তোমাতে আসক্ত পর্ব ১৭

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (১৭)

অথৈর ডাকে মাহিরের ভ্রম ভাংলো। অথৈর হাতটা টেনে নিয়ে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলো।

“”খুনীরানী,কেমিস্ট্রি বুঝতে গ্রিন-টি কে ভিজানের কোনো দরকার নাই। মাহিরকে ভিজিয়ে খেয়ে নিন!! এমনিতেই সব কেমিস্ট্রি মাথায় ফুরফুর করে ঢুকে যাবে!!!!
“”আপনি!!!””
“”জ্বী আমি। দরজাটা খুলুন তো দেখি কোন কেমিস্ট্রিটা বুঝছেননা।””
“”আপনার মাথার কেমিস্ট্রি।””

অথৈ দ্রুত দরজাটা আটকাতে গেলো। কিন্তু মাহিরের বাধার সাথে সে পেরে উঠছেনা। এখন কি হবে?? এ অবস্থায় উনি আমাকে দেখলে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবেনা। O my god!!!””

“”আপনার ওমন নরম হাতে এতো শক্ত দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন? দরজাতো লজ্জা পাচ্ছে। নিশ্চয় সুড়সুড়িও লাগছে। দেখুন কেমন করে হাসছে!!””
“”কি সব বলছেন? দরজার আবার সুড়সুড়ি হয় নাকি? আপনি এখান থেকে চলে যান নাহলে কিন্তু ভালো হবেনা।””
“”আমি তো চাই খারাপ হতে,অথৈ। সরে যান ব্যথা পাবেন। আপনি ব্যথা পেলে কষ্ট তো আমারি হবে তাইনা?””
“”আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি…..”””

অথৈ আর দরজা আটকে রাখতে পারলোনা। মাহির হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে গিয়ে অথৈকে নিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো। আকস্মিক ঘটনায় অথৈ আকস্মিকে চলে গেলো। হঠাৎ হুশ হতেই মাহিরকে তার উপর আবিষ্কার করলো।

“”আমার লাগছে,সরুন বলছি।””
“”কোথায় লাগছে দেখি! দেখি!!””

মাহির অস্থির হয়ে দেখতে গিয়ে আরো বেশি অস্থির হয়ে গেলো। অথৈর দিকে নজর পড়তেই মাহিরের চোখ কপালে উঠার উপক্রম হলো অথৈ একটা শর্ট প্যান্ট পড়ে আছে যা হাটুর বেশ উপরেই আটকে আছে, উপরে পাতলা সাদা কালারের টি-শার্টের মতোই কিছু পড়ে আছে, কিন্তু এর হাতা কই গেলো?? চুলগুলো একটা কলম দিয়ে মাথার ঠিক উপরে আটকে রেখেছে। এ সে কাকে দেখছে?? এমন আগুন ধরানো পোষাক পড়ে আছে কেন অথৈ?? ও কি আমাকে জ্বালানোর জন্যই এগুলো পড়ছে নাকি অন্যকিছু???

মাহির একবার জামা কাপড়ের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার অথৈর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। অথৈ নিজের কপাল গুছিয়ে নিলো,নাকটা ফুলিয়ে মাহির কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে উঠে দাড়ালো।

“”আপনার লজ্জা লাগেনা? এভাবে একটা মেয়ের রুমে জোর করে ঢুকেছেন? ক্যারেক্টারলেস কোথাকার!!””
“”আমি ক্যারেরক্টারলেস হলে আপনি কি? এগুলো কি পড়ে আছেন? ছি!ছি!! আর আপনার টি-শার্টের হাতা কই গেলো??””
“”আপনি খেয়ে ফেলছেন। বেরুন বলছি। আমার রুম থেকে এখনি বের হবেন। নাহলে!!

মাহির একটু দুষ্টুমির হাসি দিয়ে অথৈর কাছে এসে বললো,

“”নাহলে কি করবেন হুম??””

অথৈর ও রাগ উঠে গেলো। হুট করে মাহিরের কাছে গিয়ে শার্ট টেনে ছিড়ে ফেললো।

“”আপনাকে খুন করে ফেলবো।””

মাহির অথৈর পেটের দিকে জামাটা খামচে নিয়ে অথৈকে নিজের দিকে টেনি নিয়ে আসলো,,,

“”আমি তো খুন হওয়ার জন্যই আসছি। এভাবে আর কত শার্ট ছিড়বেন বলুন তো? এর থেকে ভালো হয় আমাকেই ছিড়ে ফেলুন। তাতে যদি আপনার মন শান্তি পায়।আপনি তো আমাকে তিলে তিলে কবেই শেষ করে দিয়েছেন। আর কতবার খুন করবেন বলেন তো?? একেবারে খুন করে ফেলুননা। তাতেও মনে শান্তি আসবে আমি আমার খুনীরানীর হাতে খুন হয়েছি ভেবে।””

অথৈ কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই মাহির অথৈর মুখ চেপে ধরলো।

“”এখানে আর একটা কথাও শুনতে চায়না অথৈ। আমার বাসায় গিয়ে সারারাত বকবক কইরেন আমি আপনার মুখের সামনে বসে শুনবো।””

মাহির অথৈর বিছানা থেকে একটা চাদর নিয়ে অথৈকে ঢেকে ফেললো। অথৈর কানে কানে ফিসফিস করে বললো,,

“”একদিন এই চাদরের মতো আমিও আপনাকে পেচিয়ে থাকবো।””

মাহিরের কথা শুনে অথৈর হিচকি উঠে গেলো।

“”কি হলো,অথৈ? পানি খাবেন??””

অথৈ রাগে গজগজ করতে করতে বললো,

“”আপনাকে খাবো।””
“”কোথা থেকে শুরু করবেন বলেন তো??””

অথৈ হিচকি তুলতে তুলতে মাহিরের দিকে রাগে ভরা বড় বড় চোখ করে তাকালো। মাহির ঝট করে অথৈকে কোলে তুলে নিলো।

“”আরে,কি করছেন কি? নামান বলছি। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবোনা।””
“”আপনাকে যেতে কে বলছে? আমিই তো নিয়ে যাবো।””
“”আপনি গুন্ডাদের মতো জবরদস্তি করছেন কেন??””
“”আপনি যদি খুনীরানী হতে পারেন তাহলে আমিও আজ থেকে গুন্ডারাজা হয়ে গেলাম।””
“”আমি আপনার নামে কেস করবো,মাহির।””
“”যা খুশি তাই কইরেন। কিন্তু সেটা আপনার শ্বশুড়বাড়ী থেকে।””

মাহির অথৈকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। মনের ভেতরের কষ্টের ভারটা মনে হচ্ছে কমে যাচ্ছে। আমি আপনাকে আর দুরে থাকতে দিবোনা, তোথৈই পাখি। আমার মনের খাচায় বন্দী করে রাখবো। যতদিননা পুষ মানবেন ততোদিন ওখানেই থাকবেন।

“”অথৈ আফারে এমন চাদর দিয়ে বেধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন স্যার??””
“”হানিমুনে।””

হানিমুনের কথা শুনে মাহিরের মনে হলো ফুল্লোরানী বেশ লজ্জা পেয়েছে। শাড়ীর আচল দিয়ে মুখটা ঢেকে নিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

“”মাহির,তুমি কি কাজটা ঠিক করছো??””
“”ঠিক ভুল জানিনা,বাবা। আমি আর একটা দিনও অথৈকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।””

এনামুল হক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন। উনি কখনোও ভাবেনি যে নিজের মেয়েকে এভাবে কখনো শ্বশুড়বাড়ী যেতে হবে।

“”মা,ভালো থাকিস। যেদিন বুঝতে পারবি তোর বাবা তোর খারাপ চায়নি কখনো সেদিন আমাকে ফোন করিস,তোকে মন ভরে দেখে আসবো।””
“”বাবা,আমি কোথাও যাবোনা। এ গুন্ডাটার হাত থেকে আমাকে বাচাও।””

অথৈকে গাড়ীতে বসিয়ে মাহির গাড়ীর দরজা লক করে নিলে। বলা তো যায়না কোন দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। এই মুহুর্তে কোনো রিস্ক নিতে রাজী না। অথৈর দিকে তাকিয়ে গাড়ীটা স্টার্ট দিলো।

“”আপনি চাদরটা খুলছেন কেন? আপনি কি চান আমি এক্সিডেন্ট করি?? অথৈ প্লিজ চাদরটা খুলবেননা।””
“”চাদরের সাথে এক্সিডেন্টের কি কানেকশন??””
“”আপনার আগুন ধরানো পোষাক আমাকে জ্বালিয়ে ছাড়খার করে দিবে।””
“”আপনি পুড়ে গেলেই তো আমার শান্তি। আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনাকে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবো দেইখেন।””
“”আচ্ছা। কিন্তু এখন একটু ঢেকে বসুন।””

দুজনের কথার মাঝখানেই আজিজের কল আসলো।

“”তোথৈই পাখি ফোনটা রিসিভ করে আমার কানে ধরবেন প্লিজ?””
“”পারবোনা। আপনার ওই নোংরা কান আর নোংরা ফোন ধরে আমার হাত গন্ধ করেতে পারবোনা।””
“”নোংরা মানে? আমি তো আজকেও গোসল করলাম, অথৈ।””
“”ফোনকে তো করাননি।””
“”ফোনকেও গোসল করাতে হয় নাকি? এমন তো আগে শুনিনি।””
“”আপনার মতো নোংরা লোকেরা শুনবেইনা।””
“”আচ্ছা আপনার হাততো পবিত্র। পবিত্র হাতের ছোয়া দিয়ে আমার ফোনটাকে ধন্য করুন প্লিজ।””

অথৈ কলটা রিসিভ করে মাহিরের কানে দিতে গিয়েও সরিয়ে নিয়ে আসলো। লাউড স্পিকারে চাপ দিয়ে মাহিরের মুখের সামনে ধরলো।

“”স্যার,খালামনি আমাকে ফুলের দোকানে পাঠিয়েছে,ফুল নেওয়ার জন্য। কোন ফুলটা নিবো??””
“”এতোরাতে খালামনি ফুল দিয়ে কি করবে? তুমি খালামনিকে জিজ্ঞাসা না করে আমাকে কেন করছো??””
“”ফুলসয্যাতো আপনার তাহলে খালামনি কেন বলবে?? আমাকে উনি এটাই বললো। আর আপনাকে জিজ্ঞাস করতে বললো, স্যার।””

মাহির অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,

“”আপনার অথৈ মেডাম এখানেই আছে। উনাকে জিজ্ঞাসা করুন।””
“”আচ্ছা,অথৈ মেডাম,আপনি বলুন ফুলসয্যার……””

আজিজের কথা শেষ হওয়ার আগেই অথৈ ফোনের লাইনটা কেটে দিলো।

মাহির মুচকি হেসে ড্রাইভিংয়ে মন দিলো।

মাহিরের হঠাৎ করেই হাত কাপতে লাগলো। নিশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো। গাড়ীর এসিটা ছেড়ে দিলেও মাহিরের মনে হলে টেম্পারাচার একটুও কমেনি। আরো বেড়ে গেছে। সামনের দিকে তাকিয়ে মনে হলো তিন/চারটা রাস্তা দেখছে। এখন সে কোন রাস্তা দিয়ে যাবে?? অথৈর দিকে ফিরতেই মনে হলো অথৈর মাথার উপর আরো দুটো মাথা গজিয়েছে। অক্সিজেনের অভাববোধ করতে লাগলো। গাড়ীটা যে ব্রেক কষবে সেটাও পারছেনা। হাতপা অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাহির বার বার অথৈর দিকে তাকাতে লাগলো। এক পর্যায়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো,

“”অথৈ!!!!!!”””

মাহির তার চোখদুটো বন্ধ করে ফেললো। মাথাটা সিটের সাথে লেপ্টে গেলো। হাতদুটো স্টিয়ারিং থেকে নিচে ঝুলে পড়লো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here