#তোমাতে আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (১)
কবুল বলার ঠিক আধ ঘন্টা আগে ৬ পৃষ্ঠার একটা চিঠি পেলো মাহির। এমন অন্তিম সময়ে হঠাৎ বিয়ের কনের পাঠানো চিঠিটা খানিকটা ঘাবড়ে দিলো মাহিরকে। কি আছে এই চিঠিতে? কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়ো হতে লাগলো। কেন জানি চিঠিটা খুলতে ভয় লাগছে। চিঠিতো চিঠিই তাহলে এতো ভয় লাগার কি আছে? মনে অনেক সংসয় আর ভয় নিয়ে চিঠির ভাজটা খুললো মাহির। প্রথম পেজেই একটা angry emoji আকা দেখে যথেষ্ট ঘাবড়ে গেলো। সাথে সাথে চিঠিটা আবার আগের ন্যায় ভাজ করে নিলো।
“”কিরে মাহির এসব আমি কি শুনছি? একটা মেয়েকে না দেখেই বিয়ে করতে হামলে পড়েছিস? তোর বুদ্ধীকি সব হাটুর নিচে ঘুমাচ্ছে?””
হঠাৎ খালামনির আগমনে মাহির চিঠিটা বিছানার নিচে রেখে দিলো।
“”হামলে পড়ছি মানে?””
“”হামলে মানেও বুঝিসনা? অথচ বিয়ের জন্য নাচতে নাচতে মেয়ের বাড়ি চলে এলি? একবার আমাকে জানালিও না? আজ যদি তোর মা…..””
“”খালমনি তুমি কি এই ডায়লগটা মাটি চাপা দিবেনা? আর আমি তো নিজেও জানতাম না যে আজ আমার বিয়ে!””
“”জানতিসনা মানে? তুই কি বুঝাতে চাচ্ছিস তোকে ওরা জোর করে বিয়ে পড়াচ্ছে? এতে তোর কোনো মত নাই?””
“”সে রকমও না খালামনি।””
“”তাহলে কি রকম? আমার কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে মাহির। কি হয়ছে ঠিক করে বল। আর তোর মুখ এমন শুকিয়ে গেছে কেন? মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে অথচ ঘেমে তো গোসল করে ফেলছিস। ওরা কি তোকে কিডন্যাপ করছে? সত্যি করে সব বল,তোর খালুতো পুলিশ ডিপার্টমেন্টেই আছে শুধু একটা কলে দেখবি পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলবে।””
খালামনির কথায় মাহির কোনো উত্তর দিলোনা। কথায় কথায় স্বামীর ক্ষমতা দেখানো উনার একটা স্বভাবে পরিনতি হয়েছে। মাহির সেদিকে নজর না দিয়ে বিয়ের কনের চিঠিতে কি থাকতে পারে সেটা নিয়ে গভীর মনোনিবেশনে ব্যস্ত হলো।
“”এখন চুপ করে আছিস কেন মাহির? কাকে বিয়ে করছিস তাকে তো একবার দেখে নিবি। সেটাও করিসনি এখন যদি মেয়েটা কালা,বোবা,ট্যারা হয়? এমনি এমনি কি দেখতে দেয়নি? নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে নাহলে কি তোর কপালে গুজে দিতো?””
“”খালামনি তুমি কি একটু চুপ করবে? আমার মাথা ধরেছে।””
“”মাথাতা ধরবেই কেমন মেয়ে মাথায় এসে চড়েছে কে জানে? আসার আগেই তোর মাথা ধরিয়ে দিলো।তাহলে ভাব এসে কি কি করবে??””
মাহিরের কাছে তেমন কোনো কথার ফোড়ন না পেয়ে মিসেস ইরানী সেখান থেকে ত্যাগ করলেন। কোথায় ভেবেছিলো রাজপুত্রের মতো ছেলে মাহিরের সাথে এক রাজকন্যার বিয়ে এনে ঘরে তুলবে যার চেহারার লাবন্যই পুরো ঘর আলোকিত করবে সেখানে কিনা এমন মেয়ে জুটলো? সংসারে ছেলেটার কেউ নাই সংসারটাকে ঘুছানোর জন্য নাহলেও তো একটা সংসারী মেয়ে লাগবে আমি আর কতদিন এভাবে ছেলেকে গুছিয়ে রাখবো? আজ যদি বড় আপাটা থাকতো!!
“”স্যার কাজী এসে গেছেন সবকিছু গুছগাছ হয়ে গেছে আপনি শুধু কবুল বলবেন ব্যস বিয়েটা হয়ে যাবে।””
“”আজিজ আমাকে একটু ঠান্ডা পানি খাওয়াবে? বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।””
“”স্যার আপনি বসেন আমি এখনি পানি নিয়ে আসছি। বিয়ে করা মানে বিশাল এক যুদ্ধে যাওয়া আপনার তো গলায় শুকাবেই।””
বিয়ে মানে যুদ্ধ করা?? বিয়ে আর যুদ্ধ কি এক হলো? এই আজিজটাও না আসলেই….
“”স্যার এই নিন পানি””
মাহির পানিটা নিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলো। মনে হলো ২৪ বছর বয়সের জীবনে এত মজার আর সুস্বাদু পানি সে কখনো খায়নি। পানি যে এত সুস্বাদু হয় এটা জানা ছিলোনা।
“”পানিটা কোথা থেকে আনছো আজিজ? এক গ্লাস কেন আনছো?””
“”আমার কি দোষ স্যার আমি তো পানি আনার জন্যই যাচ্ছিলাম হঠাৎ এক ঘোমটা পড়া মেয়ে এসে আমাকে ডেকে এই পানি আর চিরকুটটা দিলো””
আজিজ চিরকুটটা মাহিরের দিকে এগিয়ে দিলো। চিরকুটটা খুলেই মাহির বেশ অবাক হলো,
“”I will kill u Mahir.**
মাহির বেশ ঘাবড়ে গেলো এই বাড়িতে তার কোন শত্রু আছে যে কিনা তাকে মারতে চাই? কিন্তু নিচে তাকাতেই পরক্ষনেই ছোট্ট করে অথৈ লেখা দেখতে পারলো। তারমানে আমার হবু বউ????
“”স্যার কি হলো? এমন তব্দা হয়ে গেলেন কেন? ওটাতে কি লেখা আছে?””
“”তুমি আমার সামনে থেকে এখনি বের হয়ে যাও। যতক্ষননা আমি তেমাকে ডাকবো ততক্ষন তুমি আমার সামনে আসবেনা। আর খবরদার যদি আর কোনো মেয়ের কাছ থেকে কোনো কাগজ নিয়েছো আমি তোমার নামে মামলা করে দিবো বুঝছো? Now get lost.””
আজিজ বেশ মন খারাপ করেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সামান্য একটা কাগজ নেওয়ার জন্য এভাবে আমাকে ধমকালো তাও আবার আমার নামে মামলা করবে বলে হুমকি দিলো?
বিয়ের কার্য সুন্দরভাবে ঘটে গেলো। নিজের বউকে তখনো দেখেনি, বেশ বড় ঘোমটা দিয়েই মাহিরের পাশে বসেছিলো। পেপারে সিগনেচার দেওয়ার সময় হাতটা দেখা হয়েছে একদম মাখনের মতো নরম আর সাদা কালার ছিলো তারমানে আর যাইহোক সে কালোনা।আবার রুম থেকেও নিজের পায়ে হেটেই বের হয়েছে তারমানে সে খুড়াওনা। যাক খালামনির চিন্তা অনেকটা কমে গেলো।
“”বাবা তুৃমিএখানে বসে আছো যে?””
“”স্যার,না মানে,একটু ওই আর কি।””
“”মাহির সম্পর্কে এখন আমি তোমার বাবা হয়। স্যার না।””
“”জ্বী স্যার।””
মাহিরের মুখে আবার স্যার শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন এনামুল হক। মাহিরে কাধে হাত দিয়ে বিনয়ভাবে বললেন,
“”আজ ছয় বছর পর তোমার সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর কেন জানি মনে হলো তুমিই একমাত্র ছেলে যার কাছে আমার মেয়েকে সপে দিয়ে আমি শান্তিতে মরতে পারবো।””
“”স্যার!””
“”Call me **বাবা** মাহির।””
মাহির আর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পাড়লোনা এনামুলের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। প্রাইভেট পড়ার সময় স্যারের এই বুকটা বেশ লোভাতুর চোখেই দেখা হতো। মাঝে মাঝে মনে হতো ইশ কেন যে উনি আমার বাবা হলেননা। এত মায়া, ভালোবাসা,আর স্নেহময় ব্যবহার আর কারো কাছে কখনো পাওয়া হয়নি।চোখ ভিজিয়ে আনন্দের কান্না করে মন ভরে কয়েকবার বাবা ডেকে নিলো মাহির। যার বাবা ডাকার কখনো সুযোগ হয়নি সেই জানে বাবা ডাকে কতটা অভিমান লুকিয়ে থাকে,কতটা আবেগ লুকিয়ে থাকে।
মাহির ঘন্টাখানিকের মতো অথৈয়ের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে। দরজাটা ছুতেও হাত কাপছে খোলাতো দুরের থাক। যে মেয়ে খুন করবে বলে হুমকি দেয় সে মেয়ে আমাকে কাছে পেলে কি করবে আল্লাহই জানে। কিন্তু রুমেতো তার যেতেই হবে। কয়েকটা সুরা পড়ে বুকে ফু দিয়ে নিলো মাহির। বিসমিল্লাহ বলে দরজাটা দুহাত দিয়ে ধাক্কা দিলো কিন্তু খুললোনা।
মাহির বেশ শক্তি প্রয়োগ করেও যখন দরজা খুলতে পারলোনা তখন বুঝেই নিলো খুনীরানি চায়না সে রুমে যাক তাই দরজাটা ভেতর থেকে আটকিয়ে দিয়েছে। তাহলে আজ সারা রাত কি আমাকে বাইরেই থাকতে হবে?????
চলবে