দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ পর্ব ৩

#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা

বাড়ির সকল মানুষ,,চাকর থেকে শুরু করে একে একে সকলে নিচে বসার ঘরে জড়ো হলো। সকলের লক্ষ্য দিদুনের উপর। দিদুন একটা বড়ো লম্বাটে কারুকার্যের কাঠের তৈরী আসনে বসে আছেন। চোখে চশমা পরিহিত, তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রোদ্দুর,,আর রিফা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস শাহরিয়ার মানে রোদ্দুর আর রিফার আম্মু। এইদিকে চারদিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির কর্মচারী আর স্টাফরা, আমিও গুটিশুটি মেরে মামুনির পাশে দাঁড়িয়ে আছি,,সাথে মা আর আয়রা ও দাঁড়িয়ে।

কিছুক্ষন আগেই রিফার কাছ থেকে জানতে পারলাম এই বাড়ির যতো নিয়ম- কানুন আছে সব দিদুন ই ঠিক করেন,,আগে দাদু করতো কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর এখন দিদুন ই সব নিয়ম -কানুন ঠিক করে দেন। এই বাড়ির প্রথম নিয়ম ই হচ্ছে বয়সে যে বড়ো তার কথা ছোটোজনকে মানতে হবে।

নিরবতা ভেঙে দিদুন বলে উঠলেন,, এখানে তোমাদের ডেকে আনার কারনটা তোমরা সকলেই নিশ্চই জানো শুধু কায়নাত আর তার মা এবং বোন তা জানেন না।যেহেতু কায়নাতরা এই বিষয়ে কিছু জানে না, তাই আমি এই বাড়ির সকল নিয়ম-কানুন পুনঃরায় তোমাদের বলে দিচ্ছি।

প্রথম,,,এই বাড়ির বড়ো জনের যেকোনো কথা ছোটো জনকে মানতে হবে। অবাধ্য হওয়া যাবে না।

দ্বিতীয়,,,, এই বাড়ির মেয়েদের সম্পুর্ন স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কিন্তু তারা বাড়ির বাইরে গেলে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে তা বলে যেতে হবে। বাড়ির বাইরে বেশী রাত পর্যন্ত থাকা যাবে না। ছেলে বন্ধুর সাথে বাইরে যেতে পারবে না।

তৃতীয়,,, বাড়ির বড়ো কারোর সাথে তর্ক করা যাবে না। বড়োরা যখন কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা করবে, ছোটো জন তার মাঝে কথা বলতে পারবে না।

চতুর্থ,,, সকাল ৮:১৫ এর মাঝে খাবার টেবিলে সবাইকে উপস্থিত হতে হবে। দুপুরের খাবারের জন্য ১:৩০ এর মাঝে উপস্থিত থাকতে হবে। আর রাতে ৯:৩০ এর মাঝে। আর এই নিয়মগুলো আপনাদের সবাইকে মেনে চলতে হবে। আমি সবসময় আমার নিয়মগুলো জানিয়ে আপনাদের মতামত জানতে চাই,তাই আজ ও তার ব্যাতিক্রম হবে না। আপনাদের কি কোনো মতামত আছে?? এই বিষয়ে? থাকলে বলতে পারেন।

সবাই নিশ্চুপ,,,,,,,

কেও কোনো কথা বলছেন না তার মানে আজও আপনাদের আমার নিয়মে কোনো দ্বিমত নেই।হঠাৎ কায়নাত বলে উঠলো,,

আমার দ্বিমত আছে দিদুন। সবাই বিস্ফারিত চোখে তাকালো কায়নাতের দিকে,,কায়নাতের মা ওকে একটু খোচা দিয়ে ধীরে ধীরে বললেন,,তোর কি সুখ সহ্য হয়না? ঐ মহিলার মতামতে কেও কিছু বললো না,,আর তুই ঢ্যাং ঢ্যাং করে বলে দিলি,,, আমার দ্বিমত আছে!!মায়ের কথায় কর্ণপাত না করে কায়নাত আবারো বললো। দুঃখিত আপনাদের মাঝে কথা বলার জন্য,,,কিন্তু আমার জানামতে এখন আমিও এই বাড়ির সদস্য,, আর দিদুন আপনিও বলেছেন সবার মতামত / দ্বিমত পোষন করার সু্যোগ দেন,,তাহলে আমি কি আমার দ্বিমতটা বলতে পারি?

মিসেসঃ শাহরিয়ার বলে উঠলেন,, আমরা বাড়ির সদস্য হয়ে কিছু বলছি না,, আর তুমি দুইদিন ও হলো না এই বাড়িতে এসেছো এখনি দ্বিমত পোষণ করা শুরু করে দিয়েছো।

আহ্, বৌমা তুমি চুপ করো। কায়নাতকে বলতে দাও,,,বলো কায়নাত তুমি কি বলতে চাও,,

দিদুন আপনার দ্বিতীয় নম্বর নিয়মটায় আমার দ্বিমত আছে। আপনি বলেছেন এই বাড়ির মেয়েদের পুরো স্বাধীনতা আছে। তা ভালো কথা বলেছেন। কিন্তু তারা বেশী রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকতে পারবে না,, কোথায় যাচ্ছে কার সাথে যাচ্ছে সব বাড়িতে জানাতে হবে,,ছেলে বন্ধুদের সাথে মিশতে পারবে না,, তাদের সাথে বাইরে কোথাও যেতে পারবে না,।

হুম বুঝলাম আপনি এইগুলো এই বাড়ির মেয়েদের ভালোর জন্যই বলেছেন,,,শুধু আপনি নন আমাদের দেশের বেশির ভাগ পরিবারই এমনই একটা নিয়ম তাদের পরিবারের মেয়েদের জন্য বরাদ্দ্য রেখেছে কিন্তু দিদুন আপনিতো আপনার নিয়মে এই বাড়ির ছেলেদের নিয়ে একটা কথাও বললেন না,,,একটু থেমে কায়নাত আবার বলা শুরু করলো,,

ছেলেরা যখন তখন কাওকে না বলে বাড়ি থেকে বাইরে যেতে পারবে, রাতে দেরি করে বাসায় ফিরবে কিন্তু কেও কৈফিয়ত চাইতে পারবে না,, কারন তারা ছেলে। বাড়ির ছেলেরা মেয়ে-ছেলে সবার সাথে মিশতে পারবে,,,কই তাদের তো বলা হয় না যে মেয়েদের সাথে মিশো না,, হুম মানলাম তারা ছেলে তাই নিজেদের সেফটি তারা করতে পারবে,,, তাই তারা সবার সাথে মিশে কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সময় এইটা জানার কেও প্রয়োজন মনে করে না,,, যে এতো রাতে তারা কেনো বাসায় ফিরে,,,কোথায় গিয়েছিলো,, কেনো গিয়েছিলো,,, আর কার সাথে ছিলো যদি আমাদের দেশের পরিবাররা যেমনটা তাদের মেয়েদের সব বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখে, সচেতন থাকে মেয়েদের প্রতি। যেনো তার মেয়ে খারাপ পথে না যায়। মেয়েটার চরিত্র যেনো বিয়ের আগে পর্যন্ত খুব ভালো থাকে তাতে যেনো কোনো আচ না লাগে ঠিক তেমনি পরিবারের উচিত ছেলেদের প্রতিও সচেতন হওয়া কারন আমাদের পরিবারের বেশির ভাগ ছেলেরাই লাফাংগা আর বখাটে শুধু মাত্র তাদের পরিবারের জন্য। পরিবার যদি মেয়েরদের মতো ছেলেদের ও আজ একটু চোখে চোখে রাখতো তাহলে না এই দেশে ধর্ষকদের সংখ্যা বাড়তো আর নাই বা বখাটে ছেলেদের উৎপাত বাড়তো। সবশেষে আমার একটাই কথা যদি পরিবারে মেয়েদের জন্য কিছু নিয়ম থাকে তাহলে পরিবারের উচিত তাদের ছেলেদের জন্যও কিছু নিয়ম তৈরী করা,যেনো ছেলেদের একটু হলেও খারাপ পথ থেকে দূরে রাখা যায়।

সবাই বিস্ময়ের চোখে কায়নাতের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুরের ও একি অবস্থা,,,আর দিদুন তো মুগ্ধ নয়নে তার নাতবউ এর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে ভাবছে নাহ্ ঠিক মেয়েকেই এই শাহরিয়ার বাড়ির বউ বানিয়েছে তার পোতা,,,এই মেয়েই পারবে তার অবর্তমানে এই পরিবারের হাল ধরতে।

কায়নাত এতোক্ষনে কিভাবে এতোগুলো কথা বললো তা সে নিজেও বিশ্বাস করতে পারলো না। ভুল বলেছে নাকি ঠিক তাও জানেনা,,, লজ্জা আর ভয়ে মাথা নিচু করে আছে সে,,,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার। দিদুন হাল্কা হেসে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,,,

দেখলে তোমরা আমার যেই ভুলটা আজ পর্যন্ত তোমরা ধরতে পারলে না,, তা এই মেয়েটা ধরিয়ে দিলো। এই শাহরিয়ার বাড়ির পুত্রবধু হওয়ার যোগ্যতা রাখে এই মেয়ে।

মিসেস:শাহরিয়ার এর তার শাশুড়ীর কথাটা মটেও পছন্দ হলো না। এইদিকে রোদ্দুর ও মনে মনে কি যেনো একটা ভেবে হাল্কা হাসছে তার তোতাপাখির দিকে তাকিয়ে।

কায়নাতের তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না,,,সে বকা আর শাস্তি পাওয়ার বদলে এতো প্রশংসিত হচ্ছে।

দিদুন কায়নাতকে উদ্দেশ্য করব বললো কায়নাত এইদিকে এসো। কায়নাত ধীর পায়ে দিদুনের সামনে দাড়ালো,,,দিদুন কায়নাতকে তার দিকে ঝুকতে বললো।

আমাকে ঝুকতে কেনো বলছে?? মারবে নাকি আমাকে?? ভয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে দিদুনের দিকে ঝুকলো কায়নাত। দিদুন তার গলা থেকে একটা স্বর্নের বড়ো চেইনটা কায়নাতের গলায় পড়িয়ে দিলো। কায়নাত এইবার চোখ খুললো,,,যাক বাবা মারেনি কিন্তু এই চেইন কেনো দিলো।

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দিদুনের দিকে তাকালাম,,, দিদুন আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,,,এইটা হলো আমাদের বংশের খানদানি চেইন এইটা এই বাড়ির বংশধর এর স্ত্রীর জন্য বরাদ্দ যদি সেই স্ত্রী এই পরিবারের জন্য যোগ্য হয়। আমার শাশুড়ী এইটা দিয়েছিলো,,কিন্তু আমি এখনো এইটা আমার বৌমাকে দেইনি,,,কারন এখনো আমি তাকে এই পরিবারের দ্বায়িত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য মনে করিনি। কিন্তু যাক আমার নাতবউ কে আমি এইটার জন্য আমি যোগ্য মনে করেছি তাই এইটা তোমাকে দিলাম।

মিসেসঃ শাহরিয়ার,,, রাগে নিজের শাড়ি খামচে ধরলেন,, এই মুহুর্তটার জন্য সে অপেক্ষা করেছে এতোটা বছর কিন্তু আজ সেই মুহুর্তটা আসলেও সে নিজে এর অংশিদারিত্ত পাচ্ছে না,,,,ভেবেই তার শরীর জলে যাচ্ছে।
_____________________________________________________________________________________________

সকালের ঘটনার জন্য এখনো আমার শরীর কাপছে,,,,তখন ঐখান থেকে স্বাভাবিক ভাবেই সবাই চলে যায়,,, রোদ্দুর ও তার কাজে বেড়িয়ে পরে,,, সারাদিন আমি, আয়রা আর রিফা একসাথে ছিলাম,,,ওদের সাথেই আমার দিন কেটেছে।

হঠাৎ কায়নাতের ফোন বেজে উঠলো সে,,,ফোনটা হাতে নিয়ে একটু মুচকি হাসলো তারপর বেলকনিতে চলে গেলো,,,,

ফোনে কথা বলা শেষে কায়নাত পিছনে ফিরতেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেয়,,,নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে সামনে তাকাতেই কায়নাতের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখা যায়,,। সামনে রোদ্দুর কায়নাতের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে,,, আচমকা রোদ্দুর কায়নাতের ফোন হাত থেকে নিয়ে ফ্লোরে আছাড় মারে,,,,,ভয়ে কায়নাতের শরীর কেপে উঠছে,,,রোদ্দুরের এমন ব্যবহার কায়নাতের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না,,,,,
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
#চলবে

(ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন,,,, সবাই গঠনমুলক মন্তব্য করবেন প্লিজ,,,আমরা সময় নিয়ে লিখতে পারলে আসা করি আপনারাও ১ মিনিট সময় নিয়ে গঠনমুলক মন্তব্য লিখতেই পারবেন,,,,❤️😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here