#তোমাতে আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (৫)
আজিজকে কোলে নিয়ে মাহির অথৈর দিকে হতাশা চোখে তাকিয়ে রইলো।
অথৈ মুচকি হেসে দুজনের একটা ছবি তুলে নিলো নিজের ফোনে। তারপর মাহিরের সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে লাগলো।হঠাৎ মাহিরের ফোনে রিং বেজে উঠলো। মাহির আজিজকে নামানোর চেষ্টা করতেই অথৈ বলে উঠলো,
“”খবরদার উনাকে নামাবেননা বলে দিচ্ছি।””
“”আমার ফোন বাজছে অথৈ!””
“”ওয়েট।””
অথৈ এগিয়ে এসে মাহিরের পকেট থেকে ফোনটা বের করে তার কানে ধরলো।
“”কিরে মাহির সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো। তোরতো আসার কোনো নামগন্ধই দেখছিনা। তুই কি ঠিক করেছিস ওই বাসায় ঘরজামাই হবি?””
“”খালামনি কিসব বলছো? এমনিই আগ্নেয়গিরির মাঝখানে আছি। আমাকে পুড়তে দাও তো ডিস্টার্ভ করোনা।””
“”মানে? আমার কথায় এখন তুই ডিস্টার্ভও হচ্ছিস? বাহ! বিয়ের একদিন পার হতেনা হতেই পর করে দিলি? দুইদিন পার হলে তো বলবি। খালাম্মা আপনি কে? Do you know me?””
“”খালামনি তুমি কি ফোনটা রাখবে?””
“”আমি রাখতে যাবো কেন? তোর এতো বিরক্ত লাগছে তুই কাটতে পারিসনা? তোর হাতে কি ফোসকা পড়ছে?””
ফোসকা না পড়লেও যে পড়ার সময় হয়েছে সেটা বেশ বুঝতে পারলো মাহির। বিরবির করে আজিজকে বোকতে লাগলো। কি ওজন রে বাবা,মনে হচ্ছে ৮০ কেজির বেশি হবে। এত ওজন লোককে কি এভাবে কোলে নিয়ে হাটা যায়? কি রোদও পড়েছে মনে হচ্ছে মাথা গরম হয়ে চুলে আগুন ধরে গেছে হয়তো একটু পর চুল পুড়ার গন্ধ নাকে আসবে!
মুখটা বাকা করে বা পাশে অথৈর দিকে তাকালো। মুচকি মুচকি হাসছে। আমাকে এমন কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাচ্ছেন না? আমার,বাসায় তো যাচ্ছেন এর শোধ মাহির কিভাবে তুলে দেখবেন হুহ!
“”আজিজ ভাইয়া আপনার কেমন বোধ হচ্ছে?””
“”খুবই লজ্জাবোধ হচ্ছে মেডাম। স্যারের কোলে এসিসট্যান্ট!! শাস্তি কি স্যারকে দিচ্ছেন নাকি আমাকে সেটাই মাথায় ঢুকছেনা।””
“”সব জিনিস মাথায় ঢুকাতে নেই। আপনি চোখ বন্ধ করে থাকেন।””
এতক্ষন ভালোভাবে সামলিয়ে হাটতে পারলেও এবার,মাহিরের পা কাপতে লাগলো। ঘামের পানিতে নিজেকে গোসল করিয়ে নিয়েছে । মনে মনে শুধু পার্থনা করছে আর কোনো লজ্জার মুখোমুখি যেন না হতে হয়।
এক ঘন্টার মতো হবে মিসেস ইরানীর সামনে বসে আছে অথৈ। উনি কি করতে চাচ্ছেন বা বলতে চাচ্ছেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। তখন থেকে শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এবার বেশ বিরক্তই হলো অথৈ। এই মহিলাটার সামনে আসলেই এভাবে হেবলার মতো তাকিয়ে থাকার কি আছে? আমি কি চিড়িয়াখানার বানর? মানুষতো চিড়িয়াখানার বানরকেও এতক্ষন ধরে দেখেনা!!
“”আমার ক্ষুধা লাগছে খালামনি।””
মাহিরের গঠাৎ আগমনে বেশ বিরক্তই হলেন মিসেস ইরানী
“”আমি কি খাবার কোলে নিয়ে বসে আছি মাহির? দেখতে পারছিসনা আমি একটা ইমপোর্টেন্ট কাজ করছি? যা নিজে গিয়ে খেয়ে নে।””
খালামনির ধমক খেয়ে মাহির নিজের রুমে এসে পায়চারী করতে লাগলো। ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে বিছানায় বসে রইলো। কি এমন কাজ করছে খালামনি? তখন থেকে তো দেখছি অথৈকে বসিয়ে রেখে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। কি এতো দেখছে খালামনি? অথৈর মুখে কি কিছু লিখা আছে? বেশ কয়েকবার রুমের এপার ওপার হেটে মাহির আবার খালামনির রুমে গেলো।
“”অথৈর ক্ষুধা লাগছে খালামনি।””
মিসেস ইরানী এবার বেশ রাগ নিয়ে মাহিরের দিকে তেড়ে এলেন।
“”তোর বউ তখন থেকে আমার কাছে বসে রয়েছে কই আমাকে তো একবারও বলল না ক্ষুধা লাগছে। আর তুই বুঝে গেলি ক্ষুধা লাগছে? যা রুমে যা বলছি আর একবার যদি আমার রুমের আশেপাশে তোকে ঘুরঘুর করতে দেখি থাপড়িয়ে সব দাত ফেলে দিবো। ভুলে যাবিনা আমি তোর খালামনি লাগি।””
মাহিরকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজাটা শব্দ করে আটকে দিলেন মিসেস ইরানী।
তখন থেকে অথৈ দুজনের কান্ড দেখে এবার হেসেই ফেললো।
“”এই মেয়ে তুমি এভাবে হাসছো কেন?””
“”এমনি।””
অথৈ হাসি গুটিয়ে আবার মন খারাপ করে বসে রইলো।
“”তুমি দেখতে এতো সুন্দর কেন? দেখ আমার গায়ের রং আর তোমার গায়ের রং কিন্তু একি। কিন্তু তোমাকে এতো বেশি সুন্দর লাগে কেন?””
মিসেস ইরানীর কথায় অথৈ এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তারমানে উনি এতক্ষন ধরে আমি কেন বেশি সুন্দর এটা খুজছিলেন??
“”এই মেয়ে আবার হাসছো কেন? আমি তোমার খালা শ্বাশুড়ি হয়। এভাবে দাত বের করে হাসছো তোমার লজ্জা লাগছেনা?””
“”না গো খালামনি। তোমার বকা খেতে আমার বেশ ভালো লাগছে।””
“”কিহ! আমার সাথে ফাজলামি করছো? আমি কি তোমার ননদ লাগি?””
“”শ্বাশুড়ি তো লাগো? দেখি পাটা সামনে দাও তো একটু সালাম করি। আমার আব্বু বলে দিয়েছে এ বাড়িতে সবাইকে এসেই যেন সালাম করে নেই।””
মিসেস ইরানীর সব রাগ চলে গেলো
মেয়েটার চেহারার মতো কথাবার্তায় ও বেশ মাধুর্য আছে। মনে হচ্ছে কোনো এক কথার লতাবতী আর পরীবতী এসে তার ঘরে উঠেছে। আমি হয়তো মাহিরের জন্য এতো সুন্দর বউ কখনো খুজে আনতে পারতামনা। মিসেস ইরানী মুখে ছোট হাসি ফুটিয়ে পা দুটো খাটের উপর বিছিয়ে দিলো।
“”ইশ! খালামনি তোমার পায়ে তো ময়লা লেগে আছে। তুমি গিয়ে পা টা ধুয়ে আসো তারপর সালাম করছি। চিন্তা করোনা, আমি এখানেই বসে আছি,তোমাকে সালাম না করে যাবোনা।””
মিসেস ইরানী আবার রেগে গেলেন। কিহ! আমার এতো সুন্দর পাকে বলে ময়লা লেগে আাছে? মিরার বাপ তো রাতে পায়ে চুমু খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায় কই কোনোদিন তো বললো না পায়ে ময়লা? আর এই মেয়ে একটা সালাম করবে তাই বলে আমাকে পা ধুয়ে আসতে? এতবড় সাহস?
বেশ রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে মিসেস ইরানী অথৈকে টানতে টানতে মাহিরের রুমে নিয়ে আসলো,,,
“”এই নে তোর বউ। তোর সুন্দরী বউকে পানিতে ভিজিয়ে ভিজিয়ে সরবত বানিয়ে খা। আমার মতো গায়ের রং পেলে কি হবে আমার মতো মন পায়নি বুঝলি?””
“”কি হয়ছে খালামনি?””
মাহিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন মিসেস ইরানী।কি এসব ঘটছে কিছু বুঝতে পারলোনা মাহির। তাহলে কি এই দেড় ঘন্টা অথৈর মন পড়ে এসে আমাকে ফেরত দিয়ে গেলো খালামনি?
“”আমার শরীর খুব চুলকাচ্ছে। সাওয়ার নেওয়া দরকার, ওয়াশরুমটা কোন দিকে?””
মাহির নিজের ভাবনাজগৎ থেকে বের হয়ে এসে অথৈকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিলো। কি থেকে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছেনা। এদিকে কাল আমার প্রথম লেকচার, সেটার জন্যও কত কিছু গুছাতে হবে। আমার তো কোনো কাজেই মন বসছেনা। মাথাটাও ধরেছে, রং চা খাওয়া দরকার। খালামনি যে অবস্থায় আছে মনে হয়না আজকে আর চুলায় আগুন ধরবে। বাসায় একটা কাজের লোকের অভাব পড়ছে খারাপভাবে। খালামনির জন্য সেটাও পুরন করা যাচ্ছেনা। মাহির দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো।
চা কাপে ঢেলে নিলো মাহির। অথৈর জন্যও কি এককাপ চা নিয়ে যাবো? কিন্তু উনি চা খায় নাকি তাও তো জানিনা! মাথায় কোনো চাপ না দিয়ে দু কাপ দু হাতে নিয়ে রুমের উদ্দশ্যে পা বাড়ালো। ইচ্ছে হলে খাবে নাহলে খাবেনা।
রুমের দরজাটা হঠাৎ চাপানো দেখে মাহির একটু বিরক্ত হলো। হাতের কনুই দিয়ে দরজাটা খুলে সামনে এগুতেই মনে হলো তার চোখে সুর্যের অতি গরম রশ্মি এসে পুড়িয়ে দিয়ে গেলো। হাতের থেকে কাপটা নিজের পায়ের উপর পড়ে গরম চায়ের ছেকা খেলো। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মাহির, সেতো হারিয়ে যাচ্ছে অথৈর এর নগ্ন পিঠের নেশায়!!!
চলবে