#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ💖💖
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা
উমম,,উম্ ছাড়ুন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এইভাবে সাপের মতো পেচিয়ে আছেন কেনো আমায়??
রোদ্দুর কায়নাতের কথায় কর্নপাত না করে তাকে আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো,,,″উহু্ মিসেস:শাহরিয়ার এতো নড়াচড়া করো নাতো। ঘুমোতে দাও আমাকে,,″
রোদ্দুরের কথায় কায়নাতের রাগ যেনো আরো চৌগুন বেশী বৃদ্ধি পেলো। এই মুহুর্তে তাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেটা করার মতো পজিশনে কায়নাত নেই। রোদ্দুর তার বুকের মাঝে কায়নাতের মাথা শক্ত করে চেপে ধরে আছে আর তার এক পা কায়নাতের উপর তুলে দেওয়া। কায়নাত না পারছে নড়তে-চড়তে আর নাই মাথাটা উচু করে উপরে তাকাতে।
″ ৫ ফুটের একটা মেয়েকে এইভাবে কেও ধরে রাখলে তাকে মারার জন্য অন্যকোনো অস্ত্র আর লাগবে না। দম বন্ধ হয়ে সে এমনেতেই মার্″
°
°
আহ্!!!! ছা ,, ছাড়ু,,ন!! ব্যাথা পাচ্ছি।
আর কোনোদিন যেনো এইরকম কথা তোর মুখ থেকে না শুনি। নাহলে তোর যে কি অবস্থা হবে
I swear ,,, তা আমার নিজেরও জানা নেই।
আ..আচ্ছ..আচ্ছা আর ব বলবো না,,,এইবা,,র ত ছা,,,ড়ুন।
কায়নাতের গাল ছেড়ে দিয়ে কায়নাতকে আবার রোদ্দুর বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,
″তোতাপাখি খুব করে চাই তোমায়!!! কখনো দূরে যেওয়া না!! জীবনের প্রথম গুরুত্বটা তোমাকেই দেওয়া! আর শেষ গুরত্বটাও তোমারই প্রাপ্তি!! ভালোবাসি যে খুব করে তোমায়!!!″ প্লিজ কখনো ছেড়ে যেওনা।
রোদ্দুরের প্রতিটা কথায় আমি অবাকের চরম সীমায় পৌছে যাচ্ছি। কাল রাতের ঐসব কান্ড তারউপর আবার আজকে আমার প্রতি তার এতো কেয়ারিং সব কিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কি হলো টা কি লোকটার??? কাল থেকে আমার সাথে এতো ভালো বিহেভ করার কারন কি??
মাথা তুলে উপরে তাকিয়ে দেখি রোদ্দুর আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। তার বুকে চেপে ধরে রাখার কারনে আমি ভালোভাবে তার দিকে তাকাতে পারছি না। কিন্তু যতোটুকু আবছা দেখা যাচ্ছে,, তাতে বেশ ভালোই লাগছে আমার। চাইতে না চাইতেও ভালো লাগছে।
*
*
সুর্যের আলোর রশ্মি চোখে মুখে এসে পড়ায় ঘুম ভাঙলো আমার। পিটপিট করে তাকালাম আমি। হঠাৎ রোদ্দুরের কথা মনে হতেই পাশে তাকালাম। কিন্তু তাকে দেখতে পেলাম না,,,না চাইতেও আমার চোখ তাকেই খুজছে।
″মিসিং মি???″
শব্দগুচ্ছ গুলো কানে বাজতেই বুক ধক করে উঠলো পরোক্ষনেই চোখ মুখ শক্ত করে নিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বললাম: ″ এই সাত-সকালে কাকে মিস করতে যাবো আমি?″
রোদ্দুর তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বললো:″মিসেস:শাহরিয়ার,,,ঘুম থেকে উঠে আপনি তো আমাকেই খুজছিলেন তাই না?? ″
কি বলবো আমি? সত্যিই তো আমি ওনাকেই খুজছিলাম। যাই হোক সেইটাতো আর বলা যাবে না,,,তাই চুপ করে রইলাম আমি।
″কি হলো??″ বাকা হেসে বললো।
😒😒
ঐভাবে তাকানোর কি আছে??
আমি কোনো কথা না বলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।
…
…
…
″দিদুন অনেক দিন ধরেতো আমাদের কোনো পিকনিক করা হয় না। তো আমি ভাবছিলাম কি!!!!″
″হুম হুম বুঝেছি! পিকনিক করতে চাও! তাই তো??″
রিফা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।
হুম,,তা পিকনিক এ গেলে মন্দ হয় না। বাড়ির নতুন বউকেও নিয়ে একটু ঘুরিয়ে আনা যাবে!! মজা ও করা হবে। কি বলো!!
দিদুনের সায় পেয়ে যেনো রিফার মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো,,,উত্তেজিত হয়ে বললোঃ
″হুম দিদুন,, একদম ঠিক বলেছো। নতুন ভাবীকে নিয়েও ঘুরে আসা যাবে আবার নেহাল ভাইও এসেছে। মজা হবে অনেক″
নাহ্,,এখন কোনো পিকনিক করার দরকার নেই। এই বৃষ্টির দিনে কে পিকনিক করে রিফা!!!!
মাম্মা!!! কেও করে না,আমরা করবো।
নাহ্,,,এইরকম কাদা মাটির মাঝে কোনো পিকনিক এ আমি যাবো না। আর তুমিও না রিফা।
আহ্,,,বউমা এমন কেনো করছো?? এখনি যে পিকনিক হবে তেমন তো আর বলা হয়নি। কিছুদিন পর,, বৃষ্টি কিছুটা কমে গেলে আমরা আমাদের পুরোনো বাড়িতে পিকনিকে যাবো।
″কোথায় যাওয়ার কথা হচ্ছে নানু।″
আরে নেহাল ভাই,,,আসো আসো আমরা কিছুদিন পর পিকনিকে যাচ্ছি সাথে তুমিও যাবে। খুশি হয়ে বললো রিফা,,,
ওহ্ তাই নাকি?? তাহলেতো খুব মজাই হবে কি বলিস রিফা!!!
″তা আর বলতে!!″
″ভাবী ″ অখানে দাঁড়িয়ে কি করছো। তাড়াতাড়ি নিচে আসো!! রিফার কথায় সবাই উপড়ে সিড়ির দিকে নজর তাক করলো। কায়নাত সেখানে দাঁড়িয়ে।
দিদুন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
″ কায়নাত এসো এখানে,,,ওখানে কেনো তুমি?′″
″সিড়ি দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে নামছিলাম৷ রোদ্দুরের হঠাৎ এমন পরিবর্তনের কথা ভাবতে ভাবতে,,,,তখনি রিফা আর দিদুনের ডাকে আমার ধ্যান ভাঙলো,,,,আমিও হাশি মুখে নিচে চলে আসলাম″
…
নিচে নামতেই রিফা আমার এক হাত ধরে হেলতে দুলতে বললো,,,″গেস!! হোয়াট ভাবী!!!″
আমি চোখ দিয়ে ইসারা করে বললাম,,,, ″কী?″
″আমরা পিকনিকে যাচ্ছি!!!! ইয়েএএ!!!!!″
″রিফা! এমন লাফালাফি করছো কেনো?? ভুলে যেওনা তুমি এখন বড় হচ্ছো। সামান্য বিষয় নিয়ে তোমার এমন মাতামাতি মানায় না″ কঠিন স্বরে বললেন মিসেস:শাহরিয়ার।
″রিফা চুপ হয়ে গেলো। বুঝতেই পারলাম ওর মন খারাপ হয়েছে। আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে একটা হাসি দিয়ে ওকে স্বান্তনা দিলাম,,,যেনো মন খারাপ না করে″
বউমা,,, এখন মজা করার ই বয়স। রিফা এখনও এতোটাও বড় হয়নি যে তুমি ওকে এইভাবে শাসন করবে। মিসেস:শাহরিয়ার কিছু না বলে সোজা চলে গেলেন।আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,,,
″এই বাড়িতে শুধু একজন মানুষকেই আমার একটু অদ্ভুত লাগে।″
………
আয়রা আর মা কিছুদিনের জন্য তার ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। বেড়াতে গিয়েছিলো বলতে ভুল হবে,,,তাদের দেখাতে গিয়েছিলো যে তারা এখন কতো বড়ো বাড়িতে থাকে,, তাদের এখন কতো সুখ আর আরাম হয়েছে। আমার মা আবার বরাবরই লোক দেখানোর বেলায় এক্সপার্ট। তো আজকে তারা এই বাড়িতে এসেছে,,,তাই তাদের সাথে দেখা করার জন্য গেস্ট রুমের দিকে পা বাড়ালাম। আমি নিচের দিকে তাকিয়েই হাটছিলাম। আমি খেয়াল করিনি যে সামনে থেকেও কেও এইদিকে আসছিলো।
হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলাম তখনি পাশের দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলাম,,″যাক বাবা পড়ে যায়নি″
″এই মেয়ে চোখে দেখতে পারো না?? ফেলে দিলেতো আমায়!!!!আউচ্!!! গেলোরে আমার কমোরটা″
কারো ন্যাকা কান্নার আওয়াজে সামনের দিকে তাকালাম,,,সামনে একটা মেয়ে পড়ে আছে।
″এই মেয়ে ঐভাবে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে ধরে উঠাও″
″হুম″,,, তাড়াতাড়ি করে মেয়েটাকে টেনে তুলে নিলাম। মেয়েটা উঠে তার জামা ঝারতে ঝারতে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,,,″কে তুমি? তোমাকে এই বাড়িতে আগে দেখিনিতো″
″নীরা আপু ও আমার নতুন ভাবী কায়নাত″ রিফা আমার হাত ধরে মিষ্টিমুখ করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,,,
নীরা বুঝেও না বুঝার ভঙ্গিতে ঘাবড়ে যাওয়ার শুরে বললো,″নেহাল বিয়ে করে ফেলেছে?? ইনি নেহালের বউ ত্,,তাই না?″
″আরেহ্ না নীরা আপু″
একটু হাসার চেষ্টা করে নীরা আবার জিজ্ঞাসা করলো,,″তাহলে ক,,,,কা,,র??″
কার আবার আমার রোদ্দুর ভাইয়ার,,,বলেই রিফা কায়নাতকে হাসিমুখে জড়িয়ে ধরলো।
″এইদিকে কথাটা শুনে নীরার মাথায় যেনো বাজ পড়লো। সে এক কদম পিছিয়ে পড়লো,,,,ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কবজিতে কচলাতে লাগলো″
″কি হলো নীরা আপু? এমন করছো কেনো?″
″কিছু হয়নি রিফা,,জার্নি করে আসছিতো তাই একটু মাথা ব্যাথা করছে আরকি!!″
″ওহ্ আচ্ছা!!! তাহলে তুমি উপরে রুমে যাও। গিয়ে একটু রেস্ট নাও। আম্মু বাহিরে গেছে আসলে তোমার সাথে দেখা করতে বলবোনি″
নীরা মেকি হেসে,,, মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে ব্যাগ নিয়ে উপড়ে চলে গেলো।
…
″কে ও?? রিফা″
″কে? নীরা আপু? ও হলো আমার খালামুনির মেয়ে নীরা। তোমার বয়সী হবে। আসলে আমার খালামুনি দুই বছর হলো মারা গেছে। তাই নীরা আপু এখন প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসে। আর আমাদের বাড়িতে কোনো কিছুর আয়োজন করলে বা কোথাও ঘুরতে গেলে ওকে নিয়ে যাওয়া হয়। নীরা আপুও অনেক ভালো। আমাদের বাড়ির সবাই ওনাকে খুব আদর করে।
″অহ্,, আচ্ছা ″তা ভালোতো!!! হাসি মুখে বললাম।
″আসো ভাবি তোমার ছোট্ট বোনটাকে ইকটু দেখে আসি। মেয়েটা সত্যি আমার মনের অনেক কাছে চলে এসেছে। না দেখলে ভালোই লাগে না।″
″হুম চলো″
………
বার বার নিজের মুখে পানি ছিটাচ্ছে,,, আয়নার দিকে ক্ষীনদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে,,″কেনো আল্লাহ্?? তুমি আমার সাথে এমন কেনো করো? আমি যাকে সব থেকে বেশী ভালোবাসি তাকেই আমার কাছ থেকে নিয়ে নাও তুমি। আমি কোনোদিনও কারো সাথে খারাপ কিছু করিনি। তাহলে কেনো আমার কাছ থেকে আমার আপন মানুষগুলোকে তুমি অন্যকারো করে দাও?? আমার মা কে তুমি নিয়ে নিলে। আর এখন ওকেও তুমি নিয়ে নিলে?? কেনো আল্লাহ্ কেনো?? ″ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে নীরা। তার ভেতরের কষ্টগুলো যেনো পাহাড় সমান লাগছে ওর কাছে।
″দরজা খুলো নীরা″,,,
আমি নীরার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় ঠক্ ঠক্ করেই যাচ্ছি।কিন্তু ভেতর থেকে কোনো রেস্পন্সই পাচ্ছি না। দিদুন আমাকে পাঠালো নীরাকে ডাকতে। তাই আসলাম। আবারও দরজায় ঠক্ করতে যাবো ওমনি দরজাটা খুলে গেলো।
স্বাভাবিক ভাবেই আমার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে নীরা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তার এই হাসির পিছনেও কিছু একটা লুকিয়ে আছে যা আমি বুঝতে পারছি না। মেয়েটার চোখ কেমন ফুলে উঠেছে মনে হচ্ছে। কান্না-টান্না করেছে নাকি?? ধুর কি ভাবছি কান্না কেন করবে ও!!! আমার ভাবনার মাঝেই নীরা বলে উঠলো,,,″কিছু বলবে?? কায়নাত″ হাসি মুখে।
″অহ্,,,হ্যা!! দিদুন তোমাকে ডেকেছেন″
″ওও,,,আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি″
″ঠিক আছে″ বলে আমি স্থান ত্যাগ করলাম। দরজা লাগালোর বিকট শব্দে আরেকবার পিছনে তাকালাম।অজান্তেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসলো ″অদ্ভুততো মেয়েটা!!″
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে
(আমি দুই দিন গল্প দিতে পারিনি তার জন্য দুঃখিত। আমি একটু অসুস্থ আছি। তাও কাল থেকে চেষ্টা করবো প্রতিদিন গল্প দেওয়ার। আমার জন্য দোয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম _♥️)
#_Farju_💜