#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-১৬
তন্ময় আর সাজু বেপারি মুখোমুখি বসে আছে। হালিমা বেগম পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার মেয়ে তাদের না জনিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।এটা হতেই পারেনা।
পিন ড্রপ নিরবতা বিরাজ করছে ঘর জুড়ে। শুধু চারজন মানুষের নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিরবাতা ভেঙ সাজু বেপারি বললেন,আমি সাজু বেপারি কোন নয় ছয় কথা পছন্দ করিনা। যা কওয়ার সোজা কও। কোন মিথ্যা কইবানা।
তন্ময় বললো,আঙ্কেল আমার নাম তন্ময় হাসান শেখ। আমার বাবার নাম আদিল হাসন শেখ। আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই! জানি এই কথাটা আমার বাবা অথাব আমার ফ্যামেলির কারো এসে বলা উচিৎ ছিলো। কিন্তু দুঃখিত আমি নিজেই বলছি, তার অবশ্য কারণ আছে।
– কারনটা কও
– সারাজীবন আপনার মেয়ের সুখ,দুঃখ ভালো থাকা খারাপ থাকা সব সময় তার পাশে থাকবো আমি। তাই আমার মনে হয় আমি যদি ঠিক প্রতিশ্রুতি দিতে পারি সেটাই সবচেয়ে ভালো।
– তুমি সব যাইনা শুইনা আইছো।
-আঙ্কেল আমি শুধু আপনার মেয়েকে কথা দিয়ে এসেছি, যে আপনার অনুমতি নিয়ে তাকে নিজের করে নেবো।
– আমি এমনে কেমনে নিজের মেয়েকে তোমার হাতে সোপর্দ করবো। তোমারে তো ঠিক করে আমি চিনিও না।
– আপনি যা জানতে চান আমি সব জানিয়ে দিচ্ছি।
– তুমি যে সব সত্যি কথাই কইবা তার কি গ্যারান্টি আছে।)ঢাকার শহরে ঠকবাজের তো আর অভাব নাই।
– আমাকে দেখে আপনার ঠকবাজ মনে হয়!
– দেহো বাবা সুট, বুট পরলেই কেউ ভদ্রলোক হইয়া যায় না। আর চেহারায় তো আর তোমার চরিত্র লেখা নাই। চেহারা দেইখা যদি মানুষ চেনা যাইতো। তাইলে বিশ্বাস করে মাইনষে বারবার ঠকতো না।
– আপনার কথায় যুক্তি আছে। তবে আপনাকে বিশ্বাস করানোর জন্য কি করতে হবে?
– বেশি কিছু করতে অইবো না।তুমি তোমার বাপের লগে আমারে কথা কইবার ব্যবস্থা কইরা দাও।
তন্ময় মোবাইল বের করে তার চাচ্চু আবিদ হাসানকে কল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই তন্ময় সালাম দিয়ে বললো বাবা তোমার সাথে একজন কথা বলতে চাইছে।
আবিদ হাসান আগেই সবটা জানেন। তন্ময় এখানে আসার আগেই তাকে সব জানিয়ে দিয়ে এসেছে।
সাজু বেপারির কাছে মোবাইল দিয়ে বলে,কথা বলুন আঙ্কেল।
মোবাই কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সালাম দিলো আবিদ হাসান। সাজু বেপারি সালামের উত্তর নিয়ে বললেন। আপনার ছেলে যা বলছে সেই বিষয় আপনি কি জানেন।
আবিদ হাসন বললো, হ্যাঁ জানি। আমি আপনার মেয়েকে দেখেছি। আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে। এবার বাকিটা আপনার ইচ্ছে।
– আমার মতো সাধারণ মানুষের মেয়েকে কেনো বাড়ির বউ করে নিতে চান?
– সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অসাধারণ হয়। আপনার মেয়ে রুপেগুনে মাশা আল্লাহ। তাই।
– আপনেগো লগে আমাগো তো মিলবো না।
– মেলালেই মিলবে। আপনিও মানুষ আমিও মানুষ।
– মানুষ তো আমরা হগলেই। তয় উঁচু আর নিচু।তয় চাইহোক আমার একটা মাত্র মেয়ে তাই সময় চাই। বিয়ে হলো সারাজীবনের ব্যাপার তাই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।
– আচ্ছা আপনি আগামীকাল সকালে জানান। আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার উত্তরের।
সাজু বেপারি তন্ময়ের দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, আব্দুল্লাহ-রে সাথে নিয়া ঘাট থাইকা হাত মুখ ধুইয়া আহো।
তন্ময় আব্দুল্লাহকে নিয়ে পুকুর ঘাটে চলে গেলো
সাজু মিয়া হালিমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, খবার রেডি করো। আজকে কি রান্না হইছে।
-পুকুর থেকে আব্দুল্লাহ রুই মাছ উঠিয়েছিল। রুই মাছের ঝোল আর লাউ শাক। আর মোচড়ার ঘন্ট।
এহনতো এসব দিয়া খাইতে অইবো। রাতে আর কিছু ব্যবস্থা করন যাইবো না। সকালে গঞ্জ থাইকা বাজার আইনো ভালো মন্দ রান্না করে খাওয়াবো।
______________________________________________
এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি থেকে ফিরছে সারা। রাত প্রায় এগারোটা ছাড়িয়েছে। মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলো। মন মেজাজ কোনটাই ভালো নেই সারার। সেদিনের পর দু’টো দিন চলে গেলো না আসলো কল, আর না একটা ক্ষুদে বার্তা। ড্রাইভার গাড়ি চেক করে বললো, আপামনি অন্য কোন ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢাকা শহরে রাত এগারোটা তেমন কোন রাত নয়। সারা এদিক সেদিক তাকিয়ে রিক্সা খুঁজছিলো। হঠাৎ করে চোখ গেলে রাস্তার পাশে একটা টুলে বসে মাথা নিচু করে রাখা যুবকের দিকে । এতো দূর থেকেও নিজের মানুষটিকে চিনতে একটুও সময় লাগলো না। সারার।দৌড়ে সেদিকে ছুটে গেলো।
কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকায় রায়হান
সারাকে দেখেই সারা কে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। রায়হানকে কাঁদতে দেখে সারা কলিজা কেঁপে উঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে আদূরে গলায় বলে, কি হয়েছে রায়হান ভাই।
সারার কথা রায়হানের কর্ণগোচর হলো নাকি বোধগম্য হলো না। সে একি ভাবে কাঁদতে লাগলো।
সারা পরম যত্নে রায়হানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে
তার চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরছে নোনা জল।
বেশখানিকটা সময় কাঁদার পর রায়হান সারাকে ছেড়ে দিয়ে নিম্ন স্বরে বলে, সরি। বলেই উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে।
সারা রায়হানের হাত ধরে বলে, আজ আমি আপনাকে যেতে দেবো না রায়হান। আপনার এই বিধ্বস্ত অবস্থায় আপনাকে কিছুতেই একা ছাড়বো না।
রায়হান ঘুরে দাঁড়ালো। রায়হানের চোখে জল চিকচিক করছে। সারার আরে একটু কাছে এসে বললো, কতটা সময় আমার পাশে থাকতে পারবেন মিস সায়রা হাসান শেখ?এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা।
– আপনি রাখতে চাইলে সারাজীবন থাকতে রাজি।
– রয়হান বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে,এসব শুধু আপনার আবেগ। পৃথিবীতে কেউ থাকেনা। সবাই থাকবে বলেও একা করে চলে যায়।
সারার হৃদয় চিন চিন ব্যথা অনুভব করছে।তারমানে রায়হান অন্য কাউকে ভালোবাসে?
রায়হান আবার বললো, জানেন আমার মা বলেছিলো বাবা, আমি তোকে কখনো ছেড়ে যাবো না। অথচ আজ একটা দিন পার হয়ে গেলো মাকে ছাড়াই। আচ্ছা বলেন তো, থাকবো বলেও মানুষ চলে কেনো যায়?
সারা রায়হানকে জড়িয়ে ধরলো। কারণ রায়হান এখন কতটা বিধ্বস্ত সেটা বুঝতে বাকি নেই সারার। মৃদৃ স্বরে বললো, কি হয়েছে আন্টির? আর আন্টি কোথায়?
রায়হান এলোমেলো ভাবে উত্তর দেয়, যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না সেখানে। যেখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকে।
সারা বুঝতে পারলো রায়হানের মা আর এই পৃথিবীতে নেই।
সারা রায়হানকে বললো আপনি ভেঙ্গে পরছেন কেনো আমি আছি আপনার পাশে।
– না তুমি নেই কোথাও নেই।কেউ নেই আমার আমি একা।
-রায়হান ভাই রাত হয়েছে চলুন বাসায় যাই।
– না যাবো না। আমি আজিমপুর কবরস্থানে যাবো। এখন থেকে সেটাই আমার বাসা। যেখানে মা সেখানেই আমি।
– আপনি নিজেকে সামলে নিন আমি আছি আপনার সাথে।
– এখন আছেন সকাল হওয়ার আগেই আর থাকবেন না।
– আমি আর কোথাও যাবোনা রায়হান। আপনার সাথেই থাকবো। এখন আমার সাথে চলুন।
______________________________________________
শেখ বাড়িতে আনন্দের আমেজ। সায়লা বেগম আর ইরা বেগম খুশ মেজাজে আছেন। তাদের দুই ছেলের বিয়ে একসাথেই করাতে পারবেন। ইরা বেগম বললেন ভাবি আমি আগেই বলে দিচ্ছি অনাহিতা আমার ছেলের বউ, আর এই মেঘা তোমার।
সায়লা বেগম হেসে বলে, ওই বদ ছেলে আমার চাইনা। তুই রেখে দে। আর রইলো মেঘার কথা মেয়েটা লক্ষী আমি ওকে শিখিয়ে পরিয়ে মনের মতো করে নেবো।
ইরা বেগম বললেন, বারোটা ছাড়িয়ে গেলো সারা এখনো আসলো না কেনো।
সায়লা বেগম তানিম কে ডাকলেন। তানিম নিচে আসতেই সায়লা বেগম বললেন, কি-রে সারা এখনো আসছে না কেনো?
– এই কথা বলার জন্য ডেকে আনতে হয়! একটা কল করে জিজ্ঞেস করে নাও।
ইরা বেগম বললো, তুই দে কল।
তানিম সারার নাম্বার ডায়েল করছে। কিন্তু রিং হতে হতে কেটে যাচ্ছে। ওপাশ থেকে রেসপন্স করছে না।
তানিম চিন্তিত হয়ে বলে, রিসিভ কেনো করছে না। বড় আম্মু সারা কি গাড়ি নিয়ে যায়নি?
– হ্যাঁ গাড়ি নিয়েই তো বের হলো। তুই এক কাজ কর, ড্রাইভার জুয়েল কে কল কর।
তানিম ড্রাইভারের নাম্বার ডায়েল করবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো,।
#চলবে
আমি তো আগেই বলেছি একদিন পরপর গল্প দেবো।
নিয়মিত গল্প দেয়া সম্ভব না।
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰