#দুষ্টু_মেয়ে_যখন_পার্ফেক্ট_বউ
#লেখিকা_দিয়া_মনি
#পর্ব_৪
সারারাত ঘুমাইতে পারেনি তূর্য।শুধু বিছানায় গড়াগড়ি আর গান শুনে কাটিয়ে দিয়েছে সারা টা রাত।খুব সকাল বেলা হাটতে হাটতে জব্বার চাচার দোকানের পাশে মাচাটায় বসলো তূর্য।জব্বার চাচা এখনো দোকান খুলেনি।কিছুক্ষণ বাদে মেঘলাকেও দেখল তূর্য এইদিকেই আসছে।চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে। মনে হয় সারারাত কান্না করেছে।মেঘলা তূর্যের সামনে এসে দাঁড়ালো…
—– আসলে……?
এইটুকু বলেই চুল গুলা কানের একপাশে গুঁজে দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো মেঘলা।
——- স্যরি।(তূর্য)
—— জ্বীইই?(মেঘলা)
—– আই এম স্যরি। আসলে আপনাকে কালকে ওইভাবে রেখে আসাটা উচিৎ হয়নি।(তূর্য)
মেঘলা খানিকটা হাসার চেষ্টা করলো।
—– আমি তো ভেবেছিলাম আপনাকে স্যরি বলবো।আমার জন্য আপনাকে ওকয়ার্ড একটা সিচ্যুয়েশানে পরতে হলো।(মেঘলা)
—— সমস্যা নেই।মনের কথা চেপে রাখতে নেই।শেয়ার করলে মন হাল্কা হয়।(তূর্য)
ও কেবল হাসলো।এইবারের হাসিটা একদম অন্যরকম। হাসিটা দেখেই আবার বুকের মধ্যে কেমন জানি করে উঠলো তূর্যের।
—— মনির সাথে আটমাস রিলেশন ছিলো।কখনো ওর হাসি দেখে এরকম মনে হয়নি।ওর সাথে থাকলে কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসতো তূর্যের।তূর্যেকে ওর গোলাম বানিয়ে রেখেছিলো।উঠতে বললে উঠতে হবে বসতে বললে বসতে হবে।নিজের কোন স্বাধীনতাই ছিলো না।পরে যখন ওর সাথে একেবারেই থাকতে পারলনা তখন ব্রেকাপ করে নিয়ে ছিল তূর্য।ব্রেকাপের পর তূর্য খুব হ্যাপি ছিলাম।আই থিংক ও নিজেও এই রিলেশনশিপে হ্যাপি ছিলোনা।তাই দুইদিক থেকে কেউই আর যোগাযোগের চেষ্টা করিনি।”
—– কি মিষ্টার এনাকুন্ডা কই হারাইলেন?প্রেমিকার কথা মনে হলো নাকি।(মেঘলা)
—– আরে প্রেমিকা পাবো কোথায়, আমার প্রেমিকা নাই (তূর্য)
—— আরে আপনার মতো এনাকুন্ডার প্রেমিকা নাই সেইটা কেউ মাইনা নিব বুঝি।(মেঘলা)
—– আরে মানবে না কেন। (তূর্য)
—– যে হেনসাম মার্কা ছেলে আপনি প্রেমিকা তো ১০০ টা আছে। (মুচকি হেসে বললো মেঘলা)
—– আরে মিসেস পেত্ন কি যে বলেন না এই সব। (তূর্য)
—— আরে আপনার সাথে এখন ঝগড়া হবে। তার ছেয়ে ভালো জব্বার চাচা দোকান খুলেছে। আপনি কি যাবেন?(মেঘলা)
—- হুম,,,চলুন।(তূর্য)
মেঘলা বসে ছিল আর তূর্য আড় চোখে দেখছে।
——- এভাবে আড় চোখে দেখার কিছু নাই।(মেঘলা)
—– ওর কথায় আবারো কেবল লজ্জা পেল তূর্য।মেয়েটা বুঝে কিভাবে যে কেউ ওকে আড় চোখে দেখছে? অদ্ভুত তো!!(মনে মনে বলল তূর্য)
—– ও হেল মিসেস পেত্নী একটা কথা ছিল।(তূর্য)
—– জ্বি বলুন,,(মেঘলা)
—– না মা মানে যদি আপনি কিছু মনে করেন?(তূর্য)
—– মনে করার কথা হলে তো মনে করবোই তাইনা। (বলেই মেঘলা হি হি করে হেসে উঠলো)
তূর্য অবাক হয়ে মেঘলাকে দেখতে। তার পরানে মিষ্টি কালার গ্রাউন্ড আর সাদা দুপাট্টা তে হ্যাব্বি মানিয়েছে।তার হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে পরছে।মেঘলার হাল্কা কাশিতে তূর্য মেঘলার থেকে চোখ নামিয়ে নেয়।
—— কি যেন বলবেন বলে ছিলেন?(মেঘলা)
—— আ…স….লে আপনার নাম্বার চায়।(তূর্য)
—— নাম্বার লাগবে? তা এত আমতা আমতা করার কি আছে।এই নিন নাম্বার ০১৭……..#।(মেঘলা)
এরপর নাম্বারে প্রায়ই তাদের কথা হতো।ওর হাসিটা অনেক সুন্দর।ও ফোনের অপাশ থেকে শব্দ করে হাসলে তূর্য এপাশ থেকে অনুভব করে।আস্তে আস্তে একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয় তাদের।আপনি থেকে তুমি।তবে তাদের মধ্যে রিলেশনটা ফ্রেন্ডশিপ নাকি অন্যকিছু বুঝতে পারেনা।তূর্য কখনো বুঝতে দেয়নি।তূর্যের মেঘলার জন্য কিছু একটা ফিল করে।কিন্তু কখনো জানানো হয়নি।ইচ্ছা করে জানাইনি।একটা ছেলে যদি কোন মেয়ের বিশ্বাস ভাঙে অন্য আরেকটা ছেলের বিশ্বাস অর্জন করতে অনেকটা সময় লাগে…
—- একসময় বুঝতে পারল ওর উপরে খুব নির্ভরশীল হয়ে পরছে তূর্য।মেঘলাকে ছাড়া তূর্যের কোন কিছু ঠিক মত হচ্ছেনা।দিনে একবার কথা না হলে মনের মধ্যে কেমন একটা ছটফটানি অনুভব করে তূর্য।তাই ইচ্ছা করে বাসা চেঞ্জ করে তূর্য যোগাযোগ কমিয়ে দিল।
তূর্য নিজেকে অন্য কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে।মেঘলা মাঝেমাঝে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিতো।কিন্তু তূর্য ফোন দিত না।তারপর তূর্যের বাবা মারা গেলো।বাসা ছেড়ে চলে আসল তূর্য।
মাস খানেক পার হওয়ার পর মেঘলার মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করল তূর্য।নিয়মিত তার সাথে কথা বলে।মাঝে মাঝে দেখাও করতে বলে।লক্ষ্য করল আমি আবারো ওর উপরে ডিপেন্ডেবল হয়ে পরছে তূর্য।
মেঘলা চেঞ্জ করে তূর্যের সামনে দাড়ালো।ভেজা চুলে ওকে বেশ অন্যরকম লাগছে।ওকে এই অবস্থায় দেখে তূর্যেত বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।বাইরে আবারো সজোরে বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে।আশ্চর্যের বিষয় হলো কারেন্ট এখনো যায়নি।তূর্য নিজেকে সামলে নিল।
—— দাঁড়িয়ে কেন আছো? বসো..(তূর্য)
মেঘলা তূর্যের পাশে বসতে বসতে বললো?
—– তূর্য আসলে।(মেঘলা)
—— হুম বলো?(তূর্য)
—– তোমাকে অনেক বার ফোনে ট্রাই করেছি।তোমাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না।আমি কিছুদিন তোমার এইখানে থাকলে তোমার কোন সমস্যা হবে?(মেঘলা)
—- না আমার আবার কি সমস্যা হবে।এইখানে কয়েকটা রুম ফাকাই থাকে।তুমি যেকোনো একটাতে থাকতে পারো।(তূর্য)
—- আসলে আমি মামার বাসা থেকে চলে এসেছি। যতদিন না কোন চাকুরী পাচ্ছি ততদিন তোমার বাসায়…(মেঘলা)
—– হুম বুঝলাম।কিন্তু হঠাৎ বাসা কেন ছাড়তে হলো আপনাকে পেত্নি ম্যাডাম।(তূর্য)
—– আসলে মামা আমার জন্য বিয়ে ঠিক করেছে আমাকে না জানিয়ে।লাইফের ডিসিশনস নিতে শুরু করে দিলো।তাও আমাকে না জানিয়েই… আর আমিও চেনা নাই জানা নাই ওরকম ছেলেকে কিভাবে বিয়ে করবো?আমার পক্ষে এটা সম্ভব না।(মেঘলা)
—— আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম..(তূর্য)
এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো..রাত হয়ে গেছে।
বাসায় ক্যান্ডেল ও নেই।আর ফোনের ব্যাটারিও ডেড..বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে।এখন কি করবে তূর্য?মেঘলা তূর্যের শার্টের হাতাটা শক্ত করে ধরলো।আবারো তূর্যের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।তূর্য বুঝলো ওর খুব ভয় করছে।
—– ভয় পেয়ো না।কারেন্ট একটু পরেই চলে আসবে।(তূর্য)
—– হুম। (মেঘলা)
কিছুক্ষণ পরে কারেন্ট আসলো।তূর্য মেঘলা কে ওর রুমে দিয়ে আসলো।রাতে ঘুম থেকে উঠেছিল একবার দেখল মেঘলার রুমের লাইটটা জ্বলছে।মনে হয় লাইট না জ্বালিয়ে ঘুমাইতে পারেনা বা অন্য কোন কাজ করছে মেয়েটা।
পরের দিন দুপুর বেলা টেস্ট ম্যাচ দেখছিল তূর্য।দরজা খোলাই ছিলো।ভাবি আসলো হাতে প্লেট দিয়ে ঢেঁকে তূর্যের জন্য কিছু একটা এনেছে।ভালো কিছু রান্না করলেই তূর্যকে বাসায় ডাকে নয়তো বাসায় এসে দিয়ে যায়।
——– কি ছোট নবাব কি খবর??ভাবিকে ভুলে গেছো নাকি?দেখা করো না বেশ কয়েকদিন হলো।(ভাবি)
—– আরে কি যে বলো। তোমাকে ভুললে চলে?আজকে কি রান্না করেছো??(তূর্য)
—– ভূনা খিচুড়ি..(ভাবি)
—– বাহ বেশ জমবে তাহলে দুপুরের খাবারটা।(তূর্য)
—— কি ব্যাপার বলো তো। তোমার বাসার সব কিছু এমন গুছানো লাগছে।(ভাবি)
—— ব্যাপার আমিও বুঝতেছিনা ভাবি।(তূর্য)
এমন সময় মেঘলা ওর রুম থেকে বের হয়ে আসলো।ভাবি মেঘলাকে দেখে তূর্যের দিকে তাকালো।
—– বিয়ে করেছো একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলেনা? তোমার ভাইয়াকে না হোক আমাকে তো একবার জানাইতে পারতে।(ভাবি)
—— আরে ছিঃ ছিঃ ভাবী তোমাদের না জানিয়ে আমি কিভাবে বিয়ে করবো বলো?(তূর্য)
—– তাহলে মেয়েটা কে??(ভাবি)
কথাটা শোনার পরে তূর্য মেঘলার দিকে তাকালো।
—– আমার নাম মেঘলা।আমি আসলে তূর্যে ফ্রেন্ড।
—— আমি তূর্যের ভাবী..
দুইজনের পরিচয় শেষেই গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসলো।তূর্য শুধু একবার ভাবীর মুখের দিকে তাকাই একবার মেঘলার মুখের দিকে তাকাই।
ভাবী চলে গেল।
—– তোমার ভাবীটা কিন্তু খুব ভালো আর অনেক মিশুক।(মেঘলা)
—– হ্যা। মিশুক যে বুঝতেই পারছিলাম তোমাদের দেখে…(তূর্য)
চলবে………