তোমার নেশায় পর্ব ১৬

# তোমার_নেশায় !
,
(১৬)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
আশ্রাফ খান দুইদিন ধরেই ছেলের সাথে যোগাযোগ করার
অনবরত চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছেনা।
ছেলেটা এখন কি নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকে বুঝে উঠতে
পারেননা উনি। কাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত রুপাঞ্জনের
ফোন নট রিচেবল আসছে। উনি এবার বিরক্ত হয়ে
রুপাঞ্জনের পি.এ কে ফোন দিলেন।
,
:– হ্যালো!
,
:– হ্যেলো মিঃ আনিস! আপনার বস কোথায়??
,
:– স্যার, বস কালকে অফিস ও আসেননি। আর আমার সাথে
কাল থেকে উনি কথা বলেননি।
,
:– তাহলে তুমি করোটা কি?? তোমার বস কই থাকে, কি
করে, সে খোজ নেওয়ার জন্যই তো তোমাকে রাখা
হয়েছে।
,
:– সরি স্যার! আমার জানা মতে উনি এখন ওনার বাসায়
আছেন। আসলে কালকে উনি ওনার বাসায় কিছু
মেয়ে………
,
:– ওকে! আমি গিয়ে দেখছি ওর বাসায়।
,
,
দুপুর ১২টা বাজতে চলল। এখন ও ছেলেটা বাসায় কি
করছে। খবর নেওয়া দরকার। তাই উনি আর দেরি না করে
ড্রাইবার কে বললেন, রুপাঞ্জনের বাসায় যেতে। বাসায়
গিয়ে উনি কয়েকবার কলিং বেল চাপ দিলেন কিন্তু
কোনো রেসপন্স নেই। তাই শেষ মেশ বিরক্ত হয়ে নিজের
কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে ঘরে ডুকলেন। আজ
ছেলেকে ইচ্ছা মতো বকবেন এতোটা কেয়ারলেস কেউ
কি করে হতে পারে। উনি একে একে সব রুম খুজে কোথাও
রুপাঞ্জন কে পেলেন না। এক গ্লাস পানি খাওয়ার জন্য
কিচেনে গিয়েই চমকে যান। তার একমাত্র ছেলে
মেঝেতে পড়ে আছে। আর হাতে রক্তের দাগ শুকিয়ে
গেছে। তিনি রুপাঞ্জন কে ওইভাবে দেখে খুব ভয়ে পেয়ে
গেলেন। আশেপাশে বিয়ারের বোতলের ছড়াছড়ি দেখে
বুঝলেন রুপাঞ্জন নেশা কারনে ঘুমাচ্ছে । উনি
রুপাঞ্জনের পাশে বসে কয়েকবার ঝাকালেন। তবুও
রুপাঞ্জন চোখ খুলল না। শেষে পানি ছিটা দিতে
রুপাঞ্জন একটু নড়ে উঠল। আস্তে আস্তে চোখ খুলে বাবা
এখানে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরল।
,
:– তুমি একি হাল করেছো নিজের রুপাঞ্জন???
,
:– ড্যেড! ও এখানে আছে…. ও কোথাও যায়নি। আমি…
আমি ওকে তাড়িয়ে দিয়েছি কিন্তু…ও যায়নি।
,
আশ্রাফ খান ছেলের এমন আচারন দেখে অবাক হলেন।
,
:– রিলেক্স রুপাঞ্জন! তুমি ধীরে সুস্থে বলো, কাকে
তাড়িয়েছো? কে যায়নি??
,
:–ড্যেড তোমার মনে আছে, ৬ মাস আগে ফুফির প্রতিশোধ
নিতে আমি আহসান চৌধুরী মেয়েকে বিয়ে করার প্ল্যেন
করি।
,
:– হ্যা! মনে আছে, তুমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করে ৬ মাস
সংসার করবে আর তারপর ছেড়ে দিবে যাতে ও
ভালবাসায় আঘাত পায় কিছু করে বসে আর এতে তার
বাবা বুঝতে পারে তোমার ফুফি কেমন কষ্ট পেয়েছিল।
এখন কি হয়েছে মেয়েটার?
,
:– ড্যেড আমি সব কিছু প্ল্যেন মতই করেছি, ও আমাকে
অনেক ভালোবেসেছিল আর ঠিক ৬ মাস শেষ হওয়ার পর
আমি ওকে বাসা থেকে ঘাড় দাক্কা দিয়ে বের করে
দিয়েছি।
,
:– তো এটা তো অনেক খুশির খবর! তুমি তোমার ওয়াদা
পুরন করতে পেরেছো।
,
:- হ্যা! আমি জানি অনেক খুশির খবর। কিন্তু ড্যেড সেই
খুশি যে আমার মন পর্যন্ত পৌছায়নি। আমি ভেবেছিলাম
ওকে তাড়িয়ে আমি খুব ইঞ্জয় করবো ড্যাড! তাই আমি
মেয়ে, পার্টি সব কিছু নিয়ে ডুবে থাকি। কিন্তু কিছুতেই
শান্তি পাইনি, আমার সব কিছু আছে তবুও মনে হচ্ছে এতো
কিছু থাকা সত্তেও আমি আজ নিসঃহ। খুবই একা বাবা! এই
বাসায় প্রত্যেক কোনা যেন আমাকে রুপশার কথা মনে
করিয়ে দিচ্ছে। আমার মনে হয় রুপশা এই বাসা তেই আছে,
ও হাসছে, কথা বলছে। জানো কাল রাতেও ওকে আমি
ঠিক এই জায়গায় দেখেছি।
,
:– রুপাঞ্জন শান্ত হও! তোমার নেশা এখন ও কাটেনি। তাই
এইসব ভুলবাল বকছো।
,
:– ইয়েস!! ড্যাড কাটেনি নেশা! রুপশার নেশা!! আমার
রক্তের শিরায় শিরায় যেন রুপশার নেশা চেপে বসেছে
ড্যেড! আমি ওকে ভিসন ভাবে মিস করছি। ওর নেশা যে
খুব মারাত্মক! আমাকে পাগল করে দিবে। ওর নেশায় যে
সুখ আছে সেটা দুনিয়ার আর কোনো বস্তুতে নেই! ড্যাড
প্লিস আমি আর এই বাসায় থাকবোনা। আমি পাগল হয়ে
যাচ্ছি। আমার মন যে আমারই শত্রু হয়ে গেছে। আমার মনে
যে এখন রুপশার নেশা! আমার শিরা উপশিরা যে আমার
প্রত্যেক মুহুর্তে ঝন্ত্রনা দিচ্ছে। আমার রুপশা কে চাই!
ড্যেড।
,
:– শাট আপ! রুপাঞ্জন। তুমি জানো তুমি কি বলছো। ঐ
মেয়ের বাবা তোমার ফুফির সাথে কি করেছে?What’s
wrong with you…..মেয়েটা কি তোমার মাথা খেয়েছে।
তুমি রুপাঞ্জন খান! আশ্রাফ খানের ছেলে। তোমার জন্য
মেয়ের অভাব হবেনা। বাংলাদেশের টপ সুন্দরির সাথে
তোমার বিয়ে হবে। ভুলে যাও ওই আপদ কে!
,
;- No Dad! pls try to understand… সিগারেট এর নেশা যেমন
হুইস্কি দিয়ে কাটানো সম্ভব নয়। তেমনি রুপশার নেশা ও
দুনিয়ার আর কোনো মেয়ে কাটাতে পারবে না।
আশ্রাফ খান এবার রেগে উঠে দাড়ালেন। তারপর
রুপাঞ্জন কে টেনে তুলে বললেন,
:– You have lost your mind! আজ ই আমি এই বাসা বিক্রি
করে ফেলবো। আর এক্ষুনি তুমি আমার সাথে আমার
বাসায় যাবে। আর দেন তুমি আবার আগের মতো বিজনেস
জয়েন করবে। আর ঐ বাসায় তোমার ফুফি আছে, কোনো
ভাবেই ওই মেয়ের নাম ফুফির সামনে তোলা যাবেনা। get
that?? now get up!
,
রুপাঞ্জন আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ
হতে। আশ্রাফ খান সোফায় বসে অপেক্ষা করছেন আর
চিন্তা করছেন। ছেলে কি এমন দেখলো ওই মেয়ের মাঝে।
ও মেয়েদের সাথে ডলের মতো খেলতো তাহলে আজ হঠাৎ
ওই মেয়ের নেশা চেপে ধরল কেন? না এটা কোনো
সাধারন নেশা নয়। ভালোবাসা পাওয়ার তীব্র নেশা!! না
এই কিছুতে হতে দেওয়া যাবেনা। যে করেই হোক ওই
মেয়েকে রুপাঞ্জনের মাথা থেকে সরাতেই হবে। আমি
ওকে ভালো কোনো সাইক্রাইটিস কে দেখাবো। ওকে
নরমাল লাইফে ফিরিয়ে আনা খুব জুরুরি। উনি সাথে
একটা লোক কে ফোন দিলেন।
,
:– হ্যালো আশ্রাফ খান বলছি!
,
:– হ্যা স্যার বলুন কি করতে হবে?
,
:– আমার ছেলে রুপাঞ্জন খান কে ২৪ ঘন্টা নজরে রাখতে
হবে। ও কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে দেখা
করছে টাইম টু টাইম নিউজ আমার চাই।
,
:– কোনো চিন্তা করবেননা স্যার! কাজ হয়ে যাবে।
,
ফোন রেখে আশ্রাফ খান হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। ছেলেটার
ভরসা নেই, এই প্রেম ভালবাসা বড্ড মারাত্মক জিনিস।
যদি মেয়েটা কে খুজতে চলে যায় তাহলে? না না এই
জন্যই লোক লাগিয়ে নজর রাখছি ওর উপর।
,
,
আমি আর বাবা ঘন্টা দুয়েক আগে চা বাগানের বাড়ি টা
তে এসে নেমেছি। কয়েকজন লোক আমাদের জিনিস
গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করছে । জিনিস গুলা গোছাতে
একদিন লাগবে হয়ত। বাড়িটার চারপাশ দেখলে মন
জুড়িয়ে যায়। সবুজ বনালি আর একদিকে সারি সারি চা
বাগান। আমার রুমের বারান্দা থেকে ভালোভাবেই চা
বাগান দেখা যায়। তখন হঠাৎ মনে পড়ল,
,
আমি ছাদে কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলাম। তখন রুপাঞ্জন
আমাকে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
:– বউ!
,
:– হুম।
,
:– সিঙ্গাপুর তো ঘুরে এলে আর কি কোনো ইচ্ছা আছে
তোমার??
,
:– উম… আছে। বাট বলবোনা।
,
:– কেন? না বলতেই হবে।
,
:– শুনবেন??
,
:– হাজার বার শুনব।
,
:– আমার না এই বিশাল ফ্ল্যেটে থাকতে ইচ্ছা করেনা।
ইচ্ছা করে দুর অরন্যে কোথাও চলে যাই, যেখানে এই
ব্যস্ত শহরের কোলাহোল থাকবেনা। মানুষের ভিড়
থাকবেনা। থাকবে শুধু পাখির কিচিরমিচির আর সবুজ
বনভুমি। সেখানে একটা ছোট বাড়ি হবে আমাদের। একটা
বারান্দা থাকবে যেখান থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব
ভালো ভাবে উপভোগ করা যায়। রোজ বিকালে আমি আর
আপনি একি ছাদরের নিচে বসে কফি খাব আর এই
সৌন্দর্য উপভোগ করব।
,
:– বাহ আমার বউ তো দেখছি প্রকৃতি প্রেমিকা!
,
:– হুম তা বলতে পারেন।
,
,
পিছন থেকে কাধে কেউ হাত রাখল। কল্পনা ভেঙে গেল
আসলে এটা আমার দূসর অতিত। যার কোনো রং নেই।
বাবা কে দেখলাম হাতে কফি নিয়ে দারিয়ে আছেন।
,
:– তুই আবার কাঁদছিস মা??
,
এতোক্ষনে নিজেই টের পাইনি যে আমি কাঁদছিলাম।
তবুও চোখের পানি মুছে বাবা কে বললাম,
:– ওই চোখে কিছু একটা পড়েছে তাই হয়ত……
,
:– মিথ্যা যখন বলতে পারিসনা, কেন বলিস??
,
:– তুমি কি করে জানলে আমার কফি খেতে ইচ্ছা করছে??
(কথা ঘুরাতে বললাম)
,
:– কথা ঘুরাচ্ছিস কেন? কফি টা খেয়ে দেখ কেমন
হয়েছে?
,
আমি আর কিছু না বলে কফিতে চুমুক দিলাম। কিন্তু এক
চুমুক কফি ভিতরে যেতেই মাথা ঝিম মেরে উঠল, গা
গোলানো শুরু হলো। আমি কফির মগ টা কোনো মতে
টেবলের উপর রেখে ওয়াসরুমে গিয়ে বমি করতে
লাগলাম।
আমি বমি করে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। খাটের উপর শুয়ে
পরলাম খুব উইক লাগছে। বাবা ব্যস্ত হয়ে আমার পাশে
এসে বললেন,
:– কি হয়েছে মা? শরিল খারাপ করছে তোর?
,
:– না বাবা, আসলে বাই রোড জার্নি করেছি তো তাই
হয়ত বমি হয়েছে। তুমি চিন্তা করোনা আমি ঠিক আঁছি।
,
:- তোর শরিল খারাল হলে বল আমি ডাক্তার ডেকে
আনি।
,
:– না বাবা বললাম তো! ঠিক আছি।
,
:– আচ্ছা কিছু খাবি???
,
খাবারের নাম শুনে ও যেন বমি আসছে।
,
:– না বাবা এখন ইচ্ছা করছেনা।
,
:– আচ্ছা ঠিক আছে। তুই রেস্ট নে।
,
বাবা বেরিয়ে গেলেন।বাবা কে বললে ও আমি সত্যি
অনেক অসুস্থ বোধ করছি। তাই শুয়ে পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা
করলাম।
,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here