তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব -০২

#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_২

এক ঘন্টার মতো জার্নি করে মরিয়ম দের বাসায় এসে পৌছালাম। এই প্রথম আসা আমার মরিয়মের বাসায় আগে অনেকবারই বলতো তার বাসায় যেতে কিন্তু আমার আব্বু আম্মু পছন্দ করে না অপরচিত মানুষের বাড়ি যাওয়া। বড় কথা হলো এটা মরিয়মের নিজের বাবার বাড়ি না এটা তার নানু বাড়ি তাই তেমন একটা গুরুত্ব দিয়ে আসা হয়নি কিন্তু ভাগ্য বলতে একটা জিনিস আছে আজ সেটাই প্রমান হলো আসতে হলো মরিয়মের নানা বাড়িতে। মরিয়মের নানুর বাড়ি তেমন একটা সচ্ছল না ইটের দেওয়াল আর উপরে টিনের চাল তিনটা রুম। বড় একটা উঠান আছে তার পাশে আরেকটা টিনের ঘর আছে আবার তার সাথে আরেকটা সাধ ওয়ালা ঘর আছে যেটা মরিয়মের চাচার ঘর। বাড়ির ভিতর গিয়ে মরিয়মের নানু আর মাকে সালাম দিলাম তাদের সাথে মাঝে মধ্যে ইমুতে মরিয়মের সাথে কথা বলা সময় কথা হতো তাই উনাদেরকে আমার নতুন করে পরিচয় দিতে হয় নি আর আমাকেও উনাদের পরিচয় দিতে হয় নি। মাগরিবের আজান দিয়ে দিছে সেই কখন আরেকটু পরে এশারের আজান পরবে। মরিয়মের রুমে গিয়ে হালকা ফ্রেস হয়ে যেই বসলাম তখনই মরিয়ম বলতে লাগলো,
-ভাই এবার বলো,কি হলো হটাৎ করে কোন বিপদে পরলা যে আগে এতোবার বলার পরও আসলা না আর এবার নিজের ইচ্ছায় চলে আসলা।
মরিয়মের কথায় একটা লম্বা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম তার পর তাকে সব প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললাম। আমার কথা শুনে সে অবাক তাই আমায় জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি তো আমাকে কোনো দিন তোমার এই সায়ান ভাইয়ার কথা বলো নাই।
-কি আর বলবো,সায়ান ভাইকে আমি জমের মতো ভয় পাই কেনো ভয় পাই জানি না আমার মতে ভাইয়া কেমন জানি। আর কিছু বলতে যাবো তখনই একটা মেয়ে রুমে আসতে আসতে বললো,
-মরিয়ম আমরা চলে যাচ্ছি । এটা বলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এই মেয়ে টা কে মরিয়ম ,,?
মরিয়ম আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমার বান্ধবী নুশা।
-অহ, কেমন আছো।
-জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি ভালো আছেন।
-হুম ভালো আছি, শুন মরিয়ম আমরা চলে যাচ্ছি।
-ওমা আজকেই তোমরা না সোমবারে যাবা।
-না তোর দোলাভাই আসতাছে আসলেই চলে যাবো।
-অহ আবার কবে আসবে।
-দেখা যাক কবে আসা যায় আবার। বলে উনি ঘর থেকে বের হয়ে গেলো , আর আমি মরিয়ম কে জিজ্ঞেস করলাম,
-কে এটা,,,?
-আম্মুর কাকাতো ভাইয়ের মেয়ে আমার বোন, তুমারে যে বলেছিলাম আমার একটা বোনের হাসবেন্ড সেনাবাহিনী তারঐ আর এখন তারা সিলেট চলে যাবে।
-কিহ সিলেট, সিলেট কেন্টরমেন্টে যাবে নাকি।
-হুম ।
-মরিয়ম প্লিজ বোন আমার আরেকটু সাহায্য করো আমাকে, আমাকে একটু উনাদের সাথে যাওয়ার জন্য কিছু একটা করো।
– মানে, কি বলছো এসব তুমি ঐখানে কোথায় যাবে।
-ঐখানে আমার কাকাতো ভাই আছে প্লিজ প্লিজ আরেকটু করো প্লিজ প্লিজ।
-আচ্ছা দেখতেছি আমি বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো আর কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললো,
-নুশা তুমি রেডি থেকেও দোলাভাই এসে পরেছে খাওয়া দাওয়া করেই বের হবে।
-ধন্যবাদ অনেক অনেক ধন্যবাদ তুমাকে আমার এমন সময়ে সাহায্য করার জন্য। আমি তোমার এই ঋণ কোনো দিন ভুলতে পারবো না।
-আরে সমস্যা নাই বান্ধবী তো আমরা তাই না ।
-হুম
তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওদের সাথেই বের হয়ে গেলাম। তারপর এখান থেকেই সিলেটের বাসে উঠে পরলাম,
এতোক্ষণে মোবাইল টা খুললাম যার কাছে এখন যাওয়ার জন্য মরিয়ম দের বাড়ি থেকে বের হয়েছি তার কাছেই ফোন দেওয়ার জন্য । ফোন লিস্ট থেকে ভাবি কে ফোন দিলাম ভাইয়ের নাম্বার নাই । প্রথম ফোনে রিসিভ হলো না দ্বিতীয় ফোনে সোয়াদ ফোন ধরলো আর বললো,
-আসসালামু আলাইকুম নুশা ফুপ্পি কেমন আছো।
-আমি ভালো আছি সোয়াদ তুমি কেমন আছো।
-আমিও ভালো আছি।
-সোয়াদ তুমার আম্মু কই।
-দাড়াও দিতেছি। হ্যালো নুশা।
-ভাবি কেমন আছেন।
-ভালো আছি তুমি কেমন আছো।
-ভাবি বেশি ভালো না৷ ভাবি আমি আপনাদের এখানে আসতেছি ।
-কি বলো, হঠাৎ এই রাত করে। আর কার সাথে আসতাছো।
-ভাবি আমি আপনাকে এসে সব কিছুই বলবো এখন আপনি ভাইকে বলেন আমিকে একটু নিয়ে যেতে।
-আচ্ছা বলতেছি তুমি এখন কই।
-ভাবি আমি বাসে আছি আর আমার সাথে বাড়ির কেউ নাই আপনি প্লিজ এখন বাড়ির কাউকে বলবেন না।
-আচ্ছা তুমি কি একলা নাকি সাথে কেউ আছে।
-সাথে আমার বান্ধবীর বোন আর বোনের জামাই আছে।
-অহ আচ্ছা । সাবধানে আসো আমি তোমার ভাইয়ের সাথে কথা বলছি,,,,
কথা শেষ করে পাশে তাকিয়ে দেখি আমার পাশে একজন মাক্স পরা ছেলে বসে আছে, কিন্তু এখানে তো মরিয়ম আপু বসে ছিলো।
তাই তাড়াতাড়ি করে বসা থেকে দাড়িয়ে দেখি সামনের সিটে তারা দুইজন বসে আছে তাই আবার বসে পরলাম আমারও কোনো ইচ্ছে নাই তাদের মাঝ খানে থাকার। কি করবো ভেবে এতোক্ষণে মোবাইলে মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজ গুলো পরতে লাগলাম মেসেজ গুলো এমন ছিলো।

★ নুশা রানী কাজ টা তুমি একদম ঠিক করলে না। আমাকে রাগীয়ে কি লাভ হবে বলতো তার থেকে আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি যেখানেই আছো ভালো মেয়ের মতো চলে আসো কিছু বলবো না তুমাকে ।

★ভালো মেয়ের মতো ফোন টা রিসিভ করো তুমি তো জানো আমার রাগ সম্পর্কে তাই আমার রাগার আগেই আমার কথা শুনো।

★ নুশা রানী রাগের কিন্তু একটা লিমিট থাকে তুমি কিন্তু আমার রাগের কন্ট্রোল হারাতে বাদ্য করছো।

এমন আরো অনেক মেসেজ আর না পরে উপর থেকেই মেসেজ গুলো দেখছি্। একেবারে প্রথম থেকে মেসেজ গুলো পড়ছিলাম। পড়ার মাঝেই আবার নতুন একটা মেসেজ আসলো মেসেজ টা দেখে আমার কাছে সব কিছু অন্ধকার লাগছিলো গলা যেনো শুকিয়ে গেছে এমনিতেই শীতের কারনে হাত পা বরফ হয়ে আছে বাড়ি থেকে কিছুই আনি নাই শীতের কাপড় তারপর মরিয়ম আসার সময় তার একটা চাদর দিয়ে দিছে এটাই কোনো রকম বোকরার উপর পেচিয়ে বসে আছি। মেসেজ টা এমন ছিল,,,

★অনেক হইছে অনেক সুযোগ দিয়েছি আর সুযোগ দিবো না তুমাকে । আমি আমার রাগের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছি, এখন তুমি যেখানে যেতে চাও সেখানেই যাবে কিন্তু সেটা তুমি একা তুমার ইচ্ছেতে যাবে না। আমার সাথে আমার ইচ্ছেতে যাবে রেডি থেকো MY JAN I AM COMING ,,,,,।

মেসেজার মাঝে কিছু একটা ছিলো , খুব ভয় লাগছে উনি আমাকে ফলো করছে না তো, না তা কোনো ভাবেই হতে পারে না,, তাহলে আমি শেষ, গলা শুকিয়ে গেছে কি করবো বুঝতে পারছি না সবাইকেই হঠাৎ করে সন্দেহ হচ্ছে তাই তারাতাড়ি পাশে তাকিয়ে দেখি ছেলেটা সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকার মতো আছে । ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না কারন মুখে মাক্স পরা আর টুপিওলা জেকেট পড়া। শীতের মাঝে এটা তো কমন বেপারই জানুয়ারী মাস এটা শীতের প্রকূপ টাও বেশি আজকে সারা দিন রোদ ছিলো না কুয়াশায় ডাকা ছিলো । চোখে প্রচুর ঘুম আসছে শরীরটাও অনেক ক্লান্ত লাগছে বিশ্রামের প্রয়োজন কিন্তু আমি তো ঘুমাতে চাই না। ঘুমালেই বিপদ যদি কোনো ভাবে আমাকে ধরে ফেলে তখন ঘুমিয়ে পরলে তো আমি বুঝতেও পারবো না ,
না আমাকে সজাগ থাকতে হবে ঘুমিয়ে গেলে চলবে না ।

যতই বলি ঘুমাবো না ঘুম তো আর মনের কথা শুনে না চোখ তো আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মোবাইলটা খোলে দেখলাম বারোটা বাজে বাসের মধ্যে বসে থাকা অনেকই অলরেডি ঘুমিয়ে পরেছে আমিও জানালার দিকে তাকিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছি প্রাকৃতিক কিছুই দেখা যাচ্ছে না যা দেখা যাচ্ছে তা হলো দোকান পাট লাইটিং আর মাঝে মধ্যে আমাদের গাড়ি কে ক্রস করে যাচ্ছে কয়েকটা গাড়ি। বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখ লেগে গেলো নিজের অজান্তেই বুঝতে পারলাম।

★★★
এদিকে নুশা ঘুমিয়ে পরতেই কেউ একজন তার মুখে এমন কিছু একটা দিয়েছে যে, সে ঘুমের মধ্যেই জ্ঞান হাড়িয়েছে । তাকে এখন হাজার ডাকলেও কোনো সাড়াশব্দ পাবে না । লোকটা তাকে অজ্ঞান করে হাসতে হাসতে বললো,
-লাস্ট পর্যন্ত জয়টা তাহলে আমারই হলো, কি বলো মিস নুশা এটা বলে আরো হাসতে লাগলো আর মরিয়মের বোন আর বোনের জামাই কে ধন্যবাদ দিয়ে বাস ড্রাইভার কে থামিয়ে নেমে পরলো লোকটি নুশাকে কোলে নিয়ে বাসের মধ্যে যারা জেগে ছিলো আর গাড়ির থামার জন্য আর কথা শুনে ঘুম থেকে উঠেছিল সবাই কেমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলো,,,,,

#চলবে_?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here