে যাও পে/ত্নী। সাহস কিভাবে হয় ওর সাথে চিপকে যাওয়ার? ও আমাকে চেনেনা বলে যা ইচ্ছা তাই করবে তুমি?সর।”
বলে ঝাড়ু নিয়ে তেরে গেলে মেয়েটি ইয়াশের পিছে লুকিয়ে পড়ে।রাহিমা বেগম থামতে বলেছেন কিন্তু আনিশা শুনছে না।আনিশা মেয়েটির পিছু ঝাড়ু নিয়ে ছুটতে লাগলো একসময়।পুরো হল রুম দৌড়ে চলেছে তারা। মেয়েটির পিছে ঝাড়ু হাতে আনিশাও সমান তলে দৌড়।
আনিশা দৌড়াতে দৌড়োতে হঠাৎ এক টান অনুভব করল।ইয়াশ ওকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়েছে।
“রিলাক্স। কিভাবে ছুটছো পড়ে যাবা।”
“গেলে কার কি হ্যা।ওই পে/ত্নী/কে আমি মে/রে ফেলবো।”
বলে আনিশা ইয়াশকে ছাড়িয়ে আবারো দৌড়।মেয়েটি ইয়াশের পিছে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। আনিশা ওর মাথায় ঝাড়ু দিয়ে বারি দিতে গেলেই মেয়েটি ইয়াশের পিছের থেকে সরে যায় আর বারি লাগে ইয়াশের মাথায়।
আনিশা নিজেও হা হয়ে যায়।এটা কি করে ফেলল ও।ইয়াশ ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে।রাহিমা বেগম ইয়াশের দিকে ছুটে গেলো।মেয়েটি যেতে নিলে আনিশা বাধা দিলো। আনিশা পানি নিয়ে গিয়ে ইয়াশের মুখে দিলো ইয়াশের জ্ঞান ফিরল।জ্ঞান ফিরতেই ও বলল,,
“আনিশা তুমি এভাবে ঝাড়ু হাতে দাড়িয়ে আছো কেনো?”
আনিশা কি বলবে ভেবে পায়না।হাত থেকে ঝাড়ু ফেলে ইয়াশকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
“আপনি ঠিক হয়ে গেছেন?আমি কত আপেক্ষা করতাম আপনি কবে আমায় চিনতে পারবেন তার জন্য।আমি ভাবিনি আপনি আমায় আবার চিনতে পারবেন।”
রাহিমা বেগম মেয়েটির হাত ধরে ওখান থেকে চলে যান।
ইয়াশ আনিশাকে বলে,,
“আমি তো তোমায় রোজ আনিশা বলে ডাকতাম তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর।”
আনিশা অবাক চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,,
“তার মানে আপনি ঠিক হয়ে গিয়েছেন আগেই!”
“হুম আগের মাসে ডক্টর দেখিয়ে ফেরার সময় একটা কার এ/ক্সি/ডে/ন্ট হতে দেখায় ওইখানেই সব মনে পড়ে যায় আমার।কিন্তু প্রকাশ করিনা।আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমার কতটুকু ভালেবাসো?”
“আপনি খুব খারাপ।”
বলে ইয়াশের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে আনিশা।
ইয়াশ বলে,,
“যাকে তুমি ঝাড়ু দিয়ে পিটাতে চাইছিলে সে তোমার ননদ। আব্বুর ছোট ভাইয়ের মেয়ে নাফিসা।”
একথা শুনে আনিশা জিভে কামড় দেয়।ইস কি কান্ডটাই না করল সে।রাহিমা বেগম অবশ্য রাগ করেননি আনিশার উপর। নিজের স্বামীর সথে কাউকে এমন ভাবে দেখলে এমনটাই করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
_______________________________
২বছর পর,,,
এখন সব বদলে গেছে।ইয়াশ এখন ফ্যামিলি বিজনেসে জয়েন করেছে।ইরফান আর বিয়ে করেনি।রাহিমা বেগম এখন কাঁথা সেলাই করেন অবসর সময়ে।কারণ সামনেই তার নাতিনাতনি আসতে চলেছে।হুম আনিশা প্রেগনান্ট।
আনিশা তো সারাদিন বসে বসে বোর হয়।ইয়াশকে ফোন দিয়ে বকে ইয়াশ হাসে। তাতে আনিশার আরও রাগ উঠে।
ক দিন আগেই একদিন রাতে আনিশার ঘুম আসছিলোনা।পা জ্বালা করছিলো।ইয়াশ ঘুমে ছিলো।আনিশা এক চিৎকার দিয়ে কেদে উঠে।ইয়াশ লাফিয়ে উঠে বলে।
“কি হয়েছে বউ?কাদছো কেনো?”
“আনিশা কেদেই চলেছে।
ইয়াশ আর কয়েকবার জিজ্ঞেস করতেই আনিশা বলে ,,
” আমি যদি ম/রে যাই তাহলে খবরদার আর বিয়ে করবে না।আমি অতো মহান না যে আপনাকে শেয়ার করবো।”
বলে আবারো কান্না করে।এদিকে ইয়াশ বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
“তুমি এই জন্য এতো রাতে কাদছো? ওরে পাগলি আমি শুধু তোমাকেই ভালেবাসি।কেনো তুমি এমন ভাবছো যে তোমার কিছু হবে?আমি আছি তো।আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিবো না।কাদে না।আসো বুকে এসে শুয়ে পড়ো।”
আনিশা ইয়াশের বুকে মাথা রাখতেই ইয়াশ আনিশার সামনে ১টি চকলেটের বক্স ধরে।
“নাও খাও।তোমার তো খিদেও পেয়েছে। তাই এসব ভুলভাল ভাবছো।”
“তুমি জানলে কিভাবে?”
“আমি জানবো না? আমার বউয়ের সব কিছু আমি জানি বুঝলে।”
আনিশা মিষ্টি হাসি দিয়ে চকলেট খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
কেটে গেলো ৯টি মাস। সময় খুব দ্রুত চলে যায়।আনিশার ডেলিভারির ডেট আজ।ও.টির সামনে পাইচারি করছে ইয়াশ।আনিশার বাবা, মা, রাহিমা বেগম, রিশাদ সাহেব, ইরফান সবাই হসপিটালে উপস্থিত। ইয়াশকে ও.টির ভিতরে যেতে বলা হয়েছিলো। গিয়েছিলে ও কিন্তু ও.টির চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিতেই জ্ঞান হারিয়েছে ইয়াশ।তাই ওকে আর ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি।১ঘন্টা হয়েছে এখনো ডক্টর রা কিছু বলেনি।ইয়াশ টেনশনে ঘেমে গেছে।
ইয়াশ আর না পেরে বলে উঠে,,
“আমাকে এভাবে দাড় করিযে রাখার মানে আছে?আমি ভিতরে যাবো।বউকে দেখবো।টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছি। ”
রিশাদ সাহেব বলেন,,
“মায়ের মতো মূর্ছা গিয়েছো একবার।আবার যেতে চাও? চুপচাপ বসো। ডক্টর বের হলে কথা বলবা।”
ইয়াশ তবুও নিজের মনকে শান্ত করতে পারলো না।
কিছুক্ষণ পর নার্স তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে দু’টো ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে এলো।আনিশার টুইন বেবি হয়েছে।একটা ছেলে একটা মেয়ে।নার্সটি ইয়াশের কোলে দিলো দু’জনকে।ইয়াশ অবাক হয়ে দুজনকে দেখছে।তার বিশ্বাস হচ্ছে না সে বাবা হয়েছে।এ যেনো এক অন্যরকম সুখানুভব।
রাহিমা বেগম ইয়াশের কাছে গিয়ে একজনকে কোলে নেয়।
রিশাদ সাহেব নাতি নাতনির মুখ দেখে বলেন,,
“মাশাল্লাহ। ”
ইয়াশ দু’জনের কানে আজান দেয়। আনিশার কথা এ নিয়ে ১৫ বার জিজ্ঞেস করেছে নার্সকে বাবু দেওয়ার পর। ২বার বের হয়েছে নার্স আর ২বারই জিজ্ঞেস করেছে।নার্স একই কথা বলেছে “আপনার ওয়াইফ ভালো আছেন।কিছুক্ষণ পর বেডে দেওয়া হবে তখন কথা বলতে পারবেন।”
আনিশাকে বেডে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই জ্ঞান ফেরে ওর।আনিশার পাশে বাবুদের রেখে সবাই বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।ইয়াশ থেকে যায়।
ইয়াশ আনিশার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলে,,
“ধন্যবাদ ওয়াইফি আমাকে পূর্ন করে দেওয়ার জন্য।”
আনিশা উত্তরে মিষ্টি হাসে। বলে,,
“আজ যদি আমার কিছু হয়ে যেতো তাহলে ওদের আপনার একা মানুষ করতে হতো।”
“হুসস এসব বলবে না।কিছু হবে না।অনেক বাধা পেরিয়ে এক হয়েছি আমরা।আল্লাহ আমাদের আলাদা করবেন না। #তোমাতেই_সীমাবদ্ধ_আমি। তোমার কিছু হতেই পারে না। এমন কথা আর বলবে না।”
আনিশা কিছু বলেনা।ইয়াশ বাবুদের সাথে খেলছেে।
আনিশা মন ভরে দেখছে।এ যেন নতুন এক ইয়াশ।
এখন থেকে হেসে খেলে আনন্দে কাটবে ওদের জীবন। অনেক বাধা পেরিয়ে এক হয়েছে ওরা।আবারো হয়তো কোনো গল্পে ওদের দেখা মিলবে নতুন রুপে।
ততদিন সবাই ভালো থাকবেন।
ওদের জন্য দোয়া করবেন।
_______________সমাপ্ত_________________