তোমার নেশায় পর্ব ১৯

# তোমার_নেশায় !
,
,
(১৯)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
আমার ও একটা ফুটেফুটে বাবু হবে, যে তার ছোট ছোট
হাত পা নাড়িয়ে আমার সাথে খেলা করবে। আমাকে
মাম্মাম বলে ডাকবে। ভাবতেই মন টা আনন্দে ভরে
যাচ্ছে। আবার এই ভেবে ও খারাপ লাগছে আমি কি করে
এই নিষ্পাপ প্রান কে হত্যা করার কথা ভেবেছিলাম। কি
করে এতোটা কঠিন হৃদয়ের হলাম আমি?
এবার যাই হয়ে যাক, আমার বাবুর গায়ে একটা ফুলের
টোকা ও পড়তে দেবোনা আমি!
ওও হ্যা! আমার বাবুর জন্য তো অনেক শপিং করতে হবে।
ওর জন্য জামা কাপড়, দোলনা সব কিছু নিতে হবে। তখনই
কেউ কাধে হাত রাখল। পিছনে ফিরে দেখি বাবা!
আমি উত্তেজিত হয়ে বলা শুরু করলাম,
:– বাবা শুনোনা! আমার বাবুর জন্য তো অনেক শপিং করা
লাগবে। এই দেখো এইখানে আমার খাটের পাশে ওর
দোলনা থাকবে। এই ছোট আলমারি তে ওর কাপড় আর
খেলনা….
আচ্ছা বাবা এখানে কোথায় ভালো খেলনা পাওয়া
যায়?? আমি বাবুর জন্য বেস্ট খেলনা টাই নিব আর……..
,
:– হয়েছে হয়ছে থাম এবার! এতো উত্তেজিত হসনা মা।
কালকে কেয়ারটেকার তোকে এখান কার সব থেকে
ভালো শপিং মল থেকে তোর বাবুর জন্য শপিং করে
দিবে।
,
:– না বাবা, আমার বাবুর শপিং উনি করবেন কেন? আমি
নিজে গিয়ে নিজ হাতে সব কিনব আমার বাবুর জন্য!
,
:– এই অবস্থায় এতো ঝামেলা করিস না মা!
,
:– বাবা প্লিস!!
,
:– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে তুই নিজে যাবি। হ্যেপি
এবার???
,
:– Thanks baba, you are the best! Love you….
,
:– Love you too princess! জানিস যেদিন তোর মা জানতে
পেরেছিল সে প্র্যেগনেন্ট তখন তোর মতই এমন
লাফিয়েছিল……
,
:– মা!!! মা কে একবার জড়িয়ে ধরার সুযোগ পেলাম না
বাবা। তার আগেই শয়তান রা…..।।
,
:– এখন ওইসব থাক মা! আচ্ছা তুই কি যেন লাগাবি
বলছিলি ওয়ালে!
,
:– ওও হ্যা! ওয়ালে সব কিউট কিউট বাবুদের ছবি
লাগাবো তাহলে আমার বাবু ও ওদের মতো কিউট, গুলুগুলু
হবে…….(রুপশা বকবক করেই যাচ্ছে। আহসান সাহেব
মেয়েকে পলকহীন ভাবে দেখছেন। এতোদিন পর যেন
তিনি তার হারানো চঞ্চল মেয়েকে ফিরে পেলেন।
রুপাঞ্জন খান মেয়েটার সব সুখ কেড়ে নিয়েছিল,
আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া তিনি আমার মেয়েকে আবার
বাচার জন্য একটা জিবন পাঠাচ্ছেন। নাহলে যে
সারাজিবন ভালোবাসা পেয়ে হারানোর ঝন্ত্রনায় দুকে
দুকে মরতো। এখন কেউ তো থাকবে যাকে আকড়ে ধরে
মেয়েটা সুখে থাকবে। আল্লাহ আমার মেয়ে থেকে এই
সুখ টুকু কেড়ে নিওনা প্লিস। এইটুকু বয়েসে ও অনেক
ঝন্ত্রনা, বিষাদময় জিবন উপভোগ করেছে এবার ওকে
একটু সুখ দাও!)
,
বাবাকে কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছে।
,
:– কি ভাবছো বাবা?
,
:– ও..না কিছু না! চল তোর খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
খাওয়ার দিক থেকে ও তো তোর বাবুর খেয়াল রাখতে
হবে।
,
:– বাবা আমার কিছু খেতে একদম ভালো লাগছে না…
,
:– এটা বললে হবে? তোর বাবুর নিশ্চই ক্ষিদে পেয়েছে
সে নিশ্চই অপেক্ষা করছে কখন তার মা খাবে। আর তুই
কিনা তাকে উপোষ করাবি??
,
:– না আমার বাবু উপোষ করবে কেন? আমি খাবো।
,
:– হুম এইত আমার লক্ষ্মি প্রিন্সেস!
,
,
,
রুপাঞ্জনের বাবা আফজাল সাহেব চিন্তিত মুখে তার
কেবিনে বসে আছেন। তার গুপ্তচর রা খবর দিয়েছে
আহসান চৌঃ ও তার মেয়ে রাতারাতি কোথাও চলে
গিয়েছে। আশেপাশের লোকজন ও কিছুই জানেনা।
এইভাবে বাপ বেটি কোথায় ভ্যেনিশ হয়ে যেতে পারে!
তখনই তার ম্যানেজার রুমে দরজায় ডাকল,
:–May I come in sir??
,
:–ম্যেনেজার হুম আসো। তা কি খবর।
,
:– স্যার! আমি অনেক খুজে ও আহসান চৌঃ আর তার
মেয়ের কোনো খোজ বের করতে পারিনি। তাদের
অফিসের লোকজন ও নাকি কিছুই জানেনা। আর ওই
ডাক্তার ফজলে আবেদের ডাক্টারি সার্টিফিকেট
ক্যেন্সেল করানোর ব্যবস্থা করেছি। আশা করি দুই
একদিনে হয়ে যাবে।
,
:– গুড!! ব্যেটা আশ্রাফ খান কে ইন্সাল্ট করেছে এর ফল
তো তাকে পেতেই হবে। এমন অবস্থা করো যাতে সে
কোথাও জব না পায়।
,
:– হয়ে যাবে স্যার! আমি তার নামে এক মেয়ের
মানহানির মিথ্যা মামলা তৈরী করেছি। কিছু টাকা
দিতেই মেয়েটাও মিথ্যা অভিনয় করলো। কোট তার
লাইসেন্স, সার্টিফিকেট ক্যেন্সেল করে দিয়েছে আর
এক বছরের জেল হয়েছে।
,
:– ওয়াও! ইউ আর আমেজিং ম্যেনেজার। তোমার বুদ্ধির
জবাব নেই।
,
:– ধন্যবাদ স্যার।
,
:– আচ্ছা ম্যানেজার তোমার কি কোনো আইডিয়া আছে
সে আহসান চৌঃ ও তার মেয়ে কোথায় গেছে?
,
:– স্যার আমার মনে হয় কি বাপ বেটি এতো ধোকা মেনে
নিতে পারেনি তাই কোথাও গিয়ে সুইসাইড করেছে।
,
:– না না যে মেয়েটা রুপাঞ্জনের এতো অত্যচারের পর ও
তাকে ভালবাসতে পারে সেই মেয়ে এতো সহজে সুইসাইড
করার মেয়ে না। তুমি ওর বিজনেস পলিসি দেখতে না?
কতো তেজ ওর ভয়েসে, কতো আত্মবিশ্বাস ওর নিজের
প্রতি। সেই মেয়ে আর যাইহোক সুইসাইড করবেনা।
,
:– স্যার তাহলে কি তারা কোনো রিভেঞ্জ নেওয়ার
প্ল্যেন করছে?? মানে মিসেস আহসান কে যে আপনি
মাডার করিয়েছেন সেটা ওরা জেনে গেছে তাহলে
নিশ্চই রুপশা ওর মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে এইভাবে
উধাও হয়ে গেছে।তারপর সুযোগ বুজে একদিন আক্রমন
করবে।
,
:– কথা টা ভুল বলোনি ম্যেনেজার। এক কাজ করো
চারদিকে গুপ্তচর ছড়িয়ে দাও যে যেখানে ওই বাপ বেটি
কে দেখুক আমাকে যেন খবর দেয়। আর একদিকে আমার
ছেলেটার মাথা থেকে ওই মেয়ের ভুত নামাতে
পারছিনা। রুপশা রুপশা করে একেবারে পাগল করে
দিচ্ছে।
,
:– স্যার, ছেলের বিয়ে দিন। তাহলেই দেখবেন সব ঠিক।
,
:– হুম দেখি। কি করা যায়।
,
,
রুপাঞ্জন সারাদিনে রুমের এক কোনায় পড়ে থাকে।
রুপশার ফেলে যাওয়া শাড়ি গয়না আকড়ে ধরে কাঁদতে
থাকে। খেতে বললে খায়না, ঠিকমতো ঘুমায় না। এখন
রুপাঞ্জনের চেহেরা দেখে চেনার উপায় নেই যে এই সেই
আগের রুপাঞ্জন যার জন্য মেয়েরা পাগল ছিল। ওইদিকে
রুপাঞ্জনের ফুফি ও নিরবে চোখের জল ফেলেন। কিন্তু
হাজার চাওয়া শত্তেও মুখে কিছু বলতে পারেননা।
রুপাঞ্জন সারাক্ষন রুপশার শাড়িতে মুখ ডুবিয়ে বসে
থাকে।
রাতে আশ্রাফ খান ডিনার করতে টেবিলে বসেন।
সার্ভেন্ট দের ডেকে জিজ্ঞাস করেন,
:– রুপাঞ্জন কোথায়?
,
:– স্যার, ছোট স্যার সকাল থেকে রুমে শাড়িগুলা নিয়ে
বসে আছেন। ডাকলে ও সাড়া দিচ্ছেন না।
,
:– উফফ ছেলে টা নিয়ে কি যে করি।
,
আশ্রাফ খান ধীর পায়ে ছেলের রুমে গিয়ে দেখলেন।
রুমের লাইট অফ। লাইট অন করতেই দেখেন রুপাঞ্জন
খাটের একপাশে মুখ গুজে বসে আছে। তিনি গিয়ে
ছেলের কাধে হাত রেখে আস্তে করে ডাকলেন,
:– রুপাঞ্জন……
,
রুপাঞ্জন মুখ তুলে তাকালো কিন্তু কিছু বললোনা।
,
উনি রুপাঞ্জনের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে
বললেন,
,
:– এখানে বাংলাদেশের টপ টেন মডেলের ছবি আছে।
,
রুপাঞ্জন একে একে সব গুলা ছবি দেখে বলল,
,
:– বাবা এই ছবি গুলার মধ্যে কোথাও তো আমার রুপশা
নেই। বাবা রুপশা কে চাই আমার।
,
:– উফফফফ!! রুপশা রুপশা রুপশা কি পাইছো কি তুমি এই
মেয়েটার মধ্যে?? ওর থেকে শতগুন সুন্দরি আমি তোমায়
এনে দিচ্চি কিন্তু তুমি শুধু রুপশা রুপশা করে যাচ্ছো। কি
পেয়েছো এই মেয়ের কাছ থেকে????
,
:– ভালোবাসা!!!
,
:– ওয়াট ননসেন্স রুপাঞ্জন। তুমি কবে থেকে এইসব ফালতু
কথার প্রতি আগ্রহী হলে।
,
:– দেখো বাবা, এখন আমি যদি বাংলাদেশের সেরা
সুন্দরি কে বিয়ে করতে পারি। মেয়েটা ও রাজি হবে
কেন যানো?? আমার টাকার বিছানা আছে। সে আমার
টাকার বিছানা কে ভালোবেসে আমাকে বিয়ে করবে,
রাজরানি হয়ে থাকবে কিন্তু আমাকে ভালোবাসবে না।
আর রুপশা! বিলিভ করো ছয়মাসে একটা দিন ওকে মন
থেকে ভালোবাসিনি আমি। আর প্রথম ৪ মাস তো এতো
টর্চার করছি যে বলার মতো না। তারপর ও মেয়েটা নিঃ
সার্থে আমাকে ভালোবেসে ছিল। সেই ভালোবাসা
ছিল ফুলের মতো পবিত্র, নির্লোভ, নির্ভেজাল। কিন্তু
আফসোস প্রতিশোধের আগুনে অন্ধ হয়ে আমি সেই
ভালোবাসা ধরে রাখতে পারিনি। তাই এটাই আমার
শাস্তি যে আমি বাকিজিবন ওর স্মৃতি আকড়ে ধরে
কাঁদবো। ওকে মিস করবো কিন্তু কাছে পাবোনা। শুধু
এইটুকু চাইবো ও যেখানে থাকুক ভালো থাকুক, সুখে
থাকুক।
,
:– ছেলেটার মাথা পুরো গেছে।
রাগে বিড় বিড় করতে বেরিয়ে গেলেন আশ্রাফ খান।
উনি বেরিয়ে যাওয়ার রুপাঞ্জন লাইটার নিয়ে টেবিলের
উপর রাখা মেয়েদের ফাইলে আগুন ধরিয়ে দিল। ধীরে
ধীরে আগুন পুরো ফাইলে ছড়িয়ে যেতে লাগল। রুপাঞ্জন
সেই আগুনের দিকে তাকিয়ে বলল,
:– তোমার ভালোবাসার দহন যে এইভাবে দিনের পর দিন
পোড়াচ্ছে! কোথায় তুমি রুপশা????
,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here