#তোমাতে আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (৬)
অথৈর নগ্ন পিঠের মায়ায় ডুবে যেতে লাগলো মাহির। মনে হচ্ছে পিঠের শিরদাড়ার দুইকূলে সাগরের সাদাসাদা ফেনাতুলা ঢেউ বয়ে যাচ্ছে যা দুতীরে গিয়ে বাড়ি না খেয়ে মাহিরের রিদয়ে বাড়ি খাচ্ছে। মাহিরের ইচ্ছে হলো সেই ঢেউয়ে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে। ভেসে ভেসে চলে যেতে অন্যএক জগৎে যেখানে অথৈ আর মাহির ছাড়া আর কেউ এসে বিরক্ত করবেনা।
অথৈ সাওয়ার ছেড়ে এসে রুমে প্রবেশ করলো। তার বাবার দেওয়া দুটো লাগেজ থেকে একটা তুলে এনে বিছানায় রাখলো। একেরপর এক জামা বের করে বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখছে। কোনটা পড়বে বুঝতে পারছেনা। নিজের পছন্দসই কোনো জামা না পেয়ে বেশ বিরক্ত নিয়েই ২য় লাগেজে হাত বাড়ালো। কিন্তু প্রথমটার থেকে এটা বেশ ভাড়ী হওয়ায় অথৈর উচু করতে কষ্ট লাগলো। খানিকটা জোর দিয়ে উচু করতেই নিজের গায়ে জড়ানো টাওয়ালটা খুলে গেলো। আর ঠিক তখুনি হা করে থাকা মাহিরের মুখটা চোখে পড়লো অথৈর। খানিকটা লজ্জাবোধ থেকে লাগেজটা দিয়েই নিজেকে ঢেকে নিলো। বেশ ঝাঝালো কন্ঠেই বললো,
“”আপনি কি চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খাবেন? এভাবে হা করে একটা নগ্ন মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন মিনিমাম লজ্জাবোধটাও নাই? বেশরম একটা।””
মাহির ঝটপট নিজের দুহাতের তালু দিয়ে শক্ত করে নিজের চোখ ঢেকে নিলো,
“”সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি এভাবে আপনার টাওয়াল খুলে যাবে।””
“”ওহ! তারমানে এখন সব টাওয়ালের দোষ? টাওয়ালের উচিত ছিলো আপনার পারমিশন নিয়ে খুলে যাওয়ার? তাইনা?””
“”হ্যা। না মানে।””
অথৈ রাগে লাগেজটা নিচে ফেলে দিলো। টাওয়ালটা দিয়ে শরীরটাকে ঢেকে নিয়ে মাহিরের দিকে এগিয়ে আসলো। হাতদুটো দুদিকে প্রসারিত করে বললো,
“”নিন,ভালো করে দেখে নিন। নিজের চোখের লালসা মিটিয়ে নিন। নিজের মনের লালসাও মিটিয়ে নিন। এটার জন্যই তো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমার বাবাকে জাদু করেছেন,তাইনা?”””
মাহির চোখ বন্ধ অবস্থায় অথৈকে ঝাপটে ধরলো।
“”আমাকে এতটা কুৎসিত ভাবেন কেন অথৈ? আমার উপর আপনার এতোটা রাগ কেন? কি করেছি আমি? আপনাকে বিয়ে করাটাই কি আমার ভুল? নাকি অন্য কিছু???””
অথৈর উষ্ণ পানিতে চোখ ভিজে একাকার। নিজের ঝকঝকে দাতগুলো সব কয়টা মাহিরের ঘাড়ে বসিয়ে দিলো। মাহিরের হাতের বাধন নরম হওয়ার বদলে আরো শক্ত হয়ে এলো। অথৈকে শক্ত করে চেপে ধরে হালকা কুকিয়ে উঠলো।
“”আমি আপনাকে ঘৃনা করি। বুঝতে পারছেন আপনি?ঘৃনা করি আপনাকে।””
অথৈ নিজেকে মাহিরের হাতের বাধন থেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কোনোভাবেই যখন পেরে উঠলো না তখন নিজের সর্বস্ব জোর দিয়ে মাহিরের ঘাড়ে পুনরায় কামড়ে ধরলো। এবার মাহির ব্যথাটা হজম করতে পারলোনা। নিজের হাতদুটো মনে হলো অবশ হয়ে গেছে।
হাতের বাধন আলগা হতেই অথৈ নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। মাহিরও সেখানে আর এক মুহুর্তও দেরি করলোনা। দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে এলো
“”মাহির তোর ঘাড়ে কি হয়েছে? ও মাই গড,এত রক্ত? তাড়াতাড়ি আয়,তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।””
“”তেমন কিছু হয়নি খালামনি,এখনি ঠিক হয়ে যাবে।””
মাহির ফার্স্ট এইড বক্সটা খুজতে লাগলো। ড্রয়ারটা খুলতেই চোখে পড়লো। মিসেস ইরানী চোখের পানি নিয়ে মাহিরের কাছ থেকে তুলোটা কেড়ে নিলো। নিজেই ওষুধ লাগাতে লাগলো।
“”আহ! আসতে খালামনি লাগছেতো।””
“এতবড় ক্ষত হলো তাতে লাগেনি? আর এখন ওষুদে লেগে যাচ্ছে না? কি অবস্থা হয়েছে দেখছিস?””
“”তুমি যদি এভাবে কাদতে থাকো আমি কিন্তু ওষুধ লাগাবোনা।””
“”আচ্ছা আর কাদবোনা।ভালো করে লাগাতে দে বাচ্চাদের মতো নড়াচড়া করছিস কেন?””
মিসেস ইরানী চোখের সবটা পানি আচল দিয়ে মুছে নিলেও চোখটা এখনো ভিজে চুপসে আছে। মাহির সেদিকে নজর দিতেই ঠোটে হালকা হাসি ফুটে উঠলো। খালামনিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“”খুব ভালোবাসো আমায়,তাইনা খালামনি?””
“”কেন জানিস না?””
“”জানিতো। কাকে বেশি ভালোবাসো খালামনি? আমাকে নাকি মিরাকে?””
“”যে যখন কাছে থাকে তখন তাকে বেশি ভালোবাসি।””
“”খালামনি আমি কি দেখতে পচা? খুব বাজে? খারাপ ছেলে?””
“”এসব কি বলছিস তুই মাহির? মিরাটা যদি আরেকটু বড় হতো তাহলে তো ওর সাথেই তোর বিয়ে দিতাম। তুই জানিস তোর বউয়ের উপর আমার কত হিংসা হয়?””
“”তোমারতো সব কিছুতেই হিংসা।””
মাহির হালকা শব্দ করে হাসতেই মাথায় একটা টুকা দিলেন মিসেস ইরানী।
“”তুই বেশি পাজি হয়ছিস। তোর এখানের কি অবস্থা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ কামড় দিছে।””
মাহির খালামনির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। শীতল কন্ঠে বললো,
“”কেউ কামড় দেয়নি খালামনি। সব কিছুতেই বাড়িয়ে বাড়িয়ে ভাবা তোমার অভ্যাসে পরি নত হয়েছে।””
“”তুই আমাকে শিখাতে এসেছিস না? ঘুর আমার দিকে। আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখ বড় আপা আর দুলাভাইকে হারিয়ে যখন তুই এতিত হলি তখন তোকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার সময় আমি একটা সদ্য বেড়ে ওঠা কুমারি মেয়ে ছিলাম। আর এই দেখ আমার চুলগুলো এখন পাকতে শুরু করেছে। তুই জানিস তোর জন্য পাড়ার সব থেকে সুন্দর ছেলেটাকেও বিয়ে করতে না করে দিয়েছিলাম কেন? কারন ওরা শুধু আমাকে নিবে তোকে নিবেনা। আর আমি তো তখন তোকে রেখে একটারাতও কাটানোর কথা ভাবতে পারতামনা। ভেবেছিলাম বিয়েই করবোনা তবুও তোকে ছেড়ে আমি স্বার্থপরের মতো সংসারী হতে পারবোনা। শেষমেষ তোর দয়ালু খালু এত বড় মন নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির। আমার হাতদুটো ধরে বললো….””
“”ধরে বললো আমি শুধু তোমাকে না তোমার ছেলেকেও বিয়ে করবো তাইনা খালামনি?””
মাহির অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। মাহিরের কানটা টেনে ধরে বললো,,,
“”মজা নিচ্ছিস না? মানুষটা বড্ড বোকা আর সহজ সরল ছিলো রে। আমার সামনে আসলেই হাটু কাপতো। এখনোও পাগলামি করে। একটু আগে কল করে কি বললো জানিস? বলে কিনা চাকরী ছেড়ে আমার কাছে……
মধুর সময় হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠায় বেশ বিরক্ত হলেন মিসেস ইরানী। এতো রাতে আবার কে এলো? মিরার বাবার তো আসার কথা না তাহলে???
বেশ কয়েকবার বেল বাজার শব্দে এবার রেগে গেলেন মিসেস ইরানী। দ্রুত পদে এগিয়ে গেলেন।দরজা খুলতেই অল্প বয়সের এক যুবক প্রবেশ করলো। মিসেস ইরানীকে বেশ ধাক্কা দিয়েই ভেতরে ঢুকে গেলো।
“”এই ছেলে বলা নেই কওয়া নেই এভাবে ডাকাতের মতো ভেতরে ঢুকছো কেন? তুমি জানো আমার স্বামী পুলিশ অফিসার?? কল করলে এখনি এসে তোমাকে তুলে নিয়ে যাবে।””
“”খালাম্মা,আমার অথৈ কই?””
চলবে