#তোর_নেশালো_শহরে
#Eshika_Khanom
Part: 02
তাহলে আজ কি এমন কাজ করে এসেছিলি যার জন্যে সবার সামনে ব্যাডমিন্টন ক্লাবে রাহি তোকে চর মেরেছে? ভ্রু উচিয়ে এরিককে প্রশ্ন করল এরোন।
-মানে? ( অবাক হয়ে বলল এরিক)
-মানে আমি কিন্তু জেনে গিয়েছি যে আজ রাহি তোকে চর মেরেছিল। শুধু কারণটাই আমার জানা নাই।
-তাহলে তার থেকেই জেনে নাও যে তোমায় খবর দিয়েছে।
-এমন ঘাড়ত্যাড়ামি না করে সোজাসাপটাভাবে উত্তর দে। কি করেছিলি?
-শুনবে?
-হুম।
-তাহলে শুন।
ফ্ল্যাশব্যাক…
রাহি মাত্র প্র্যাক্টিস শেষ করে ক্যান্টিনে এসে বসল। তখন একটা মেয়ে এসে তাকে বলল,
তুমি তো রাহি তাইনা?
-হুম।
-তোমাকে একজন এই চিরকুটটা দিতে বলেছে।
-কি আছে এতে?
-আমি দেখিনি।
-কে পাঠিয়েছে?
-তাও বলতে পারব না।
-কেন?
-কারণ আমাকেও একটা মেয়ে এসে বলেছে যে তাকে এটা দেওয়া হয়েছে আমাকে দেওয়ার জন্য যাতে আমি আবার গিয়ে তোমাকে দিয়ে দেই।
-বাব্বাহ! তো দাও দেখি কি আছে এতে? আর ধন্যবাদ তোমাকে।
-ঠিক আছে তুমি থাকো আমি যাই, বাই।
-বাই।
মেয়েটা চলে গেল। আর রাহি চিরকুটটা খুলতে থাকলো। কিন্তু চিরকুট এর লিখাগুলো পড়ে তার মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। প্রচন্ড রেগে গেল রাহি। চিরকুটটা হাত দিয়ে মোচড়িয়ে নিচে ছুড়ে ফেলে দিল। চিরকুটটায় খুব অশ্লীল কথা লিখা ছিল আর নিচে লিখা ছিল E। রাহি মাথায় তখন এরিকের নামটাই আসে। সে উঠে যায় সেখানে থেকে আর সোজা এরিকের কাছে যায়। ও হ্যা যাওয়ার আগে আবার নিচে ফেলে দেওয়া সেই চিরকুটটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে নেয় সে। এরিকের সামনে যাওয়ার পর রাহি কিছু না বলে এরিকের টি-শার্ট টেনে এরিককে উঠায়। এরিক তার বন্ধুদের সাথে বসে ছিল। হঠাৎ রাহির এহেন কাজের কারণ সে ঠাওর করতে পারেনি। আর রাহি তো রেগেমেগে এরিককে টেনে নিয়ে অনেক লোকের সামনে একটা চর মেরে দেয়। এরিকের কাছে এটা খুব অপমানজনক। আশেপাশে ভিড়ও জমে গিয়েছে। এরিক কিছু বলতে গেলেই রাহি গর্জে উঠে বলে উঠল,
-কি মনে করেন নিজেকে? আপনার প্রপোজ এক্সেপ্ট করিনি দেখে আজ আমার সাথে এমন করবেন?
-কি করেছি আমি?
-আপনি যে এতো খারাপ কুরুচিপূর্ণ একটা মানুষ তা আমার জানা ছিলনা।
-আমাকে তো বলবা কি হয়েছে?
তখন রাহি এরিকের মুখে কাগজটা ছুড়ে মেরে বলল,
-দেখুম নিজের কৃতকর্ম। অবশ্য আপনি তো জানেনই আপনি কি করেছেন? এটা তো শুধু তার প্রমান।
এটা বলে রাহি চলে গেল। আর এরিক চিরকুটটা খুলে লিখাগুলো পড়ল। সেগুলো পড়ে য়ার নিজেরই রাগ উঠছে। আর সেক্ষেত্রে রাহি যেহেতু একটা মেয়ে তাই তার রাগ উঠাটা স্বাভাবিক। এরিক মনে মনে রাহিকে কোনো দোষ দিলনা। বরং কোন বান্দা তার রাহিকে এই চিঠিটা দিয়েছে তাকে খুজে বের করে রাহির পায়ের সামনে ফেলার সংকল্প করল।
বর্তমান…
হুম বুঝলাম ঘটনাটা। তুই এমন কিছু করবিনা কখনও তা আমি জানি এরিক, এরিকের কাধে হাত দিয়ে বলল এরোন।
-হুম ধন্যবাহ ভাইয়া।
-কিন্তু তোর কি মনে হয় কাজটা কে করেছে?
-আমি জানিনা। আমাদের ক্লাবে E লেটার দিয়ে শুরু নামের মানুষের অভাব নাই। আবার এমনও হতে পারে যে কেউ আমাকে ফাসাতে এই কাজ করেছে।
-এই সামান্য ব্যপারে তোকে ফাসানোর কি আছে?
-থাকতেও পারে। আচ্ছা ঘুমাতে চল, পরেরটা পরে দেখা যাবে।
-হুম চল।
এরোন আর এরিকও পরে ঘুমিয়ে গেল।
পরেরদিন….
সাদা মানেই শুভ্রতা। সাদা রংটি দেখলেই আমাদের মনটা নরম হয়ে যায়। সাদা রঙ এ কোনো ভেজাল পাওয়া যায়না। সাদা নিজের সাথে অন্য রঙ মিশ্রিতে করে নিজেকে হরেক রকম রুপ দিতে পারে। এই রুপের বর্ণনা করে করে আমরা যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ি তবুও শেষ করা যাবেনা। আর আজ এই সাদা রঙ পড়ে বসে আছি আমি। জানিনা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে। তবে এইটুকু বলতে পারি খারাপ দেখাবে না আমায়। কারণ আমি আর রাহি আলহামদুলিল্লাহ দেখতে মাশাল্লাহ। এজন্য আমাদের প্রপোজের যেমন অভাব হয়না তেমনই ঝামেলারও অভাব হয়না। রাহি তো যাওয়ার সময় বঅলে গিয়েছে আমাকে শেওড়াগাছের সাদা পরীর সাথে তুলনা করে চলে গিয়েছে। এটা ম্যাডাম আমার প্রশংসা করল নাকি বদনাম করল সেটাই বুঝতে পারলাম না। যাইহোক এখন আপনাদের সাথে বেশি কথা বললে আমার ভার্সিটিতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। আবার বিকেলে একটা জব ইন্টারভিউও রয়েছে। আমি বুঝলাম না তারা সময় পরিবর্তন করে বিকেলে কেন সময়টা দিল। যাইহোক আমার একটা চাকরি প্রয়োজন তাই আমায় যেতেই হবে আমি যতোই ক্লান্ত হইনা কেন। আমি রওয়ানা দিলাম, টাটা।
___________________________
রিয়া তোমার কি হয়েছে আমায় বলো? তুমি আমার সাথে এমন কেন করছ? কেন ইগনোর করছ আমায়? রিয়ার হাত টেনে ধরে বলল এরোন।
-আজব মানুষ তো তুমি এরোন। একটা সিম্পল কথা তুমি কেন বুঝতে পারছো না? আমি আর তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা। কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখতে চাইনা।
-কিন্তু কেন? কি দোষ করেছি আমি? একবার বল আমায়, আমি সব শুধরে নিব। সব ঠিক করে দিব আমি।
-হাত ছাড় আমার। ( এরোনের হাত ঝাকি দিয়ে বলে উঠল রিয়া।)
-আমার সাথে এমন কর না রিয়া প্লিজ। মরে যাব আমি।
-তাহলে মরেই যাও।
-কেন করছ তুমি এমন আমার সাথে?
-কারণ এখন তোমার চেয়েও অনেক বড়লোক অনেক বড় মনের মানুষ আমায় ভালোবাসে। আশা করি তুমি আর আমার পিছু করবেনা।
এরোন এবার প্রচন্ড রেগে গেল। রিয়ার দুইহাত জোরে চেপে ধরে বলে উঠল,
তুই এমন করতে পারিস না আমার সাথে। আজ টাকা পেয়ে অন্য কারো হয়ে গেলি তুই? একসময় তো বলেছিলি তুই আমারই থাকবি, আমাকেই ভালোবাসবি।
– এখন আর বাসি না।
– তুই এমন করতে পারিস না।
– হাত ছাড়ো বলছি।
– রিয়া প্লিজ।
রিয়া এবার চিৎকার করে লোক জড় করল। আশেপাশে অনেক মানুষ জড় হয়ে গেল। তারা কি হয়েছে জানতে চাইলে রিয়া তাদের বলল এরোনকে সে চিনে না আর সে তার সাথে অসভ্যতামি শুরু করেছে। এরোন নিজের সাফাই করার চেষ্টা করল কিন্তু তখন কিছু লোক এসে এরোনকে মারা শুরু করল। এরোন নিজেকে রক্ষা করার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু এতোগুলো মানুষের সাথে তার পেরে উঠা কষ্টকর। এরোন চিৎকার করে বলতে লাগলো,
রিয়া তুমি কেন মিথ্যা কথা বলছ? কেন এদের বলছ না যে আমি তোমার সাথে কোনো অসভ্যতামি করিনি?
কিন্তু রিয়া এরোনের কাছে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসলো না। এরোনের প্রতিটা চিৎকারের বিনিময়ে সে একটা পৈশাচিক হাসি দিল। তারপর রিয়া সেই স্থান ত্যাগ করল। আর ঐদিকে এরোনকে রক্তাক্ত করে ফেলছিল ওখানকার জনগণ। আমি ওখানে এতো চিৎকার আর ভিড় দেখে সামনে এগিয়ে আসলাম। আর সেখানে গিয়ে যেটা দেখালাম তাতে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি চিৎকার করে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এরোনকে নিজের কছে নিয়ে আসলাম। ওরনা দিয়ে তার শরীরের রক্ত মুছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তারপর তাদেরকে বললাম,
আপনারা মানুষ? এভাবে কাউকে কেউ মারে?
তখন একজন বলল, এভাবেই মারা উচিত যারা মেয়েদের সাথে অসভ্যতা করে।
আমি রেগে গিয়ে বললাম, চলে যান এখানে থেকে আপনারা, চলে যান।
সবাই সেখানে থেকে চলে গেল আর আমি অনেক কষ্টে তাকে উঠিয়ে সামনের ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। এরোন আমার কাধে ভর দিয়ে হাটছিল। সামনে একটা ক্লিনিক পেয়েছি আমাদের ভাগ্য ভালো দেখে হয়ত। সেখানে এরোনের ড্রেসিং করিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলাম। এরোন একজনকে কল দিয়ে আসতে বলল আর বলল যে সে এখানেই বসে অপেক্ষা করবে তার গাড়ি আসার এবং আমায় যেতে বলল। তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম,
একা এখানে থাকতে পারবেন তো?
-হুম।
-দেখলেন আপনিই কাল বলেছিলেন যে আমার কোনো প্রয়োজনে আপনার কাছে আসতে। আর আজ আপনার প্রয়োজনেই আল্লাহ আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিল। খোদার কি খেলা তাইনা!
চলবে….
( আজ আর কিছু বলব না আপনাদের)