তোর শহরে প্রেম পর্ব -১৭

#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-১৭

তন্ময়কে মাটিতে মাদুর পেতে বসতে দিলো। প্লেটে খাবার বেরে দিয়ে খেতে বললো।কিন্তু সমস্যা হলো জিন্সটা এতো ফিট যে নিচে বসতেই পারছেনা।
সাজু বেপারি বললো, হালিমা একটা লুঙ্গি এনে দাও এসব পরে নিচে বসতে পারবে না। লুঙ্গির কথা শুনেই তন্ময় বললো, না আঙ্কেল আপনি আমাকে প্লেটে খাবার দিন আমি দাঁড়িয়ে খেয়ে নিচ্ছি।

– কেনো লুঙ্গি পরতে সমস্যা কোথায়? আজ কালকার যুগের পোলাপান নিজের সংস্কৃতি ভুলে কি সব ভাব নেয়। দেহো বাবা তোমাকে আজ লুঙ্গী পরতেই অইবো। যাও হালিমা লুঙ্গী নিয়ে আসো।

তন্ময় মনে মনে বলছে যেমন ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে তেমন তার বাপ।

হালিমা বেগম লুঙ্গী এনে দিয়ে বলে, পরতে না চাইলে হেরে জোড় কইরেন না।

– তুমি চুপ থাহো। আমার মেয়ের জামাই লুঙ্গী পরতে পারে না। এইটা কোনদিন মানমু না। আহো আমি নিজে পরাইয়া দিতাছি।

অনিচ্ছা থাকা সত্বেও লুঙ্গী পরে নিলো তন্ময়।
খাবার শেষ করে আব্দুল্লাহর সাথে শুয়ে পরলো।

সাজু বেপারি হালিমা বেগম কে বলল, পোলাডা আমার পছন্দ অইছে। তয় হের মায়ের লগে কথা কইতে পারলে ভালো লাগতো। আমি কইছিলাম কি তুমি আর আমি হের লগে ঢাকা যামু সব খোঁজ খবর লইয়া আমু। সব ঠিকঠাক থাকলে মাইয়াডারেও সাথে কইরা নিয়া আসমু। বিয়ার পর একেবারে নিয়া যাইবো।

– তোমার রাগ কমছে

– রাগ রাগের জায়গায় আছে। তয় বিয়া দিতে পারলে শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু।

______________________________________________.
অনুর চোখে ঘুম নেই। মথায় এক গাদা টেনশন। ওই তন্ময় কি-না কি বলেছে। বাসায় কি হচ্ছে তা জানতে পারলে ভালো লাগতো।

মাহি অনুর মোবাইল দিয়ে এফবি আইডি ওপেন করে
অনুকে বলে, দেখ তোর আইডির নাম কি দিয়েছি।

-কিসের আইডি তুই কি করছিস এসব?

– আরে আইডির নামটা তো দেখ।
– কই দেখি। এই নে দেখ, এটা কোন নাম হলো!

– কি সুন্দর নাম হিতাময়।

– তোর মাথা আমি আছি আমার টেনশনে সে আছে তার রঙে।

– যাই বলিস বিয়ে হলে আমি খুশিই হবো। কারণ তোর ওই ময়ের একটা বন্ধু আছেনা আবির তার সাথে নিজের একটা হিল্লে করবো।

-তোর মাথায় এসব আসছে কোথা থেকে আমি টেনশনে শেষ। যেখানে আমি বিয়ে করতে চাইছিনা। সেখানে সে নিজের হিল্লে করে।

– তোর কেনো চাইতে হবে।আর তাছাড়াও মেয়েরা বিয়ে করে না। ছেলেরা বিয়ে করে। আর মেয়েদের বিয়ে দেয়।

– তোর যত্তসব ফাউল লজিক তোর কাছেই রাখ। আর শোন কিছু একটা করে বিয়েটা ভাঙ্গার প্লানিং কর।

– আমি করবো বিয়ে ভাঙ্গার প্লানিং মাথা খারাপ নাকি। আমি তো চাই বিয়েটা হোক। তোরা দু’জন হিতাময় হয়ে থাক।

– তুই না ভাঙ্গলে আমি ভাঙ্গবো। এবার দেখ আমি কি করি।

– তোর বাবা যদি রাজি হয়ে যায় তো?

– তো তোকে বলবো না আমি কি করতে চলেছি। তুই শুধু দেখতে থাক।

মাহি বললো এই দেখ এখানে তিনটে ভিডিও। আর ফোল্ডারে লেখা। #তোর_শহরে_প্রেম। ওপেন করবো।

অনু মোবাইলটা মাহির হাত থেকে নিয়ে বলে,এটা অন্যের মোবাইল তাই এসব আমরা দেখবো না। তোর কিছু দেখতে ইচ্ছে করলে, তুই ইউটিউব থেকে দেখ। দেখিস না কত নেট আছে। দেখে শেষ কর।

– আজ রেখে-দে আগামীকাল দেখবো।

অনুর মন চাইলো একবার দেখতে কি আছে ভিডিও তে। আবার ভাবলো যদি পার্সোনাল কিছু থাকে। সেটা ভেবে রেখে দিলো।
খুব মনে পরছে অনুর কল্পমানবের কথা। মনে মনে বলছে, আপনি এভাবে স্বপ্নের মতো এসে চলে গেলেন কেনো স্বপ্ন পুরুষ। আমি আপনাকে কোথাও আর কিছু পেলাম না। কোন শহরে আপনার বাস। একবার যদি সেই শহরে প্রবেশ করতে পারতাম। তাহলে একদম আমার বেনীকরা চুলের মতো বেঁধে রাখতাম হৃদয়ে। আপনার হয়তো আমার কথা মনেও নেই।
না আমি আপনার চেহারা দেখলাম আর না আপনি আমার তবুও কেমন করে আমার হৃদয়টা সাথে করে নিয়ে চলে গেলেন। যদি কখন দেখা হয় আপনার সাথে! আপনার দেয়া শার্ট আপনাকেই ফেরত দিয়ে বলবো,আপনি অপরাধী কল্প মানব। আপনার অপরাধ ক্ষমা যোগ্য নয়। এই হৃদয়হীন মেয়েটার হৃদয় যে আপনাতেই সপে দিয়েছে।কি অদ্ভুত তাইনা। যাকে দেখলাম না জানলাম না তার ব্যক্তিত্বের মায়ায় এভাবে পরে রইলাম। আচ্ছা স্বপ্ন পুরুষ আপনি কি বলতে পারবেন? এটা কি ভালোবাসা? নাকি মায়ার বাঁধন?

এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে অনু।

______________________________________________
গেট খুলে দিতেই তানিম আশ্চর্য হয়ে বললো,এসব কি সারা?
– আগে ভেতরে আসতে দাও তারপর বলছি। তানিম সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো। সারার হাত রায়হানের হাতের মধ্যে বন্দী। রায়হান হাত ছেড়ে দিতে চাইলে সারা আর একটু শক্ত করে ধরে।

গুটিগুটি পায়ে সবার সামনে এসে দাঁড়ালো।
ইরা বেগম চেচিয়ে বললেন, তোমাকে বলেছিলাম না ভাবি আমার ছেলে মেয়েকে আমি সঠিক ভাবে মানুষ করতে পারিনি। আজ নিজের চোখে তার প্রমাণ দেখো। শেখ বাড়ির মেয়ে হয়ে রাতদুপুরে পর পুরুষের হাত ধরে বেশরমের মতো সবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

সায়লা বেগম বললেন ছোট তুই একটু নিজেকে স্থীর রাখ। আগে সবটা শুনতে দে।

– আর কিছু শোনার বাকি আছে। নিজের চোখেই তো দেখতে পারছো।

– বললাম তো ছোট তুই চুপ থাক।

– সারা আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই! এসবের মানে কি?

– সারা নিজেকে প্রস্তুত করে বললো, বড় আম্মু আমি রায়হান ভাইকে ভালোবাসি। আরো আগে থেকেই। আর সারাজীবন তার সাথে থাকতে চাই?

তানিম নিজেকে আর সংযত করতে পারলোনা ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো সারার গালে। কড়া গলায় বললো,ছোট থেকে কেউ তোর কোন আবদার অপূর্ণ রাখেনি। যখন যা বলেছিস তাই পেয়েছিস তাই আজ এসব বলার সাহস পেয়েছিস।

রায়হান কিছু বলবে। সারা রায়হানকে থামিয়ে দিয়ে বলে, আপনার কোন কথা নেই, যা বলার আমি বলবো। তোমার যদি মনে হয় আমি অন্যায় করছি তাহলে আরো কয়েকটা থাপ্পড় মারো। তবে তার আগে আমার কথাটা শুনতে হবে।

সায়লা বেগম বললেন, বলো তোমার কথা শুনছি।

– বড় আম্মু আমি যেই কথা গুলো বলবো হয়তো তোমাদের পছন্দ হবেনা। তবে আমি দুঃখিত তবুও বলতে হচ্ছে। যেদিন তন্ময় ভাইয়া বললো, অনাহিতা কে বিয়ে করবো। তোমরা সবাই মেনে নিলে।কোন প্রশ্ন তুললে না কেমন মেয়ে কোথায়থেকে এসেছে? বংশ পরিচয় কি? কিছু জানার প্রয়োজন মনে করোনি। আমি যখন বলছি রায়হান কে ভালোবাসি তার সাথে সারা জীবন কাটাতে চাই? তখন তোমাদের ইগো, তোমাদের সমাজ,তোমাদের প্রেস্টিজ সব মনে পরে গেলো। কারণ আমি মেয়ে আর তন্ময় ছেলে। অথচ ছোট থেকে বড় আব্বু সম সময় বলতো আমার সব ছেলে মেয়েকে আমি সমান চোখে দেখি। তাহলে এই কি সমান চোখে দেখা? যেই মানুষটা তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে সামান্য কাজের মহিলার ছেলে এটাই তার অন্যায়?

তার বাবার নাম নেই, গাড়ি নেই বাড়ি নেই, এটাই অন্যায়? তাহলে বাবা সব সময় এটা কেনো বলতো, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই! আর বড় আম্মু তুমিই তো বলেছিলে তোর কোন পছন্দের মানুষ আছে? আজ যখন সাহস করে নিজের মানুষটার খারাপ সময় তার হাত ধরে তোমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। তখন তোমরা আমার কাছে তার অসহায়ত্বের খবর না জানতে চেয়ে। আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছো।আমি তো খুব আশা নিয়ে এখানে এভাবে এসেছিলাম। যদি তোমাদের উপর ভরসা না থাকতো তাহলে বিয়ে করে তার সাথে তার ঝুপড়িতে চলে যেতাম। তোমার দরজায় আসতাম না। আমি এই মূহুর্তে তোমাতের ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। ভাবছো তোমরা আমাকে ত্যাগ করার আগে আমি তোমার ত্যাগ কেনো করছি?

এতোক্ষন সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো আদিল হাসন আর আদিব হাসন।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here