#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৩
[অনেক কমেন্ট আসছে অঞ্জলি, দিব্বা নামটা পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য তাই অঞ্জলি নাম পরিবর্তন করে মিহি আর দিব্বা নাম পরিবর্তন করে মিনতি দেওয়া হলো। ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারো গল্প ভালো না লাগলে পড়বেন না৷ তাই অভদ্রতা পরিচয় দিবেন না। ধন্যবাদ ]
আমার বউ এর গায়ে হাত তুলার সাহস পেলে কোথায় মিনতি। গতকাল পর্যন্ত তোমার বোন ছিলো আজকে তোমার বড় জ্যা মনে রেখো।
অভ্র শান্ত স্বরে কথাগুলো অপুকে চিৎকার করে ডাকা শুরু করলো। সাথে সাথে অপু দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো
–কী হয়েছে ভাইয়া।
–তোর বউ মিহির গায়ে হাত তুলেছে। আর কখনো যেনো এমন না দেখি।
–স্যরি ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে মিনতির পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
অপু অভ্রকে জমের মতো ভয় পায়।। মিহির অভ্রের এতো আদিক্ষেতা দেখে বললো,
–আমার বোন আমাকে থাপ্পড় মেরেছে আপনার কী।
অভ্র মিহির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতে ই মিহি ভয় পেয়ে যায়।
এই রে লাস্ট মুহুর্তে একটা কথা বলে গেলাম ফেসে। এখন আবার কী করে আল্লাহ জানে। বেয়াদ্দপ উগান্ডা হাতি তোর জন্য ই তো আজকে আমার মিনতির কাছে থাপ্পড় খেতে হলো আবার তুই ই আদিক্ষেতা দেখাতে আসলি। মিহি এক পা দু পা করতে করে অভ্র থেকে কিছুটা দূরে সরে, দৌড়ে রুমে চলে আসলো।।
মিনতি পুরো দৃশ্যটা দেখলো। অপু আর অভ্র কথা বলতেছে। মিনতি মিহিকে এভাবে যেতে দেখে অবাক হয়নি। কারণ মিহির যে এসব অভ্যস আগে ও ছিলো।
মিহি মিনতি গ্রামের মেয়ে। বাবার কৃষক বলে কিন্তু অতটা ও নিম্ন ফ্যামিলির না। মোটামোটি মিনতির বাবা নিজের জমি ফসল বিক্রি করে খুব ভালো ই চলে তাদের। যেদিন কোনো অপরাধ করে বাসায় ফিরতো মিহি সেদিন যদি বুঝতে পারবো যে বাসার সবাই তার অপরাধের কথা জেনে গেছে তাহলে কখনো জানালা দিয়ে কখনো সিঁড়ি সাথে লেগে থাকা গাছ দিয়ে পালিয়ে যেতো।
অপুর সাথে কথা বলে মিহি বলে পিছনে তাকাতে দেখি মিহি নেই। অভ্র মিহি না দেখে
নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
অভ্র যেতে ই মিনতে অপুর দিকে তাকিয়ে বললো,
–অভ্র ভাইয়াকে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে।
–ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন যদি হয় পৃথক নারীর কারন।
–এটা দিয়ে তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছেন অপু।
–আমার ভাইকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি ভয় ও পাই তাতে তোমার যেনো কোনো সমস্যা না থাকে। মিহি এমন ছেলে পেয়েছে মিহির ভাগ্য। তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো মিহিকে নিয়ে ভাবার জন্য অভ্র আছে।
–বোনটা আমার তুমি বুঝবা কী অপু।
–হুম অযথা জামেলা করো না। বিয়েটা হয়ে গেছে মিনতি। তুমি এখন যা ই করো কোনো কিছু পরিবর্তন হবে না।
–তুমি বিয়েটা এতোটা স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছো কীভাবে অপু।
–অভ্র ভাইয়া যা করেছে ভালোর জন্য ই করেছে। তুমি এগুলো নিয়ে মাথা গামাও আমার বাবা এতো প্যারা নিতে ভালো লাগে না। চলো তো।
এটা বলে ই মিনতির হাত ধরে নিয়ে চলে যায়।
__________________
রুমে যেয়ে একটার পর একটা ড্রেস দেখছে মিহি। রুমে অনেকগুলো ড্রেস রাখা সবগুলো ই খুব সুন্দর সুন্দর। খুব সুন্দর লং কামিজ, গোল জামা সাথে লেগিংস্,প্যান্ট সব কিছু ই এনেছে দেখছি।।। কয়েকটা শাড়ি ও এনেছে দেখছি। শাড়িগুলো ভালো লেগেছে।
হঠাৎ অভ্র রুমে এসে দেখে পুরো বেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ড্রেসগুলো।
–এই মেয়ে আপনি ড্রেসগুলো দিয়ে আমার রুমের অবস্থা তো খারাপ বানিয়ে ফেলেছেন।
–আচ্ছা একটা কথা বলতে চাই।
অভ্র আলমারি থেকে নিজের শার্ট বের করতে করে বললো,
–আমি শুনতে চাই না।
–আরে না হয় আপনাকে নিয়ে আমার মনে সন্দেহ থাকবে।
–আপনার মনে আমাকে নিয়ে সন্দেহের পাহার থাকুক আমার কোনো সমস্যা নেই।
–তাহলে কী ভাববো আপনি সত্যি ই এটা করেছেন।
অভ্র ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–কী করেছি।
–আগে কী বিয়ে করেছিলেন।
–হোয়াট ননসেন্স।
–না মানে তাহলে মেয়েদের ড্রেস সম্পর্কে আপনার এতো ধারনা কীভাবে। বিয়ে না করলে তো এতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস কিনতে পারতেন না।
অভ্র আস্তে আস্তে মিহির পাশে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–অনি আমার বোন। সব সময় আমি ড্রেস কিনে দিতাম।
–ওহ আচ্ছা। এখন দূরে যান।
–আপনার কাছে আসার কোনো ইচ্ছে ই আমার নেই। ড্রেসগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখেন। বড্ড অগোছালো আপনি।
–ভালো হয়েছে আপনার কী।
–আমার কিছু না কিন্তু আপনার মতো একটা অপদার্থকে সহ্য করতে হবে কতো দিন কে জানে।
–ঠিক বলেছেন, আমার আর আপনার পরিস্থিতি এক মিস্টার অভ্র।
–কী বললেন।
মিহি কাপড় গুছানো শুরু করেছে,এমন ভাব করছে যেনো অভ্রের বলা আর কোনো কথা ই কানে যাচ্ছে না মিহির।
প্রায় রাত হয়ে এসেছে।
মিহি লং কামিজ সাথে পেন্ট পড়ে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে বসে আছে। মিনতির রিসিপশন আজকে সবাই বেশ আনন্দ করছে। এতোক্ষণ রেডি হয়ে সবাই নিচে চলে গিয়েছে। আজকে যদি বাসায় থাকতো তাহলে তো বাবা মায়ের সাথে বেশ আনন্দ করে বোনের রিসিপশনে আসতো। কতো ই না মজা করতো। কিন্তু অভ্র নামের মানুষটার জন্য তা আর হয়ে উঠেনি। বার বার কারণটা জানতে ইচ্ছে হয় কেনো উনি আমার সাথে এমন করলো??
যখন ই ভাবি জিজ্ঞেসা করবো কেনো আমাকে বিয়ে করেছে ঠিক তখন ই উনার রাগান্বিত মুখটা দেখে চলে আসি আর বলা হয়ে উঠে না।
অভি নামের মানুষটা তো সত্যি ই অনেক ভালোবাসতো অকারণে ই তাকে ঠকানো হলো।
–আমার মিষ্টি নাতবৌটা কই।
দাদিমার আওয়াজ শুনে মিহি চোখের পানি মুছে দাড়িয়ে গেলো।
–দাদিমা আমি বেলকনিতে।
–কী রে তুই তো আমার কাছে একবার ও দেখা করলি না দুপুরের পর থেকে। আমার নাতিকে পেয়ে সব ভুলে যাস নাকি।
বেলকনিতে আসতে আসতে কথাগুলো বললো দাদিমা। সাথে অভ্র ও আসলো।
–হে দাদিমা তোমার নাতি তো দেখতো সালমান খানের মতো চোখ ই ফেরানো যায় না।
এটা বলে অভ্রের মুখের দিকে তাকে ই দেখি। আমাকে ইশারায় বলছে, দেখে নিবো পরে।
–দেখ কতো সুন্দর আমার নাতি তা ও তুই উপহাস করিস। এখন রেডি হয়ে নে নিচে তোর বড়ির সবাই আসছে।
কথাটা শুনতে ই আমার গলাটা শুকিয়ে গেলো কী জানি কী হয়। মা বাবা ভালোবেসে
আগলে নেবে নাকি অপবাদ দিয়ে দূরে সরিয়ে নিবে। যদি ভালোবেসে আগলে নেয় তাহলে বলবো আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে, এখন তো আর অভ্র আমাকে বিয়ে ভেঙ্গে দিবে বলে ভয় দেখাতে পারবে না।
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৪
আমি অনমনে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আমাকে মা বাবা মেনে নিবে নাকি ভাবছি।
অভ্র হাতের আগুল দিয়ে মুখের ভিতরে গ্লিসারিন দিয়ে বললো,
–হা করে এতো কী ভাবছেন। একটু মিষ্টি মুখ করে নিন তাহলে ভাবনাগুলো আরো মিষ্টি হবে।
আপনি একটা বদের হাড্ডি মনেমনে বললাম। সত্যি কী আমি হা করে ভাবছিলাম। দেখি তো আয়নার সামনে গিয়ো। আয়নার সামনে যেতে ই অভ্র বললো,
–শাড়ি পড়ে নিচে যান
–আপনি কী আমার মান সম্মান রেখেছেন নিচে যাবো কোন মুখে।
–অভ্র চৌধুরী বউ হয়েছেন এটা ই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।
–আমি তো এতো ভাগ্যবতী হতে চাইনি। কেনো করলেন আমার সাথে এমন।
–এতো কেনোর উওর দিতে পারবো না, কিন্তু সময় হলে ঠিক ই আপনাকে আমার বাধন থেকে মুক্ত করে দিবো।
বলে ই অভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। শত প্রশ্নের উওরের আশায় বসে থাকি কিন্তু উনি তো কিছু ই বলছে ই না। নিচে ও যাবো না কোন মুখ নিয়ে যাবো মা বাবার সামনে।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
অভ্রের মা রুমে ডুকলো। আমি উনাকে দেখে ই বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে যাই। কান্না করার কারণে চোখ নাক লালা হয়ে গিয়েছে। উনি রুমের লাইট অন করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে। আমার মায়ের মতো আদর করছে দেখে আমি বেশ অবাক হয়। এতোদিন শুনো এসেছি শাশুড়িরা শুধু কাজ ই করায় মায়ের মতো ভালোবাসে না। কিন্তু উনাকে দেখে আমার ধারণাটা পরিবর্তন হয়ে গেলো।
–দুপুরে খাওনি কেনো মা।
–ক্ষুধা নেই আম্মু।
–রাগ করেছো।
–আম্মু আমাদের বাসার কী সবাই এসেছে।
–হে, তুমি রেডি হওনি কেনো মা।
–আম্মু ওরা তো আমাকে মেনে নিবে না।
–ধুর পাগলি আমার ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো তো। কেনো মেনে নিবে না। যেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই সেখানে তোমার পরিবারের ও কোনো আপত্তি থাকার কথা না।
উনার কথা শুনে আমার ভয়টা অনেকটা কেটে গেছে।
–শড়ি পড়তে পারো।
আমি মাথা নাড়িয়ে না করলাম।
–চলো পড়িয়ে দেই। আর কোনো কথা বলবা না।
আম্মু আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি ও এনে দিয়েছে।
–এখন নিজে একটু সাজুগুজু করে নেও তো। আমরা আগের মানুষ আমাদের সাজ ভালো লাগবে না। একটু পর আমি তোমাকে নিচে নিয়ে যাবো আসছি।।
আমাকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে ই উনি চলে গেলেন। আমি সাজুগুজু করতে আবার বেশ ভালোবাসি। তাই মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজায় মন দিলাম।
আমি আয়না নিজের চুল ঠিক করতে দেখি অভ্র রুমে এসেছে। আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও সুযোগ মিস করলাম না বলে দিলাম।
–এতো দেখলে আবার প্রেমে পড়ে যাবেন।
–ওহ্ আপনি। আমি তো ভাবলাম আমার রুমে ভূত প্রেত আসলো না তো।
–শয়তানের রুমে ভুত প্রতে কম ই আসে।
বলে ই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভয়ে ভয়ে নিচে যেতে লাগলাম।এক সিড়ি নামি তো দুই সিঁড়ি উঠি এমন করতে করতে অনেক্ষন যাবৎ উপরে ও দাড়িয়ে আছি। কী করে যাবো সবার সামনে।
–মিহি।
অভ্রের এর আম্মু ডাকে নিচে দিকে তাকলাম।
উপরে উঠতে উঠতে বললো,
–ভয় পাচ্ছিস কেনো আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি। তোমার মা তো আসেনি তাই আমি ফোন করে বলে দিয়েছি যেনো কিছু না বলে। আজকে মিনতির সাথে তুমি ও যাচ্ছো মিহি।
কথাটা শুনে আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম।
–মিহি শুনো।
আমি আম্মুকে ছেড়ে দুজন নিচে নামতে থাকলাম।
–যেহেতু তাদের অমতে বিয়ে করেছো এতে কম বেশি উনারা রাগ করে আছে আমি যা ই বলি না কেনো তোমার উপর কিন্তু রাগটা থাকবে ই। তুমি বড় হয়েছো মা বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়ো।
–ঠিক আছে আম্মু।।
নিচে নামতে ই আমাকে আর আম্মকে ঘিরে ধরেছে কয়েকটা আন্টি।
–রেনু এটা আপুর বউয়ের বোন না।
–হে,
–দেখতে তো ভারি মিষ্টি। তা আমাদের নুহাশের জন্য বেশ পছন্দ হয়েছে।
–আমার অভ্রের বউ এটা ভাবি।
–ওমা কী বলে এটা। ছেলের এবার দেবদাস থেকে বিয়ে করলো। তা আমাদের শোনাওনি কেনো।
–আপুর বিয়ের দিন ই তো বিয়ে হয়েছে। আপনারা তো শুনার কথা।
–শুনি নাই, মেয়ে সুন্দর তো তাই আরকি অভ্র দেখে ঠিক থাকতে পারেনি বিয়ে করে নিয়েছে।
— যেভাবে ই বিয়ে করুক ভাবি আপনার তো কিছু না। খেয়ে নিন রাত অনেক হয়েছে, আমি যাচ্ছি।
আম্মু আমার হাত ধরে বাবার কাছে নিয়ে এসেছে। বাবা আমাকে দেখে চোখের পানি অনবরত পড়ছে। বাবার কান্না দেখে আমি ও ঠিক থাকতে পারেনি। দৌড়ে জড়িয়ে ধরলাম।
–কেনো করলি মা এমন। তুই বললে আমি তোকে অভ্রের হাতে তুলে দিতাম।
–বাবা সব বলবো সময় হক। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।
হয়েছে বাবা মেয়ের কান্না , এখন চলো খেয়ে নিবে। দাদিমা আমাদের সবাইকে নিয়ে খেতে বসেছে।
সব নিয়ম কারন শেষ হবার পর। আমরা এখন আমাদের বাসায় চলে যাবো। আমি সবার আগে গাড়িতে গিয়ে বসেছি। যদি পরে আমাকে রেখে চলে যায় এই জন্য।
–মিহি তুই অভ্র ভাইয়াকে না নিয়ে ই গাড়িতে উঠে গেলি।
–অভ্র কেন যাবে মিনতি।
–অপু কেন যাচ্ছে।
–তোর মন চাইলে তোর জামাইকে রেখে যা এতে আমার কী।
–থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো যা অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে আয়।
–পারবো না।
–তাহলে আমি বাবাকে ডেকে বলছি তোকে রেখে যাওয়ার জন্য
–দূর বাবা সবাই শুধু আমাকে এমন করে।
গাড়ি থেকে নেমে অভ্রের রুমের দিকে পা বাড়ালাম এই অভ্র যেনো আমার সাথে না যায় আল্লাহ দেখো তুমি। অভ্র আমার সাথে থাকলে আমি অভির সাথে কথা বলতে পারবো না।
চলবে,
চলবে।