তোমার নেশায় পর্ব ২০

# তোমার_নেশায় !
,
,
(২০)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
৬ মাস পর>>>>>>>>>
.
.
জিবন থেমে থাকেনা, সময় তার আপন গতি তে চলতে
থাকে। তেমনি রুপশা আর রুপাঞ্জন দুজনেরেই জিবনে
অনেক ভিন্নতা এসেছে। রুপাঞ্জন কিছুটা নরমাল হলেও
এখন ও রুপশা কে ভুলতে পারেনি। তবে এখন আবার বাবার
চাপাচাপি তে অফিস জয়েন করেছে। আশ্রাফ খান
চিরুনি তল্লাশি দিয়েও রুপশাদের খবর বের করতে না
পেরে অবশেষে ধরে নিলেন তারা হয়ত সত্যি মরে গেছে।
অন্যদিকে রুপশা আগের তুলনায় অনেক গম্বির হয়েছে,
মনের ক্ষতটা পুরোপুরি না শুকালে ও এখন ও দিব্যি
নিজের পেটের সন্তান দুনিয়ায় আসার দিন গুনছে। ওর
চোখে যখন যা ভালো লাগে তাই নিজের বাবুর জন্য
কিনে নেয়। ওর ছেলে বাবু হবে না মেয়ে বাবু হবে সেটা
জানেনা তাই প্রত্যেক জিনিসই ছেলে আর মেয়ে উভয়ের
কিনেছে। আহসান চৌঃ এগুলা দেখেন আর মনে মনে খুব
খুশি হোন, আর তো কয়েকটা দিন তারপর আমার মেয়ের
কোলে একটা ফুটফুটে শিশু খেলা করবে। আজ উনি রুপশা
কে নিয়ে চেকাপের জন্য যাবেন। তাই রুপশা রেডি হচ্ছে।
রেডি হওয়ার পর যখন সে নিজের বড় পেট টা আয়না দেখে
তখন তার চোখ জোড়া খুশিতে চকচক করে। সে আপন মনেই
নিজের বাবুর সাথে কথা বলে,
,
:– বাবু শোন না!
,
:– বলো মাম্মাম।
,
:– তোর রুম টা পছন্দ হয়েছে তো?? না আরো সাজাতে
হবে?
,
:– না মাম্মাম খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি খুব সুন্দর
সাজিয়েছো।
,
:–তাই বুঝি, থ্যেংক্স সোনা। আচ্ছা আমাকে কেমন
লাগছে??
,
:– খুব সুন্দর মাম্মাম।
,
,
তখনই বাবা ডাকলেন,
,
:– রুপশা তোর বাবুর সাথে কথা শেষ হলে চল এবার বের
হই।
,
:– এইত আসছি।
,
:– বাবু জানিস আজ আমি তোকে দেখতে পাবো। আমার
কি যে আনন্দ হচ্ছে বুঝাতে পারবোনা।
,
বাবা বারবার ডাকায় বাধ্য হয়ে বের হতে হলো। ধীরে
ধীরে গাড়িতে উঠে বসলাম। বাবা বারবার ড্রাইবার কে
সাবধান করছেন গাড়ি আস্তে চালানোর জন্য। বাবা ও
যে তার নাতির প্রতি খুবই সিরিয়াস। আমরা হস্পিটাল
এসে নামলাম। ক্লিনিক ডোকার পর গাইনি ডাক্তার
বাবাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে আমাকে ভিতরে নিয়ে
গেলেন। আমি শুয়ে পড়লাম। ডাক্তার আমার পেটে আর
হাতে কয়েক ধরনের মেশিন লাগালেন। ডাক্তার আমার
দিকে তাকিয়ে বললেন,
:– আর একটু পর কম্পিউটার স্ক্রিনে আপনি আপনার
বাবুকে দেখতে পাবেন।
,
আমার যে আর তর সইছে না। খুব আগ্রহ নিয়ে
কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আছি। ডাক্তার মেশিন টা
চালু করতেই ধীরে ধীরে কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছু
একটা দেখতে পেলাম যেটা একটু একটু নাড়াচাড়া করছে।
ডাক্তারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই মহিলা
বললেন,
:– হ্যা, এটাই আপনার বাবু। এটা বলা নিষিদ্ধ যে এটা
ছেলে নাকি মেয়ে বাবু। তবে এইটুকু বলতে পারি আপনার
বাবু একদম সুস্থ। দেখুন কেমন হাত পা নাড়াচ্ছে।
,
আমি আবার কম্পিউটারে চোখ রাখলাম। চোখের কোন
থেকে অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ল। এটা খুশির কান্না মুখ
থেকে অজান্তেই বের হলো,
:–আমার বাবু!!
,
,
আমার ইচ্ছা করছে সারাদিনই এইভাবে তাকিয়ে থাকি
আমার বাবুর দিকে কিন্তু ওই ডাক্তার মহিলা একটু ঝন্ত্র
গুলা আমার শরিল থেকে খুলে নিলেন। সাথে সাথে
কম্পিউটারে আমার বাবু ও চলে গেল। ডাক্তার মহিলা
আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলেন,
,
:– আপনার সাথে কে এসেছেন?
,
:– আমার বাবা।
,
:– ঠিক আছে ওনাকে ভিতরে ডাকুন।
,
আমি বাবাকে ভিতরে ডেকে আনতে ডাক্তার আমাদের
টেবিলে বসতে বললেন আর নিজেও আমাদের মুখোমুখি
বসলেন। তারপর জিজ্ঞাস করলেন,
,
:– আপনার হাজবেন্ড কোথায়???
(এই প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমার
জিবনে কোনো হাজবেন্ড কে কোনোদিন হাজবেন্ডের
মতো পাইনি, বিয়েটা তো তার কাছে শুধু একটা রিভেঞ্জ
ছিল আর রিভেঞ্জ ফুরাতেই আমার জিবন সব সুখ ও
ফুরিয়ে গেল। এখন আমি কি বলবো ডাক্তার কে…..)
আমাকে বিব্রত হতে দেখে বাবা বলতে লাগলেন,
,
:– আসলে ওর হাজবেন্ড…….
,
বাবাকে থামিয়ে বললাম,
,
:– মারা গেছে।
,
বাবা আমার দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু
যে মানুষ টার জন্য আমার সব অনুভুতি মরে গেছে সে মানুষ
টাও আমার কাছে মৃত।
,
:– ওও সো সেড!! মরার আগে নিজের ফুটফুটে শিশুকে
একবার দেখে যেতে পারলেন না। আচ্ছা যাইহোক মিঃ
আহসান চৌঃ এখন তো আপনিই তো রুপশার অভিবাবক তাই
আপনাকেই রুপশার খেয়াল রাখতে হবে। আর মাত্র দেড়
মাস পরেই ওর ডেলিভারি। কোনো ভুল যাতে না হয়।
,
:– ওকে ডাক্তার। কোনো ভুল হবেনা। আমি ওর পুরো
খেয়াল রাখবো। আসি।
,
,
বাবা আমাকে নিয়ে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে গেলেন।
গাড়িতে উঠে কিছুক্ষন পর বাবা জিজ্ঞাস করলেন,
,
:– রুপশা!
,
:- হুম।
,
:– তুই ডাক্তার কে রুপাঞ্জন মারা গেছে বললি কেন?
,
:– বাবা আমি এই বিষয় কোনো কথা বলতে চাইনা। আমার
খুব টায়ার্ড লাগছে।
,
আহসান চৌঃ মনে মনে বললেন, তোরা দুজনের জিবনই যে
একটা বড় মিথ্যা কে আশ্রয় করে বদলে গেছে। সেটা কি
করে বুঝাই?
বাবা আমাকে আর কিছু বললেন না। আমি আর কিছুতেই
ওই অন্ধকার অতিত আর ওই লোকটার কথা মনে করতে
চাইনা। আমি আমার সন্তান কে নিয়ে বাকি জিবন একটু
ভালো থাকতে চাই। যে জিবনে রুপাঞ্জন খান নামক
কোনো কালো ছায়া থাকবেনা। লোকটার কথা মনে
পড়তেই বিষাদ এসে ভর করে আমায়। আমি এই বিষাদময়
জিবন চাইনা, সত্যি চাইনা। গাড়ি আস্তে আস্তে বাগান
বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।
,
,
রুপাঞ্জন খান অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে।
আজকাল কাজের খুব চাপ থাকে। বাবা আমাকে সব কাজ
ধরিয়ে নিজে কিসে যেন ব্যেস্ত থাকেন বুঝিনা। খুব
ক্লান্ত লাগছে, কখন ও ভাবিনি রুপশাহীন জিবন এতো
কষ্টের হবে আমার জন্য। এই জিবনে ক্লান্ত হওয়ার জন্য
অনেক কাজ আছে কিন্তু সারাদিনের কাজ শেষে মাথায়
হাত বুলিয়ে প্রশান্তি দেওয়ার মতো সেই মানুষ টা
হারিয়ে গেছে কিংবা বলা যায় হারিয়ে ফেলেছি।
চেয়ারে হেলান দিয়ে পুরোনো দিনের কথা ভাবছি,
কতোটা ভালোবাসত মেয়েটা আমায়। আমায় খুশি করার
সার্বক্ষনিক চেষ্টা ছিল তার। আমার খাওয়া থেকে শুরু
সমস্ত ছোট ছোট জিনিসের খেয়াল রাখতো সে। তখন ওর
এই সীমাহীন ভালোবাসা কে নেকামো মনে হতো আমার।
অফিস থেকে বাসায় ফিরলে আমায় ঠান্ডা পানির গ্লাস
এগিয়ে দিত। নিজ হাতে আমার জুতো খুলে দিত। মাথায়
ম্যাসেজ করে দিত। চোখের কোন থেকে অজান্তেই
পানি পড়ছে। কেন তখন বুঝতে পারিনি আমি যে আমি
রুপশা কে ভালোবাসি। কেন আমি প্রতিশোধ নেওয়ার
আগুনে এতোটাই অন্ধ হয়েছিলাম যে ওর পবিত্র
ভালোবাসা আমার চোখে পড়েনি। কি পেয়েছি
প্রতিশোধ নিয়ে, অনুশোচনার পাহাড়। কি করে আমার এই
পাপের ক্ষমা হবে। যদি জিবনে কোনোদিন কোনো
অজানা পথের বাকে রুপশার সাথে দেখা হয় আমি কি ওর
কাছে ক্ষমা চাইতে পারবো?? সেদিন কি রুপশা আমায়
ক্ষমা করে জড়িয়ে ধরে বলবে, অনেক ভালোবাসি গো
তোমায়।
নাকি মুখ ফিরিয়ে চলে যাবে অচেনা কেউ ভেবে।
ফোনের রিংটোনে আমার ঘোর কাটলো। দেখি ড্যেড
ফোন দিয়েছে, নিশ্চই আবার কোনো ডিল ফাইনাল করতে
হবে। না পারবোনা আমি! বিরক্ত লাগছে এইসব। খুব
বিরক্ত…….
ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেল। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
ফোন টার হাত থেকে রাখতেই আবার বাজতে শুরু করল।
বিরক্ত নিয়েই রিছিভ করলাম,
,
:– হ্যা ড্যাড বলো!!
,
:– রুপাঞ্জন তুমি কোথায়??
,
:– কেন এই সময় অফিসে থাকি জানোনা??
,
:– রুপাঞ্জন তোমার ফুফি কেমন যেন করছে। ঝোরে
ঝোরে নিশাস নিচ্ছে। আমি ওকে হাস্পতালে নিয়ে
যাচ্ছি।তুমি তাড়াতাড়ি এসো।
,
:– ওকে ড্যেড। এক্ষুনি আসছি।
,
,
ফোনটা কোনমতে পকেটে নিয়ে প্রায় দৌড়েই অফিস
থেকে বেরিয়ে গেলাম। না জানি আমার ভাগ্যে কি
অপেক্ষা করছে। আমার পাপের কারনেই এইসব হচ্ছে।
আমি রুপশার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি। ফুফির কিছু
হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। গাড়িতে
বসে ঝড়ের গতিতে ড্রাইব করে হাস্পাতালে ডুকলাম।
গিয়ে দেখি ড্যেড এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে। আমাকে
দেখে এগিয়ে এসে বললেন,
,
:– রুপাঞ্জন তোমার ফুফিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া
হয়েছে। ডাক্তার বলেছে বাচার সম্ভাবনা ১০%।
এই বলে কাঁদতে লাগলেন।
,
:–ড্যেড এইসব কি আমাদের কর্মফল নয়??
,
:– মানে??
,
:– মানে বুঝতে পারছোনা তুমি ফুফির জন্য কতো অন্যায়
করেছো। একজন নিষ্পাপ মানুষের খুন করিয়েছো।
আমাকে দিয়ে ভালোবাসার অভিনয় করিয়ে একটা
মেয়ের জিবন নষ্ট করেছো। পাপ বাপ কে ও ছাড়েনা।
দেখো আমাদের পাপের ফলে ফুফি আজ মৃতু্্যর মুখে।
,
:– না না না আমার বোনের কিছু হবেনা। আমি আর সব
সম্পদ খরচ করে দিব তবুও আমার বোনের কিছু হতে দিবনা।
,
;– ড্যেড টাকা দিয়ে জিবন কেনা যায়না। আমাদের
পাপের শাস্তি তে আজ হয়ত আমরা ফুফিকে চিরতরে………
,
;– না রুপাঞ্জন…আমি….আমি সারেন্ডার করবো আমার
সব অপরাধ কবুল করবো। তবুও আমার বোন কে মরতে
দেবোনা। কিছুতেই না!!
,
,
তখনই ডাক্তার এসে জিজ্ঞাস করলেন।
:– মিস আরহী খানের বাড়ির লোক কে আছেন??
,
:– ইয়েস ডাক্টার বলুন।
,
:– Congratulations…. She is out of danger! and now she is
absolutely normal.
,
,
আশ্রাফ খান এগিয়ে গিয়ে বললেন,
:– কি বললেন আপনি??
,
:- উনি এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। এটা সত্যি একটা
চমৎকার! উনি আবার আগের মতো কথা বলতে পারবেন,
হাটতে পারবেন, নরমাল লাইফ লিড করতে পারবেন।
,
:– Thank u so much docter….আমরা কি দেখা করতে পারি?
,
:– its my pleasure…. হুম পারবেন তবে এখন উনি ঘুমাচ্ছেন।
একটু পর গিয়ে দেখা করে আসবেন।
,
আমি মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ জানালাম। যাক
ফুফি সুস্থ হিয়ে গেছেন। মনে পড়ল রুপশা একদিন বলেছিল
ফুফি ঠিক সুস্থ হবেন। আমি কোনোদিন বিলিভ করিনি
কিন্তু আজ ওর কথাই সত্যি হলো। আজ ও থাকলে সত্যি
অনেক খুশি হতো।
,
,
,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here