#তোমাতে আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (৭)
“”খালাম্মা আমার অথৈ কই?””
“”তোমার অথৈ মানে? অথৈ তোমার কি হয়?””
অচেনা একটা ছেলের কন্ঠে অথৈর নাম শুনে বুক কেপে উঠলো মাহিরের। দ্রুত পদে এগিয়ে গেলো। সামনে একটা অল্প বয়সের যুবককে দেখতে পেলো। বয়সে অথৈর মতোই হবে,সাদা একটা শার্ট আর ট্রাউজার পড়া। শার্টটা বুকের কাছে ছেড়া,অথৈ কি আমার মতো এর ও শার্ট ছিড়ে দিয়েছে? ওর কি শার্ট ছিড়ার কোনো মানসিক রোগ আছে???
“”কি হলো বলছেননা কেন আমার অথৈ কই?”””
ছেলেটির রাগ মেশানো কথায় আবার মাহির মুখটার দিকে তাকালো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে মনে হচ্ছে চিড়ুনি লাগানো হয়নি অনেকদিন হবে, চোখগুলো কিছুটা গর্তে চলে গেছে,এমনটা তো দীর্ঘদিন ঘুম না হলে হওয়ার কথা।
“”উফ! আপনারা কি বলবেন আমার অথৈ কোথায়?””
“”আছে,এখানেই আছে। আগে বলুন তো কে আপনি??””
মাহিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চারপাশে ঘুরতে লাগলো ছেলেটি। বড্ড অস্থিরতাই ডুবে আছে।
“”কই,কোন রুমে আছে? উপরে নাকি নিচে বলুননা। কি হলো বলুননা? ঐদিকে আছে তাইনা? আমি অথৈর নিশ্বাস শুনতে পাচ্ছি। ওই তো অথৈর সুগন্ধ মেশানো নিশ্বাসের শব্দ। পেয়ে গেছি আমার অথৈকে।””
ছেলেটি ঠোটে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। মাহির আর মিসেস ইরানীও ছুটতে লাগলো।
অথৈ বিছানায় পড়ে থাকা একটি ড্রেস হাতে নিয়ে পড়ে নিলো। ওয়াশরুমে গিয়ে কয়েকবার কুলি করে নিলো। দুর কেমন বমি বমি পাচ্ছে। এই জন্যই মানুষের মাংস খাওয়া নিষেধ করেছে মনে হয়। সামান্য কামড়েই কেমন বমি বমি পাচ্ছে আর মাংস খেলে কি হতো? ভাবতেই অথৈ সত্যি সত্যি বমি করে দিলো। আবার মুখে পানি নিয়ে কুলকুচি করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মুখ মুছে নিলো। হঠাৎ একটা চেনা কন্ঠে অথৈ নাম শুনে অথৈ লাফ দিয়ে উঠলো। ভালো করে মনোযোগ দিতেই অথৈ বেশ অবাক হলো,এটা আরমান না???
অথৈ দ্রুত বাইরে বের হতে গিয়ে নিজের ফেলে দেওয়া লাগেজে পা আটকে পড়ে গেলো।
“”আহ! ওরে মাগো,আমার পা বুঝি ভেংগে গেলো।””
“”আমার অথৈমনি?? আরে তুমি পড়ে গেলে কিভাবে? ব্যথা পায়ছো তুমি? কোথায় ব্যথা পায়ছো,দেখি।””
আরমান অথৈকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে কান্না করতে লাগলো।
মাহির আর মিসেস ইরানী দুর থেকে সব দেখে যাচ্ছে। কি থেকে হচ্ছে মাহিরের মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। কে এই ছেলে? এমন উদাসীন কেন? এইতো হাসছিলো আবার কান্না করছে কেন? আমি তো ছোয়ার আগেই রাগ উঠে যায় আর এই ছেলে যে কোলে নিলো তাও তো কিছু বললো না অথৈ!! কে হয় অথৈর????
“”উফ! কথায় কথায় কান্না করার অভ্যাস এখনো যায় নি তোমার? ব্যথা আমি পাইছি তুমি কেন কান্না করছো আরমান?””
“”আমার কলিজার টুকরো ব্যথা পায়ছে আর আমি কাদবোনা, এইটা হয় বলো অথৈ মনি?””
“”তুমি কান্না থামিয়ে বলবে তুৃমি এখানে কি করছো?””
“”আমাদের তো কাল বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো অথৈ তাহলে তুমি আসোনি কেন? তুমি জানো আমি আজ ভোর পর্যন্ত তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম। পড়ে মনে হলো তোমার কোনো বিপদ হয়নি তো? তাই দৌড়ে তোমার বাসায় গেলাম। সেখানে গিয়ে শুনি তুমি ভুল করে আমার জায়গায় অন্য কাউকে বিয়ে করে নিছো। তাই এখানে ছুটে এলাম।””
“”ভুল করে বিয়ে করছি মানে?””
“”ওই যে আমাকে ভেবে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে ফেলছো। আমি তো জানি তুমি ছোট তাই কাকে বিয়ে করছো বুঝতে পারোনি।””
অথৈর ইচ্ছে হলো নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে। এত বড় দামড়া ছেলেকে বলে আমি চিনতে পারিনি। এটা কোনো কথা?? অথৈ দাত চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,,
“” আমি ছোট না? তুমি কি ইন্টারপাশ করে ফেলছো? আমি তো এখনো টেস্টও দিলাম না। তোমার জন্য তো সরকার আমার আগেই তোমার পরীক্ষা নিয়ে পাশ করে দিয়েছে যাতে আমার থেকে বড় হতে পারো তাইনা?””
“”তা কেন হবে অথৈ? সেম ক্লাসে পড়লেই তো তুমি আমার সমান হতে পারবেনা। আমি তোমার থেকে দুমাসের বড়।””
“”তুমি কি আমার কাছে আসবে?””
আরমান হাসি মুখে এগোতেই অথৈ শার্ট টেনে ছিড়ে দিলো।
মিসেস ইরানী ফিসফিস করে মাহিরকে বলতে লাগলো,
“”বলছিলাম না মেয়ের কোনো দোষ আছে? নাহলে এত সুন্দর মেয়ে হঠাৎ করে একদিনেই কেন বিয়ে দিবে বল? দেখ ঐ যে ওইটা ওর আশিক। নে এবার সামলা তোর হুট করে বিয়ে করা বউকে আর তার আশিককে। আমার ঘুম পাচ্ছে আমি গেলাম।””
মিসেস ইরানী হাই তুলতে তুলতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তার খালুজানকে বেশ মশলা মাখিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলছেন তা শুনতে পেলো মাহির। অথৈর কাছে এগিয়ে এসে আসলো।
“”কি হচ্ছে কি অথৈ, এটা কে?””
“”অথৈ আমার প্রেমিকা, ভাইয়া।””
আরমানের জবাবে বেশ রাগান্বিত হলো মাহির। একটু রাগ রাগ নিয়ে আবার অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,
“”প্রেমিকা মানে? অথৈ তুমি কি ওকে ভালোবাসো?””
“”হুম,ভাইয়া আমি অথৈকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসি।””
আরমানের রাগ এবার পুরো শরীরে বয়ে গেলো। হাতটা শক্ত করে ফেললো। প্রশ্ন করছি অথৈকে আর উত্তর দিচ্ছে এই পুচকো ছেলে। কেনোরে অথৈর জবান নাই? ও কি ওর জবান তোকে দান করেছে যে সব কথার উত্তর তুই দিবি? মাহির আর এক মিনিটও দেরি করলোনা। সোজা গিয়ে আরমানকে কোলে তুলে নিলো। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি আকটে দিলো। রাগে গজগজ করতে করতে অথৈর কাছে এসে দাড়ালো।
“”আপনার যে বয় ফ্রেন্ড আছে আমাকে বলেননি কেন?””
“”আমিতো…..””
অথৈ কিছু বলার আগেই আরমান ওয়াশরুমের দরজা ভেংগে ফেলার উপক্রম করতে লাগলো আর চিল্লাতে লাগলো,,
“”অথৈ তুমি চিন্তা করোনা,এই সামান্য দরজা আমি এখনি ভেংগে ফেলবো। তোমার কাছে যাওয়া থেকে আমাকে কেউ আটকাতে পারবেনা।””
মাহির রাগে ফুসতে লাগলো, ড্রেসিং টেবিলের আয়না ঘুসি দিয়ে ভেংগে ফেললো। আয়নার একটা টুকরো নিয়ে অথৈর দুই বাহু চেপে ধরে বললো,,
“”ওকে চুপ করতে বলবে নাকি এইটা দিয়ে কল্লা আলাদা করে ফেলবো?????”””
চলবে