#তোর_হতে_চাই
#Ariyana_Nur
#Part_09
অন্ধকার রুমে হাটুতে মুখ গুজে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলছে আনিশা।পাশে পরে থাকা ফোনে আনিশা আর তাহমিদার দুষ্টুমিষ্টি,খুনসুটিভরা পিক দিয়ে একটা ভিডিও প্লে হচ্ছে।যেখানে রয়েছে দুজনে হাজারো স্মৃতি।আনিশা পুরোন স্মৃতিগুলো মনে করছে আর ডুকরে কেদে উঠছে।আজকে তাহমিদার থেকে সে যে ব্যবহার পেয়েছে এমন ব্যবহার আনিশা কখনও আশা করেনি।আনিশা শত চেষ্টা করেও কফি হাউজে তাহমিদার করা ব্যবহার কথা ভুলতে পারছে না।
ফ্লাসব্যাকঃ
তাহমিদা নিজেকে পরিপাটি করতে করতে ব্যাস্ত গলায় বলল…….
—আনু তুই উঠে অন্য টেবিলে গিয়ে বস তো।ও এসে তোর সামনে কথা বলতে সংকোচ বোধ করবে।
তাহমিদার কথা শুনে আনিশা চোখ রাঙিয়ে তাহমিদার দিকে তাকালো।কিছু কড়া কথা বলার আগেই তাহমিদা বলল…..
—শোন আনু!তোর যা বলার সব কথা পরে বলিস এখন আমি তোর কোন কথাই শুনতে চাচ্ছি না।বিবেক খাটিয়ে বোঝার চেষ্টা কর,দুদিন পর আমাদের বিয়ে।বিয়ের আগে তার সাথে আমার অনেক পার্সনাল কথা আছে যা আমি সরাসরি তাকে বলতে চাই।তাই এখন তুই আমাদের মাঝে থেকে আমাদের ডিস্টাব না করলেই খুশি হব।তাছাড়া ও ওর ক্লাস ছাড়া বাকি সবার সাথে পরিচিত হতে কথা বলতে তেমন একটা পছন্দ করে না।
তাহমিদার কথা শুনে আনিশা অবাক হয়ে তাহমিদার দিকে তাকিয়ে রইল।এই তাহমিদাকে আনিশার কাছে বড্ড অচেনা লাগছে।এই তাহমিদা আর একটু আগের তাহমিদার সাথে দিন রাতের ব্যবধান খুজে পাচ্ছে আনিশা।আনিশা নরম গলায় বলল…….
—তাহলে আমায় নিয়ে এসেছিস কেন?
তাহমিদা তাড়া দিয়ে বলল……
—এতো কথা বলছিস কেন তুই?যেতে বলেছি যা না।তোকে এনে তো আর শুধু শুধু বসিয়ে রাখি নাই।দু’দু কাপ কফি খাইয়েছি।তাড়াতাড়ি অন্য টেবিলে যা।
তাহমিদার কথার প্রতি উওরে আনিশা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো।কেননা ওর উডবি হাজব্যান্ড অনেকটা সামনে চলে এসেছে।আনিশা তাচ্ছিল্য হেসে ব্যাগ থেকে একটা পাচশত টাকার নোট বের করে টেবিলের উপর রেখে বলল…….
—ট্রিটটা আমার তরফ থেকে।গুড লাক।
কথাটা বলে আনিশা বড় বড় পা ফেলে কফি হাউজ থেকে বের হয়ে যায়।মনের মাঝে এক রাশ কষ্ট নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
তাহমিদা বরবারই একজন নিজসার্থপর মেয়ে।নিজের সার্থ হাসিল করার আগে সে সবার সাথে একেবারে পানির মত মিশে যেতে পারে।আর সার্থ শেষ হলে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতেও দুবার ভাবে না।তাহমিদার বাড়ি শহরের বাহিরে থাকায় তাহমিদাকে হোস্টেলে থেকে লিখাপড়া
করতে হয়।শহরে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন ও তেমন তার নেই।আনিশার সাথে বন্ধুত্ব করার পর আনিশার ফ্যামিলির লোকদের সাথেও তাহমিদার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।তাহমিদাকে আনিশা সব সময়ই তাহমিদাকে পড়ালিখা, টাকা-পয়সা, সব দিক দিয়ে যতটুকু সাধ্যে কুলিয়েছে সাহায্য করেছে।এমনকি তাহমিদার একা হোস্টেলে থাকতে অসুবিধা হয় দেখে আনিশা বাড়ির সবার সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে তাহমিদার সাথে হোস্টেলে থেকেছে।তাহমিদার যখন যেটা করতে বলেছে মুখে কিছুটা না না করেও দুচারটা কথা শুনিয়েও সেটা হাসিমুখে করে দিয়েছে।আনিশা কিছুটা দুষ্টু,পাগলাটে টাইপ মেয়ে হলেও তার মনটা অনেক ভালো।মনের মাঝে কোন প্যাচ নেই।হাসিমুখে কেউ দুটো কথা বললেই সহজে গলে যায়।এতোদিন তাহমিদার,আনিশাকে দরকার ছিলো তাই সে হাসিমুখে আনিশার সকল পাগলামো মুখ বুঝে সহ্য করে গেছে।দুদিন পর তাহমিদার বিয়ে।বিয়ের পর তাকে আর হোস্টেল থাকতে হবে না।তাছাড়া তার কোন সমস্যা,সুবিধা-অসুবিধা হলে তার বরই সব সমাধান করতে পারবে।তাই এখন আর আনিশার মত মেয়ের পাগলামো সহ্য করার কোন মানেই হয় না।
(তাহমিদার মত এখনো এমন অনেক ফ্রেন্ড আছে,যারা এমন একটা ভাব নিয়ে থাকে যে,তারা নিজের ফ্রেন্ড এর জন্য নিজের কলিজা ছিড়ে দিয়ে দিতে পারবে।কিন্তু সেই ফ্রেন্ডগুলোই কখন যে ফ্রেন্ডদের এর কলিজায় আঘাত করে চলে যায় সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।)
________
আদিয়াত অফিস থেকে ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। রুমে ঢুকেই ফ্যানের সুইচ অন করে দিল। বেডে এক পাশে হাতের থাকা অফিসের ব্যাগটা রেখে শার্টটের উপরের দুটো বোতাম খুলে ফ্যান বরাবর বেডে বসে পরল।ঘামে আদিয়াতের শার্ট চিপচিপে ভিজে রয়েছে।আদিয়াত দু’হাত পিছনে দিয়ে মাথা উচু করে চোখ বন্ধ করে বসে গায়ে হাওয়া লাগাতে লাগলো।আজকে শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার।কিছুক্ষন একি ভাবে বসে থাকার পর রিনঝিন শব্দ কানে আসতেই আদিয়াত চোখে খুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।চোখের ভুল ভেবে চোখ বন্ধ করে পূনরায় আবার চোখ খুলে সামনে তাকাল।না আদিয়াত চোখে ভূল দেখছে না।সে যা দেখছে সব ঠিক দেখছে।তোহফা সত্যি সত্যি তার সামনে অপ্সরী সেজে দাড়িয়ে রয়েছে।তোহফা আজ লাল মোটা পারের কালো শাড়ি পরেছে।সাথে দু হাত ভর্তি কাচের চুড়ি।সাথে হালকা একটু সাজ।এতেই যেন তোহফাকে আদিয়াতের কাছে অপ্সরী লাগছে।তোহফা,আদিয়াত কে নিজের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে হাতে থাকা শরবতের গ্লাসটা আদিয়াত এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।আদিয়াত বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে না পেরে তোহফার দিকে তাকিয়েই আনমনে বলে উঠল……
—মাশাআল্লাহ।একদম অপ্সরী লাগছে।
তোহফার হাত এতোক্ষন এমনিতেই মৃদু কাপছিলো।আদিয়াতের কথা শুনে তোহফার হাত আরো কাপতে লাগলো।তোহফা মাথাটা আরেকটুকু নিচু করে মিনমিনে গলায় বলল…..
—ঠান্ডা লেবুর শরবত।
তোহফার কথা আর চুড়ির শব্দে আদিয়াতের ঘোর কাটে।আদিয়াত তোহফার কাপতে থাকা হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বলল……
—ধন্যবাদ।
তোহফা কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলে আদিয়াত বলল…..
—শোন!
আদিয়াতের ডাকে তোহফা ঘুরে দাড়াতেই আদিয়াত পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে দিয়ে তোহফার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—বিচ্ছু বাহিনীর কাউকে দিয়ে আমার অপ্সরীর কিছু ছবি তুলে নিও।আমার সাথে ছবি তুলতে তো সে লজ্জা পাবে তাই আপাতত নিজের ইচ্ছাটাকে চাপা দিয়ে রাখলাম।
কথাটা বলে আদিয়াত নিজেই ফোন তোহফার হাতে গুজে দিয়ে ওয়াসরুমের চলে গেলো।তোহফা বোকার মত ফোন হাতে নিয়ে আদিয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।আদিয়াত কিসের ছবি তুলার কথা বলল তা ভাবতে লাগল।আদিয়াতের কথার মানে বুঝতে পেরে তোহফার মুখে লাজুক হাসি ফুটে উঠল।তোহফা তড়িঘড়ি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রশন করল।সাথে মনে মনে পণ করল আজ সে আদিয়াতের সামনে আর ভুলেও আসবে না।কিছুতেই না।দরজার সামনে যেতেই তোহফার হাতে থাকা আদিয়াতের ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে ‘তোহফার বাবা’ লিখা নামটা দেখে তোহফা থমকে দাড়িয়ে গেলো।রিং হয়ে কল কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বার রিং হতেই তোহফা হুস এল।তোহফা কলটা রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই পূনরায় কলটা কেটে গেল।তাহের রহমান আদিয়াতকে কেন ফোন দিয়েছে? আদিয়াতকে ফোন দেওয়ার পিছে তার কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা?ফোনের দিকে তাকিয়ে এমন নানান কথা ভাবতে ভাবতে পূনরায় ঐ নাম্বার থেকে একটা ভয়েস মেসেজ এল।তোহফার আদিয়াত এর ফোনের পাসওয়ার্ড জানা থাকায় কাপাকাপা হাতে ফোনের লক খুলে ভয়েস মেসেজটা প্লে করল।ভয়েস মেসেজে তোহফা যা শুনল তাতে তার বাবার প্রতি তার ঘৃণার মাত্রা আরো কয়েকগুন বেড়ে গেল।
_______
আদিয়াত লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হতেই দেখে তোহফা বেডের এক কোনে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।আদিয়াত কোন কথা না বলে হাতের তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে চলে গেলো।তাওয়াল বেলকানির রশিতে ঝুলিয়ে রেখে এসে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসল।তোহফা আদিয়াতের উপস্থিতি বুঝতে পেরে যেভাবে বসা ছিলো সেভাবে থেকেই কাপাকাপা গলায় বলল……
—আমি ডিভোর্স চাই।
তোহফার কথা শোনা মাত্রই আদিয়াত সোজা হয়ে বসে মৃদু চেচিয়ে বলল…….
—মানে?কি সব বলছ তুমি?
তোহফা চোখ মুখ শক্ত করে চেচিয়ে বলল……
—মানে আমার ডিভোর্স চাই।
#চলবে,
(ভূলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রাইটিং ব্লকে পরেছি।এতটুক লিখতেই অনেক সময় লেগে যায়।রি-চেইক করা হয়নি।ধন্যবাদ)