তোমাতে আসক্ত পর্ব ২১

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (২১)

মাহির শার্টের বোতামগুলো লাগাতে লাগাতে বললো,

এখন অনেক তাড়া আাছে, অথৈ। বিকেলে এসে বলবো।

অথৈ নাক ফুলিয়ে মাহিরের কলারটা চেপে বললো,

“”এখনি বলতে হবে।””
“”বললাম তো এসে বলবো।””
“”নাহ,এখন বলবেন নাকি বলেন।””
“”বিকেলে……””

মাহির কথা শেষ করার আগেই নিজের শার্টের বেতামগুলো টপাটপ নিচে পড়তে লাগলো। মাহির কপাল কুচকে হতাশা চোখে অথৈর দিকে তাকিয়ে রইলো।

“”আপনি কি আমার একটা শার্টকেও রেহাই দিবেননা?””
“”শুধু শার্ট কেন,এই অথৈর হাত থেকে আপনি নিজেও রেহাই পাবেননা। আমাকে জোর করে তুলে আানার মজা হারে হারে টের পাবেন?””
“”আমি এখন কি পড়বো?””
“”কিছু পড়তে হবেনা। এমনি সুন্দর লাগছে। এভাবেই চলে যান।””

অথৈ মুখ ভেংচি কেটে চলে যেতে নিলে মাহির অথৈর কোমড়টা দুহাতে চেপে ধরে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসলো।

“”তাহলে আজ ভার্সিটি গিয়ে ক্লাস নেওয়ার দরকার নাই। এইভাবে without বস্ত্রে আপনার ক্লাস নেই কি বলেন?””

মাহির অথৈকে আরেকটু চেপে ধরলো

“”স্যার লেট হয়ে যাচ্ছে তো যাবেননা?””

হঠাৎ আজিজের প্রবেশে বেশ লজ্জা পেলো মাহির। অথৈকে ছেড়ে দাড়ালো,

“”একি স্যার,আপনি এমন ছেড়া শার্ট পড়ে যাবেন নাকি??””
“”Shut up,আজিজ। গাড়ীতে গিয়ে ওয়েট করো আমি এখনি আসছি।””

অথৈ পাশ থেকে চিল্লিয়ে উঠলো

“”আজিজ ভাই,তোমার স্যার তো আজ যাবেনা। উনি অর্ধ উলঙ্গ হয়ে….””

অথৈ আর কিছু বলতে পারলোনা। মাহির নিজের হাত দিয়ে অথৈর মুখ চেপে ধরলো। বিরবির করে বলতে লাগলো।

“”এমনিতেই আমার সব প্রেস্টিজ শেষ করে দিচ্ছেন এখন আমার পিএ র সামনেও শেষ করতে চাচ্ছেন? আপনি যে কবে আমাকে বুঝবেন আল্লাহই জানে!!””

মাহির একটা টি-শার্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

গুন্ডা মানুষের আবার প্রেস্টিজ। নিজে করতে পারলে দোষ নাই আর আমি বলতেই সব প্রেস্টিজ পানির সাথে মিশে যায়। ঢং। অথৈ বিরবির করতে করতে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো। খালামনিও পাশেই বসা। অথৈই তাকাতেই একটা মিস্টি হাসি উপহার দিলো। অথৈও তার রিপলাই করলো,

“”মাহির, তুই কি ইউনিভার্সিটি ক্লাস নিতে যাচ্ছিস নাকি মেয়ে পটাতে?””
“”কিসব বলছো,খালামনি? তুমি জানোনা আমি কি করতে যাই?””
“”তাতো জানি। কিন্তু তোর পোষাক তো উল্টো কিছু বুঝাচ্ছে। তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে নিজেই ক্লাস করতে যাচ্ছিস।””

অথৈ পাশ থেকে বলে উঠলো,

“”গুন্ডামী করতে যাচ্ছে খালামনি। গুন্ডাদের কাজই তো মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করা।””
“”তুই কাকে গুন্ডা বকছিস অথৈ?””
“”কাকে আবার যে আমাকে ডাকাতি করেছে তাকে।””

মাহির এতক্ষন অথৈর কথা শুনছে আর রাগে ফুলছে। ফুলতে ফুলতে এক সময় ফেটে পড়লো। অথৈর চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। টেবিল থেকে একটা চামচ হাতে নিয়ে অথৈর দিকে তাক করে বললো,

“”বেশ করেছি ডাকাতি করছি। আপনার কি? আমি আমার নিজের বউকে ডাকাতি করেছি। আপনার কোনো সমস্যা??””

মাহিরের হঠাৎ আক্রমনে অথৈ বেশ ঘাবড়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে নিজেকে লেপ্টে নিলো। মাহিরের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,

“”আজ আরমান নেই বলে আপনি আমাকে এভাবে শাসাচ্ছেন। ও থাকলে,,,,””

অথৈর মুখ থেকে আরমানের নাম শুনে চামচটা নিচে ফেলে দিলো মাহির। জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মিসেস ইরানী দ্রুত টেবিল থেকে পানির জগটা নিয়ে মাহিরের মাথায় ঢেলে দিলো।
মাহির হা করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলো।

মিসেস ইরানী বেশ অস্থিরতা নিয়েই মাহিরের পিঠে হাত বুলাচ্ছে আর বিরবির করে সুরা পড়ে ফু দিয়ে দিলো।

“”রাগ কমেছে,বাবা??””

মাহির কি বলবে বুঝতে পারলোনা। ভিজে চুপচুপা হয়ে গেছে। নিজের দিকে কয়েকবার তাকালো। ইচ্ছে হলো কয়েকদফা কান্না করে নিতে।

“”আজিজ,আশেপাশে কোথাও ফুলের দোকান থাকলে ওখানে গিয়ে গাড়ীটা দাড় করাও।””
“”কেন স্যার?””
“”তোমাকে বলতে হবে কেন? যা বলছি তাই করো।””
“”হুম।””

ফুল নিতে নিতে মাহির হাতঘড়িটাই সময় দেখে নিলো। ৮:৩৯ মিনিট। বিকেলেই খালামনি কল করে জানিয়েছিলো মিরাকে নিয়ে ওর ফুপির বাসায় যাবে। দুইদিন থেকে তারপর আসবে। অথৈকে অনেকবার যেতে বলেছিলো কিন্তু ও নাকি যেতে রাজি হয়নি। মাহির এটা শুনে বেশ খুশিই হয়েছে। অথৈর বাবাকে কল দিয়ে জেনে নিয়েছে অথৈর ফুল ভীষন পছন্দ। তাই আজ ফুলময় ভালোবাসার গন্ধ নিলে মন্দ হয়না।

“”স্যার,আকাশের অবস্থা ভালোনা,মনে হয় বৃষ্টি হবে। আমার বউ আবার বৃষ্টি হলে আমাকে বাইরে থাকতে দেয় না। খুব রাগ করে।””
“”কেন?””
“”আরে স্যার বুঝেননা। বৃষ্টির সময় আমার বউয়ের ভালেবাসা একটু বাইরা যাই।””
“”এসব চিন্তা বাদ দিয়ে গাড়ী চালাও ঠিক করে।””

মাহিরের ধমক খেয়ে আজিজ বেশ মন খারাপ করলো। এই তো ঠিক ছিলো আবার কি হয়ে গেলো? অথৈ মেডামের সাথে থাকতে থাকতে স্যারের মাথাটা বুঝি পুরাই নষ্ট হয়ে গেলো!!””

আজিজের কথায় মাহির বেশ লজ্জা পেলো। সত্যিই কি বৃষ্টির সময় ভালোবাসারা বেশি করে উকি দেয়? মাহির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। ঝুমঝুম বৃষ্টির শব্দে এক অজানা শিহরন বয়ে গেলো। চোখ বুজতেই অথৈর মুখটা ভেসে উঠলো। তাহলে কি অথৈও আজ আমাকে ভালেবাসবে??? মাহিরের মনটা খুশিতে ভরে গেলো। লাল গোলাপের মধ্যে নিজের হাতটা বুলিয়ে আজিজ কে তাড়াতাড়ি যেতে বললো।

“”স্যার আপনাদের বাসায় কি ঠাডা পড়ছে? এমন অন্ধকার হয়ে আছে কেন?””
“”একটা থাপ্পড় খাবে। বেশি কথা না বলে বউয়ের কাছে যাও।””

মাহির আবার ঘড়িটা দেখলো। ৯:৪৬ বাজে। এতো লেট হয়ে গেলো বাসায় আসতে? অথৈ সারাটা দিন বাড়িতে একা??? মাহিরের বুকটা কেপে উঠলো। বাসার ভেতরে ঢুকে অন্ধকারে অথৈকে ডাকতে লাগলো। কোনো সাড়া না পেয়ে নিজের ফোনের লাইট জ্বালিয়ে উপড়ে উঠে যেতে লাগলো। বাড়ির চারপাশে অথৈকে খুজতে লাগলো। কোথাও অথৈকে না পেয়ে মাহির অস্থির হয়ে চিৎকার করে অথৈকে ডাকতে লাগলো। হঠাৎ কি মনে করে ছাদে যেতেই হাত পা ছড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলো অথৈকে। মাহিরের মাথা গরম হয়ে গেলো। অথৈর কাছে গিয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো তারপর ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।

অথৈর চোখ দিয়ে সাথে সাথে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেলো। চোখ ভিজে লালবর্ন ধারন করলো। ভিজা জামাকাপড় নিয়ে অথৈ দৌড়ে ছাদ থেকে নামতে লাগলো। মাহিরও পেছন পেছন ছুটতে লাগলো,

“”অথৈ,পড়ে যাবে।অথৈ!!””

মাহিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো।

“”সরি,আপনাকে বাসায় না পেয়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই রাগ হয়ছিলো। দরজাটা খুলুননা।””
“”…””
“কি হলো খুলুননা। আর এমন ভুল হবেনা,সত্যি বলছি।””

অথৈ দরজাটা একটু ফাক করে হালকা উকি দিয়ে বললো,

“”কেন,আমার গোসল করা দেখবেন?””

অথৈর কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো মাহির। নিচের দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জা নিয়ে বললো,,,

“”না মানে,আমি…””

অথৈ নিজের একটা হাত বের করে মাহিরের উদ্দশ্যে বললো,

“”এতো মানে মানে করতে হবেনা। ইয়েটা দিন তো।””
“”ইয়ে মানে?””
“”আরে আমার জাম…..””

অথৈর আর কিছু বলতে পারলোনা। ঝট করে নিজের হাতটা ভেতরে নিয়ে রাগী কন্ঠে বললো,

“”আমি আপনাকে জামা দিতে বলছি, চুমুনা। বেশরম একটা।””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here