দুষ্টু মেয়ে যখন পার্ফেক্ট বউ পর্ব -০৩

#দুষ্টু_মেয়ে_যখন_পার্ফেক্ট_বউ
#লেখিকা_দিয়া_মনি
#পর্ব_৩

সপ্তাহ খানেক পরে ভোর ছয়টার দিকে মেঘলার সাথে আবার দেখা হলো জব্বার চাচার দোকানে।সেইদিনও একই অবস্থা। প্লেটে চা নিয়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে চা খাচ্ছে।মেঘলার প্লেট দিয়ে চা খাওয়ার দৃশ্যটা তূর্যের এতটা ভালো লেগে যাবে বুঝতেই পারিনি তূর্য।
,
,
মেঘলা এর মধ্যে জব্বার চাচাকে টাকা দিয়ে তূর্যের সামনে এসে দাঁড়ালো।
,
,
,
—— আরে শেউরা গাছের পেত্নী খবর।(তূর্য)
—— কয়টা খবর এনাকুন্ডা। (মেঘলা)

—– আমাকে দেখে কি তোমার এনাকুন্ডা মনে হয় মিস দজ্জাল। (চোখ ছোট করে বলল তূর্য)
—— আরে কি যে বলেন?আপনাকে এনাকুন্ডা বলা ভুল হবে।আস্ত একটা গণ্ডার মনে হয়।(হাসতে হাসতে মেঘলা বলল)
,
,
>>>>>কি গো মামনি আর বাজান তোমরা ঝগড়া করতাস কেল্লা।তোমরা থাম এবার।(জব্বার চাচা)
,
,
—— আরে চাচা কি কইতাছেন ওর সাথে ঝগড়া করতে বয়েই গেসে।কলাগাছ একটা।(তূর্য)
—– কি আমি কলাগাছ? তোর ১৪ গোষ্ঠী কলাগাছ দাঁড়া তুই।(বলেই মেঘলা তেরে আসলো তূর্যের দিকে)
,
,
এবার তূর্য চাচা আপন জান বাঁচা বলে দিলো দৌড়।তাদের পাগলামি দেখে জব্বার চাচা হাসতে হাসতে শেষ।কিছুক্ষন দৌড়ানির পর ক্লান্ত হয়ে দুজন একটা গাছের নিছে বসে পড়ে।কারো মুখে কোন কথা নেই।
,
,
,
—– কিছু বলবেন?(নিরবতা ভেংগে বললো মেঘলা)
—– কি বলবো মনে নেই মনে করিয়ে দিন।(তূর্য)

—– ওই যে সেইদিন কিছু জিজ্ঞেস করবেন বলেছিলেন?(মেঘলা)
—– ওও,,,,,মনে পড়েছে।অনেক ক্ষন তো বসলাম চলুন হাটতে হাটতে কথা বলা যাক।(তূর্য)
,
,

——– হ্যাঁ „,,,,, চলুন? (মেঘলা)
,
,
,
মেঘলা হাটতে লাগলো এইখানকার বড় মাঠটার দিকে।তূর্যও পাশাপাশি হাটতে লাগল।
,
,
—– কি জিজ্ঞেস করবেন.??(মেঘলা)
,
,
——- না মানে আসলে আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে। আমি কি এই রকমি। (তূর্য)
—— মা,,,,,,মানে কি? (অবাক হয়ে বলল মেঘলা)
,
,
——- আমি বলতে চাই , আপনি অনেক দুষ্ট আর ঝগড়াটে। (তূর্য)
—— ও তাই বুঝি?(মেঘলা)
,
,
—– হুম,,,,, আমার মনে হয় আপনি নোবেল পাবেন। এত দুষ্টামির করা জন্য।আর কে দিবে আপনাকে নোবেল জানেন জ্বীনের বাদশাহ। (বলেই তূর্য হো হো করে হেসে দিলো)
,
,
,
তূর্যের হাসি দেখে মেঘলা ক্রাশ খেয়ে গেলো। একটা ছেলে এতো সুন্দর করতে হাসতে পারে।মেঘলা দেখলো তূর্যের গালে টুল পরছে।টুল পরাতে তূর্যকে আরো সুন্দর লাগছে।তূর্যের চোখ গুলি ফিটফিট করছে আর হাসছে।মেঘলা কিছু না বলে এক নজরে তূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
,
,
তূর্য হাল্কা কাশি দিতেই। মেঘলা তূর্যের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।অনেকটা লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা।তূর্য বুঝতে পেরে তার লজ্জা কমাতে বললো।
,
,
—– আচ্ছা,,,,আপনি ওইভাবে প্লেট দিয়ে চা খান কেন এটাই জানতে চাইছিলাম আর কি…(তূর্য)

তূর্য্রর কথা শুনে মেঘলা শব্দ করে হেসে উঠলো।মেঘলার হাসির শব্দটা শুনে বুকের মধ্যে কেমন জানি একটা ধাক্কা লাগলো তূর্যের।
,
,
——- আসলে ছোট বেলায় একবার চায়ের কাপে মুখ লাগিয়ে চা খাওয়ার সময় ঠোট আর জিহ্বা পুড়ে গেছিলো।তখন আম্মু আমাকে এইভাবেই খেতে বলে ছিল।তারপর থেকে এইভাবে চা খাই।
,
,
,
জানেন এই ভাবে চা খাইলে মনে হয় আম্মু আমার পাশে আছে।আর জব্বার চাচার বানানো চা খুব টেস্টি।সব সময় আসিনা জব্বার চাচার দোকানে।কোন মেয়ে চায়ের দোকানে বসে চা খাবে এইটা বেশ বেমানান দেখাই।তাই যখন সকালের দিকে কেউ থাকেনা তখন আসি। আর আমি যে প্লেটে করে চা খাই তখন তো কেউ দেখে না।আর মন খারাপ থাকলে এই চা আমার মন ভালো করার ঔষধ।

—— তার মানে আজকে আপনার মন খারাপ?(তূর্য)
,
,
মেঘলা তূর্যের কথার কোন জবাব দিলো না।
,
,
—- সমস্যা না থাকলে শেয়ার করতে পারেন।(তূর্য)
,
,
মেঘলা তূর্যকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো।হঠাৎতেই একটা বাইক তাদের সামনে এসে থামলো।
,
,
ছেলেটা যখন হেলমেটটা খুললো তখন ছেলেটাকেও চিনল তূর্য।এই ছেলেটাকেই সেদিন মেঘলা থাপ্পড় মেরে ছিলো।
,
,
ছেলেটা বাইকটা স্ট্যান্ড করে মেঘলার সামনে দাঁড় করায়।
,
,
>>>> সেদিন তো আমাকে খুব বড় বড় লেকচার দিয়েছিলি।ব্রেকাপ হলো কি না হলো সকাল সকাল আরেকটা প্রেমিক নিয়ে বেড়িয়ে পরেছিস।এখন কোথায় গেলো তোর সতীত্ব?একচুয়্যালি ইউ আর দ্য ব্লাডি বি…(ছেলেটা)
,
,
ছেলেটার কথা শেষ না হতেই ডান গালে জোরসে একটা থাপ্পড় পরলো। তূর্য ছেলেটার গালের দিকে একটু ভালো করে তাকাল।ফর্সা গাল হাতের পাঁচ আঙুল বসে গেছে।বাপরে মেয়ের হাতে জোর কত!!
,
,
ছেলেটা চড় খেয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে বাইক নিয়ে চলে গেলো…
,
,
আর মেঘলা হাটতে হাটতে মাঠের পাশে যে পুকুরটা আছে সেইখানে গিয়ে দুহাত বুকের সাথে জড়ো করে দাঁড়ালো। তূর্য কি মনে করে মেঘলার পিছুপিছু গেল।এটা বুঝতে পারলো তূর্য। ছেলেটা মেঘলার বয়ফ্রেন্ড ছিলো। এখন আর নেই। তূর্য মেঘলার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই বললো-
,
,
—– একটা ছেলের চিন্তা ভাবনা এতটা খারাপ কিভাবে হয়।তিনবছরের রিলেশনশিপ ছিলো আমাদের।সেদিন রেস্টুরেন্টে ইনিয়েবিনিয়ে আমাকে ওর সাথে রুমডেটে যেতে বলে নয়তো সম্পর্ক রাখবেনা বলে জানিয়ে দেয়।নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য তাহলে আমার পিছনে কেন তিনটা বছর নষ্ট করলো।প্রস্টিটিউট এর কাছে গেলেই পারতো।আমার ফ্রেন্ডরা বার বার বলেছিলো ওকে বিশ্বাস না করতে কিন্তু আমি সব সময় ওকে ডিফেন্ড করেছি।আর ও আমার বিশ্বাসের এই মূল্য দিলো…(মেঘলা)
,
,
ওর মুখে এরকম কথা শুনার পরেই কেন জানিনা তূর্যের রাগ উঠতে লাগলো ছেলেটার উপরে।ওকে পুকুরপাড়ে রেখেই তূর্য চলে আসলো।

—– আচ্ছা আমার কেন রাগ হচ্ছে? ছেলেটা ওকে ঠকিয়েছে সেইজন্য নাকি মেয়েটার কান্না আমার সহ্য হচ্ছেনা এইজন্য?(তূর্য মনে মনে ভাবতে লাগলো)
,
,
কেন মেয়েটা কে নিয়ে ভাবছে তূর্য জানেনা। বাসায় গিয়ে শুয়ে পরলো।কিন্তু শুধু মেঘলার কথাই মনে হচ্ছে।ও কান্না করছে ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তূর্যের।
,
,
জানেনা কেন এমন হচ্ছে তূর্যের। এমনটা তূর্যর সাথে কখনো হয়নি।সারাদিনে এমনকি রাতেও মেঘলা কে নিয়ে ভাবছে।ওইভাবে তার পুকুরপাড় থেকে চলে আসা উচিৎ হয়নি।নিজের মধ্যেই কেমন একটা গিলটি ফিল হচ্ছে….

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here