তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -৪৩

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৪৩.

সকাল সকাল রওশন বাড়ির লিভিং রুমে এক প্রকার চাঁদের হাট বসেছে ওম বেদ নিশান শান্তা সারা জাকিয়া রুহি সারিফ সবাই একসাথে আছে তবে সারিফ ছাড়া বাকি সাতজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হেসে যাচ্ছে, সামাদ সাহেব ওদের সাথে বসেছেন তাই কোনো কথা বলতে পারছেন না। ওদের থেকে একটু দূরে বসে আছে দিশা মুখ হাড়ি করে তার মুখ দেখে যে কেউ বলতে পারবে কেউ তার মুখে কালি মেখে দিয়েছে। তবে উপস্থিত সবাই ওখানে থাকলেও দোলা মির্জা অনুপস্থিত তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।

লিভিং রুমে যখন সবাই নিজেদের মধ্যে মজা করতে ব্যস্ত তখনই টাইজার আর টি-শার্ট পরে নিচে নামে সাঁঝ। ওখানে উপস্থিত সকলে একবার করে সাঁঝের দিকে মুখ তুলে তাকায় সামাদ সাহেব আবারো নিজের ম্যাগাজিন পড়তে মনোযোগ দেয় আর বাকি দস্যু গুলো সাঁঝকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। সাঁঝ একবার চোখ ঘুরিয়ে চারদিকে দেখে নেয়। তবে এক জায়গা গিয়ে তার চোখ আটকে যায় চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে ওঠে মুখে ফুটে বাঁকা হাসি। মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বাঁকা হেসে পকেটে হাত গুঁজে নিচে নেমে সিঙ্গেল সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে তীক্ষ্ণ নজর ঘোরায়।

এদিকে সাঁঝ এসে সব দস্যু গুলোর সামনে বসতে সারিফ উঠে এসে সাঁঝের বসা সোফার হাতলে বসে পড়ে, তবে এতে সাঁঝের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সে একবার শুধু ভ্রু কুঁচকে সারিফের মুখের দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও তার নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বাকিরাও সবাই একবার করে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবার নিজেদের মধ্যে মিট মিট করে হেসে ওঠে। সামাদ সাহেব বসে আছে বলে বেশী কিছু বলতে পারছেনা, আর ওদের থেকে দূরে বসে থাকা দিশা একভাবে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে আছে । কিছুক্ষণের মধ্যে সবার মাঝে হঠাৎ করেই উদয় হয় দোলা মির্জা। মুখে ক্রূর হাসি নিয়ে সামাদ সাহেবের পাশে বসে পড়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নেয় ।

-“এখানে তো দেখছি সবাই আছে, তা আমাদের নতুন বউ কোথায়? দোলা মির্জা চোখ ঘুরিয়ে বলে ওঠে।

-” ওহ এখনও ঘুম ভাঙেনি বুঝি নতুন বউয়ের বাহ ভালো ভালো। বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।

এদিকে সবাইর মুখে রাগ আর বিরক্তি থাকলেও একমাত্র সাঁঝ শান্ত হয়ে বসে আছে যেনো এখানে এইমাত্র কি কথা হয়েছে তার কিছুই সে শুনতে পাইনি তবে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এখনও দোলা মির্জার উপরে যেটা এমনিতে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। কেউ কিছু বলছেনা দেখে দোলা মির্জা আবারো বলে ওঠে ঘি ঢালার জন্যে ,

-“ব্রেকফাস্ট করার সময় হয়ে গেলো আর এখনও নতুন বউ নিচে নামেনি তাহলে আজকে কি আর আমাদের পেটে খাবার পড়বে না। নতুন বউয়ের তো উচিত ছিল সবার আগেই ঘুম ভেঙ্গে সবার জন্যে খাবার তৈরী করা। কিন্তু দেখো সেই এখনও ঘুমিয়ে আছে। দোলা মির্জা ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে।

-” আন্টি আপনি একটু বেশি কথা বলছেন না? সারা কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

-” কি আর বেশি বললাম আমি কি কিছু ভুল বলেছি আমরা সবাই এখানে আছি কিন্তু দেখো সেই নেই কেনো? তোমার ড্যাড বসে আছেন সেই কখন থেকে তাকেও খেতে দেয়নি। দোলা মির্জা মুখ ঘুরিয়ে বলে ওঠে।

-“তা আপনার যখন এত কষ্ট হচ্ছে না মানে এতই চিন্তা তা নিজেই করে দিতেন কিছু, সেই তো এই বাড়িতে বসে বসে খান। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলে ওঠে।

হঠাৎ করেই এমন কাঠ কাঠ কথা শুনেই সবাই চোখ ঘুরিয়ে তাকায় দেখে বেলা নিচে নেমে ইতি মধ্যে সারার পাশে বসে পড়েছে। দোলা মির্জা তেরছা চোখে তাকালে বরফশীতল কঠিন চোখে তাকায় তাঁর দিকে। এতক্ষণ সবাই বিরক্ত থাকলেও বেলার উত্তর শোনার পর সবার মুখের কোনায় হাসি ফোটে সামাদ সাহেব হাত বাড়িয়ে বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর তার এই কাজে দোলা মির্জার চোখ যেনো এখুনি বিস্ফোরণ ঘটে যাবে।

-“বাহ রাত কাটতে না কাটতে দেখি মুখ দিয়ে বুলি ফুটে গেছে। দোলা মির্জা বলে ওঠে।

-” আমি কোনো পাখি নই যে আমাকে পোষ মানিয়ে বুলি পড়াবেন ছোটো থেকেই আমি কথা বলতে পারি শিখেছি। বেলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

-“তা মুখে যে এত কিছু বলে যাচ্ছ তা তুমি কি এটা জাননা সকাল সকাল উঠে সবাইয়ের খাবার তৈরী করা উচিত ছিল এইযে দাদা তিনি কখন থেকে বসে আছেন। তা শিখবে কোথায় তোমার তো মা নেই। বিদ্রুপ হেসে বলে ওঠে।

-” আমার মা আছে কি নেই সেটা আপনাকে জানতে হবে না আর আমি কি জানি কি জানিনা সেটাও। আর আমি সবার জন্যে খাবার তৈরী করেছি কি সেটা পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে থাকলে তো আর জানা যাবেনা তাইনা। বেলা মুখে হাসি টেনে কাঠ কাট ভাবে বলে ওঠে।

দোলা মির্জা বেলার এমন কাঠ কাঠ কথা শুনে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামাদ সাহেব বলে ওঠেন,

-“বেলামা অনেক আগেই আমাকে কফি দিয়ে দিয়েছে শুধু তাইনা বাকিদেরও দিয়েছে তুমি তখন এখানে উপস্থিত ছিলেনা তাই না জেনে কোনো কথা বলো না দোলা। গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠেন সামাদ সাহেব।

সামাদ সাহেবের কথা শুনেই এমন অবস্থা দোলা মির্জা যে এখনই হয়তো চোখ গুলো সব বাইরে বেরিয়ে আসবে মুহূর্তেই। নিজেকে সামলে নিতেই তার মুখে ফুটে ওঠে আগের সেই ক্রূর হাসি।

-“আচ্ছা আমি জানতাম না ঠিক আছে তাহলে সাঁঝতো মনে হয় সবে উঠেছে যাও বেলা ওকে কফি বানিয়ে দাও আর সারভেন্ট কে বলো টেবিলে খাবার দিতে। এটা করতে পারবে তো?মুখে হাসি টেনে মিষ্টি করে বলে ওঠেন দোলা মির্জা ।

দোলা মির্জার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে যায় সবার এই না তিনি বেলাকে ছোটো দেখানোর চেষ্টা করছিলো আর মুহূর্তেই গিরগিটির মত ভোল পাল্টে নিয়েছে বাহ ভাই বাহ তবে এর মধ্যে সাঁঝের মুখের বাঁকা হাসি আরও বিস্তৃত হয়ে ওঠে। তবে বেলা কিছু বলার আগেই সাঁঝ বলে ওঠে,

-“উম বেলার যাওয়ার দরকার নেই, দিশা যাওতো আমার জন্যে এক কাপ কফি বানিয়ে দাও কি পারবে না?

সাঁঝের কথা শুনে সবার চোখ বাইরে বেরিয়ে আসার উপক্রম তবে বেলা ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকায় সাঁঝের দিকে বুঝার চেষ্টা করে এই মুহূর্তে সাঁঝের মাথায় কি প্ল্যান চলছে বেলা তাকাতেই সাঁঝ বেলার দিকে তাকায়, চোখে চোখে দুজনের কথা হয়ে যায় বেলা চুপ করে বসে তামাশা দেখতে থাকে এখন এটাই ওর কাজ। তবে এর মধ্যে যে বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন তিনি হলেন দোলা মির্জা।

-“আরে দিশা কেনো? তিনি উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন।

-” দিশা ভালো কফি বানায় আর তাছাড়া অনেকদিন হয়ে গেলো দিশার কফি ট্রাই করিনি ।সাঁঝ বলে ওঠে।

-“অবশ্যই সাঁঝ আমি এখুনি বানিয়ে আনছি। দিশা খুশি হয়ে বলে ওঠে।

-” আরে দিশা তুই পারবিনা দাঁড়া। দোলা মির্জা দিশাকে থামানোর জন্যে বলে ওঠে।

দোলা মির্জার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকে একবার দিশাকে দেখে আর একবার মিসেস দোলাকে যিনি এই মুহূর্তে ভীতস্ত্র হয়ে বসে আছেন আর অন্য দিকে সাঁঝ মুখে হাসি টেনে বসে আছে। ততক্ষণে দিশা কিচেনে চলে গিয়েছে। সবাই নিজের নিজের মত করে চোখ চাওয়া করছে ব্যাপার কি হচ্ছে সেটা জানার জন্যে এরই মধ্যে কিচেন থেকে চিৎকার শব্দ ভেসে আছে, হঠাৎ করে চিৎকারে শব্দে সবাই এবার সাঁঝের মুখের দিকে তাকায় দেখে সেই একই ভাবে তার মুখে হাসি ফুটে আছে আর দোলা মির্জা আতকে উঠেছে যেনো তিনি এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিলেন। বেলা ভ্রু কুঁচকে একবার দোলা মির্জা আর কিচেনের দিশার ভেসে আসা চিৎকারে আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে ঘটনা কি ঘটেছে। ততক্ষণে দোলা মির্জা উঠে দৌড়ে গেছেন কিচেনের দিকে আর সাথে বাকিরাও।

কিচেনের ফ্লোরে উল্টে পড়ে আছে দিশা হাত মুখ ইতি মধ্যে পুড়ে গিয়ে চামড়া উঠে উঠে ফোসকা পড়ে গেছে আর তার থেকে কিছু দূরে পড়ে আছে সসপ্যান হাত মুখ গলা গরম ফুটন্ত পানি পড়ে জ্বলে গিয়ে চামড়া উঠে বিভৎস অবস্থা। সবাই দিশাকে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায় কিচেনে এসেছে দুই তিন মিনিট তাও হয়নি আর তার মধ্যে এমন ভয়ংকর কান্ড কি করে হলো বেলা এগিয়ে গিয়ে ইন্ডাকশনের সুইচ অফ করে দেয় যেটা এখনও অন আছে। তবে বিস্ময়ের বিষয় ইন্ডাকশনের সিস্টেম এমন ভাবে রাখা আছে যাতে প্রথমেই কেউ বুঝতেও পারবেনা সেটা অন আছে কিনা যদি সেটা কেউ ঠিক ভাবে খেয়াল না করে বুঝতে পারবে না। এখানে যে কি হয়েছে সেটা আর বুঝতে বাকি থাকে না বেলার আর সাঁঝের দিশাকে কিচেনে পাঠানোর কারণটাও বুঝতে পারে। দিশা কে ধরে বসে দোলা মির্জাও আহাজারি করে যাচ্ছে বেলা সেই দিকে একবার দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়। কথায় আছে,

-“যেমন কর্ম তেমন ফল।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

(বিঃদ্রঃ – সাতটার দিকে আরও একটা পার্ট পোস্ট হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here