তোর শহরে প্রেম পর্ব -২০

#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা

#পর্ব২০ ( ধামাকা)

তন্ময় বললো, শালাবাবু মানুষজনকে আর কিছু বলতে পারবো না। দরকার পরলে খুঁজে বের করুক।

-ভাই আমার বয়েই গেছে খুঁজে বের করতে।

আব্দুল্লাহ বলল, তোমরা চুপ না থাকলে আমাকে রেখে যাও। আমি তোমাদের সাথে যাবো না।

দু’জনেই চুপ হয়ে রইলো, কিছু সময়ের মধ্যে গাড়ি শেখ বাড়িতে পৌঁছালো,ড্রাইভারের পাশের সিটে আব্দুল্লাহ বসে ছিলো। আব্দুল্লাহ আগে নামলো। তন্ময় নেমে এসে অনুর পাশের দরজা খুলে দিলো। অনু কে অবাক করে দিয়ে তন্ময় অনুর হাত ধরে বলে, একদম হাত ছাড়ার চেষ্টা করবেনা। এভাবে যদি যেতে সমস্যা হয় তাহলে কোলে তুলে নেবো।

অনু কথা না বাড়িয়ে তন্ময়ের হাত ধরেই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।

অনু আর তন্ময়কে এক সাথে হাতে হাত রেখে প্রবেশ করতে দেখে সবাই খুশী হয়ে যায়। সায়লা বেগম ছুটে এসে বলে, বাহ আমার বউমাকে তো একদম পরির মতো লাগছে। কারো নজর না লাগুক। সায়লা বেগম নিজের হাতের বালা খোলার আগেই, ইরা বেগম অনুর হাতে নিজের বালা পাড়িয়ে দিয়ে বলে, সারাজীবন এভাবেই পাশে থেকো। তোমাদের দু’জনকে খুব মানিয়েছে।

তন্ময় অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে, আম্মু তোমরা আরেক জনকে তো খেয়াল করছো না। এই হলো আমার একমাত্র শালাবাবু।

ইরা বেগম বললেন, কি নাম তোমার বাবা।

– আব্দুল্লাহ।

– তোমার মতোই মিষ্টি তোমার নাম। আসো আমার সাথে।

অনু আর আব্দুল্লাহ সোফায় বসেছিলো এমন সময় মেঘা অনুর পাশে বসে বলে, হায় আমি মেঘা।

-আসসালামু আলাইকুম। আমি অনাহিতা

– আমি সম্পর্কে তোমার বড় জা।

– তানিম ভাইয়ার ওয়াইফ।
– এখনো হইনি তবে খুব তাড়াতাড়ি হবো। আচ্ছা একটা কথা বলো সবাই তোমাকে এতো ভালোবাসে কেন।

– অনু বোকার মতো মেঘার দিকে তাকিয়ে আছে।

অনুকে চুপ থাকতে দেখে মেঘা বলে, তুমি একটু আমাকে তোমার কিছু গুন শিখিয়ে দেবে।

সায়লা বেগম এতোক্ষণ সব শুনছিলেন, এবার মেঘার পাশে বসে নিজের হাতের বালা দু’টো মেঘার হাতে পরিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি তোমার মতো থাকো আমরা আমাদের মতো তোমাকে ভালোবাসবো,এই বাড়িতে ভালোবাসায় কোন কমতি পাবে না।
মেঘা সায়লা বেগম জড়িয়ে ধরলো। সাযলা বেগম অনুকেো জড়িয়ে ধরে বললেন আজ থেকে চার মা মেয়ে মিলেমিশে হাসি আনন্দে কাটিয়ে দেব বাকি জীবন।

মেহমানরা সবাই এসে উপস্থিত হয়েছে। সারা, অনু, মেঘা তিনজন একসাথে বসে আছে। অপর একটা সোফাতে রায়হান, আর আব্দুল্লা বসে আছে।

এমন সময় আনহা,আয়ান গানের তালে নাচা শুরু করলো তাদের সাথে রয়েছে তানিম, তন্ময়।

Salaam -e-ishq এই গানে কিছু সময় নাচার পর।

লাস্টের দিকে সবাই একসাথে নাচলো।

নাচানাচি শেষ হতেই কাজি সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করলেন। রায়হান আর সারার বিয়ে শেষ হতেই তন্ময় বললো কাজি সাহেব এবার আমার বিয়েটাও সেরে ফেলুন। তন্ময়ের কথা শুনে সবাই বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।

এরমধ্যেই সাজু বেপারি আর হালিমা বেগম এসে উপস্থিত হলো।

আদিব সাহেব বললেন, কি হচ্ছে তন্ময় এখানে কোন সার্কাস চলছে না।

– বাবা ইনি হলেন আমার হবু শ্বশুর আর তার পাশে আমার নতুন মা। মানে হবু শ্বাশুড়ি।আমি এনাদের পারমিশন নিয়েই আজ বিয়েটা করতে চাইছি।

আদিল সাহেব সাজু বেপারি দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকালেন।

সাজু বেপারি বললেন আমার কোন আপত্তি নেই বেয়াই মশাই।

অনু যেনো পাথুরে মুর্তি এই মূহুর্তে তার কি করা উচিৎ বুঝতেই পারছে না। কি হচ্ছে এসব। তন্ময় অনুর কাছে এসে অনুর হাত ধরে কাজি সাহেবের নিকট আসলো। কাজি সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো, বিয়ে পরানো শুরু করুন। আমি তন্ময় হাসান শেখ পিতা আদিল হাসন শেখ। সজ্ঞানে অনাহিতা বেপারি পিতা সাজু বেপারির একমাত্র কন্যাকে বিবাহ করিতে চাই।

কাজী সাহেব সব লিখে নিয়ম মতো বিয়ে পরানো শুরু করলেন।
তন্ময় কে কবুল বলতে বলার সাথে সাথে কবুল বলে দিলো। কাজী সাহেব যখন অনুকে কবুল বলতে বললো, তখন অনু নিশ্চুপ। কাজী সাহেব বার কয়েক বললো, “বলো মা” কবুল।

অনুর মুখ দিযে যেনো কোন কথা বেরুচ্ছে না। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কি হচ্ছে এসব। তন্ময় অরুর হাতের উপর হাত রাখলো। শীতল কণ্ঠে বললো,কথা দিচ্ছি তোমাকে নিরাশ করবো না। আমাকে একবার বিশ্বাস করে কবুল বলে দেখো।

অনুর মা হালিমা বেগম মেয়ের পাশে এসে বলে, কি হলো তুই চুপ করে আছিস কেনো? আজ নয়তো কাল এটা তো হওয়ারি ছিলো। এটাই তো মেয়েদের ভাগ্য। বলে ফেল কবুল নিজের করে নে এক নতুন পরিবারকে । প্রতিটি মেয়ের জীবনে এই দিন আসে। মেনে নেয়া সহজ না হলেও এটা যে মেনে নিতেই হবে।

অনু কন্না মিশ্রিত কন্ঠে অস্ফুটস্বরে বললো কবুল।

বিয়ে সম্পন্ন হতেই সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।

এমন সময় মেঘা সয়লা বেগমের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, আম্মু আমার বিয়েটাও আজ করিয়ে দাও

সায়লা বেগম সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলরেন, দুটো বিয়ে যখন হয়েই গেলো। তাহলে তৃতীয় বিয়েটাও সেরে ফেলো।

তানিম বোকার মতো বলে তৃতীয় বিয়ে মানে?

মানে তোর আর মেঘার বিয়ে। সায়লা বেগম দুজনকে একসাথে বসিয়ে দিয়ে বলে, কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।

অবশেষে একে একে তিন তিনটে বিয়ে সম্পন্ন হলো।
আয়ান এসে বলে বড় আম্মু তাহলে চতুর্থ বিয়েটাও সেরে ফেলো।

আয়ানের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।

অনু একটা রুমে মাহিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে।মাহি বলছে কাঁদছিস কেনো সেটা বল।

– তো কি হাসবো সারাজীবন ওই নিমপাতার সাথে থাকতে হবে।

– শোন একটু সময় দে সম্পর্কটায় দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

– এমন কেন হলো মাহি। আমি
তো এজন্য ঢাকাতে আসিনি। মাহি আমি কিন্তু আজ এ বাসায় থাকবো না। তোদের সাথে যাবো।

– কি বলছিস এসব মাথা ঠিক আছে। এখন এটাই তোর নিজের বাসা।

– তুই না নিলে আমি যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাবো।

– আচ্ছা আমি দেখছি ব্যবস্থা করা যায় নাকি।

______________________________________________
তন্ময় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। মনে মনে বলছে, এইভাবে তোমাকে নিজের করতে চাইনি। কিন্তু আমা নিরুপায়। তোমাকে যখন একবার খুঁজে পেয়েছি তখন আর হারাতে চাইছি না। তন্ময়ের মনে পরলো সেদিন রাতের কথা।

অতীত……
ট্যুরে গিয়েছিলো তন্ময় আর তার বন্ধুরা। প্রায় মধ্য রাতের দিকে সবাই মিলে আ*গু*ন জ্বালিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো।এমন সময় কোন মেয়ের আওয়াজ কানে ভেসে আসে প্লিজ হেল্প। তন্ময় বললো দেখিতো কেউ বিপদে পরলো নাকি।

বাকিরা বললো বদ-দে আমি শুনেছি রাতের বেলা ভূত প্রেত এমন করে ডাকে। এই নতুন জায়গা আমাদের দরকার নেই দেখার।

তন্ময় বললো, তোরা না গেলে না যা।আমি যাবো। যদি ভূত হয় তাহলে না হয়, জীবনে প্রথম বার ভূত দর্শন হয়ে গেলো। বলেই মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে হাঁটা শুরু করলো।

অনু বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে কবরস্থানে এসেছিলো। সেখান থেকে একটা পাতা নিয়ে আবার ফিরে যাবে। সব ঠিকঠাক মতো হয়েও গেছে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যখন মাঝ রাস্তায় দুই নেশাগ্রস্তের কবলে পরলো। শরীরে ওড়নাটাও নেই পরিধানের জামাটাও কিছু অংশ ছিড়ে গেছে। তবুও এলোমেলো পায়ে দৌড়ে ছুটতে লাগলো। তন্ময় বেশখানিকটা সামনে যেতেই কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে বলে প্লিজ আমাকে বাঁচিয়ে নিন। পর মুহূর্তে মনে হলে এই লোকটাও যদি খারাপ হয়। অনু বললো প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করবেন না।
তন্ময় বললো,চুপ থাকুন আমি কোন খারাপ লোক নই। সামনের দিক থেকে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে তন্ময় নিজের মোবাইলের ফ্লাশ অফ করে দিলো। কিছু সময় পর বললো,এবার ছাড়ুর লোক গুলো চলে গেছে।

অনু তন্ময়কে ছেড়ে দিলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না স্পষ্ট তবুও জামার ছেড়া অংশ দিয়ে অনুর ফর্সা শরীর আবছা আবছা দেখা যাচ্ছিলো। তন্ময় নিজের শার্টাটা খুলে অনুকে পরিয়ে দিলো। অনু একবারের জন্য ও সামনের দিকে তাকিয়ে তন্ময়ের চেহারা দেখতে পারলো না। তার আগেই হারিকেন হাতে সাজু বেপারি সেখানে উপস্থিত হয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেলো অনুকে। তন্ময় এখনো তাকিয়ে আছে অনুর চলে যাওয়ার দিকে।
আবির এসে বললো ভাবলাম ভূতের ভিডিও শুট করবো তা- না হলো রোমান্টিক পিকচার। তন্ময় ক্যামেরা নিজের কাছে নিয়ে নিলো।

ঢাকা আসার পর বারবার ওই মেয়ের কথা মনে পরতে লাগলো।কিন্তু হৃদিতা থাকায় তা কখনো পাত্তা দেওয়া হয়নি। হৃদিতা চলে যাওয়ার পর একদিন হুট করে ভিডিওটা চোখের সামনে পরলে, তারপর থেকে বার কয়েক এই ভিডিওটা দেখেছে তন্ময়। এমন কি একদিন আবিরকে নিয়ে সেই গ্রামে যেয়েও খোঁজ করে এসেছে অনুর।না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে।
এসব ভাবনার মাঝেই তন্ময় শুনতে পেলো নিচে ডোল, আর শানাই বাজছে। দ্রুত নিচে এসে সামনে বউ সেজে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে সবার চোখে বিস্ময়। তবে তন্ময় বাঁকা হেসে বলে তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম সুইটহার্ট।

#চলবে

দেখতে দেখতে প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এই পর্যন্ত কেমন লাগলো জানাবেন।
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here