#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৯
সরি মি. রিশান আমরা এখনো কোন সন্ধান পাচ্ছি না।
কি বলছেন ওসি সাহেব। কখনো কোন সন্ধান নেই? কি করলেন আপনারা?
সরি মি. রিশান। আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে খুঁজে চলেছি।
আই ওয়ান্ট মেঘা এন্ড রাইট নাউ!
বলেই পাগলের মতো করতে থাকে রিশান। মেঘার দেখা এখনো মিলে নি তার। একদম পাগল হয়ে গেছে সে। কোন কিছুই ভালো লাগছে না তার। মেঘাহীনা সে শূন্য। তাকে শান্ত করতে পারছে না। দুদিনে বাড়িটা একদম শান্ত হয়ে গেছে। সবসময় বাড়িটা মাতিয়ে রাখতো যে পরিটা কোথায় সেটা সবার অজানা। কে এমন করছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। রিশান তো আর বসে নেই। তার পা দুটো জিরিয়ে নেই তন্ন তন্ন করে খুঁজছে মেঘাকে। মেঘাকে ছাড়া সে তো পাগল হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটা শ্বশানে পরিণত হয়েছে। কোথাও টু টা শব্দ নেই। মণি বেগম তো কেঁদেই চলেছে। অন্যান্য আত্মীয়রাও এসেছে। সবাই দুশ্চিন্তায় ভুগছে। রিশানের পাগলামিকে আরো বেশি ভয় পাচ্ছে সবাই। ছেলেটা কেমন হয়ে গেছে দুদিনে। এটা কি আদ্যই পাগলামি? রিশানের পাগলামি দেখে আঁতকে উঠছে রেজওয়ান সাহেব (রিশানের বাবা)। ছেলেকে দেখে সে বাকরুদ্ধ। মেঘাকে কোথাও পাচ্ছে না। মেঘার সাথে কার শত্রুতা এটাই বুঝে উঠতে পারছে না সে।
রিশান শান্ত হ বাবা। আমরা সবাই তো দেখছি।
বাবা দু’টো দিন কেটে গেলো ওকে পাচ্ছি না আর তুমি বলছো শান্ত হতে?
এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না বাবা। ওকে খুঁজে বের করতে হবে তো। শক্ত হ। আজকেই আমাদের শেষ অভিযান। আমার সন্দেহ যদি সত্যি হয় মেঘাকে ওই শয়তানটাই কিডনাপ করেছে।
কে বাবা?
বলছি বাবা আয়। আয় আমার সাথে।
।
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে আরেক অজানা গহীন অরণ্যে আবিষ্কার করলাম। চারিদিকে আগাছায় ভরা। মাকরশা জাল বুনেছে প্রতিটি কোণে। চারদিকে অর্ধ ভাঙ্গা দেয়াল। মনে হচ্ছে পুরানো কোন ধ্বংস স্তুপ। চারপাশটা ভালো করে প্রয়োগ করতে থাকলাম। বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে জায়গাটা। এখানে আগে এসেছি মনে হচ্ছে। বাড়িটা একদম নির্জন জায়গায়। মনে হয় না এখানে কেউ থাকে বা থাকতো।একদম ভুতুড়ে বাড়ি মনে হচ্ছে এটাকে। চারপাশের দেয়ালগুলো ভেঙে পড়েছে। মাথাটা প্রচুর ধরে আছে। হাত পা প্রচুর ব্যাথা। আমি এই জায়গায় আবার কখন এলাম। কারা আনলো? কি চায় এরা?
চারপাশেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম তখনই শুনতে পেলাম,
মেহুলাম্মু কেমন আছো?
সেই কণ্ঠস্বর যা আমার মনে বারবার আতংকের সৃষ্টি করে। পিছন ফিরে দেখলাম সেই কালো আবরণে আবৃত ব্যক্তি গুলো। এক সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছে তারা। তাদের সবাই এক ধরনের পোশাক পড়ে আছে।
কি ভাবছো মেহুলাম্মু? এখানে কিভাবে এলে?
আমাকে তোমরা আটকে রেখেছো কেন? কি ক্ষতি করেছি তোমাদের?
তুমি কি ক্ষতি করেছো তা সময় হলেই বুঝবে।
আমাকে ছেড়ে দাও না প্লিজ।
সময় হলেই পাবে।
এরপর সে আমার নিকট একটা প্যাকেট দিয়ে বললো, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও নাহলে কি করবো আমি নিজেই জানি না।
প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। কি চাও তোমারা?
আমরা তোমাকে চাই। সময় হলেই বুঝবে। খেয়ে নে।
না আমি খাবো না।
প্রতীয়মান ব্যক্তিটি প্রচণ্ড রেগে এক গর্জন দিয়ে উঠলেন।
খাবি না তুই খাবি তোর চৌদ্দ গুষ্টি খাবে। বলেই আমার চুলের মুঠি ধরে গালে এক চড় লাগিয়ে দিলেন।
।
এক বিধ্বস্ত ধ্বংস স্তুপে পৌঁছেছে রিশান। আস্তে আস্তে পা ফেলে সামনে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। সামনে এক ছোট কুটির তার দৃষ্টির বাহিরে নয়। সামনে এগোতে এগোতে শুনতে পেল কারো কন্ঠধ্বনি।
কিরে কাজটা হয়েছে?
আরেকজন বলছে, না বস। এখনো পৌঁছায় নি।
মানে? তাড়াতাড়ি কর। ওই শালা আসলে কি করবি?
রিশান তাদের কথাগুলো শুনে ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করলো। তাদের কথোপকথন চলাকালীন সময়ে সে প্রবেশ করলো। কেউ খেয়াল করলো না। ভিতরে প্রবেশ করেই রিশানের চোখ দুটো মেঘাকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু নেই! হঠাৎ তার পায়ের সাথে কিছু একটা লাগতেই জোরে শব্দ হয়। লোক দুটো শব্দ শুনতেই পিছন ফিরে তাকায়। তারা রিশানের দিকে বন্দুক তাক করে।
কে তুই?
মেঘা কোথায়?
মেঘা! তুই কে? মেঘার কাছে কি?
তাড়াতাড়ি বলে ফেল মেঘা কোথায়। নাহলে কিন্তু তোদের রক্ষা নেই।
যা মন চায় কর কিন্তু তুই জানতে পারবি না মেঘা কোথায়। তাকে কেউ কখনো খুঁজে পাবে না।
বলেই তারা হাসতে লাগলো।
রিশান একজনের কলার চেপে ধরলো। আরেকজন তা দেখেই বন্দুকের নল তার মাথার দিকে তাক করলো। রিশান আস্তে সরে আসে।
তোকে দিয়ে কোন কাজ নেই আমাদের তারপরও তুই যেহেতু নিজ থেকে এসেছিস তাহলে পুরানো হিসেবটা তোর থেকে উসুল করেই নেই।
আমি বলছি মেঘা কোথায়? ওর কিছু হলে তোদের আমি জেন্ত পুঁতে ফেলবো।
একজন হেসে জবাব দিলো, কিছুই করতে পারবি না তুই।
আচ্ছা দেখা যাক। তোদেরকে আমি চিবিয়ে খাবো।
চুপ কর শালা।
তোদের আমি ছাড়বো না কুত্তার বাচ্চা।
।
আমার সাথে এতো শত্রুতা কার? আমাকে এখানে আটকে রেখেছে কেন? কি চাচ্ছে এরা? কি ক্ষতি করেছি এদের? আমার সাথে এমন নির্দয় ব্যবহার করছে কেন এরা? আর এটা আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে? এই অন্ধকার কুঠুরিতে কেন? আমি কি এখানে আগে এসেছি? এমন লাগছে কেন? নানান প্রশ্ন মাথায় আসছে। এসব ভাবতে যখন বিভোর আমি তখনই কোথা থেকে একজন রাগে গজগজ করতে করতে এসে আমার গালে ঠাস করে এক চড় লাগিয়ে দিলেন। তার হঠাৎ চড়ে টাল সামলাতে না পেড়ে আমি মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। আমার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই ব্যক্তিটির। আমি পড়ে গেলে সে আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে টেনে তুলে। এরপর দেয়ালের সাথে আমার মুখ চেপে ধরে।
তুই কি মনে করছোস তোর আশিক তোরে এখান থেইকা নিয়া যাইবো। কহনো না। একদম মাটিতে পুইঁতা ফেলমু শালারে।
আরেকজন এসে বললো, ভাই ওই শালায় আগের আস্তানায় আছে।
লোকটা তৎক্ষণাৎ আমাকে ছেড়ে দিলেন।
কি কছ? আয় আমার লগে।
বলেই দুজনে চলে গেলেন। আমি মাটিতে বসে পড়লাম। খুব করে কান্না পাচ্ছে। শরীরে জোর নেই একদম ক্লান্ত আমি। এদের সাথে যুদ্ধ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। নিজেকে কেমন যেন মাটির পুতুল মনে হচ্ছে। চোখ দুটো খুলে রাখতে পারছি না। বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু সেই নরপশুর দল আবার চলে আসলো এসেই একজন আমাকে টেনে তুললো। আরেকজন এসে আমার হাতে ইনজেকশন দিয়ে দিলো। চিৎকার করে উঠলাম। আমার ভাগ্যে কি আছে কে জানে। ইনজেকশন দিচ্ছে কেন আমাকে? কি আছে এতে? এটা দিলে আমার শরীর এতো কাঁপিয়ে যায় কেন? এমন করছে কেন এরা? হয় তো জীবনের সমাপ্তির দিকে চলে এসেছি আমি। রিশান ভাইয়ার কথা খুব করে মনে পড়ছে। আমার একটু ব্যাথা লাগলেই ভাইয়া অস্থির হয়ে পড়েন। আমাকে ছাড়া সে কেমন আছে? সে কোথায়? হয় তো আমাকেই খুঁজছেন তিনি। হবে কি তার সাথে শেষ দেখা? বলতে পারবো জমানো কথাগুলো? মাত্র একটা বার তাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠছি আমি। কিন্তু আমার তো কিছু করার ক্ষমতা নেই। মাথা ধরে গেছে হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু করছে। বারবার ইচ্ছে হচ্ছে তার কোলে মাথা রেখে বলি ভাইয়া আমি তোমাকে ভালবাসি! অনেক বেশি ভালোবাসি!
চলবে…………