তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায় পর্ব ৩৫+৩৬

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৫
.
–“ভাই আমি বেদ কে ভালোবাসি আর বেদকেই বিয়ে করতে চাই। মাথা নিচু করে বলে ওঠে সারা।
.
. সবাই একসাথে রাতের ডিনার করছিলো। আর সেখানেই সারা এসে বোমা টা ব্লাস্ট করে। সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে তার সামনে দাঁড়ানো সারা কে দেখছে। সারিফ সবে মুখে খাওয়ার দিয়ে ছিল সারার কথা শুনতে গলায় আটকে যায়। আর বাকিরা খাওয়া রেখে সবাই এক দৃষ্টিতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সারা কে দেখছে। যেনো মনে হচ্ছে তারা ভুল শুনেছে সারার মুখে এই কথা যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
.
. সাঁঝ আগে থেকেই জানতো এই বাড়িতে কি চলছে। কোথাকার জল কতদূর এগিয়ে গেছে। বেলা খাওয়া রেখে সাঁঝ এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে সাঁঝ এর অভিব্যক্তি কি হতে চলেছে। বেলা তাকে দেখছে বুঝতে পেরেই সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আছে। সাঁঝ কোনো কিছু না বলে আরো চোখ মুখ গম্ভীর করে নেয়। আর বাকিরা সবাই চুপচাপ একে অপরের মুখ দেখে ইশারা করতে থাকে। তারা ভাবতেও পারেনি সারা এত বোল্ড।
.
–“চুপচাপ খেতে বসে যাও। সাঁঝ কঠিন ভাবে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর কথা আর কঠিন গলা যেনো ওখানে থাকা বাকিদের ও চমকে দিয়েছে। তারা আর কোনো কথা বলার সাহস পাইনি সারা ও চুপচাপ বসে পড়ে। শান্তা জাকিয়া রুহি আলিয়া সবাই করুন চোখে একবার সাঁঝ আর একবার সারা কে দেখছে তারা বুঝতে ও পারছে না আগে কি হতে চলেছে।
.
–“সারিফ সব ছেলে গুলো কে আধঘন্টার মধ্যে আমি ড্রইং রুমে দেখতে চাই। আর সাথে তোমাদের কেও। ওখানে থাকা বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে। তারপরেই টেবিল ছেড়ে উঠে রুমে চলে যায়।
.
. সবার মধ্যে যেনো এবার হকচকিয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারছে না যে সাঁঝ কি করতে চাইছে।

—————
.
. ড্রইং রুমে বসে আছে সাঁঝ।তার পাশেই বসে আছে বেলা। আর পর সব লাইন দিয়ে বসে আছে বাকি মেয়ে গুলো। সবার চোখ মুখ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। বেলা বসে বসে শুধু একবার বাকিদের দিকে তাকায় আর একবার করে সাঁঝ কে ইশারা করে। হাতের ওপর হাত রেখে চিমটি কাটে। কিন্তু সাঁঝ গম্ভীর ও নিরুত্তাপ হয়ে বসে আছে দৃষ্টি সামনের দিকে। সে না বেলার দিকে দেখছে আর না বেলার করা কাজে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
.
. হটাৎ করেই বেদ ওম নিশান ওদের সাথে আকাশ ও হন্তদন্ত হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। সব গুলো হাপাতে থাকে। তারা বাড়ির পরিবেশ এমন গম্ভীর দেখে ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে দেখে।
.
–“কি হয়েছে এত জরুরি তলব কেনো তাও এত রাতে? নিশান বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে ওঠে।
.
. বাকিদের মুখে কোনো কথা নেই সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে।
.
–” আরে হয়েছে টা কি বলবে কেউ। আর তোমরা এমন ভাবে বসে আছো কেনো? যেনো মনে হচ্ছে কারোর জন্য শোক পালন করছো? বেদ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–” বেদ আমার বোনের বিয়ে ঠিক করেছি। সাঁঝ কঠিন গলায় বেদ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
. সাথে সাথে যেনো একটা বাজ পড়লো পুরো রুম জুড়ে। সবাই চমকে গেছে। সাথে সাথে সারা আর বেদ এর মুখের রং চেঞ্জ হয়ে গেছে। বেদ এর অবস্থা পুরো করুন হয়ে গেছে কি বলবে বুঝতে পারছে না সে। ব্যাথাতুর চোখে একবার সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও সারার দিকে তাকায় করুন চোখে। মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে ফেলবে।
.
–“ভাই আমি তো তোমাকে বললাম আমি বেদ কে ভালোবাসি। আর আমি ওকে বিয়ে করব। সারা কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।
.
–” সেটা তুই বলেছিস যে তুই ভালোবাসিস। বেদ কি একবার ও বলেছে যে তোকে ও ভালোবাসে আর বিয়ে করতে চায়? গলার আওয়াজ আরো গম্ভীর থেকে গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
–“জিজ আমিও। মানে আমিও বাসি তো ভালো। আমিও বিয়ে করতে চাই সারা কে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে বেদ।
.
–“হুম । ঠিক আছে ভেবে দেখছি। আর বাকি গুলোর কি কি কেস আছে বলে ফেলো দেখি ঝটপট। সাঁঝ এবার ওখানে থাকা সবাই কে বলে ওঠে।
.
. সাথে সাথে নিশান গিয়ে শান্তা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ওম তার সামনে বসে থাকা জাকিয়ার পাশে বসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আকাশ হাত উঁচু করে তার পাশে বসে থাকা আলিয়ার হাত মুঠো করে ধরে দাঁড়ায়। দৃশ্যটা কিছুটা এমন যে সবাই সবারই জোড়ার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। দেখে ঠিক মিউজিক্যাল চেয়ার এর মত লাগে মিউজিক এর সাথে সাথে ছুটতে ছুটতে হঠাৎ মিউজিক অফ আর সবাই যে যার চেয়ার খুঁজে দাঁড়িয়ে যায়। এখানে ও তেমন সাঁঝ এর বলার সাথে সাথে যে যার জোড়ার কাছে হাজির।
.
–“আমরাও একে অপর কে ভালোবাসি। সবাই একসাথে বলে ওঠে সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে ।
.
. হটাৎ করে ঝড়ের বেগে ছুটে এসে সারিফ বসে থাকা রুহির হাত টেনে তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর রুহির গালে একটা টুপ করে চুমু খেয়ে বলে ওঠে।
.
–” ভাই আমিও ভালোবাসি রুহি কে। আর বিয়ে ও করতে চাই।
.
. ওখানে থাকা বাকিরা এমন কিছুতেই মুচকি মুচকি হেসে ফেলে তাদের জোর হাসি পেলেও সামনে বসে থাকা গুরু গম্ভীর সাঁঝ কে দেখে তাদের জোর হাসি মুচকি হাসিতে ট্রান্সফার করে।
.
–” হুম তো তোমরা কি ভাবে বিয়ে করতে চাও। সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর কথা শুনতে সবাই যেনো প্রথমে ভুল শুনেছে বলে মনে হচ্ছে তাদের। তারা একে অপরকে দেখে নিয়ে সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে সাথে সাথে নিজের জোড়া গুলো জড়িয়ে ধরে। আর এদিকে বেলার দিকে ফিরে তাকাতে বেলা ও সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরে একদম টাইট করে। বেলা সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরতেই সাঁঝ বেলার কানের পাতা তে কামড়ে নেয়। সাথে সাথে বেলা সাঁঝ কে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে সাঁঝ এর কাঁধে কামড় দেয়।
.
–“তোমাদের সবাই এর কি মনে হয়েছে আমি আপত্তি করব। আমি তোমাদের ব্যাপার কিছু জানিনা। আমি আগে থেকেই সব কিছু জানি তোমাদের ব্যাপার। শুধু তোমাদের বলার অপেক্ষায় ছিলাম। আর আমাদের পুচকি টা ও এত বড় হয়ে গেছে যে তোমাদের সবার আগেই এসে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তোমাদের সাহস হয়নি। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“লাভ ইউ ভাই। সারা ছুটে এসে সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।
.
. সবার চোখে মুখের খুশির আলো ফুটে উঠেছে। পুরো পরিবেশ আলোকিত হয়ে উঠেছে সবার খুশির জন্য।
.
–” তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। আমি সব অ্যারেঞ্জমেন্টস করছি আর তোমাদের পেরেন্টসদের সাথে ও কথা বলে নেবো। তো এখন যে কয়দিন আছে জমিয়ে ইনজয় করো কেমন। বলে উঠে দাঁড়িয়ে সাঁঝ বেলা কে ও সবার সামনে দিয়ে কোলে তুলে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
.
. আর ওখানে থাকা বাকিরা একে অপর কে জড়িয়ে ধরে তাদের নিজের নিজের আনন্দ প্রকাশ করছে। একে অপরের সাথে মেতে আছে তাদের ব্যাচেলর জীবন এর আনন্দ নিতে।

————–
.
.অন্ধকার রাস্তা দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছে রনি । তার পিছনে দশ জন গার্ড যারা তাকে ধরার জন্য তার পিছন পিছন ছুটে আসছে। রনির অবস্থা খুব খারাপ। পরনে বলতে গেলে কিছুই নেই শুধু মাত্র একটা শর্ট ছাড়া। পুরো উদাম গায়ে মাথার চুল গুলো আউলে ঝাউলে আছে। ঠোঁটের কোণে থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পায়ের তলা দিয়ে রক্ত পড়ছে পায়ে ছোটো ছোটো পাথর ঢুকে গিয়ে। চোখের একদিকে কালো হয়ে গিয়ে ফুলে গেছে। তারা সারা বডিতে লিপস্টিক এর চিহ্ন ফুটে আছে। এখন সে তার প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলেছে।
.
. রনি কয়েকদিন যাবৎ একটা মেয়েকে পটিয়ে নিয়ে হোটেল রুমে নিয়ে মজা করছিলো। আর সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় এই গার্ড গুলো যারা তাকে টানতে টানতে মেয়েটার থেকে উঠিয়ে নিয়ে পেটাতে শুরু করে। আর মেয়েটা ও ওখান থেকে হাসতে হাসতে ওই গার্ড গুলোর সাথে হাত মিলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যেটা দেখে রনি বুঝতে পারে সে কোনো ট্রাপে বাজে ভাবে ফেঁশে গেছে। গার্ড গুলো ওর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই ওখান কোনো রকমে পালিয়ে ছুটতে থাকে।
.
.রনির সামনে হঠাৎ করে একটা কালো গাড়ি এসে থেমে যায়। রনি তার ছোটার গতি কন্ট্রোল করতে না পেরে গাড়ির সাথে বাজে ভাবে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে রাস্তার মধ্যে। রাস্তায় পড়ে আছে রনি মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আদো আদো ভাবে চোখ খুলে তাকায় রনি। তার কাছে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে তবুও অনেক কষ্টে চোখ খোলা রেখেছে। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে একটা কালো অবয়ব পুরোই কালো তাছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। অবয়ব টা কে নিজের দিকে আসতে দেখছে রনি। হাঁটু মুড়ে সামনে বসে। মাথার থেকে কালো হুডিটা ফেলতে অনেক কষ্টে রনি বলে ওঠে।
.
–“সাঁ…ঝ।
.
.সাঁঝ কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়িয়ে দূরে থাকা গাড়ির দিকে ইশারা করতে গাড়িটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে রনির দিকে। গাড়িটা এসে ধাক্কা মারে রনি কে সাথে সাথে দূরে রাস্তার এক গাছের সাথে ধাক্কা লেগে আবারো রাস্তার মাঝে পড়ে। চারিদিকে রক্তের ছড়াছড়ি হয়ে গেছে।
.
–“আমার জান এর দিকে যে হাত বাড়াবে তারই অবস্থা এমনি হবে। একদম অকাল মৃত্যু যোগ। বেলা শুধু আমার। তার দিকে তাকিয়ে তুই ভুল করেছিস। তাকে কিনতে চেয়ে তুই তোর জীবন টা দাও লাগিয়ে দিয়েছিস মৃত্যুর সাথে। আর আমি কি করে তোকে ছেড়ে দেই বল। সাঁঝ দূরে পড়ে থাকা রনির দিকে তাকিয়ে হিংস্র ভাবে বলে ওঠে।

—————-
.
.চারিদিকে পানির গর্জন আর শো শো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বেলা ঘুমের মাঝেই অনুভব করে যেনো সে হওয়ার মধ্যে ভেসে যাচ্ছে চারিদিকে কেমন একটা পানির গর্জন শুনতে পাচ্ছে। আদো আদো করে চোখ খুলে তাকায়। চোখ খুলে তাকাতেই যেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। না মানে বেলার মনে হচ্ছে যেনো সে আকাশের সাথে মিশে গেছে। চারিদিকে খোলা আকাশ ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। বেলা নড়তে অনুভব করে যে সে কারোর বাহুডোরের মধ্যে আছে। মাথা ঘোরাতেই দেখতে পায় সে সাঁঝ এর কোলে আছে আর তার দিকে তাকিয়ে আছে সাঁঝ। মুখে ফুটে আছে একটা মন কাড়া হাসি। বেলা সাঁঝ এর মুখে হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে। সে দু হাতে সাঁঝ এর গলা জড়িয়ে ধরে। সাঁঝ বেলার নাকের সাথে নাক ঘোষে বেলা কে নিচে নামিয়ে দেয়।
.
. বেলা দাঁড়িয়ে গিয়ে অনুভব করে তার পায়ের তলায় নরম কিছুর। মাথা ঘুরিয়ে চারিদিকে দেখতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। কারণ সে যে দিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখে শুধু পানি আর পানি আর মাথার ওপরে খোলা আকাশ। নিজের কাছের দিকে দৃষ্টি দিতে দেখে যে চারিদিকে সাদা আর লাল কম্বিনেশন এর ডেকরেট করা। সাদা সাদা পর্দা ও ঝুরি আর তার মাঝে মাঝে রেড লাভ শেপ এর বেলুন লাগানো। আর তার সাথে সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে পুরোটাই রেড গোলাপ এর পাপড়ি বিছানো। দূরে টেবিলের ওপরে সাদা টেবিল ক্লক এর ওপরে গোলাপ এর পাপড়ি দিয়ে লাভ আঁকা আর তার মধ্যে লেখা আছে #সাঁঝেরবেলা। বেলা অবাক হয়ে চারিদিকে দেখতে আছে। মুখে হাত দিয়ে বেলা সাঁঝ এর দিকে তাকায়। সাঁঝ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দিকে বারোটা বাজতে পাঁচ সেকেন্ড বাকি। সাথে সাথে সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বেলার কোমর ধরে কাছে টেনে এনে সামনের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে। বেলা সামনে তাকাতেই দেখতে পায়।ঘড়িতে পুরো রাত বারোটা বাজে। সমুদ্রের বুকে হঠাৎ করে একটা একটা করে ক্যাপিটাল ভেসে ওঠে। “” আই লাভ ইউ”” আর তার নিচে ভেসে ওঠে “” উইল ইউ ম্যারি মি “” । বেলা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুখে হাত দিয়ে আছে আর চোখের কোণে ভেসে খুশির পানি।
.
. সাঁঝ বেলা কে ঘুরিয়ে বেলার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে তার দিকে হাত এগিয়ে দেয়। বেলা শুধু অবাক হয়ে দেখছে সাঁঝ এর দিকে । কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না বেলা। বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
–“বেলা আই লাভ ইউ। উইল ইউ ম্যারি মি? বক্স থেকে রিং বের করে বেলার দিকে এগিয়ে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
. বেলা মুখে হাত রেখেই মাথা নাড়ায়। সাথে সাথে সাঁঝ বেলার আঙুলে রিং পরিয়ে দেয় আর তার পরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁঝ এর গলায়। দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। সাঁঝ ও দু হাতে জড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দু পাক ঘুরে নেয়। বেলা কে কোমরে ধরে বেলার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। বেলা দু হাতে সাঁঝ এর মাথা ধরে সেও শুষে নিতে থাকে সাঁঝ এর ঠোঁটের মিষ্টি। দুজন আসতে আসতে ডুবে যায় একে অপরের ভালোবাসার মাঝে।
.
.
. 💝💝💝
.#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৬
.
.পরিবেশ এখন খুব ঝকঝকে হয়ে আছে। চারিদিকে খুশির বাতাবরন বইছে। এখন যেদিকে তাকাও না কেনো দেখতে পাবে ঝলমলে রোদের মত মিষ্টি হাসি। বাড়ির ড্রইং রুমে সবাই চাঁদের হাট বসিয়ে রেখেছে। তাদের কাছে এখন একটাই উপলক্ষ আর সেটা হল বিয়ে নিয়ে। তারা বিয়েতে কি কি করবে না করবে। কি ভাবে হবে। এই সব নিয়েই এখন তাদের মধ্যে চলছে জল্পনা কল্পনা। বেলা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই ওদের দেখছিল। সে খুব খুশি বিয়ে নিয়ে সবার মনে একটা করে প্ল্যান করা থাকে। আর সাঁঝ তাকে আবার ও বিয়ের জন্য প্রোপোজ করেছে। তাদের বিয়ের কয়েক মাস হয়ে গেলেও এখনও তাদের বিয়ে নিয়ে এখনও কেউ জানে না। আর সাঁঝ একজন গভর্নমেন্ট লিডার তাই ওর বিয়ে তো জাঁকজমক ভাবেই হবে তাইনা। তাই আবারও নতুন করে তাদের বিয়ের আয়োজন নিয়ে সে খুবই আনন্দিত। আগেরবার তাকে তুলে জোর করে বিয়ে করেছে। তখন সে নিজেও রেগে ছিল সাঁঝ এর ওপর। তাই এইবার বিয়েটা মন ভোরে উপভোগ করতে চায়। নীচে নেমে সব একসাথে হয়ে যায়। শুরু হয় আবারও তাদের আলোচনা। একটু পরেই তারা বেরোবে তাদের আউটডোর প্রি-ওয়েডিং ফটোশুট এর জন্য।
.
. এদিকে সাঁঝ বিয়ের জন্য সব কিছু অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছে। একটু পরেই সবাই একসাথে বেরোবে সাঁঝ ও চাইছে না এবারে কোনো রকম কোনও কিছু কম রাখতে। সব কিছুই সে বেলার মন পছন্দ করতে চাইছে। আজ থেকেই তাদের বিয়ের দিনের শুরু একের পর এক তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে। আজকের তাদের ফটোশুট দিয়ে।

—————

তারা এখন এসেছে সবাই শুট করার জন্য। আজ তারা কাবন পার্ক এসেছে আউটডোর ফটোশুট করে সাতোরি তে লাস্ট কিছু ইনডোর শুট নিয়ে আজকের প্রোগ্রাম শেষ করবে। এখানে সাঁঝ সব কিছু অ্যারেঞ্জমেন্ট করিয়ে রেখেছে ।আজকে এখানেই পুরো পার্কটা সাঁঝ বুকিং করে নিয়েছে। তাই এখানে তারা ছাড়া আর কোনো পাবলিক নেই। ড্রেস ডিজাইনার মেকআপ আর্টিস্ট ক্যামেরা মান এবং বাকিরা সবাই আছে। তাদের এই শুট এর জন্য। প্রত্যেক এর জন্য পাঁচটা করে ড্রেস রাখা হয়েছে। তারা এই ড্রেস এর সাথে ফটোশুট করবে। ছেলেরা রেডি হয়ে বাইরে চলে এসেছে। তারা আসতে আসতে একে একে ক্যামেরার সামনে ট্রায়াল দিতে থাকে। যতক্ষণ না মেয়ে গুলো রেডি হয়ে আসছে তারা ততক্ষণ তাদের কিছু প্রোট্রেট তুলতে থাকে।
.
. বেদ ব্লু ফেডেড জিন্স। হোয়াইট শার্ট। আর তার ওপরে ব্লু ব্লেজার পড়েছে। তার সাথে মিলিয়ে ব্রাউন কালার এর মেসি হেয়ার। হাতে ঘড়ি। চোখে গ্লাস। ব্যাস। একের পর এক নিজের পোজ দিতে ব্যস্ত। পার্ক এর চারিদিকে সুন্দর সুন্দর মনোরম দৃশ্যের সাথে নিজে আরো বেশি মুড নিয়ে ফটো তুলে যাচ্ছে। অন্য দিকে নিশান হলুদ টিশার্ট ব্লু ফেডেড শর্ট জিন্স পরে আছে। চুল গুলো কে কিছুটা কপালে রেখে আর বাকি গুলো পিছনে হাত দিয়ে ধরে ক্যামেরার সামনে নিজের বোল্ডনেস এর পোজ দিচ্ছে। ওম পার্ক এর রোড এর মাঝে চেয়ার নিয়ে বসে আছে। পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড এর সাথে মিলিয়ে নিজে ফটো তুলে যাচ্ছে। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট কালো কোর্ট। আরেক দিকে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারিফ এক হাতে গ্লাস নিয়ে দাঁতে রেখে চোখ গুলো কোনা চোখে দেখছে ক্যামেরার দিকে। ওয়াইন কালার এর প্যান্ট সাদা শার্ট আর তার ওপরে ওয়াইন ব্লেজার। এক হাতে পকেটে রেখে গাছের সাথে লেগে এক পায়ের সাথে এক পা দিয়ে দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছে। আকাশ গ্রে কালার শুট পড়েছে। দু হাত পকেটে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। এদের এখানে এখনও সাঁঝ এসে পৌঁছাইনি।
.
. এদিকে সারা বেদ এর সাথে ম্যাচিং ড্রেস পড়েছে।ব্লু স্লিভলেস লং গাউন পড়েছে। তার সাথে মেসি হেয়ার। আর তার সাথে পারফেক্ট মেকআপ । সারা আসতে বেদ এগিয়ে আসে সারার দিকে হাত বাড়িয়ে নিয়ে যায় নিজেদের ফটো তুলতে। বেদ এর হাতে একটা ছাতা। বেদ সারার কোমর চেপে রাখে নিজের সাথে। সারা বেদ এর গলা জড়িয়ে ধরে মুখ হালকা স্লাইড ওপরের দিকে রেখে চোখ বুজে আছে। আর এদিকে ক্যামেরাম্যান তাড়াতাড়ি করে তাদের ফটো তুলতে থাকে।
.
. এদিকে শান্তা বেরিয়ে আসে একদম বোল্ডনেস নিয়ে সেও নিশান এর সাথে মিলিয়ে ড্রেস পরেছে। হলুদ অফসোল্ডার রাফেল্ড টপ। আর তার সাথে হট প্যান্ট। সামনের কিছু চুল নিয়ে ওপরে বান করা আর বাকি গুলো ছাড়া আছে। আর তার সাথে খুব সুন্দর মেকআপ । শান্তা কে আসতে দেখেই নিশান গিয়ে শান্তা কে হাত ধরে নিয়ে এগিয়ে যায়। নিশান শান্তা কে কোমরে ধরে কোলে তুলে নেয়। নিশান তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুখে এক ঝলক হাসি নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে হাতে আছে রঙের গোলা।
.
. জাকিয়া বেরিয়ে আসে ব্ল্যাক কালার এর গর্জিয়াস গাউন পরে। মাথায় ফুলের ক্রাউন পরা। তার সাথে মানানসই মেকআপ করা। ওম জাকিয়ার কাছে এগিয়ে এসে পিছন থেকে জাকিয়া কে কোমরে হাত রেখে টেনে সামনের দিকে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ওম নিজের মুখ উঁচু করে জাকিয়ার কপালে নিজের ঠোঁট ঠেকায়। আর সাথে সাথে ক্যামেরার ক্লিক এর শব্দ হয়।
.
. রুহি এসে সারিফ এর পিছনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ কিছুটা সামনে ঝুঁকিয়ে সারিফ এর মুখের দিকে মিষ্টি হেসে তাকাতে থাকে। দু হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে নেয়। আর সাথে সাথে সারিফ পিছনে ঘুরে যায়। আর সাথে একটা ক্যানডিড ছবি উঠে যায়। ওয়াইন কালার এর রাফেল্ড ওয়ানপিস পরেছে। সারিফ হাত টেনে সামনে নিয়ে আসে। রুহি নিজের পায়ের ওপর ভর দিয়ে সারিফ এর শার্ট টেনে নিজের দিকে টেনে নেয় কিছুটা পিছে হেলে গিয়ে।
.
. আলিয়া বেরিয়ে নিজের মত করে একপাশে গিয়ে বেঞ্চ এর ওপরে বসে পড়ে। সাথে সাথে আকাশ এসে পাশে বসে। গ্রে কালার গাউন পরে আছে। চুল গুলো কে কার্ল করা গাউন এর ঝালোর কিছুটা দূরে পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। আকাশ আলিয়ার হাত ধরে টেনে তুলে কিছুটা দূরে নিয়ে হাত ধরে ঘুরিয়ে দেয়। আলিয়ার মুখে আছে একটা মিষ্টি হাসি। আর এক হাত রয়েছে নিজের ড্রেস এর ওপরে।
.
. এদিকে সবাই সবার জোড়া নিয়ে ফটো তুলতে আছে অন্য দিকে এখনও সাঁঝ আর বেলার দেখা নাই। তাদের দুজন কে এখনও কেউ দেখেনি। কিছুক্ষণ পরই বেরিয়ে আসে সাঁঝ। পুরোই সাদা গেটআপ। সাদা ফেডেড জিন্স। সাদা শার্ট। আর তার ওপরে সাদা কোর্ট। চুল গুলো স্পাইক করা।চোখে গ্লাস। হাতে প্লাটিনাম এর ঘড়ি। পায়ে সাদা লোফার। আর তার সাথে মন কাড়া লুক। ব্যাস। আর কি চাই। সাঁঝ পিছনে ঘুরে হাত বাড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে হাতের ওপর হাত রেখে বেরিয়ে আসে বেলা। পিঙ্ক গর্জিয়াস ফুল স্লিভ হাইনেক গাউন পরে আছে। মাথার চুল গুলো হালকা ভাবে নিয়ে পাপ করে বাঁধা। আর বাকি চুল গুলো কার্ল করা। মাথায় ডাবল চেন এর মাঝে খুব সুন্দর একটা টিকলি পরা। দু হাতের মাঝে ওড়না ধরে এগিয়ে আসে। সাঁঝ বেলা কে নিয়ে চলে যায় লেক এর দিকে। লেকের পানিতে পদ্ম ফুল ফুটে আছে সাথে আছে শ্যাওলা। স্বচ্ছ কাঁচের মত পানিতে যেনো এগুলো আরো বেশি সুন্দর করে তুলেছে। লেক এর পাশে গাছের সাথে একটা দোলনা করা আছে। যেটা লতা পাতা আর কাগজ ফুল দিয়ে সুন্দর ভাবে মুড়িয়ে রাখা আছে। সাঁঝ বেলা কে নিয়ে এগিয়ে এসে বেলা কে ওই দোলনার মাঝে বসিয়ে দেয়। আর সে পিছন থেকে বেলা কে দোল দিতে থাকে। বেলা ও দু হাতে দোলনার দড়ি ধরে পিছন মুড়ে সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হেসে ওঠে। ওদের এই রকম হাঁটতে দৌড়াতে এক্সপ্রেশন দেখে বোঝা দুষ্কর যে তারা আসলেই পোজ দিচ্ছে নাকি তারা তাদের মাঝে ডুবে আছে। তাই ফটোগ্রাফার তাড়াতাড়ি করে ওদের প্রত্যেক টা মুহূর্তের ফটো তুলতে থাকে। ওদের আর এক্সট্রা করে কোনো পোজ দিতে হয় না। ওরা যেটা করছে সেটাই খুব সুন্দর ফটো হয়ে যাচ্ছে। সাঁঝ বেলা কে দোলনা থেকে কোলে তুলে নেয়। এগিয়ে যায় লেক এর দিকে। লেক এর মাঝ বরাবর খুব সুন্দর ভাবে ডেকরেট করা আছে। চারিদিকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা। সাঁঝ বেলা কে নিয়ে ওখানে চলে যায়। বেলা আর সাঁঝ সেখানে গিয়ে একে অপরের দিকে পিঠ করে পিঠে পিঠ লাগিয়ে বসে। আর সামনের দিকে তাকিয়ে দুজন দুজনের হাতে হাত রেখে স্মাইল করে। ফটোগ্রাফার ওদের দুজনের এই রকম মুড দেখে হড়বড়িয়ে যায়। আর ওদের প্রতিটা মুভমেন্ট এর ফটো তুলতে থাকে।
.
. সবাই একসাথে খুব মজা করে ফটোশুট শেষ করে একসাথে ডিনার করে বাড়ি ফেরে হইচই করে। তারা আজ ভীষণ ক্লান্ত। সারাদিনের ফটোশুট এর জন্য তারা সবাই আজকে প্রাণ ভোরে একে অপরের সাথে মজা করেছে। আজ যেনো কেউ কারোর মধ্যে ছিল না।

————-
.
. সকালে উঠেই সব ছেলে গুলো আলোচনা করতে বসে গেছে। আজ যেনো তাদের গুরুত্ব পূর্ণ আলোচনা চলছে। যেই মেয়ে গুলো তাদের দিকে দেখছে বা তাদের কাছে যাচ্ছে অমনি চুপ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপার টা খটকা লাগাই তারা সবাই মিলে গিয়ে বেলা কে চেপে ধরে। সব কটা মিলে ওখানে আসতে সব চুপ হয়ে হাসতে হাসতে একে একে কেটে পড়ে।
.
. আকাশ বেদ নিশান ওম সারিফ সবাই মিলে স্টাডি রুমে সাঁঝ এর কাছে আসে। সাঁঝ তার কিছু ইম্পপটেন্ট কাজ করছিলো। সেখানে এসে সব গুলি হাজির। সাঁঝ ওদের দিকে তাকাতেই দেখে সব গুলো কেমন একটা লুক নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
.
–“ভাই বলছিলাম কি একটা কথা ছিল। সারিফ আমতা আমতা করে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ কোনো কথা না বলে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে সব গুলো তাকে চারিদিকে থেকে ঘিরে ফেলে। তাদের এই কাজে সাঁঝ বোঝে কিছু তো গণ্ডগোল আছে তাই সবার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
.
–” ভাই বলছিলাম কি আর দুদিন পরেই তো আমাদের বিয়ে তাই মানে.. সারিফ বলে ওঠে।
.
–” হুম তো। সাঁঝ জিজ্ঞেস করে ওঠে।
.
–“না মানে জিজ আসলে বলছিলাম কি বিয়ের আগে আমরা একটু আনন্দ করে নিতে চাই। ওম বলে ওঠে।
.
–” মানে? সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
.
–“আসলে আমরা একটা ব্যাচেলর পার্টি রেডি করেছি। কাল থেকেই তো অনুষ্ঠান শুরু তাই আর কি। নিশান বলে ওঠে।
.
–” এরপর তো আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে। আর তখন আমাদের জীবন কেমন হবে জানিনা তাই আর কি। আকাশ বলে ওঠে।
.
–” তো এখানে আমি কি করতে পারি। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“না মানে আমরা সব কিছু রেডি করে নিয়েছি। ওখানে শুধু তুমি এলেই হবে। বেদ বলে ওঠে।
.
–” আই অ্যাম স্যরি। আমি এইসব পার্টি তে নেই। সাঁঝ এক কথায় নাকচ করে দেয়।
.
. আর তার সাথে সাথে শুরু হয় বাকিদের মেলোড্রামা আর ব্ল্যাক মেইল। শেষে সাঁঝ কোনো উপায় না দেখে রাজি হয়ে যায়। এতক্ষণ সব গুলো মেয়ে মিলে দরজার আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে সব কিছু শুনে নেয়। তারা আসতে আসতে কেটে পড়ে ওখান থেকে সব গুলো ড্রইং রুমে গিয়ে আলোচনা করতে থাকে। ছেলে গুলো আসতেই সব চুপ হয়ে যায় আর কোনো কথা বলে না কেউ।

————-

রাত সাতটার দিকে সাঁঝ রেডি হতে থাকে পার্টিতে যাওয়ার জন্য। আর বেলা বেডে বসে বসে দেখছে সব কিছু কিন্তু কোনো কথা বলছে না। এদিকে সাঁঝ ও রেডি হতে হতে কয়েকবার বেলা কে দেখে নিয়েছে। তাই ভ্রু কুঁচকে বেলার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে কিন্তু বেলা মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলে। সাঁঝ রেডি হয়ে নিয়ে বেলার দিকে এগিয়ে যায়। বেলা কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে বেলার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়। আসলে এটা এখন প্রতিদিন এর রুটিন হয়ে গেছে সাঁঝ বাড়ি থেকে কোথাও বেরোনোর আগে বেলার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বেরোনো।
.
–“কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি এত হট সেজে। বেলা ভ্রু কুঁচকে বলে। যদি ও বেলা জানে সাঁঝ কোথায় যাচ্ছে।
.
–” আসলে আজকে একটা পার্টি আছে। মানে… সাঁঝ কে পুরোটা বলতে না দিয়ে বাইরে থেকে চিৎকার করে ডেকে ওঠে ভাই।
.
. সারিফ এসে সাঁঝ কে টেনে নিয়ে বেরিয়ে যায় কোনো কথা বলতে না দিয়ে। সে জানত তার ভাই ঠিক বলে যাবে। তাই তাড়াতাড়ি করে টেনে নিয়ে গেলো। মেয়ে গুলো কে বললে তাদের কি থড়ি না যেতে দেবে। আর না করতে দেবে কোনো ব্যাচেলর পার্টি। তাই সব গুলো মিথ্যে বলে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
.
. বেলা নিচে নামতে সব গুলোই এসে চেপে ধরে।
.
–“বেলা এটা হতে দেয়া যায়না। ওরা আমাদের মিথ্যা বলে চলে গেলো পার্টি করতে। রুহি বলে ওঠে।
.
–” হুম সেই বিয়ে কি ওরা একা করছে নাকি যে ওরা একা একা ব্যাচেলর পার্টি করবে। সারা রেগে বলে ওঠে।
.
–“আমরা সরকারি নাকি যে আমাদের কোন পার্টি হবে না। জাকিয়া বলে ওঠে।
.
–” একদমই তাই এর একটা বিহিত হতে হবে। ওরা ছেলে বলে কি সব করতে পারবে। শান্তা বলে ওঠে।
.
–” কখনো না। ওরা যেমন পার্টি করতে গেছে আমরাও তেমন পার্টি করব। ওদের আমরা দেখিয়ে দেবো আমরা ও পারি। আমি এখুনি সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করছি। বেলা রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে।

————-

.
. চারিদিকে লাইটিং করা পার্টি থিম সাজিয়েছে পুরো। পার্টি সং বাজছে ফুল ভলিউমে। চারিদিকে জিখমিকি আলো জ্বলছে। পাশের কাউন্টার এর সামনে গ্লাস সাজিয়ে রাখা। আর তারা সাথে সাথে মৃদু মৃদু আগুন এর খেলা চলছে। চারিদিকে মিলিয়ে পুরো পরিবেশ টা একদম রমরমিয়ে উঠছে ।সব মেয়ে গুলো একসাথে রেডি হয়ে নামছে সব গুলো পার্টি ড্রেস পরেছে শর্ট। আর ব্ল্যাক কালার এর। তারা একসাথে নেমে নিচে এসে দাঁড়ায়। সামনে টেবিল এর ওপরে থাকা শ্যাম্পেন এর বোতল তুলে নিয়ে বেলা কাউন্ট করে বোতল খোলে আর চারিদিকে সবার গায়ে ছিটাতে থাকে।
.
. সবাই একসাথে হাতে গ্লাস তুলে নিয়ে একে অপরের সাথে টুইস্ট করে খেতে থাকে আর তার সাথে নাচ । ফুল ভলিউমে পার্টি সং এর সাথে মাতাল করা নাচ নাচতে থাকে। একে অপরের কোমর জড়িয়ে ধরে তো কখনো একে অপরের হাত ধরে ঘুরিয়ে দিয়ে। আবার একসাথে হাত উঁচু করে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে থাকে।
.
. সব গুলো পুরো মাতাল হয়ে গেছে। একের পর এক গ্লাস ফাঁকা করে। আর একে অপরের সাথে গলা জড়িয়ে কোমর জড়িয়ে নাচতে থাকে ফুল ভলিউম মিউজিক এর সাথে। অনেক দিন পর এত আনন্দ করতে পারছে একসাথে। কেউ কারোর হুসে নেই। এখন সব নাচে মত্ত।
.
. এদিকে ছেলে গুলো ও মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাড়ির ভিতর ঢুকেই সাঁঝ এর মাথা ঘুরে যায়। পুরো বাড়ি দেখে। চারিদিকে পার্টির মত করে সাজানো হয়েছে। আর এখন বাড়িতে পার্টি চলছে। সামনের দিকে তাকাতেই সাঁঝ এর মাথা পুরো খারাপ। কারণ সামনে টেবিলের ওপর দশ বারোটা ওপর বোতল খালি করে রাখা আছে। আর তার পাশে কিছু গ্লাস এখনও ভরা আছে। সব মেয়ে গুলোর হাতে গ্লাস আছে। কারোর খালি হয়ে যেতে টেবিল থেকে গ্লাস তুলে নিচ্ছে।
.
. এদিকে সাঁঝ এর পিছন পিছন বাকি গুলো ও টলতে টলতে বাড়ি ঢোকে। আর সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তাদের নেশা যেনো চড়ে গেছে। নিশানা চোখ কচলে আরো ভালো করে দেখছে সামনে কি চলছে। সবাই যেনো এখনও ভূত দেখার মত করে চমকে আছে।
.
–“ভাই এখানে পার্টি চলছে? নাকি আমরা এখনও বাড়ি যায়নি। বেদ চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে।
.
. বেলারা সবাই দেখে যে ছেলে গুলো ফিরে এসেছে। আর তাদের দেখে তারা অবাক হয়ে গেছে। বেলা টলতে টলতে এগিয়ে এসে টেবিল এর ওপরে এক পা তুলে দিয়ে কিছুটা ঝুঁকে গ্লাস তুলে নেয়। এক চুমুক খেয়ে নিয়ে সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।
.
–“কি কেমন লাগছে আমাদের পার্টি? হুম আমাকে মিথ্যে বলেছিলেন আপনি। আপনারা সবাই পার্টি করতে গেছিলেন। বেলা বলে ওঠে।
.
–” একদম তোমরা সবাই পার্টি করতে গেছিলে তাই এখন আমরাও পার্টি করছি। শান্তা এগিয়ে এসে বলে ওঠে।
.
–“আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলতে পারলেন। আপনি পার্টি করতে গেছিলেন। সেখানে নিশ্চয়ই অনেক ভালো ভালো মেয়ে ছিল। আমি এখন কি করব। আমি আর এখানে থাকবো না চলে যাব। বলেই হঠাৎ করেই হাতের গ্লাস টা নিচে ফেলে দেয় ছুড়ে। সাথে সাথে গ্লাস ভেঙে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর বেলা টেবিলের ওপর উঠে বসে পড়ে কান্না করতে শুরু করে.।
.
. সাথে সাথে বাকিরা ও তাই করে ।সাঁঝ কোনো কথা না বলে এগিয়ে আসে বেলার দিকে। বেলা কে ধরতে গেলে বেলা সরে যায়। সাঁঝ কোনো কথা না বলেই বেলা কে কোলে তুলে নেয়। সে এক দৃষ্টিতে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা এখনও ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে চলেছে।
.
. এদিকে বাকিরা একে একে কাছে গেলে কেউ আবারো নাচতে শুরু করে তো কেউ আবার কেটে পড়ে ওখান থেকে।
.
. সাঁঝ বেলা কে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে। বেলা দু হাত দিয়ে সাঁঝ এর গলা জড়িয়ে রাখে। এখনও ঠোঁট ফুলিয়ে ফুলিয়ে কাঁদছে। বেলা কে বিছানায় বসাতে গেলে সে আরো জোরে সাঁঝ এর গলা জড়িয়ে নেয়।
.
–“তুমি খুব পঁচা। তুমি একটুও ভালো না। আমাকে একটুও ভালোবাসো না। বেলা কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।
.
–” তা হটাৎ করে তোমার একটা কেনো মনে হলো। আর একটু আগে তো আমাকে তো আপনি আপনি করছিলে। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“তুমি আমাকে না বলে কেনো চলে গেলে কেনো আমাকে মিথ্যা বললে। ওখানে তুমি নিশ্চয়ই মেয়েদের সাথে নাচ করেছ। বেলা সাঁঝ মুখের ওপর মুখ এনে চোখ টেনে টেনে বলে ওঠে।
.
–” আমি তোমাকে মিথ্যা বলিনি।আমি তো তোমাকে বললাম আমি পার্টি তে যাচ্ছি। আর আমার কিছু বলার আগেই তো সারিফ টেনে নিয়ে গেলো। তাই বলতে পারিনি। কিন্তু তুমি এটা বল তুমি এটা কেনো খেয়েছ। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।
.
–” আমার তো খুব রাগ আর কষ্ট হচ্ছিলো। তুমি আমাকে বলে যাওনি। আর তারপর ওখানে গিয়ে মেয়েদের সাথে নাচবে ভেবে আমার খুব রাগ হচ্ছিলো তাই আমিও পার্টি করেছি। তুমি তো আমাকে আর ভালোবাসো না। ঠোঁট ফুলিয়ে বলে ওঠে বেলা।
.
–“আমি মেয়েদের কাছে যায়নি। আমি তো জানি আমার একটা পাগলি আছে তাই। আর কে বললো আমি তোমাকে ভালোবাসি না। সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
.
–” ওহ ভালোবাসো ।তাহলে আমাকে এখন আদর করো।আমি এখন তোমাকে খেতে চাই। বেলা তার মুখ একদম সাঁঝ এর মুখের সাথে লাগিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে ওঠে।
.
. বেলা সাঁঝ এর গলার কাছে হাত এনে অস্থির হাতে সাঁঝ এর শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগে। এদিকে সাঁঝ এর অবস্থা আরও কঠিন একই বেলার নেশা ভরা মাতাল আওয়াজ আর তার ওপর অক্ষয় বেলা কে দেখতে আরো নেশাময় লাগছে। যা দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না সাঁঝ। আর তার সাথে বেলার এই কাজ সাঁঝ এর বুকের মাঝে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতক্ষণ নিজেকে সামলে চুপ করে থাকলেও এবার আর নিজেকে রুখতে পারে না। দু হাত দিয়ে বেলা কে জাপটে ধরে নিজের সাথে। বেলার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট লাগিয়ে তীব্র নেশাগ্রস্ত এর মত করে বেলার ঠোঁট শুষে নিতে থাকে। বেলা সাঁঝ এর সাথে তাল মিলিয়ে সে ঠোঁটের মাঝে ডুবে আছে। আর এক হাত দিয়ে সাঁঝ এর শার্ট এর বোতাম গুলো খুলে ফেলে। সাঁঝ বেলার ঠোঁট ছেড়ে বেলা কে বিছানায় ফেলে। সাঁঝ নিজের শার্ট খুলে ফেলে বেলার ওপরে উঠে আবারো মেতে ওঠে বেলার ঠোঁটের মাঝে। এক হাত দিয়ে বেলার কাঁধের থেকে ড্রেস সরিয়ে দেয়। ঠোঁট থেকে মুখ তুলে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। আসতে আসতে বেলার শরীর থেকে সমস্ত ড্রেস খুলে ফেলে। আর দুজন একে অপরের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। তারা ডুবে যায় একে অপরের ভালোবাসার মাঝে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে…
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করা হয়নি। সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊

#
. চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊

(যারা যারা মন খারাপ করে আছে গল্পটা শেষ হয়ে যাবে বলে। তো তাদের কে বলছি যে মন খারাপ না করে চিল মুড নিয়ে পড়তে থাকো। তোমাদের জন্য এখনও অনেক কিছু আছে। তোমাদের পছন্দের সো পড়তে থাকো আর ইনজয় করো। আর হ্যাঁ সাথে মন খুশি করা কমেন্ট। 😊 😊 😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here