#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৩
কেন জানি রিশান ভাইয়ার কথায় আমার আজ খুব খারাপ লাগছে। ভাইয়া এভাবে আমার সাথে কথা বলছে কেন? সে তো কখনো এমন ছিলো না। আমার রিশান ভাইয়া আমাকে তো কখনো বকতো না ভুলেও কখনো না! হঠাৎ ভাইয়া এমন হলো কেন? আজ তার কি করেছি আমি? আমার প্রতি তার কিসের এতো রাগ। ভাইয়ার বলা কথাগুলো আমার বুকে কাঁটার মতো বিঁধেছে। রাগ কষ্ট অভিমান ক্রমশই চেপে ধরেছে। ভাইয়ার এমন আচরণ আমাকে পুরানো স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এক পড়ন্ত বিকেলে সোনালি সমাহারে ছুটে চলছে মেঘা তার পিছু নিয়েছে রিশান।
রিশান: মেঘু শোন পড়ে যাবি তো।
মেঘা: আমি পড়বো না রিশান ভাইয়া। আমি ঠিক আছি।
রিশান: মেঘা আর দৌড়াদৌড়ি করিস না।
মেঘা: উঁহু আমি করবো।
রিশান: আমার কথা শুনবি না?
মেঘা: বা রে তুমি বুঝি আমার কথা শোন?
রিশান: আমি তোর কথা কেন শুনবো? আমি তোর থেকে বড়ো।
মেঘা: বড় তো কি হয়েছে? আমার কথা যদি তুমি শোন তাহলে আমিও তোমার কথা শুনবো।
রিশান: উমম, আচ্ছা ঠিক আছে। তোর সব কথা আমি শুনবো প্রমিস। তবে তোকেও আমার সব কথা শুনতে হবে।
মেঘা উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো, তাহলে বলো কখনো আমাকে বকা দিবে না। রোজ চকলেট আর আইসক্রিম কিনে দিবে?
রিশান: আচ্ছা কিনে দিবো। এবার তো থাম।
মেঘা: সত্যি আমাকে আর বকবে না তো?
রিশান: একদমই না মেঘু পরিকে কি বকা যায়?
মেঘা: তুমি তো,,,
দৌড়াতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে রিশান মেঘাকে ধরে ফেলে।
রিশান: এই থাম তো। বেশি পেকে গেছিস এবার থাম।
মেঘা: এই তো এখনই বকছো। তোমার সাথে আড়ি,
রিশান: ছিঁচকাদুনে একটা।
মেঘা: আমি ছিঁচকাদুনে?
রিশান: হুম তুই একটা ছিঁচকাদুনে ছিঁচকাদুনে ছিঁচকাদুনে।
মেঘা: আজকেই ছোট মায়ের কাছে বিচার দিবো আমি। (কেঁদো কেঁদো কন্ঠে)
রিশান: যা দে দেখি কি হয়।
মেঘা: তুমি কখনো আমাকে বকা দেওয়া ছাড়বে না।
রিশান: তোকে শুধু আমি বকাই দেই? আদর করি না?
মেঘা: না একদমই না।
হঠাৎই এক জোরে বিস্ফোরণের আওয়াজে ভূমি কেঁপে উঠলো।
রিশান: মেঘু,,
মেঘা: রিশান ভাইয়া মা,,,
মেঘার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুমের ঘরে স্বপ্নে সে তার অতীত স্মৃতি চারণে ডুবে গিয়েছিলো। মেঘা ভয়ে উঠে বসলো। তার শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। বারবার যা ভুলতে চেষ্টা করে তাই তার সামনে এসে ভেসে উঠছে। তার দুচোখের ঘুম উড়ে গেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে তার বিছানা থেকে উঠে পাশের টেবিলটার দিকে চোখ রাখলো। কিন্তু পানি পেল না ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে ড্রইং রুমে চলে গেলো সে। চারপাশ অন্ধকার লাইটও অফ ভয় করছে কিন্তু খুব করে পানির পিপাসা পেয়েছে তার। নিচে নামতেই আলোর সন্ধান পেল সে ডিম লাইটের আবছা আলোয় এক সুদর্শনের চেহারা দেখে সে অবাক।
রিশান ভাইয়া এখনো ঘুমায় নি? কি করছেন উনি? এতো রাতে এখানে বসে বসে কি করছেন উনি? আমি আস্তে আস্তে সেদিকে পা বাড়ালাম। ভাইয়া কিছু একটা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। আমি আস্তে আস্তে এগোচ্ছি তখনই শুনতে পেলাম,
যে কারণে এসেছিস সেটা শেষ হলে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়। এখানে আসার দরকার নেই।
আমার পা দুটো থেমে গেলো। রিশান ভাইয়া দেখেছে আমাকে? কিন্তু উনি তো হাতের ম্যাগাজিনে মুখ ডুবিয়ে আছেন। তাহলে কি আমি ভুল শুনলাম?
মেঘা কি হয়েছে?
এখনো তার দৃষ্টি সেই ম্যাগাজিনের পাতায়। তাহলে আমাকে দেখেছেন কিভাবে?
মেঘা আমি কিছু বলছি?
ভাইয়া পানি নিতে এসেছিলাম।
ভাইয়া এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ভয় পেয়েছিস?
আমি মিনমিন করে বললাম না, তেমনটা না।
যা যেয়ে শুয়ে পড়।
আমি চলে এলাম।
মেঘপরি! তোকে এতো ভালো লাগে? ভালোবাসি তোকে। তোর চাওয়া পাওয়া কে। তোকে কখনো কষ্ট পেতে দেবো না মেঘ পরি। হৃদয়ের অতল গহীনে এক অজানা দেশে পাড়ি জমাবো তোকে নিয়ে। তোর মুগ্ধতায়!
সকালে জানালার ফাঁক দিয়ে রৌদ্র কিরণ মুখ থুবড়ে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে সোনালি রঙের হাতছানি দেখতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকাতেই আমার চোখ আকাশে। নয়টা বেজে গেছে! ভার্সিটিতে যেতে হবে তো। রিশান ভাইয়া! সে তো আজ আমায় গিলে খাবে। তাড়াতাড়ি করে কানো রকম রেডি হয়ে নিচে নামলাম। ফুফু টেবিলের খাবার দিচ্ছে। আমি যেয়ে বসে পড়লাম।
ছোট মা তাড়াতাড়ি খাবার দাও। অনেক লেট হয়ে গেছে রিশান ভাইয়া আজ ইচ্ছে মতো বকবে।
চলে গেছে মানে? রিশান ভাইয়া কোথায়?
ও তো ভার্সিটিতে চলে গেছে।
ভাইয়া আমাকে রেখে চলে গেছে? কেমন যেন খুব খারাপ লাগছে। খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে গেলাম।
মেঘা খাবি না?
খিদে নেই ছোট মা।
রাগ করেছিস? মা শোন,,
ছোট মা আমার দেরি হচ্ছে।
এই বলেই বেরিয়ে পড়লাম। ফুফু বারবার ডাকলেও কর্ণপাত করলাম না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সায় উঠে পড়লাম। খুব করে কান্না পাচ্ছে এখন। আমার সাথে কেন এমন করছে রিশান ভাইয়া? আমি কি করেছি? সে কি জানে না তার অবহেলা আমার জন্য কতটা যন্ত্রনাদায়ক?
ভার্সিটির গেটে এসে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ক্যাম্পাসের দিকটায় এগিয়ে গেলাম। রিশান ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে এমন একটা ভাব দেখালো বোধহয় আমাকে সে চিনে না। আমি অবাক। এই সেই রিশান যাকে আমি আমি?
পাশ থেকে নিহা আপু বলে উঠলো, কি হয়েছে মেঘা?
কিছু না আপু।
ক্লাস নেই?
হুম আছে।
তো এখানে না দাঁড়িয়ে ক্লাসে যাও।
আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। ক্লাসে প্রবেশ করবো এই মুহূর্তে,
মেঘা কেমন আছো?
নিরব ভাইয়া!
জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া। আপনি?
হ্যাঁ, আমিও ভালো আছি। মন খারাপ?
না ভাইয়া, ক্লাস আছে আমি যাই এখন।
ক্লাস শেষে একটু দেখা করো তো তোমার সাথে কথা আছে।
কি কথা ভাইয়া?
নিরব ভাইয়া মুচকি হেসে বললো, আছে কথা তুমি পুকুর পাড়টায় এসো।
নিরব ভাইয়া চলে গেলেন। মেজাজটা মুহূর্তেই বিগড়ে গেলো। একে রিশান ভাইয়া এমন করছেন এর মধ্যে এই ভুতের আবির্ভাব। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। ক্লাসরুমে ঢুকে রুহির পাশে ধপাস করে বসে পড়লাম।
কিরে ডাইনি এমন করছিস কেন? কি হইছে তোর?
ভালো লাগছে না রে?
কেন কি হইছে?
রিশান ভাইয়া,,, বলতেই আমার চোখে অশ্রু চলে আসলো।
রিশান ভাইয়া? রিশান ভাইয়া কি বলেছে?
রুহিকে সব বললাম। ও হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রুহি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ও আমার ফ্রেন্ড কম বোন বেশি। সবসময় আমার সাথে থাকে ও। ওকে নিরব ভাইয়ার কথাও বললাম।
আরে নিরব ভাইয়ার কথা বাদ দে মেঘা। ভাইয়াভাইয়া এমন করছে কেন?
আমি কি করে জানবো? ভাইয়া আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করছে।
মন খারাপ করিস না ঠিক হয়ে যাবে।
ক্লাসে লেকচারার চলে এসেছে। স্যার স্যারের মতো বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু আমার তাতে একটুও মন নেই। আমি তো রিশান ভাইয়ার চিন্তায় বিভোর!
হঠাৎই ক্লাসে প্রবেশ করলেন ভাইয়া। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি রাগে অগ্নিশর্মা। তার চোখ দুটো দিয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঝরছে ফর্সা মুখখানা লাল হয়ে আছে। ক্লাসে এসেই তিনি আমার দিকে বড় বড় পায়ে এগিয়ে এলেন। আমার হাতটা টেনে আমাকে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। স্যারসহ বাকি সবাই হা করে রইলো। কেউ কিছু বলার সাহস পেলো না। ভাইয়া আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরেছে যার দরুন হাতে অনেক ব্যাথা পাচ্ছি।
রিশান ভাইয়া ছাড়ো আমাকে। হাতে অনেক ব্যাথা পাচ্ছি।
সাথে আমার কাতর ধ্বনি! ভাইয়া আমার কোন কথা শুনলেন না। আমার হাতটা টেনে আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। গাড়ি স্টার্ট করলেন এক অজানা গন্তব্যে। জানি না কেন এমন রেগে আছেন তিনি। কি হয়েছে ওনার?
চলবে…..
(