দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ পর্ব ১০

#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ💖💖
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা

খাটের উপর গম্ভীরমুখ করে বসে আছি। মনে হচ্ছে আজ ঐ বদমেজাজি টাকে গলা টিপে মেরেই ফেলি। কিন্তু আমার এইসব যে কেনো মনে হচ্ছে তা আমার নিজেরও জানা নেই। তখন রোদ্দুর নীরার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো। আর এইটা দেখার পর থেকেই আমার যতো রাগ। কেন রাগ তাও জানি না।

″তোতাপাখি ″

ডাকটা কানে বাজতেই আমার রাগ এভারেস্টের চুড়ান্ত টপকে আকাশ ছুই ছুই। কপাট দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললাম,,,,

আমার একটা সুন্দর নাম আছে ″কায়নাত″।হয়তো এই নামে ডাকবেন আর নয়তো ডাকবেন না কিন্তু আপনি তোতাপাখি আর ডাকবেন না আমাকে,,,,দ্রুতো মুখ চালিয়ে কথাগুলো বলেই তার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম।

কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না। তাই ঘারটা একটু বাকালাম,,,দেখলাম উনি দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে আছেন আর ঠোঁট টিপে হাসছেন। দৃষ্টি তার আমার দিকেই। পা থেকে মাথা অবদি আপাদমস্তক একবার চোখ বুলিয়ে আবারও রাগ দেখিয়ে বলে উঠলাম,,,কি হলো! আপনি এইভাবে হাসছেন কেনো? আমি কি কোনো কৌতুক বলেছি নাকি.??

তোমার এমন বাচ্চামো রাগ আর ফেস, কৌতুককেও হার মানাবে, বলেই জোরে হেসে দিলো। এই মুহুর্তে আমার ওনার হাসি একটুও সহ্য হচ্ছে না। কটমট করে বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে গেলাম।

″সরুন সামনে থেকে″

না সরলে?

সরতে বলেছি। আমি এই ঘরে থাকবো না। রিফার কাছে যাবো।

যেতে না দিলে?

এইবার মাথা উচু করে তার দিকে তাকালাম,,,সেই মারাত্মক সুন্দর বাকা হাসিটা মুখে এখনো আছে। তাড়াতাড়ি করে চোখ নামিয়ে ব্যাস্ত হয়ে বললাম,,,

পথ ছাড়ুন আমায় যেতে দিন৷

ছাড়বো না পথ।

উফফ্ আপনিতো বড্ড বেহায়া মানুষ। আমাকে যেতে কেনো দিচ্ছেন না?? আমারতো আর দরকার নেই আপনার। এতোক্ষনতো নীরার সাথে ভালোই সময় কাটিয়ে এসেছেন। এখনও থাকতেন ওর কাছে। এখানে আবার আসার কি দরকার ছিলো।?? ওর সাথেই সারারাত কথা বলে পার করে দিতেন। আমাকে জ্বালানোর মানে কি!!! এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নিলাম। পরোক্ষনেই কি বলেছি তা মনে করে জিবে কামর কাটলাম।

রোদ্দুর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কায়নাতের দিকে । এই মুহুর্তে কায়নাতের বলা কথাগুলোর অর্থ না বুঝলেও পরে সব বুঝতে পেরে শব্দ করে হেসে দিলো।

ইশশ্,,, লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। রাগের বসে কিসব বলে ফেললাম। এখন কি ভাববেন রোদ্দুর আমার সম্পর্কে। নিশ্চই উলটা পালটা কিছু ভাববেন। আমার ভাবনার মাঝেই কারো হাতের স্পর্শ আমার কোমড়ে অনুভব করলাম। সাথে সাথে আমার হৃদস্পন্ধন বেড়ে গেলো নিচের ঠোঁট কামরে ধরে মাথা নিচু করে ফেললাম। রোদ্দুর এক হাত দিয়ে আমার কোমড় আকরে ধরে আরেক হাত দিয়ে আমার কপালের চুল গুলো কানে গুজে দিলো। থুতনি ধরে আমার মুখ হাল্কা উচু করে বললো,,,

হিংসে হয় তাহলে? মিসেস:শাহরিয়ার!!

কাপা কাপা গলায় বললাম,,,হি্, হিংসে ক্ কে নো হ্ হবে!! ছা,,ছাড়ুন যেতে দিন আমায়।কথাটা বলার সাথে সাথে রোদ্দুর আরো শক্ত করে আমার কোমড় আঁকড়ে ধরলো।

″ছাড়ার জন্যতো ধরিনি″ কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন। রোদ্দুরের গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে পড়ছে। তার প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাস আমি গুনতে পারছি এতোটা কাছে চলে এসেছেন উনি। নাহ্ আর বেশীক্ষণ এইভাবে থাকলে আমার হাল নাজেহাল হয়ে যাবে। ধাক্কা দেওয়ার জন্য রোদ্দুরের বুকে হাত রাখবো ওমনি আমার হাত খপ করে ধরে ফেললেন।

না না,,,তোতাপাখি এইভাবে উড়াল দিতে তো দিবো না। আমার খাচায় বন্দি তুমি শুধু তালা দেওয়াটা বাকি।

রোদ্দুরের কথা কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।

রোদ্দুর হাল্কা হাসলো। আজ খেয়াল করলাম রোদ্দুর হাসলে তার গালের বাম পাশে ছোটো করে একটা টোল পড়ে। যা তার হাসিটাকে আরো বেশী মারাত্মক সুন্দর করে তোলে। আচমকা রোদ্দুর আমাকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। তার বুকের টিপ টিপ আওয়াজগুলো আমি অনুভব করতে পারছি।

মি:শাহরিয়ার ছাড়ুন। কেও এসে পড়বে,,দরজা খোলা যে!!

″চুপ করে এইভাবেই থাকো না প্লিজ!!! ভালো লাগে খুব বেশী ভালো লাগে।″

এই প্রথম রোদ্দুরের আকুতি ভরা নেশালো কন্ঠ শুনলাম। আমার ও যে বলতে ইচ্ছা হয় এখন মি:শাহরিয়ার,,,, ″ভালো লাগে বড্ড বেশী ভালো লাগে এখন!! আমার আশেপাশে আপনার উপস্থিতি টের পেলে!!″

……

নীরা একটা ফুলদানির পিছনে দাঁড়িয়ে কায়নাত আর রোদ্দুরের সব কথা শুনেছে। তার চোখে হিংস্রতা,,,সহ্য হচ্ছে না কিছুই তার। মন চাইছে এখনি গিয়ে তাদের আলাদা করে দেই। কিন্তু না সেটা সে করতে পারবে না সে নিরুপায়। হতাশ হয়ে নীরা তার রুমের দিকে যাচ্ছিলো। তখন নেহালের রুম থেকে কথার শব্দ শুনতে পায়। নিশ্চুপে নেহালের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পড়ে নীরা। দরজা খানিকটা ঠেলে সামনে তাকাতেই ″থ″ হয়ে যায় নীরা। নেহাল উলটো দিকে ঘুরে আছে। হাতে ফোন আর ফোনের স্ক্রিনে একজনের ছবি স্পষ্ট দেখতে পারছে নীরা। এই ছবি আর কারো নয়,, কায়নাতের ছবি তা নীরার বুঝতে একটুও বেগ পেতে হলো না। ৪ দিন ধরে যে মেয়েটাকে সে দেখেছে তাকে চিনতে তার ভুল হবে এইটা হতে পারে না।

হ্যাঁ,, এইটা কায়নাতের ছবি। কিন্তু নেহালের কাছে কেনো?? নীরা অস্পষ্টভাবে নেহালের কথা শুনতে পেলো,,,

″প্রেয়সী আমি সত্যিই তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তোমাকে যে আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারবো না আবার ফিরেও পাবো না। তুমি কেন হলে না আমার?? কেনো???″

নীরার এইটুকু শুনে আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না। নেহাল যে কায়নাতকে ভালোবাসে এইসব কথায় তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।

নীরা চলে আসলো তার রুমে।সোজা বেলকনিতে চলে গেলো।তাকালো আকাশের দিকে মুচকি হেসে বললো,,,

চাঁদের নিজস্ব আলো নেই কিন্তু তারপরও চাঁদ সূর্যের কাছ থেকে আলোকে কেড়ে নিয়ে রাতকে আলোকিত করে। যা সব থেকে বেশী সুন্দর ″আলো চাঁদের নয় তবুও চাঁদের সাথেই বেশী মানায়″ কথাগুলো বলেই বাকা হাসি দিলো নীরা। তার মাথায় যে বড়ো সরো কিছু চলছে তার আংশিক বহিঃপ্রকাশ এই কথাগুলো।

………

সকালে সবাই নাস্তা করে দিদুনের ঘরে জড়ো হয়েছে। দিদুন সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছেন। একে একে সবাই এসে পড়লো দিদুনের ঘরে।

আমি পিকনিকে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে তোমাদের সাথে কথা বলতে চাই। এখন বাইরে বৃষ্টির পরিমান কমে গেছে। হাল্কা মিষ্টি রোদ বিরাজ করছে এখন,,, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, দুই দিন পরই আমারা আমাদের পিকনিকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো।

দিদুন রিফাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,,

রিফা খুশিতো এইবার??

রিফা উত্তেজিত হয়ে দিদুনকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,, খুশি মানে!! সুপার ডুপার খুশি দিদুন,,,উম্মাহ্😘।

রিফার কান্ড দেখে সবাই হো হো করে হেসে দিলো।

………

আমি,, রিফা আর আয়রা বাগান দিয়ে হাটছি।

আয়রা আমার হাত ধরে বললো,,,,কায়ু আপু ও কায়ু আপু।

হুম আয়রা বল!!

আমি কি আর স্কুল যাবো না?? এক মাসের বেশী হয়ে গেলো আমি স্কুল যাই না। আমার যে আর ভালো লাগে না। আমার বন্ধুদের সাথেও দেখা হয় না। মন খারাপ করে বললো আয়রা।

হুম!! তাই তো কায়নাত ভাবী। আয়রার স্কুলের কথা তো আমিও ভুলে গেছিলাম। ওকেতো স্কুলে আবার নিয়ে যেতে হবে। মেয়েটার পড়া লেখার তো ক্ষতি করা যাবে না। আর তোমারও তো ভার্সিটিতে যাওয়া হয়না। তোমাকেও তো যেতে হবে।

হুম! রিফা। আয়রাকে না হয় স্কুলে দিলাম। কিন্তু আমি কিভাবে ভার্সিটিতে যাবো বলো??

মানে? তুমি কেনো যেতে পারবে না??

আমাকে কি যেতে দিবে? একটু ইতস্ত করে বললাম।রিফা আমার কথা শুনে হেসে দিলো।

আরে ভাবী তুমি এতো চিন্তা করো না। দিদুন তেমন মানুষ না যে,,বাড়ির বউ বলে তাকে বাইরে গিয়ে পড়তে দিবে না। আর রোদ্দুর ভাইয়া তো সিউরলি তোমাকে যেতে দিবেন। তুমি আজ কথা দিদুনকে এই বিষয়ে জানিয়ে দিয়ো।

ইয়েএএ!!!!! তার মানে আমি স্কুলে আর আপু ভার্সিটিতে যাবে।

হুম আয়রা!! চলো এখন একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

হুম চলো রিফা আপু।

ভাবী তুমি কি যাবে? আমাদের সাথে?

না রিফা তোমরা যাও।

আচ্ছা।
……

বাগান থেকে ফিরে আসার সময় আমার চোখ গেলো নীরার রুমের বেলকনির দিকে। মেয়েটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে অদ্ভুতভাবে। আমি সেইদিকে এতো ভ্রুক্ষেপ না করে চলে আসলাম বাসার ভিতরে।

………

″আরে আস্তে আস্তে,,,এখনিতো পড়ে যাচ্ছিলে কায়নাত।″আমার কোমড় ধরে কেও একজন কথাগুলো বললো। বাসার ভিতরে ঢুকার সময় কারো সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নেই তখনি কেও একজন আমায় ধরে ফেলে। উপরে তাকিয়ে দেখি এইটা নেহাল,,,তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নেই উনার কাছ থেকে,,,,″উফফ্ কি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি″মনে মনে বললাম।

″সরি আমি দেখিনি″

কোনো ব্যাপার না। ভুল হতেই পারে। হাসি মুখ বললো নেহাল। প্রতিউত্তরে আমিও হাল্কা হেসে সেখান থেকে চলে আসলাম।

________________________________________
________________________________________

রাতে বসার ঘরে বসে সবাই আলোচনা করছে। পিকনিকে কি করবে!! কি রান্না করা হবে!! এইরকম টুকটাক সব বিষয় নিয়ে। আমিও এক কোনায় একা বসে আছি। আর বাকি সবাই এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে। রোদ্দুর এখনো আসেনি।

কিছুক্ষন পর,,,,নেহাল আমার পাশে এসে বসলো,,,,আমি একটু সরে গেলাম। দূরত্ব বজায় রেখে বসলাম। নেহাল কিছু একটা ভেবে বললো,,,

কায়নাত তুমি এখানে একা বসে আছো কেনো??

″এমনি ″

কায়নাত একটা কথা বলি?

হুম বলেন।

আমরা কি ফ্রেন্ডস হতে পারি? তুমি যদি চাও।

ফ্রেন্ডস হতে ক্ষতি কি?? হওয়াই যায়। হাসি মুখেই বললাম। আমার উত্তর পেয়ে নেহাল যেনো এভারেস্ট জয় করার মতো খুশি হলো। কিছু বুঝতে পারলাম না। তারপর কথা বলা শুরু করলো। তার কথার মাঝে মাঝে হাসলাম অনেক। শেষে একটা মজার কথা বললো,,, যা শুনে আমি হাসছি আর তখনি আমার চোখ গেলো মেইন দরজার দিকে,,, রোদ্দুর দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখ আর মুখের ভঙিতা দেখেই আমার মুখ থেকে হাসি উধাও হয়ে গেলো। রোদ্দুর যে প্রচন্ড রেগে আছে তা তার মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।রোদ্দুর আমাদের সামনে দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো,,,,রিফা দুইবার ডাক দিয়েছে কিন্তু রোদ্দুর একবারও পিছনে তাকালো না।

আমিও উঠে রোদ্দুরের পিছু পিছু যেতে লাগলাম। সিড়ি দিয়ে উপড়ে উঠার সময় নীরাকে নিচে নামতে দেখলাম। তার মুখে এক অদ্ভুত হাসি বজায় রেখেছে। যা আমি বুঝি না।

ওর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দ্রুত ঘরে চলে গেলাম। দেখলাম রোদ্দুর এখনো চেঞ্জ করেনি সোফায় হেলান দিয়ে আছে আর আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম,,,,

মাথা ব্যাথা করছে??
……
কিছু বললো না। আবার জিজ্ঞেস করলাম,,,

খাবার নিয়ে আসবো?? কিছু খাবেন এখন।
..…
এখনো কিছু বলছে না। আরে কিছু বলছেন,,,,,আর কিছু বলার আগেই রোদ্দুর উঠে এসে আমার গালে স্বজোড়ে থাপ্পড় মেরে দিলো। আমি গালে হাত দিয়ে হতভম্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখের পানিতে আমার চোখ দুটি ঝাপ্সা হয়ে এলো।
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে

#_Farju_💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here