#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৪৫. (শেষাংশ)
লিভিং রুমে সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে এর মাঝে সারা ফুফিয়ে কান্না করে যাচ্ছে সামাদ সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন তার চোখের কোণে জমেছে অশ্রুকনা সারার একপাশে বসে বেলা তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে রুহি সারিফের পাশে বসে তার হাত আকড়ে রেখেছে। আর বাকিরা পুরো স্তব্ধ হয়ে আছে কারোর মুখে কোনো কথা নেই। সাঁঝ ওখানে উপস্থিত সবাইকে একবার দেখে নেয় তারপর তার ড্যাড এর দিকে চোখ যেতে দেখে মানুষটা কেমন ভেঙে পড়েছে তার ভুলের জন্যে আজ এই পরিবারের কত ক্ষতি হয়ে গেছে তার বাচ্চারা তার মাকে হারিয়েছে আর আবারো তার কারণে তার ছেলের জীবন নষ্ট হতে যাচ্ছিলো এগুলো কম অপরাধ ভুল এখন তিনি অপরাধ বোধে ভুগছেন।
সাঁঝ তার ড্যাডকে এক মুহূর্ত দেখে নিয়ে তার পাশে উঠে গিয়ে বসে তার ড্যাডকে জড়িয়ে নেয় এতদিন এই একটাই কারণে সে তার ড্যাডের উপরে অভিমান করেছিলো ভালো করে কথা বলেনি তবে তিনিও জানতেন না অজান্তেই ভুল করে ফেলেছেন তারা শুধু তাদের মা হারায়নি তিনিও তার সহধর্মীনি কে হারিয়েছেন তার কষ্ট কম কিছু নয় তাই আজ এই সময়ে এসে আর অভিমান পুষে না রেখে বাবা ছেলের মধ্যে দূরত্ব মিটিয়ে ফেলে। এত গুলো বছর পর আবারো ছেলেকে ফিরে পেয়ে সামাদ সাহেব যেনো নিজকে ধরে রাখতে পারছেন না। ওদিকে সারিফ সারাও উঠে এসে একসাথে জড়িয়ে ধরেন। আজ যেনো বাবা আর ছেলে মেয়ের পূর্নমিলন হলো তাদের কে একসাথে এইভাবে দেখে সবার চোখের কোণে পানি ফুটে ওঠে। সারাও এতদিন জানতো না যে তার জন্যে তার মম হারিয়ে গেছে তাকে আনতে গিয়েই তার মায়ের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে সে শুধু জানতো তার মায়ের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো কিন্তু কারন যে কোনো না কোনো ভাবে সে নিজেও ছিল ভেবে ভাই আর ড্যাড কে জড়িয়ে কান্না করে ওঠে। সারার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ওকে সবাই জড়িয়ে নেয় যাতে কোনও ভাবে এই ভুল ধারণা ওর মনে তৈরী না হয়।
একটু আগেই সাঁঝ সব রহস্যের সমাধান করেই দোলা মির্জাকে তার বডিগার্ডদের হাতে তুলে দেয়, তার নির্দেশ মতো তারা দোলা মির্জাকে নিয়ে চলে যায় সাথে যায় আকাশ দোলা মির্জার খেলা শেষ করতে। দোলা মির্জা কে নিয়ে চলে যেতেই সাথে সাথে দিশাও চলে যায় বাড়ি ছেড়ে সে নিজেই এই বাড়িতে আর থাকতে পারবেনা তার মায়ের কাজের জন্যে সে আর কারোর সাথে চোখ মেলাতে পারবেনা। সেতো শুধু সাঁঝকে ভালোবেসে ছিল ব্যস এর থেকে আর বেশি কিছু নয় সেতো কখনই কোনো খারাপ কিছু চাইনি তাই সে আর এই মানুষ গুলোর মুখের দিকে তাকাতে পারবেনা। তাই সে তার মা বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিজেও বেরিয়ে গেছে তাছাড়াও তার বাবার খুনিকে সে কখনই ক্ষমা করতে পারবে না।
-“আমি নিজের হাতে সব কিছু শেষ করে দিয়েছি আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে আমার জন্যে শাহানা আমাদের থেকে হারিয়ে যাবে। সামাদ সাহেব ভাঙা গলায় বলে ওঠে।
-” ড্যাড তুমি কি করে জানবে বলো ওই মহিলা কি উদ্দেশ্যে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো তুমিও তো জানতে না তাইনা। সারা তার ড্যাড এর চোখ মুছে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ একদমই তাই যা হয়েছে সব ভুলে যাবে আর কিছুই মনে রাখার দরকার নেই সব কিছুর শেষ হয়ে গেছে সারিফ বলে ওঠে।
-” ড্যাড সব ঠিক আছে। সাঁঝ বলে ওঠে।
-“দেখি দেখি সবাই এদিকে তাকান দেখি একটা ছবি হয়ে যাক। বেলা সবার দিকে ফোন ধরে বলে ওঠে।
বেলার ছেলেমানষী দেখে সবাই গম্ভীর থেকে হালকা হেসে ফেলে আর বেলাও এটাই চেয়েছিলো যে সবার গম্ভীর মুখ কেটে গিয়ে হালকা হয়ে হেসে ওঠে।
-“চলুন আজকে থেকে সব কিছুই নতুন শুরু হবে যতো কষ্ট যন্ত্রণা ভুলে নতুন ভাবে সূচনা করি, কি রাজি তো? বেলা সবার দিকে তাকিয়ে মাঝে হাত ফেলে দেয়।
বেলার কথা আর পাগলামি শুনে বাকিরাও হেসে ফেলে বেলার হাতের উপর হাত দিয়ে মিলিয়ে নেয়। একে একে গম্ভীর ভাব কেটে গিয়ে সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির পর অবশেষে শান্তি,সমস্ত আঁধারের কালো মেঘ কেটে গিয়ে আবারো আকাশ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। রওশন বাড়িতে আবারও চারিদিকে ফুটে উঠেছে খুশির ছোঁয়া।
—————-
-“কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? নিশান বলে ওঠে।
শান্তা পিছন থেকে নিশানের কন্ঠ শুনে পিছনে তাকাতে চেয়েও পারেনা ততক্ষণে দুটো হাত তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের সাথে। নিশানের স্পর্শ পেয়ে শান্তা কেঁপে ওঠে তার পুরো শরীরে শিরশির করে ওঠে। নিশান শান্তার কম্পন টের পেয়ে শান্তার কাঁধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে দেয় আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দেয় কানের পাতায় ।
তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের থেকেও আরো অনেক এগিয়ে গেছে যেটা ভালোবাসার নামে পরিচিত প্রথমে তারা এড়িয়ে গেলেও আসতে আসতে তারা দুজনেই সেটা মেনে নিয়েছে যখন থেকে সাঁঝ তাদের ব্যাপার গুলো ধরে ফেলেছে সেখান থেকেই তারা আসতে আসতে একে অপরের কাছে চলে এসেছে।
-“তুমি এখানে? শান্তা মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” তুমি যেখানে আমিও সেখানে, এখন থেকে আমাদের রাস্তাও একই তাইনা একে অপরের পরিপূরক। নিশান বলে ওঠে শান্তার কাঁধে নিজের অধর ঠেকিয়ে রেখেই ।
শান্তা কোনো কথা বলেনা শুধু সময়টা উপভোগ করতে থাকে নিশানের সাথ।
—————
শুধু শান্তা নিশান নয় ওম জাকিয়া, সারিফ রুহি, বেদ সারা সবাই আজ মেতে আছে তাদের ভালোবাসার জোয়ারে। ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে ওম জাকিয়া,কর্নার সাইটের ব্যালকনিতে সারিফ রুহি, আর বাড়ির গার্ডেনে দোলনাতে আছে বেদ সারা। সবাই একে অপরের সাথে মেতে আছে ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গ উপভোগ করছে। আজ শুধু এই বাড়িতে সাঁঝ বেলা নয় বরং আরো কয়েক জোড়ার ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। পুরো বাড়িতে আজও রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে বেলাকে জড়িয়ে ধরে নিচে গার্ডেনে এক জোড়া কপোতকপোতির প্রেম দেখে যাচ্ছে একটু আগেই তারা পুরো বাড়ি ঘুরে দেখে এসেছে কে কোথায় আজকে তাদের প্রেমের ঘাঁটি জুড়েছে এদের সবাইকে একসাথে দেখে তাদের মনেও খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আজ এদের এক হতে দেখে তারাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
-“ওদেরকে এক সঙ্গে ভালো মানিয়েছে তাইনা? বেলা তার উদরের উপর থাকা সাঁঝের হাত জড়িয়ে বলে ওঠে।
-” হুম । সাঁঝ বেলার কানের পাতায় আলতো স্পর্শ করে বলে ওঠে।
-” তবে আমাদের কেও একসাথে দারুণ লাগে। সাঁঝ বেলার কাঁধে তার মুখ ঘষে দিয়ে বলে ওঠে।
সাঁঝের এমন করাতে বেলা শিউরে ওঠে সাথে তার পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে। বেলার কেঁপে ওঠা সাঁঝের নজর এড়িয়ে যায়না এতে করে সাঁঝ বেলাকে নিজের সাথে আরো বেশি করে জড়িয়ে নেয় মিশিয়ে নেয় তার বুকের সাথে। বেলা চোখ বন্ধ করে পুরোটা সময়ে সাঁঝের আদর উপভোগ করে। বাইরে মৃদু মন্দ হাওয়া তাদের ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে মাঝে তার সামনে থাকা চুল গুলো উড়ে গিয়ে সাঁঝের মুখের উপর পড়ছে তাতে যদিও সাঁঝের কোনো অসুবিধা নেই সে তার মত তার বেলায় মেতে আছে। তাদের মধ্যে কথা যদি সেইভাবে হচ্ছেনা তারপরেও একে অপরকে ছুয়ে থেকে একে অপরকে অনুভব করছে আজ সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা এক হয়েছে বেলার মনের মধ্যে জমে থাকা সমস্ত অভিমান সব কিছুই হারিয়ে গেছে সাঁঝের ভালোবাসায় মিশে আর বেলা জানে সাঁঝ সব সময়ে তার চারপাশে নিজের বলয় সৃষ্টি করে রেখেছে। সাঁঝ বেলার কানে ফিসফিসয়ে ওঠে,
-“ভালোবাসি ওয়াইফি ।
সাঁঝের এই কথাটা কানে যেতেই এক ফোটা অশ্রু কনা গড়িয়ে পড়ে বেলার চোখের কোন দিয়ে বেলাও মুখে হাসি ফুটিয়ে মৃদু হেসে বলে ওঠে,
-” ভালোবাসি।
দূর আকাশের বুকে অর্ধ চাঁদের আলোয় এসে পড়েছে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুই জোড়া কপোতকপোতির উপর যারা এখন নিজেদের ভালোবাসাময় সময়ে ডুবে আছে সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এক হয়েছে তারা আজ যেনো সব সময়ে তাড়া এইভাবে থাকতে পারে তাদের ভালোবাসার যেনো কারোর নজর না লাগে। আর যদি নজর পড়েও যায় তাতে কি সাঁঝ আছে না বেলাকে প্রটেক্ট করার জন্যে সব খারাপ নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখবে তারা যে একে অপরের পরিপূরক সাঁঝেরবেলা ❤️
সমাপ্তি ❤️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
(বিঃদ্রঃ – অনেকটা সময় পেরিয়ে আজ শেষ হলো সাঁঝেরবেলার পথচলা তাদের ভালোবাসার সমাপ্তি। জানি প্রথম সিজনের মত এতটা বেশি হয়তো ভালো লাগেনি আগের সিজনে রোমান্টিক সিন গুলো আমি ফুটিয়ে তুলে ছিলাম কিন্তু তাতেও অনেক কিছু শুনেছিলাম তাই এই সিজনে অন্যরকম ভাবে লিখেছি তারপরও কেমন ছিল এই জার্নি অবশ্যই জানিয়ে যাবেন। সাথে ভালো থাকবেন সবাই, জানিনা আবার কবে দেখা হবে বা কখনও দেখা হবে কিনা এটাই হয়তো শেষ জার্নি আপনাদের সাথে গল্পের জগতে, তাই আজ শেষ দিনে অবশ্যই নিজেদের মতামত জানিয়ে যাবেন। আর আপনারা সবাই আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন তা আমি কখনই ভুলবোনা, আপনাদের জন্যে এক আকাশ সমান ভালোবাসা ❤️)
(