# তোমার_নেশায় !
.
.
(০৭)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
ঐ ঘটনার পর আরো দুমাস কেটে যায়। আমার সো কল্ড
হাজবেন্ড আমায় আর কিছু দিক বা না দিক কষ্ট দিতে
কোনো কার্পন্য করেননি। হ্যা,তবে এই দুমাসে একবার
অনেক কান্নাকাটির পর উনি আমার বাবা কে বাসায়
নিয়ে আসেন। সেদিন বাবা কে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম।
অনেক ইচ্ছা ছিল বাবাকে নিজ হাতে রান্না করে
খাওয়াবো কিন্তু পাষান মানুষরুপি জানোয়ার টা বাবা
কে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত সপর্শ করতে দেয়নি। কাটায়
কাটায় ২০ মিঃ পেরোতেই জোর করেই বাবা কে বের
করে দেন। সেইদিন অনেক কেঁদেছিলাম কিন্তু কেন
জানিনা এখন মানুষ টার প্রতি ঘৃন্নায় জন্মায় না। আগের
মতো চোখের বালি মনে হয় না।
এখন যেন মনে হয় ওনার একটু বকা না শুনলে আমার
দিনটাই বৃথা। তাই অনেক সময় ইচ্ছা করেই ভুল করি আর
ওনাকে অপমান করার সুযোগ দেই। উনি অনেক সময়
রাগারাগি করে খাবার ছুড়ে ফেলে দেন তখন আমি
আবার রান্না করে ওনাকে খাওয়াই তারপর নিজে খাই।
আগে শুধু ভাবতাম কবে সুযোগ হবে এই লোকটা কে ছেড়ে
চলে যেতে আর এখন চাই যেন সেই সুযোগ কোনোদিন না
আসে। আমি ওনার অত্যাচারের সাথেই বন্ধুত্ব করে
মানিয়ে নিতে চাই। কিন্তু উনি কি বুঝেন সেই কথা? হয়ত
বুঝার চেষ্টাই করেননা কখন ও। ওনার রাগি মুখ টাই
দেখতে আমার সব থেকে ভালো লাগে। এই কেমন নেশা
পেয়েছে আমায়, অত্যাচারীর অত্যাচার পাওয়ার নেশা,
এই নেশায় যে আমি সুখ পাই। কেন আমার মন বলে এই
অত্যচারের আড়ালে লুকিয়ে আছে শত শত ভালবাসা।
আমি যে ভালোবাসি এই অত্যাচারী লোকটা কে।
ভালবেসে ফেলেছি তার সব বঞ্চনা কে। আমি এইভাবেই
ভালো আছি। আজ উনি আমাকে ক্ষীর রান্না করতে বলে
গেছেন।
আমি মনের আনন্দে ক্ষীর রান্না করছি কিচেনে। তখনই
কলিং বেল বেজে উঠল। আমি ভাবলাম আমার রুপাঞ্জন
এসেছে হয়ত, তাই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম। কিন্তু
দরজা খুলে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম, আমার সামনে
দাড়িয়ে আছে, শুভ! আমার ছোট বেলার বন্ধু। এখন বোধ হয়
পুলিশ এস,পি পদে আছে। আমি হা করে আছি দেখে, শুভ
বলল,
:– আরে রুপ, আর কতক্ষন হা করে থাকবি। ডিউটি ফেলে
তোকে একটু দেখতে এলাম আর তুই কিনা বাইরে দাড়
করিয়ে রেখেছিস আমায়।
,
আমি এই মুহুরতে খুব ভয়ে আছি। রুপাঞ্জন যে কোনো সময়
চলে আসতে পারেন আর উনি যদি আমাকে শুভর সাথে
দেখেন তাহলে অনেক রেগে যাবেন। বেচারা শুভ
এতোদিন পর বন্ধু কে দেখতে এলো, তাকে তো এইভাবে
বলতে পারবোনা যে আমার হাজবেন্ড অন্য সব হাজবেন্ড
দের মতো না।
আমার সামনে শুভ আবার হাত নাড়ালো। আমি কিছু ভেবে
না পেয়ে শুভ কে ভিতরে আসতে বললাম। কিন্তু শুভ আমার
বাসা চিনল কি করে।
আমি শুভ কে বসিয়ে ওর জন্য চা করে আনলাম।
শুভ চা খেতে খেতে বলল
,
:– বাহ রুপ!! বিজনেস উমেন থেকে তো এখন পাক্কা
হাউজওয়াইফ হয়ে গেছিস, এতো চেঞ্জ! বুঝেছি সব তোর
হাজবেন্ড এর কামাল।
,
আমি কিছু না বলে একটু মুচকি হাসলাম।
,
:– জানিস রে আমি তো একদম টাইম পাইনা, একবার
এখানে পোস্টিং একবার ওখানে পোস্টিং। তাই এবার
ডিপাটমেন্ট কে বলে ছুটি নিয়ে নিলাম। সব বন্ধুদের
সাথে দেখা হলো, কিন্তু তোর সাথে হলোনা। তাই তোর
বাসায় গেলাম, আর আংকেল বলল, তুই শশুরবাড়ি তে
আছিস। আচ্ছা তুই এতো নিষ্ঠুর বিয়েতেও দাওয়াত
দিসনাই তাই আমি চলে এলাম।
,
:– আসলে শুভ সব কিছু এমন হঠাৎ করে হয়ে যাবে আমি
নিজেও বুঝে উঠতে পারিনি তাই আর কি । আচ্ছা তোর
কি খবর, বিয়ে করিসনি এখন ও।
,
:– আরে এবার বিয়ে করব বলেই তো ছুটি নিলাম। আমার
জি এফ নিলার ফ্যামিলি তো কিছুতেই পুলিশ জামাই
মেনে নিচ্ছিল না পরে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি।
এই দেখ নিলার ছবি…..
বলে ওর মোবাইল টা আমায় দিল। আমি মেয়েটার ছবি
দেখছিলাম তখন শুভ বলল,
:– জানিস ও আমাকে খুব ভালবাসে, I also love…..
,
পুরোটা বলার আগেই রুপাঞ্জন ঘরে ডুকল। আর ও অগ্নি
দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ভয়ে আমার হাত
থেকে মোবাইল পড়ে গেল। শুভ হাসি মুখে রুপাঞ্জন এর
দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
:– হ্যালো মি, আমি শুভ এস পি, অফিসার। nice to meet
you!!! আপনি নিশ্চই রুপের হাজবেন্ড।
,
রুপাঞ্জন একবার ওর দিকে তাকালো তারপর আমার
দিকে তাকিয়ে বলল,
:– একটু রুমে এসো তো!
তারপর সে রুমে চলে গেল। শুভ কিছু টা মাইন্ড করল। তাই
আমি শুভ কে কিছু বলার আগেই ও বলল,
:– Anything wrong roop??উনি এমন করলেন কেন?
,
:– আরে ও কিছুনা, অফিসে হয়ত কোনো ঝামেলা হয়েছে
তাই মুড অফফ।
,
:– আচ্ছা আমি আজ আসি তাহলে। নিজের খেয়াল
রাখিস!
,
আমি শুভ কে বিদায় দিয়ে ওনার রুমের দিকে পা
বাড়ালাম। না জানি আজ কি অপেক্ষা করছে আমার
জন্য।
আমি নক করে রুমে ডুকতেই উনি ঠাস করে দরজা বন্ধ করে
দিলেন। আমি প্রচন্ড ভয়ে পেয়ে গেলাম, উনি এর আগে
কখন ও দরজা বন্ধ করেননি। আজ কি করতে চান উনি…..
উনি নিজের বেল্ট খুলতে খুলতে জিজ্ঞাস করলেন,
:– ছেলেটা কে??
,
:- আ…আম..আমার ব..বন্ধু!!!
,
:– শুধু বন্ধু না আশিক???
,
আমি নির্বাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
,
:– চুপ করে আছো কেন?? বলো আশিক কে বেডরুমে
নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল তাইনা??
,
:– ছি!! আপনি এটা ভাবলেন কি করে??শুভ আমার ছোট
বেলার বন্ধু।
,
:– ওহ সেই জন্যই তোকে লাভ ইউ বলছিল তাইনা! আজ
তোর রুমে যাওয়ার সাহস মিটবে।
কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমাকে সজোরে চড় মারলেন
আমি বিছানায় গিয়ে পড়লাম। উনি এক টানে আমার
ওড়না ছুড়ে ফেলে দিলেন। আমি খুব কান্নাকাটি শুরু করে
দিলাম।
,
:– প্লিস এমন করবেন না আমার সাথে…. ওর সাথে…..
,
বলার পর আরেকটা চড় দিলেন। আমি গাল হাত দিতেই
উনি আমার জামা ছিড়ে ফেললেন। আমার উপর পশুর মতো
ঝাপিয়ে পড়লেন। আমি ওনাকে থামাতে অনেক চেষ্টা
করছি কিন্তু পারছিনা। আমার এক একটা দম ফাটানো
চিৎকারে চারদিক ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কেউ যে আমার
চিৎকার শুনে আসবেনা আমায় বাঁচাতে। কিছুক্ষন পর মনে
হলো আমি জ্ঞান হারাচ্ছি। আর কিছু মনে নেই।
যখন চোখ খুললাম নিজেকে রুমের মেজেতে পড়ে থাকতে
দেখলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম পশুটা কোথাও
নেই। কোনো মতে নিজের শরিল টা কে টেনে হিছড়ে
ওয়াসরুমে নিলাম। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে
শুয়ে পড়লাম। কেন করলেন উনি আমার সাথে? চোখের
দেখা তো ভুল ও হতে পারে তাই বলে উনি আমার
সাথে…….
আমার ভালোবাসার কি মুল্য দিলেন আমায়!! শেষ পর্যন্ত
এটাই বাকি ছিল আমার পাওনা। আমি আর কি দোষ দেব
ওনাকে। উনি তো আমার হাজবেন্ড আর সেটা নাহয় বাদ
দিলাম আমি তো ওনার সামান্য মেড। আমার সাথে এমন
আচারন টাই ঠিক হয়ত। সারা শরিল ব্যথায় অস্থির হয়ে
আছে। সন্ধ্যার দিকে খুব জর এলো। আমি জরের ঘোরে
বাবা কে ডাকছি শুধু। তখন উনি এলেন। আমার পাশে
বসলেন তারপর আমার হাত ওনার হাতের মুঠোয় নিলেন।
আমি অবাক হয়ে দেখছি ওনাকে উনি আমার হাত ধরে
বললেন,
:– I am extremely sorry rupsha!! আমি এটা করতে চাইনি,
তখন তোমাকে ঐ ছেলের সাথে দেখে মাথা ঠিক ছিলনা।
পরে মনে পড়ল আমি তো ডাইনিং রুমে সিসি ক্যেমরা
লাগিয়েছিলাম। তখন গিয়ে ফুটেজ চেক করে দেখি,
ছেলেটা মোবাইলের একটা মেয়ের ছবিকে আই লাভ ইউ
বলেছিল। আর আমি না বুঝে তোমার সাথে……. I am sorry
pls…মাফ করে দাও!
,
আমি কি ঠিক শুনলাম। উনি আমাকে সরি বলেছেন আমার
কাছে মাফ চাইছেন। নাকি জরের ঘোরে কল্পনা করছি
আমি। তখনই এক ফোটা পানি আমার হাতের উপর পড়ল।
আমি চেয়ে দেখি রুপাঞ্জন কাদছে। ও আমার জন্য
কাঁদছে এই প্রথম আমাকে কষ্ট দিয়ে ও কাঁদছে। তারমানে
আমি কল্পনা করছি না এটাই বাস্তব। আমি খু ব কষ্ট করে
জিজ্ঞাস করলাম,
:– একটা মেড কে আরেকটা ছেলের সাথে দেখে আপনি
রেগে গেলেন কেন??
,
:– কারন আমি তোমাকে…………
,
:- আমাকে কি???
,
:– তোমার তো খুব জর এসেছে। কিছু খাওনি তাইনা? আমি
তোমার জন্য খাবার এনেছি।
,
:– আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি এখন ও!
,
:– আগে খেয়ে নাও প্লিস!! হা করো। তারপর মেডিসিন….
,
:– আমার সব অসুখ ঐ একটা কথায় সেরে যাবে। বলুন কেন
রাগ হয়েছিল আপনার??
,
:– কারন…. কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি রুপশা!!
ভালোবাসি। আমার রাগ হেরে গেছে তোমার
ভালোবাসার কাছে। আমার প্রতিশোধ এর আগুন নিভে
গেছে তোমার ভালোবাসায়। আমি তো জানতাম কারো
ভালোবাসা এতো মজবুত হতে পারে যে দিনের পর দিন
এতো অত্যচারের পর ও কখন ও বলোনি তুমি আমার কাছে
থাকবেনা। মুখ বুজে সহ্য করেছো, আমি হেরে গেছি
তোমার কাছে। এই রুপাঞ্জন খান কে তুমি হারিয়ে
দিয়েছো # তোমার নেশায়!!
,
আমি খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। কখন ও ভাবতে
পারিনি আমি আমার ভালবাসার মানুষ কে পাবো। আমি
খুব খুশি, সত্যি অনেক খুশি।
,
,
,