#তোমাতে-আসক্ত
নীলচুড়ি(রোকসানা)
পর্ব (১৪)
মাহির হসপিটালে ঢুকতেই তার খালুর সাথে দেখা হলো।
“”খালু কি হয়েছে? তোমরা এখানে কেন?””
“”আরমানের খুব বাজে অবস্থা মাহির। আইসিওতে ভর্তি আছে।””
“”কি বলছো কি? কিভাবে কি হলো? আর অথৈ?? অথৈ কোথায় খালু??””
“”তুমি যাওয়ার পর সব ঠিকই ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই আরমান বমি করতে থাকে। রেজিস্ট্রিতে সাইনও করতে পারেনি এমনকি কবুলটাও বলা হয়নি। বমি করতে করতে এক পর্যায়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। তোমাকে অনেকবার কল করেছিলাম কিন্তু তোমার ফোন অফ পেয়েছি। এদিকে অবস্থা খুব খারাপ দিকে যাচ্ছিলো তাই আর কিছু না ভেবেই হসপিটালে নিয়ে আসি। তুমি তাড়াতাড়ি অথৈর কাছে যাও। ওকে সামলানো দরকার। আমি রক্তের ব্যবস্থা করছি।””
মাহির দ্রুত অথৈর কাছে যেতে লাগলো। কি থেকে কি হয়ে গেলো। তার সাথেই কেন এমন অগোছালো ঘটনা ঘটবে?? তার জীবনটা কি এভাবে অগোছালো দুর্যোগেই আটকে থাকবে???
“”মাহির তুই এসেছিস,বাবা? দেখ তো অথৈ এমন পাথরের মতো হয়ে গেছে কেন?? ছেলেটাকে যে মরে যাচ্ছে সেদিকে ওর কোনো খেয়ালই নেই,মনে হচ্ছে বোবা,কালা হয়ে গেছে। আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। তখন থেকে কত কি বলে যাচ্ছি কোনো রেসপন্সই করছেনা। শুনেছিলাম অতি শোকে পাথর হয়ে যায়। তোর বউকি পাথর হয়ে গেলো??””
মাহির খালামনিকে অগ্রাহ্য করে অথৈর কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো। অথৈর হাতদুটো নিজের গালের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
“”অথৈ,আরমানের কিছু হবেনা। আমি কথা দিচ্ছি ওর কিছু হতে দিবোনা। দরকার হলে আমার দুটো কিডনিই ওকে দিয়ে দিবো। তবুও তেমাদের ভালোবাসার অসম্পুর্ন হতে দিবোনা। তুমি প্লিজ একটু কথা বলো।””
“”….””
“”অথৈ প্লিজ কিছু তো বলো। কি হয়েছে তোমার??অথৈ??””
মাহির অথৈর দুবাহু ধরে ঝাকি দিতেই অথৈ মাহিরকে জড়িয়ে ধরলো। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে লাগলো,
“”আমি আরমানের শেষ ইচ্ছেটা পুরন করতে পারিনি,মাহির। আমি আমার প্রমিস রাখতে পারিনি। আরমান কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে???””
“”কে বলেছে পারোনি? তুমি সব পারবে অথৈ। আরমানের কিছু হবেনা। আমি এখনি ড. এর সাথে কথা বলে আসছি। ওর কিছু হবেনা। ও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা। তুমি একটু শান্ত হও অথৈ। আমার ওপর ভরসা রাখো।””
অথৈর আবার কোনো রেসপন্স না পেয়ে মাহির ওর মাথা তুলে ধরলো। কয়েকবার অথৈ অথৈ বলে ডেকেও যখন কোনো সাড়া পেলোনা,মাহির চিল্লাতে লাগলো। ওর চিল্লানোর শব্দে পুরো হসপিটালের মানুষ জড়ো হয়ে গেলো।
“”ড. আমার অথৈর কি হয়েছে??””
“”শান্ত হোন,উনার তেমন কিছু হয়নি। অতিরিক্ত টেনশনের কারনে এমন হয়েছে। একটু পরেই জ্ঞান চলে আসবে।””
“”আর আরমান? আরমানের কি হয়েছে ডক্টর? ও ঠিক হয়ে যাবে তো?””
“”উনার খুবই খারাপ অবস্থা। দুটো কিডনিই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া….””
“”যদি আমি কিডনি দিয়ে দেয় তাহলে কি ওকে বাচানো সম্ভব না??””
ডক্টর মাহিরের কাধে হাত রেখে শান্তনা দিতে লাগলেন।
“”সরি ও মৃত্যুর একদম লাস্ট স্টেজে চলে এসেছে আর তাছাড়া সবথেকে বড় কথা হলো এই মুহুর্তে উনাকে বাচানোর জন্য রক্ত দেওয়া প্রয়োজন কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো রক্ত দিলেও উনি মারা যাবেন। হয়তো রক্ত না দিয়েও আমরা আরো কিছুক্ষন বাচিয়ে রাখতো পারবো। আল্লাহর ইচ্ছেতেই মৃত্যুবরন করবেন।””
“”ওকে বাচানোর কোনো বিকল্প পথ নেই ডক্টর?? ওকে বাচানোর যে খুব প্রয়োজন।””
“”দেখুন আমার এতো দিনের অভিজ্ঞতা বলছে এখন অপারেশন করা মানে নিছক পাগলামী হবে। হয়তো উনার কিছু মূল্যবান সময় যেটা রিলেটিভদের সাথে কাটিয়ে যেতে পারবেন সেটা নিজের হাতে শেষ করে দেওয়া হবে।””
মাহির অথৈর পাশে বসে পড়লেন। অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,
আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না অথৈ। নিজেকে আজ খুব ব্যর্থ মনে হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। অথৈর জ্ঞান ফিরতেই উঠে বসলো।
“”মাহির,আরমান কি সুস্থ হয়েছে? আপনি তো বলেছেন আপনি সব ঠিক করে দিবেন। কি হলো চুপ করে আছেন কেন? বলুননা। আরমান কোথায়???””
অথৈ মাহিরকে রেখে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো। আরমানের কাছে এসে ওর পাশে বসে পড়লো। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো,
“”আরমান দেখ তোমার অথৈমনি তোমার জন্য কান্না করছে। যে তোমাকে সবসময় ধমকাতো,রাগ দেখাতো সে তোমার জন্য আজ কান্না করছে। তোমার না খুব ইচ্ছে ছিলো আমার চোখের পানি তুমি নিজের হাতে মুছবে,তাহলে এখন মুছে দিচ্ছোনা কেন?””
অথৈর পিছু পিছু মাহিরও ছুটে এলো। কিন্তু ভিতরে ঢুকার সাহস হলোনা। নিজের মা বাবার মৃত্যুর যন্ত্রনায় ছটফট করার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আজকে আবার একই দৃশ্য দ্বিতীয়বার দেখার সাহস হলোনা মাহিরের। থাকনা ওরা দুজন, নিজেদের মতো কিছু সময় কাটিয়ে নিক। আচ্ছা আমার এখন কি করা উচিত? আমার কি কিছুই করার নেই??
এনামুল হক আরমানের কাধে হাত রাখলেন।
“”মাহির বাবা,নিয়তির খেলা বড় কঠিন। যা হবেই তা নিয়ে সময় নষ্ট করা মানে বোকামী। সবকিছুর সাথেই মানিয়ে নিতে হয়। এভাবে ভেংগে পড়ছিস কেন?? তুই যদি এভাবে ভেংগে পড়িস আমার অথৈ মাকে দেখে রাখবে কে??””
“”আমি কিছুই করতে পারলামনা বাবা,নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। আজ যদি আরমান আমার ভাই হতো তাহলে?? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন অবুঝ আর অসুস্থ ছেলেটাকেও আমি মেরেছিলাম। আমার বেখেয়ালির জন্য এই শেষ মুহুর্তেও মার খেয়েছিলো,চোরের অপবাদ শুনতে হয়েছিলো। আমি খুব খারাপ,আপনার স্টুডেন্ট মানুষ হতে পারেনি,স্যার!”””
“”কে বলেছে আমার স্টুডেন্ট মানুষ হতে পারেনি?? কয়টা ছেলে আছে যে অন্যের হাতে নিজের বউকে তুলে দিতে পারে শুধু তাদের সুখী রাখার জন্য? আজ যদি তোর জায়গায় অন্য কেউ হতো তাহলে কি অথৈর মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারতো?? আমার তোর জন্য গর্ব হচ্ছে মাহির,তুই কোমল মনের মানুষ হয়েছিস…..””
এনামুল হকের কথা শুনার কোনো পরোয়া না করেই মাহির হঠাৎ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো।
অথৈর চোখে বন্যা বয়ে যেতে লাগলো। এত কষ্ট পাচ্ছে কেন? এই পাগলটা শেষমেষ আমাকে কাদিয়েই ছাড়লো।
“”কি হলো আরমান তুমি কি আমার কান্নার শব্দ শুনতে পারছোনা? তুমি তো বলেছিলে একদিন আমি ঠিকই তোমার জন্য কান্না করবো। আর সেদিন তুমি নিজের হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিবে। দেখ আজ তুমি জিতে গেছো। তোমার অথৈ ঠিকই তোমার জন্যে কান্না করছে। কিন্তু তুমি তো পানি মুছে দিচ্ছোনা।”””
চলবে