#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল
/পর্ব ১১/
উনি সরল মুখে একইভাবে আমাকে ধরে আছেন। মৃদু ধাক্কায় নিজেকে ছাড়াই। খাটের নিচে ঢোকার জন্য উনাকে ঠেলতে থাকি। তিনি নিষ্প্রভ। উনার এই বেপরোয়া ভাবটায় আমি বিস্মিত। ফিসফিসিয়ে বলি, “আশ্চর্য স্ট্যাচু হয়ে আছেন কেন? কথা বুঝতে পারছেন না?”
“খাটের নিচে কেন ঢুকব? তুই না এটাই চাইছিলি!”
বিরক্তিতে ভ্রু কুচকাই। তিয়াস ভাইয়া আরও কয়েকবার করাঘাত করে। এমন চললে সত্যিই পুরো পরিবার রুমের সামনে জড় হবে। বিরক্ত কণ্ঠে বললাম, “আপনি আমাকে বাঁশ খাওয়াতে চাইছেন?”
তিনি দরজার দিকে এগিয়ে যান। মৃদু কণ্ঠে বলেন, “তিয়াসের গলা না? বন্ধু কতদিন পর আসল দেশে দেখা করি…”
আমার অস্থির মন চাইছে একে তুলে আছাড় মারি। শক্তিমান ঐ কার্টুন কুস্তিগিরদের মতো একহাতে তুলে একবার ডান দিকে একবার বাম দিকে আচড়ে ফেলি! দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে এলাম। তিনি ছিটকিনি খুলে ফেলেছেন। দরজা ফাঁকা করবার মুহূর্তে উনাকে সরিয়ে নিজে দরজা খুললাম। তিনি দরজার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। হাসছেন মৃদু মৃদু। তিয়াস ভাইয়ার সুচালো দৃষ্টির মুখোমুখী হই।
“তোর রুমে কে আছে?”
প্লাস্টিক হাসি নিয়ে, “কেউ না!”
ভাইয়ার দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ হয়। আমার কপালে, নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। আড়চোখে একবার পাশে তাকালাম। জিসান ভাই বখাটেদের মতো ঠোঁট উঁচিয়ে ফ্লায়িং কিস দেখালেন। মেজাজ আরও বিগড়ে গেল।
দরজা ঠেলতে ঠেলতে, “সর আমি দেখি।”
আমি দরজা দ্রুত চাপিয়ে দেই। আমতা আমতা করে বলি, “ভেতরে এসে কি করবি! এতরাতে কিসের জন্য এসেছিস সেটা বলে চলে যা। ঘুম পাচ্ছে।”
“তোর রুম থেকে পুরুষালী কণ্ঠ আসছিল।”
গাল ফোলালাম, “ও ঐটা? লাউড স্পিকারে রেকর্ডিং শুনছিলাম।”
ভাইয়ার বিশ্বাস হলো না। সন্দিহান চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, “তোর চার্জারটা দে তো। ফোন ডেড হয়ে গেছে।”
চিন্তা সব এলোমেলো হল। দরজা আবার আটকাতে আটকাতে বলি, “তুই দাঁড়া আমি এনে দিচ্ছি।”
“আরে মুখের ওপর আটকাচ্ছিস কেন? এইটুকু পথ রুমে যাবি আর আসবি।”
কাঁদোকাঁদো মুখে সম্মতি দেই। আজ নিশ্চিত বাঁশ খাব! দরজা ছেড়ে আলতো পায়ে রুমে আসলাম। বেড সাইডের সকেট থেকে চার্জার বের করতে করতে ভাইয়ার গগনবিদারী চিৎকারের আশা করলাম। চিৎকারটা হলো না। বরং ত্যক্ত কণ্ঠ এল,
“এত স্লো কেন তুই! তাড়াতাড়ি আন!”
পেছন ঘুরে আমি অবাক। ভাইয়া সন্দেহের বশে।দরজা পুরোটা খুলেছে। জিসান ভাই দরজার পেছনে। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে দ্রুত পায়ে চার্জারটা নিয়ে আসি। চার্জারটা হাতে নিয়েও ভাইয়া কিছুক্ষণ জহুরি চোখে দেখল। চলে গেল। সশব্দে দরজা বন্ধ করলাম। পড়ার টেবিল লাগোয়া চেয়ারে এসে বসলাম। জিসান ভাই নিশব্দে হাসতে হাসতে সামনে এসে দাঁড়ান।
“নার্ভাসনেসেও তোকে যা লাগে না!”
রেগে তাকাই। তিনি আরও শরীর দুলিয়ে হাসতে থাকেন। রাগ সামলাতে না পেরে পেন্সিল ব্যাগ ছুড়ে মারি। তিনি হালকা হেলে তা ক্যাচ ধরেন। রেগে বলে উঠি, “এক্ষুনি বেরিয়ে যান!”
তিনি ফিচেল হাসেন। সামনে এসে গাল দুহাতে টেনে দেন, “আমার লাল টমেটো খুব হট হয়ে গেছে!”
উনার ডান হাত খপ করে ধরে কাঁমড় বসালাম। তিনি ঝারা মেরে হাত সরালেন। পায়ের ওপর বসে গিয়ে বলেন, “জঙলির মতো শুধু পারিস কামড়াকামড়ি করতে! সভ্যতা শিখে কখনো চুমু টুমু দিয়েও ধন্য কর!”
ধাক্কা মেরে উনাকে সরাই। তাতে উনি বেতাল হয়ে সরলেন। আবার বসেন গেলেন, রেগে ফুসে উঠি, “উঠুন! একে তো দামড়া শরীর তার ওপর কোলে বসেছেন! আমার পা ভেঙে যাচ্ছে!”
কথাপ্রেক্ষিতে আরও শক্তপোক্ত হয়ে বসলেন। দুহাতে আমার ঘাড় জড়িয়ে ধরলেন, ঢঙ্গিকণ্ঠে বললেন, “বাবু রাগ করেছে?”
নাক-মুখ কুচকাই, “মেয়েলি ঢং করবেন না তো। থার্ড জেন্ডার মনে হয়!”
তিনি ঘাড় থেকে একহাত সরান। মুখে হাত দিয়ে মেয়েলি হাসেন। ভঙ্গিটায় হাসি পেল খুব। তবু রাগের আবরণ রেখে শক্তচোখে তাকালাম। তিনি এবার ঘাড় টেনে সারামুখে এলোপাতাড়ি ঠোঁট ছোয়ানো শুরু করলেন। উনার দাড়ি-মোছের ঘষা আর সুরসুরিতে উনার কোমড় খামচে ধরি। তিনি এসময় ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ান। আবার সরে এসে ঢঙ্গি কণ্ঠে বলেন, “বাবুর রাগ কমেনি?”
এবার জোরে ধাক্কা দিলাম। তিনি পরতে গিয়েও টেবিল আকড়ে সামলান। ভ্রু কুচকে ফেলেন। কিছুদূরে কোমড়ে দুহাত রেখে বিক্ষুব্ধ অসন্তোষ নিয়ে বলেন, “তোরা মেয়েরা এক নম্বরের সুবিধাবাদী! চুমু নিলি ফেরত দিলি না। লম্পট!”
অসন্তোষ চোখে তাকিয়ে রইলাম। উনিও প্রচন্ড বিরক্ত। হঠাৎ সশব্দে হাসা শুরু করি। উনি তাড়াতাড়ি এসে মুখে হাত রাখেন। হাসি থামে না। একটু আগের মেয়েলি ঢংটা বারবার চোখের পর্দায় ভাসে। হাসির মাত্রাকে উস্কে দেয়।
ধাতস্থ হলে তিনি চোখ মুছিয়ে দিলেন। হাটু ভাজ করে সামনে বসলেন। আমি আবার ফিক করে হেসে ফেলি। তিনি রাগান্বিত হলেন। পরক্ষণে ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে বললেন, “সরি।”
“যাক সুবোধ হলো!”
আড়চোখে তাকিয়ে, “সারাদিন ফোন না ধরার জন্য বলেছি! অটি ছিল।”
উনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনার চুলগুলো নেড়ে বললাম, “বড্ড অগোছালো হয়ে গেছেন।”
তিনি হাসেন। আমি উনার টোল দুটো দুহাতের আঙুলে টিপে দেই। মুহূর্তে হাসি থেমে গেল। আমি নিশব্দে হাসতে লাগলাম। অপলক দৃষ্টি মেলে একসময় আমার দুহাত আকড়ে ধরলেন। তাতে ঠোঁট ছুয়িয়ে উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়ে যান। পকেট থেকে কিছু বের করেন। আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি। কিছুটা নিচু হয়ে একটা চেইন গলায় পরিয়ে দিলেন। ঘাড়ের চুল সরালেন। শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠি। তিনি কানের পেছনে আলতো চুমু এঁকে ফিসফিসান, “ভালবাসি।”
দেহে আবার শিহরণ বইল। কেঁপে উঠলাম। চোখে পানি এল। তিনি বেরিয়ে গেলেন রুম ছেড়ে। বারান্দা টপকে। মন তোতাপাখিটা খুশিতে নাচানাচি করছে। কখনো ডানা ঝাপ্টিয়ে খুশি প্রকাশ করছে। চেঁচিয়ে বলছে, “অবশেষে___”
সকাল থেকে রুমে বসে ভ্রু কুচকে আছি। চেইনে একটা মাঝারি লকেট ঝোলানো। লকেটটাই আমার চিন্তাভাবনার মূল কারণ। লকেটে ছোট অক্ষরে দুটি শব্দ খোদাই করা, “প্রচণ্ড ভালবাসি তোমাতে!” আশ্চর্য এটা কোন বাক্য হলো? বাক্যের বোধগম্য অর্থটা ঠিক কি প্রকাশ করছে মাথায় আসে না। লকেটটার ভেতরে দুটো ছবি। এবং দুটোই আমার। রাগ হলো উনি উনার ছবি একটা দিতে পারতেন না? আরও আশ্চর্যের ব্যাপার সেগুলো আমার ক্লাস সিক্স, সেভেনের ছবি! উনি পেলেন কোথায়? এই ছবিগুলো আমি তুলিওনি। ভাইয়া বা আপুও তুলেনি! কিছু প্রশ্ন, কিছু অভিমান নিয়ে গাল ফুলিয়ে তাই বসে আছি। আপুর বদৌলতে লকেটটা দেখা। সকালে খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছিলাম। আপুর সন্দিহান কণ্ঠ আসে, “ঝুম গলার চেইনটা কবে কিনলি?”
সবার কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টি আমার ওপর পরল। খাবার মুখে পুরতে পুরতে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললাম, “গিফট পেয়েছি।”
“কে দিল?”
“বান্ধবী!”
আপু সুচালো দৃষ্টিতে কিছু বলতে যাচ্ছিল। মামী ওর পিঠে চাপড় মারেন। বলেন, “খাওয়ার টেবিলে এত কথা না!”
আপু চুপ করে যায়। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে ওর কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টি আমাতে এসে পরতে থাকে। চোখ ফিরিয়ে দেখি তিয়াস ভাইয়াও সুচালো দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। অসহ্য লাগল। খেয়ে রুমে এসে ফোন ঘাটছি। আপু এসে হাজির। বিরক্ত চোখে তাকাই, আপু হাসে, “চেইনটা খুলে দে তো লকেটটা একটু দেখি!”
“আমার চেইনের পেছনে পরলি কেন!?”
“তোর বফের প্রথম গিফট দেখব না?”
চেইন খুলে হাতে দেই, “বিরক্ত করিস খুব!”
আপু স্বাভাবিক মুখে চেইনটা নিল। লকেট উল্টেপাল্টে দেখে কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে রইল। ওর এমন চেহেরা দেখে বললাম, “কি হয়েছে?”
“শাফি কি বাংলা জানে না?”
“আশ্চর্য জানবে না কেন?”
“তাহলে এটা কি লিখেছে! প্রচণ্ড ভালবাসি তোমাতে!”
তাজ্জব হলাম, “লকেটে কিছু লেখা আছে?”
আপু একবার মুখ তুলে তাকায়। নিরুত্তর আবার লকেটটা ঘাটাঘাটি করতে থাকে। একসময় হাতে নিয়ে চাপ মারে। বিরক্ত হই, “ভেঙে ফেলবি নাকি!?”
আপু উত্তর দেয় না। লকেটটা একসময় খুলে গেল। আমি রেগে কিছু বলতে চাইছিলাম। আপু চেঁচিয়ে উঠে, “আরে এ তো তোর পিচ্চিকালের ছবি!”
দ্রুত আপুর পাশে এসে দাঁড়াই। আপু কিছুক্ষণ জিসান ভাইয়ের বাংলা জ্ঞান নিয়ে হাসাহাসি করল। আমি গাল ফুলিয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম।এসময় ফোনটা বেজে উঠে__#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল
/পর্ব ১২/
“হ্যালো।”
“কি হয়েছে? এমন ঝাঝ নিয়ে কথা বলছিস কেন?”
গাল ফোলাই, “কিছু হয়নি!”
“ঢং করবি না! কি হয়েছে সেটা বল?”
এবার আমার কান্না পেল। ইদানিং আমার কারনে অকারনে কান্না পায়। খুশিতে কান্না পায়, দুঃখে কান্না পায়, রাগেও কান্না পায়! ফোঁপাতে শুরু করি। তিনি বিব্রত, অস্থির হয়ে উঠেন, “এই কি হয়েছে তোর? কেউ বকেছে? তিয়াস কিছু বলেছে?”
কেঁদে কেঁদে নিশব্দে মাথা দুদিকে নাড়ি। কেউ কিছু বলেনি। তিনি ধমকে উঠেন, “এই ঝুম! জবাব দিচ্ছিস না কেন?”
কান্নার শব্দ বেশি হতে থাকে। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলি, “জবাব দিয়েছি তো বকছেন কেন?”
“মুশকিল! আচ্ছা আমি আসছি বাসায়।”
“আপনি না হসপিটালে?”
“সময় নিয়ে আসব।”
“দ্রুত আসুন তাহলে।”
কল কেটে যায়। আমি চোখ মুছে উঠে দাঁড়াই। ইচ্ছে চোখে-মুখে পানি ছিটাব। দরজার দিকে চোখ পরতে বিস্মিত হয়ে গেলাম। মামী দাঁড়িয়ে আছেন। ভেবাচেকা খাই। চমকে যাই। উনি কি শুনেছেন আমার কথাগুলো? মামী বিস্মিত হয়ে এগিয়ে আসেন, “কাঁদছিস কেন? আর কার সাথে কথা হলো?”
আমি ভেবাচেকা খেয়ে মাথা নিচু করে থাকি। মামী কাছে এসে দাঁড়ান। থুতনি ধরে মুখটা তুলেন। কোমল কণ্ঠে বলেন, “কি হয়েছে মা? আমাকে বল।”
মাতৃমূর্তি এই অর্ধবয়স্ক মানুষটিকে মিথ্যে বলতে বাধল। আমার জীবনে মাতৃস্নেহ পাবার আফসোস, আকুলতা বিন্দুমাত্র নেই হয়ত এই মানুষগুলোর জন্য। যাদেরকে আকড়ে থাকায় কোন কালো ঝরই আঘাত হানেনি। বরং বাধ্য হয়েছে দূর থেকে পাশ কাটাতে। মামী পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দেন। বলেন, “বলবি না?”
মস্তিষ্কের জট হাতড়ে এক যুক্তি মুহূর্তে দাঁড় করালাম, “আমার বান্ধবীরা কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছে ট্যুরে। সবাই একজোট মাঝখানে আমিই যেতে পারব না।”
বুকটা ধুকধুক করতে শুরু করল। আদো যুক্তিটা বিশ্বাসযোগ্য হল? মামী আলতো হাসেন, “এর জন্য কাঁদতে আছে? তাছাড়া কাকে বলেছিলি ব্যাপারটা? কে মানা করল?”
মামীর দিকে সরাসরি তাকাই। অভিমানী কণ্ঠে বলি, “আমার পুরো জীবনটাই রেস্ট্রিকশন। কলেজ, স্কুল, কোচিংয়ে সবসময় কেউ না কেউ নিয়ে গিয়েছে। যেন একা না যাই। প্রত্যেকবার স্কুল, কলেজ থেকে পিকনিকে যেত আমার সেখানে যাওয়ার পার্মিশন থাকত না। বান্ধবীদের বাসায় যেতে হলেও ভাইয়া নয় আপু যাচ্ছে…”
“এসব তোর নিরাপত্তার জন্য করে। তোর ভাই/আপু কি খারাপ চাইবে?”
“অন্যদের এমন নিয়ম না। আমারই কেন?”
“সবারই থাকা প্রয়োজন। কার কখন কি হয় বলা মুশকিল। এর জন্য কাঁদছিলি?”
মাথা নিচু করে সম্মতি দেই। মামী বলেন, “একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। নইলে ভাইয়ের বিয়ে মিস করতি।”
অবাক চোখে তাকালাম, “মানে?”
“আজকে তোর ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাব। নেহা না কি নাম! তোর ভাই যে পছন্দ করে রেখেছে? ওর জন্য পাত্রপক্ষ আসছে যাচ্ছে বারবার। তোর ভাইয়া পাগল হয়ে গেছে!”
“আজকেই যাব? তোমরা একটা দিন রেস্ট নিবে না?”
“আর রেস্ট! তোর ভাই কি ছাড়ে?”
খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। মামীকে জড়িয়ে বললাম, “ভাইয়ার বিয়ে কি এই সপ্তাহেই?”
“কি জানি! ওরা সম্মতি দিলে হয়ে যেতে পারে।”
একগাল হাসি, “আমিও যাব মেয়ে দেখতে?”
মামী গাল টেনে দেন, “অবশ্যই। বরের একমাত্র বোন!”
“লেহেঙ্গা পরব তাহলে।”
“আজকে?”
“হ্যা। কেন পরা যাবে না?”
মামী কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কি যেন ভাবলেন। আপনমনে হেসে মাথা নাড়েন। আমি বাথরুমে এসে গেলাম। চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে আয়নায় তাকালাম। চোখের কোল একটুতেই ফুলে উঠেছে। কেমন যেন লাগছে চেহেরাটা! পাত্তা না দিয়ে বাইরে বেরই। মামী চলে গেছেন। টেবিলে জুসের গ্লাস ঢাকা। মৃদু হেসে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াই। কোমড়ে হঠাৎ শীতল স্পর্শ অনুভব করলাম। চমকে পেছনে তাকাই। জিসান ভাই ক্লান্ত হাসেন। আমাকে বুকের কাছে দাঁড় করিয়ে বলেন, “কাঁদছিলি কেন?”
“দরজা খোলা। কেউ এসে পরবে।”
“আসুক। পেয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া?”
বিস্ময়ে তাকাই। চোখ টিপ মারলেন। উনার মাথার তার তুর হয়ত দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! স্থান, কাল বোঝা বাদ দিচ্ছেন। সরে দাঁড়াই। দরজাটা লাগিয়ে এসে বলি, “আপনার বুদ্ধিসুদ্ধি দিন দিন কমে যাচ্ছে!”
“এটা আমার জানা কথা। অজানাটা বল!”
তিনি চেয়ারে বসে যান। ক্লান্ত দৃষ্টি টেবিলের জুসের গ্লাসটার ওপর পরল। জিজ্ঞেসা না করে তা গোগ্রাসে শেষ করলেন। ঠোঁট মুছে নিয়ে বললেন, “কি রে বল!”
উনার কাছাকাছি টেবিলে ভর রেখে দাঁড়াই। লকেটটা দেখিয়ে বলি, “এটা কি লিখিয়েছেন আপনি?”
তিনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে। লকেটের দিকে আর তাকান না। অসন্তোষ নিয়ে বলেন, “কেন তুই কথাটা জানিস না? এর জন্য ওভাবে কাঁদতে হয়?”
বিরক্ত হলাম, “লেখাটা একবার পড়ে দেখুন!”
তিনি ভীষণ বিরক্ত। ফর্সা চেহেরায় বিরক্তিটাও খাপে খাপ মিলে যায়। ক্লান্তিমাখা ঐ ঘামের বিন্দু ফোটারাও যেন সে সৌন্দর্যে ঝলসে যায়। মাঝে মাঝে আমার হিংসে হয়। চরম হিংসে হয়। তিনি কেন এত সুন্দর? উনার চেহেরা থাকবে সাদামাটা একহারা। হয়ত তাতে একটু বিশেষত্ব লুকিয়ে থাকবে। যা একান্ত আমার সামনে প্রকাশ পাবে। অন্য কারোর জন্য তার প্রকাশ দ্বার বন্ধ। তিনি আলতো হাতে ঝাকরা চুলগুলো একবার পেছনে পাঠান। হাত বারিয়ে লকেটটা নেন। বিস্মিত দৃষ্টি ফুটে উঠে। সাথে আক্রোশ! কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পকেট থেকে গোল চশমাটা বের করলেন। পরলেন। মুখটা আরও ক্রুব্ধ হলো।
“এটা কে লিখিয়েছে?”
“আপনি দিয়েছেন। তাহলে আপনারই লেখানো!”
“না আমি এটা লিখতে বলিনি। কারেকশনটাই বলেছিলাম। তোমাকে’র জায়গায় ওরা তোমাতে লিখে দিয়েছে!”
কাহিনীটা বুঝে আমি অসহায় মুখে টেবিলের ওপর বসে যায়। উনার মুখটা এখন ছোট হয়ে এসেছে। মন খারাপ কণ্ঠে বলেন, “গিফট তোর পছন্দ হয়নি তাই না?”
“এই না। কে বলল কথাটা?”
“কাঁদছিলি যে!? এরজন্যই হয়ত। মন খারাপ করিস না। এ মাসের বেতনে ত্রুটিহীনটা কিনে দিব।”
উনার মন খারাপ চেহেরাটা দেখে মায়া হলো। নরম চুলের ভাজে আঙুল চালিয়ে বললাম, “মন খারাপ আমার সেজন্য হয়নি। আপনি বাংলায় কিভাবে ভুল করলেন সেটাতে হয়েছিল। লকেটের ছবির জায়গায় কেন দুটোই আমার ছবি সেটাতে হয়েছিল। ঐগুলো বাদে আপনার প্রথম গিফট দারূণ।”
মন খারাপের মেঘ তবু সরে না। বরং ক্লান্ত চেহেরায় আরও ক্লান্তি নামে। বলেন, “স্বান্তনা দিস না। পছন্দ না হলে খুলে রাখ। এ মাসের টাকায় কিনে দিব।”
“আপনি বেশি বুঝেন সবসময়।”
“তাহলে ওমন অরে কাঁদছিলি কেন?”
মাথা নিচু করলাম, “ভেবেছি আপনি ইচ্ছে করে লিখিয়েছেন।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে পরলেন, “রেখে দিস কোথাও। ফেলবি না আবার। আমার প্রথম বেতনে কেনা। ত্রুটিহীনটা নাহয় মাসশেষে কিনে দিব।”
উনার দুহাত টেনে ধরি, “লাগবে না। ত্রুটিটাই অসাধারণ।”
তিনি রেগে তাকান। আমার ভয় লাগে না। বরং ভাল লাগায় বুদ হই আরও। মানুষটার কাছে আমি ঠিক কতটা স্পেশাল ভাবতেই সুখব্যাথা পাক খেল। কানে ছাড়া ছাড়াভাবে বারি খেতে লাগল, “প্রথম বেতনে কেনা” শব্দগুলো। বললাম, “সব সময় ত্রুটিহীনতা চাইতে নাই। আমারও চাই না।আমার ত্রুটিপূর্ণ প্রেমিকের দেয়া ত্রুটিপূর্ণ ছোট ছোট যে ভালবাসাগুলো পাই ওরাই আমার প্রিয় আবেশ। হঠাৎ ভুলে প্রিয় শাস্তির জন্য করা প্রিয় বোকামি।”
উনার দৃষ্টি নম্র হলো। হাত টেনে বুকে জড়িয়ে নিলেন। কপালে গাঢ় ঠোঁট ছুয়িয়ে বললেন, “প্রেমিকা আমার কাব্যিক বটে!”
দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি, “প্রেমিকাও প্রচন্ড ভালবাসি তোমাতে!”
তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। একটু পর নিশব্দে আমাকেসহ দুলে দুলে হাসতে লাগলেন। উনার বুকের ধুকধুকানি আমার কানে ছন্দ মেলে দেয়। সে ছন্দে তাল মেলায় আমার অবুঝ মন।
গাড়ি থেকে নেমে লেহেংগা দুহাতে তুলে হাঁটতে থাকি। সবাই গেটের কাছে। আমি আর তিয়াস ভাইয়া পেছনে পরে আছি। লেহেংগা দুহাতে হাঁটছি তাই গতি কম।
“এমন স্কার্ট পরে আসতে গেলি কেন? কনে বাড়ির লোকেরা বলবে মেয়ে দেখতে এসে রেডিমেড আরেক কনে গছাতে নিয়ে এসেছি।”
“ভাইয়া!”
পাথুরে পথ ধরে ভাইয়া ফোন ঘাটতে থাকে। আমার চোখ রাঙানিতে আর ফিরে চায় না। আপুও বেশ বিরক্ত আমার প্রতি। আমার কি দোষ? ইচ্ছে হয়েছে পূরণ করব না? আশ্চর্য!
নেহা আপুরদের বাসার কাছাকাছি আসতে একজন মধ্যবয়স্ক লোককে দেখলাম। নেহা আপুর চাচা হয়ত। এলাকাটা মফস্বলি। আশপাশে গ্রাম গ্রাম ছোয়া। বুনো ফুলের তীব্র গন্ধ নাকে এসে লেগেছিল তখন। এত সবুজ দেখলে চোখ, হৃদয় আপনাই জুড়ায়।
~চলবে❤️
[আরও ছিল। মাঝে লিখতে হবে আরও তাই কেটে দিয়েছি পরের পর্বে দিব সেগুলো। ঘুম নাইট🙎♀️]
~চলবে❤️
চিল ভাই চিল
কালকে দেই নাই তো কি হয়ছে?
রাতে আরেক পর্ব দিব ডিল😌✊