তোমাতে আসক্ত পর্ব ১৮

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব ১৮

মাহিরের হঠাৎ করেই হাত কাপতে লাগলো। নিশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো। গাড়ীর এসিটা ছেড়ে দিলেও মাহিরের মনে হলে টেম্পারাচার একটুও কমেনি। আরো বেড়ে গেছে। সামনের দিকে তাকিয়ে মনে হলো তিন/চারটা রাস্তা দেখছে। এখন সে কোন রাস্তা দিয়ে যাবে?? অথৈর দিকে ফিরতেই মনে হলো অথৈর মাথার উপর আরো দুটো মাথা গজিয়েছে। অক্সিজেনের অভাববোধ করতে লাগলো। গাড়ীটা যে ব্রেক কষবে সেটাও পারছেনা। হাতপা অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাহির বার বার অথৈর দিকে তাকাতে লাগলো। এক পর্যায়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো,

“”অথৈ!!!!!!”””

মাহির তার চোখদুটো বন্ধ করে ফেললো। মাথাটা সিটের সাথে লেপ্টে গেলো। হাতদুটো স্টিয়ারিং থেকে নিচে ঝুলে পড়লো।

মাহিরের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে অথৈ বেশ অবাক হলো। মনে হলো ওর চোখের ভিতরের মনিগুলো দিয়ে মারবেল খেলছে। একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক ঘুরে চলেছে। ঘুমের মধ্যেও এ কি করে বেড়াচ্ছে আল্লায় জানে। মনে হচ্ছে নিশ্বাসগুলোও ঘন আর ভারী হয়ে আসছে। হঠাৎ মাহির চোখ মেলে চিৎকার করে উঠলো,,,

“”অথৈ!!!!””

অথৈ ছিটকে গিয়ে দুরে দাড়িয়ে রইলো। মাহির কি করছে ভালো করে দেখার জন্য ওর দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো কোনো ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছিলো হয়তো। মাহির চিৎকার করে একদম উঠে বসে পড়লো। আশেপাশে মাথা ঘুরাতে লাগলো আর অথৈকে ডাকতে লাগলো। অথৈ খানিকটা ভয় পেয়ে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। মাহিরকে বার বার নিজের নাম ধরে ডাকতে দেখে অথৈ ছোট্ট সুরে বললো,

“”আমি এখানে।””

মাহির অথৈর কন্ঠ পেয়ে আরো বেশি দিশেহারা হয়ে গেলো। চারপাশে কোথাও দেখতে না পেয়ে আরো জোরে জোরে চিল্লাতে লাগলো,

“”অথৈ?? কই আপনি? আমি কেন আপনাকে দেখতে পারছিনা?? অথৈ???””
“”উফ! পর্দার আড়ালে তো দেখবেন কিভাবে?””

মাহির ঝটপট বিছানা থেকে উঠে পর্দার কাছে গিয়ে পর্দাটা সরিয়ে নিলো। অথৈ উল্টোদিক হয়ে নিজের হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। মাহির অথৈকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে নিলো।

“”তোথৈ পাখি তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কিছু হয়নি তো??””
“”হলে তো হসপিটালে নাহয় মাটির নিচেই থাকতাম আপনার মতো রামছাগলের রুমে কেন থাকবো?””

এটা আসলেই অথৈ নাকি স্বপ্ন ভালো করে বুঝার জন্য অথৈর হাতে চিমটি কেটে নিলো মাহির।

“”আহ! কি করছেন?””
“”আসলে সিউর হলাম আপনি সত্যি অথৈ নাকি আপনার আত্মা।””
“”আত্মা মানে?””
“”আরে অনেক সময় দেখেননা যে নায়ক বেশি ভালোবাসলে নায়িকা মরে গিয়ে ভুত হয়ে আবার নায়কের কাছে আসে??””
“”তারমানে আপনি চান আমি মরে যাই?””
“”সেটা কখন বললাম? আপনি এতো রেগে যান কেন??””
অথৈ দাত কড়মড় করতে করতে মাহিরের ঘাড়ে নিজের দাত বসিয়ে দিলো।

“”এইবার,বলেন আমি ভুত নাকি মানুষ?””

মাহির অথৈকে পুনরায় জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“”আপনি আমার বউ তোথৈপাখি।””
“”ছাড়ুন বলছি।””
“”কেন?””
“”আপনি ছাড়বেন নাকি আমি….”””

মাহির অথৈকে ছেড়ে এক কদম পিছে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।অথৈ রাগে গজগজ করতে করতে বললো,

“”আপনি যদি ড্রাইভিং করতে নাই পারেন তাহলে করতে যান কেন? আজকে যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো তাহলে কি হতো??””
“”আপনাকে কে বললো আমি ড্রাইভিং পারিনা??””
“”চোখে দেখতে পাচ্ছেননা কে বললো?? আপনি কি আমাকে মারার প্লেন করছিলেন??””
“”এসব কি বলছেন অথৈপাখি?””
“”একদম কাছে আসবেননা। যা বলার দুর থেকে বলেন।
“”আমি কি করবো আমি গাড়ী চালাতে গেলেই একটা ভয়ংকর অতীত আমার চোখে ভেসে উঠে। আপনি আমাকে ভুল বুঝবেননা প্লিজ।””
“”ভয়ংকর অতীত মানে?””
“”আজ বলবোনা তোথৈপাখি। যেদিন আপনি নিজে থেকে আমাকে জানার চেষ্টা করবেন সেদিন বলবো।””

মাহির রুম থেকে বেরোতেই মিসেস ইরানীর সাথে দেখা।

“”মাহির তোর জ্ঞান ফিরেছে? এখন কেমন আছিস? সব ঠিক আছে তো? তোকে না কতবার বলেছি একা ড্রাইভ করতে যাবিনা? আজিজ কে নিয়ে গেলে কি হতো? আজ যদি অথৈ না থাকতো তাহলে কি হতো ভাবতে পারছিস???””
“”এক সাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো খালমনি?””
“”তুই কি আমার সাথে মশকরা করছিস?””
“”আগে চোখের পানিটা মুছো তারপর বলবো কি করছি।””
“”মাহির!!””

মাহির খালামনির দিকে তাকিয়ে মিস্টি একটা হাসি উপহার দিলো।

“”তোমার মাহিরকে দেখার জন্যই তো অথৈকে নিয়ে আসছি খালামনি। কিন্তু আমি এখানে কি করে আসলাম সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।””
“”কি করে আবার অথৈ নিজে ড্রাইভ করে তোকে নিয়ে আসলো। টেনশনে মেয়েটার মুখ ছোটো হয়ে গিয়েছিলো। ওইটুকু মেয়েকে এত বড় টেনশন তুই দিতে পারলি? ফর্সাগালদুটো বেগুনি হয়ে শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিলো।””
“”তুমি সত্যি বলছো খালামনি? অথৈ আমার জন্য অস্থিরতাই ভুগেছিলো?””
“”তো আর কি? তুই যদি একবার দেখতি তাহলে বুঝতি।””
“”তুমি একটা ছবিতো তুলে রাখতে পারতে? খালু এতবড় ফোনটা কি ফেলে রেখে জং পড়ানোর জন্য দিছে? মাঝে মাঝে কাজে তো লাগাতে পারো।””
“”থাপ্পড় খাবি একটা সবসময় ফাজলামি। যা অথৈকে নিয়ে আয়। রাত তো শেষ হতে চললো।””

মাহিরের খুশিতে মনটা ভরে গেলো। অথৈ ওর জন্য টেনশন করেছে!! মাহিরের বিশ্বাসই হচ্ছেনা। তাহলে কি অথৈও ওকে ভালেবাসে? কিন্তু ভালোই যদি বাসবে এভাবে এতোটা দিন দুরে দুরে কেন ছিলো!!!

“”খালামনি খেতে ডাকছে।””
“”তো,গিয়ে খাননা আমাকে ডিস্টার্ভ করছেন কেন??””
“”আপনি খাবেননা??””
“”না।””
“”কেন?””
“”আমার ইচ্ছে।””

মাহির গুটি গুটি পায়ে অথৈর পাশে এসে বসলো। কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললো,

“”তাহলে আমারও যা ইচ্ছে তা করবো?””

অথৈ রাগ নিয়ে মাহিরের দিকে তাকালেও চোখটা নিচে নামিয়ে ফেললো। ওইদিনের মতো আজও কেমন জানি দুষ্টু দুষ্টু চাহনি। উনি ইচ্ছে মানে কি বুঝাতে চাচ্ছেন??

মাহির আরেকটু কাছে ঘেষে বসতে গেলেই অথৈ টুপ করে উঠে পড়লো। মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো

“”আমার ক্ষুধা পেয়েছে।””
“”হবেনা,কিছু করলাম না ওমনিই ক্ষুধা পেয়ে গেলো? আপনি মিথ্যা বলছেন।””

অথৈ কোনো কথা না বলে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো। মাহিরও মুচকি মুচকি হাসি নিয়ে পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়লো।

“”খালামনি,তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমরা নিজেরা নিয়ে খেতে পারবো।””
অথৈ পাশ থেকে চিৎকার করে বললো,

“”না,খালামনি,আমি তোমার পাশে বসে খাবো।””
“”অথৈ,কত রাত হয়ছে দেখছেন? খালামনি এখন ঘুৃমাবে। আমি তো আপনার পাশে আছিই।””
“”আমার খালামনিকেও লাগবে।””

মিসেস ইরানী অথৈর পাশে বসে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো।অথৈ আড়চোখে মাহিরের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো সে মিটিমিটি হাসছে। অথৈর টেনশন হতে লাগলে। মনের ভিতরে কি ফন্দি আটছে আল্লাহই জানে। আজ রাতটা কিভাবে কাটবে!!!!!

“”কি হলো অথৈ? ভাতের মধ্যে কি খুজছো??””
“”কিছুনা খালামনি।””
“”তাহলে খাচ্ছোনা কেন?””
“”খাচ্ছি।””

অথৈ তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে ভিষম খেলো। মাহির দ্রুত পানির গ্লাসটা মুখে নিয়ে ধরলো। অথৈ পানিটা শেষ করতেই মাহির আবার ফিসফিস করে বললো

“”অন্য দিকে মন না দিয়ে খাবারের দিকে মন দিন। যা হবার তাতো হবেই।””

অথৈ ঝট করে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেলো। মিসেস ইরানী বেশ অবাক হলেন।

“”কি হলো অথৈ? কোথায় যাচ্ছো??””
“”আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, খালামনি।””
“”তাহলে ওদিক কোথায় যাচ্ছো?? তোমাদের রুমতো উপরে।””
“”আমি তোমার সাথে ঘুমাবো। ওই রুমে আমার ভয় লাগে।””

মাহিরও টেবিল ছেড়ে উঠে এসে বললো,

“”কি করছেন কি? ঐ রুমে খালু আছে। আপনি খালুর সাথে ঘুমাবেন?””

অথৈ মাহিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

চলবে

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here