#তোমাতে-আসক্ত
নীলচুড়ি(রোকসানা)
পর্ব (২২)
“”এতো মানে মানে করতে হবেনা। ইয়েটা দিন তো।””
“”ইয়ে মানে?””
“”আরে আমার জাম…..””
অথৈর আর কিছু বলতে পারলোনা। ঝট করে নিজের হাতটা ভেতরে নিয়ে রাগী কন্ঠে বললো,
“”আমি আপনাকে জামা দিতে বলছি, চুমুনা। বেশরম একটা।””
মাহির এবার প্রচন্ড রকমের লজ্জা পেলো। দ্রুত অথৈর একটা জামা নিয়ে এসে দিলো। কি ভাবলাম আর কি হলো? এই মেয়ের কি অন্ধকারকে ভয় লাগেনা? কোথায় ভয় পেয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে তানা বৃষ্টিতে গিয়ে ভিজছে। এর মধ্যে রোমান্টিকতার ছিটেফোটাও নেই।
“”কে বললো আমি অন্ধকারকে ভয় পায়না?””
“”কই পুরো বাড়িতো বিদ্যুৎহীনতায় ভুগছে কিন্তু আপনি তো ভয়ে ভুগছেননা।””
অথৈ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে রুমেরলাইটের সুইচটা টিপে লাইট জ্বালিয়ে নিলো।
“”আমি তো আজকে লাইট জ্বালাইনি তাহলে জ্বলবে কিভাবে?””
“”তারমানে বিদ্যৎ ছিলো?””
“”হুম।””
অথৈ টাওয়ালটা দিয়ে মাথার চুলগুলো ভালো করে মুছতে লাগলো। মাহির নিজেকে কয়েকবার বকে নিলো। গাধা একটা! একবার সুইচ টিপে চেক করে নিলে কি হতো? খামোখা ঘাবড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো?? আনমনে নিজেকে কয়েকবার বকে অথৈর দিকে চোখ দিলো। হালকা বেগুনি কালার জামাটায় অথৈকে খুব সুন্দর লাগছে। চুলের পানিতে পিঠের অনেকখানিই ভিজে শরীরের সাথে লেপটে আছে। যা এক প্রকার আকর্ষন সৃষ্টি করছে।
অথৈ টাওয়ালটা বিছানায় রেখে মাহিরের কাছে আসলো। নিজের গালটা মাহিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“”আমার এই গালটা কেমন দেখাচ্ছে দেখেন তো!””
মাহির টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বললো,
“”খুবই সুন্দর।””
অথৈ বেশ ঝাড়ি দিয়ে বললো,
“”আপনার বেশরম মনটাকে আপনার পাশের সোফায় রেখে তারপর ভালো করে চেয়ে দেখুন!!””
অথৈর ঝাড়িতে খানিকটা কেপে উঠলো মাহির। অথৈর গালের দিকে ভালো করে তাকাতেই মাহিরের মনটা কেদে উঠলো। পুরো গালে নিজের হাতের পাচ আংগুলের রেখা বুঝা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ডানগালের থেকে বা গালটা একটু ফুলে আছে। মাহির নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বেশ হতাশ হলো। কি একটা কাজ করে বসলাম। আমার বউয়ের অত সুন্দর গালটা। ইশ! নিশ্চয় অনেক ব্যথা পেয়েছে।
“”সরি! তোথৈ পাখি! আমি ইচ্ছে করে…””
“”তাহলে কি করে দিয়েছেন?””
“”আমি একটু রেগে গিয়েছিলাম।””
“”আমারও এখন ভিষন রাগ হচ্ছে তাহলে আমিও কি আপনার গালে চড় বসিয়ে দিবো?””
মাহির ডেপডেপ করে অথৈর দিকে তাকিয়ে রইলো। সত্যিই কি অথৈ আমার গালে থাপ্পড় দিবে? নিজের স্বামীর গালে কি কেউ থাপ্পড় দেয়?? ও যেমন মেয়ে দিতেও পারে। মাহির শুকনো ঢুক গিলে বললো।
“”মানে?””
“”মানে আমারও এখন অনেক রাগ হচ্ছে। আমার কি করা উচিত?””
“”তাই বলে আপনি আমাকে থাপ্পড় মারবেন? আমি একজন ইউনিভার্সিটির লেকচারার,আপনার স্বামী,তাছাড়া আপনার থেকে বয়সেও বড়।””
“”আমিও একজন স্টডেন্ট,আপনার বউ।””
“”কিন্তু আমার থেকেতো ছোট তাইনা?””
“”কানে ধরুন।””
“”What!!?””
“”আজ সারারাত আপনি কানে ধরে দাড়িয়ে থাকবেন। এটাই আপনার শাস্তি। আর নাহয় আমি আব্বুকে ফোন দিয়ে আপনার অত্যাচারের কথা বলে দিবো। দরকার হলে থানায় গিয়ে আপনার নামে নারী নির্যাতনের কেস করবো। তখন আপনার সম্মান কোথায় গিয়ে লুকোয় তা দেখে ছাড়বো।””
“”অথৈ,প্লিজ!””
“”করবেননা তো? করবেন কেন আপনি তো আমাকে ভালোইবাসেননা। আরমান আমাকে কোনোদিন ও গায়ে হাততুলেনি। আমি যা বলেছি সাথে সাথে তা করেছে। আর আপনি??””
অথৈর মুখে আবার আরমানের নাম শুনে বেশ আহত হলো মাহির। ঝট করে নিজের কানে হাত দিয়ে একপা উচু করে দাড়িয়ে গেলো।
“”আরমান তো এক পা উচু করে দাড়াতো। তাহলে আমি দুপা উচু করে দাড়াই!!””
“”ট্রাই করতে পারেন। মন্দ হবেনা।””
মাহিরের ইচ্ছে হলো নিজের কান দুটো ছিড়ে ফেলে। পারলে হাতদুটোও কেটে ফেলে। শুধু আরমান আরমান আর আরমান। পৃথিবীতে কি শুধু আরমানই ভালোবাসতে জানে আর কেউ জানেনা? অসহ্য!!!
“”ওমন বিরবির করছেন কেন?””
“”মনে চাইছে তাই। আমার কি বিরবির করাও মানা,অথৈ?””
“”আরমান কখনো করতোনা।””
এবার মাহিরের মাথা গরম হয়ে গেলো
মনে হলো মাথার চারপাশে গুটিগুটি ছিদ্র হয়ে গেছে আর সেখান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে।
“”আপনার মনে হয় খুব গরম লাগছে তাইনা? ওয়েট আমি একটু ঠান্ডা পানি নিয়ে আসি!””
অথৈ ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি এনে মাহিরের মাথায় ঢেলে দিলো। মাহির শীতে কাপতে লাগলো। এমনি ঝড়বৃষ্টিতে আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা তারমধ্যে আবার ফ্রিজের পানি মাথায় ঢেলে দিছে। যা গড়িয়ে যেতে লাগলো পুরো শরীরে।
“”আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। আপনি কিছু খাবেন?””
“”বরফ খাবো।””
“”ওকে।””
অথৈ কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য খাবার নিয়ে আসলো। আর মাহিরের জন্য ফ্রিজ থেকে কিছু বরফের টুকরো নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
“”নিন,আপনার বরফ।””
মাহিরের খুব কান্না পেতে লাগলো। এই মেয়ে কি কিছুই বুঝেনা? আমি তো রাগ করে বললাম বরফ খাবো আর এ তো সত্যি সত্যি বরফ নিয়ে চলে আসছে। আল্লাহ আমার কি একটুও ভালোবাসা পাওয়া হবেনা?””
“”নিন হা করুন,আমি খাওয়াই দিচ্ছি।””
“”আপনার আরমানকে গিয়ে খাওয়ান।””
“”ও এসব খায়না। হা করুন তো।””
“”অথৈ,আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেননা।””
“”জানিতো আপনি ফেল করবেন। ওকে না খেলেন।””
অথৈ নিজের পা দুটো ভাজ করে কোলের উপর প্লেট রেখে চামচ দিয়ে খেতে লাগলো। আর মাহিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। মাহিরের দিকে ভালো করে তাকাতেই বুঝতে পারলো ঠান্ডা ঠিকমতো ধরেছে। পুরো শরীর কাপছে,ঠোটগুলো কালো রং হয়ে ভিষনভাবে কাপছে। অথৈর একটু মায়া হলো। মাহিরকে কিছু বলতে যাবে ওমনি গলায় খাবার আটকে হিচকি উঠে গেলো।
মাহির দ্রুত রান্নাঘর থেকে খাবার পানি এনে অথৈর মুখে ধরলো।
“”খাবারের সাথে পানি আনতে ভুলে যান কেন? আমাকে কষ্ট দিতেতো ভুলেননা। সারাক্ষন শুধু মাথায় এগুলোই ঘুরপাক খায় তাইনা?। আমাকে কিভাবে কিভাবে কষ্ট দেওয়া যায়, না?””
মাহিরের কথাগুলো অথৈর মনে গিয়ে গেথে গেলো। কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো। পানির গ্লাসটা ছেড়ে দিলো। আর কিছু না খেয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লো।
“”কি হলো,খাবারটা শেষ করলেননা?””
“”….””
“”এই যে আবার কানে ধরলাম। রাগ করার কি আছে? আমিতো আপনার জন্যই কান ছাড়লাম। সরি আর হবেনা। খেয়ে নিননা। আমার বাসায় আপনাকে এতো খুশি আগে কখনো দেখিনি,অথৈ। প্লিজ আর ভুল হবেনা দেখুন আমি আবার কানে ধরেছি।””
অথৈর কোনো রেসপন্স না পেয়ে মাহির আসতে আসতে অথৈর দিকে এগিয়ে গেলো। ওর পাশে বসে পড়লো। অথৈর পিঠে হাত দিতেই অথৈ ঘুরে এসে মাহিরকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো।
অথৈকে এভাবে কাদতে দেখে মাহির দিশেহারা হয়ে গেলো
চলবে