#ধর্ষিতা_বউ
#১৩তম_পর্ব
–
প্রাপ্তি সায়ানকে দেখে অন্য দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছিলো। তারপর সায়ান জিজ্ঞেস করলো,
-কেমন আছো?
প্রাপ্তি চুপ।কিছুক্ষন পরে সায়ান আবার জিজ্ঞেস করলো
-কথা বলবে না আমার সাথে?
প্রাপ্তি চুপ।সায়ান প্রাপ্তির কাধে হাত দিয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।বলল,
-কথা বলো না কেনো?রাগ করে আছো আমার উপরে তাই না?
-প্রথমত এখানে “তুমি” কে?আমি তো সবসময় “তুই” ছিলাম আপনার কাছে।আর দ্বিতীয়ত আপনার উপর আমার কোনো রাগ অভিমান নেই।যা ছিলো সব মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছি।
-এইভাবে কথা বলছো কেনো প্রাপ্তি?আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
-ভুল!!কিসের ভুল?
-তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।অনেক জ্বালিয়েছি।আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
-দেখুন এসব বিষয়ে কথা বলার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।সো প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দিন।You can leave now..excuse me..
বলেই প্রাপ্তি চলে যেতে নিলো।সায়ান পেছন থেকে ওর হাত চেপে ধরলো-
-প্লিজ প্রাপ্তি আমার কথা শুনো।আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-আমার হাত ছাড়ুন।আমি আপনার কেউ না।
এই বলে প্রাপ্তি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু সায়ান ওর হাত টেনে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।ওর গলায় হাত রেখে বলল
-আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমার অভিনয়গুলো কে সত্যি ভেবেছিলে আর এখন সত্যি ভালোবাসাগুলোকে কেনো ঠুকরে দিচ্ছো অভিনয় ভেবে?
-মিস্টার সায়ান চৌধুরী, আপনি হয়তো ভুলে গেছেন বিশ্বাসের জায়গাটায় একবার আঘাত লাগলে তা দ্বিতীয়বার জোড়া লাগতে বিশাল সময় নেয়।
এই কথা বলেই সায়ানের হাতে ধাক্কা দিয়ে প্রাপ্তি নিচে চলে যায়।আর সায়ান অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষন।তারপর সায়ান নিচে যায় প্রাপ্তিদের বাসায়।প্রাপ্তি তার রুমের দরজা আটকিয়ে রাখে।সায়ান অনেকবার নক করে কিন্তু প্রাপ্তি দরজা খুলে না।তারপর প্রাপ্তির মা সায়ানকে বুঝিয়ে চলে যেতে বলে।
রাতে ডিনারের পর প্রাপ্তির মা-বাবা,দাদী প্রাপ্তিকে বুঝায়
-দেখ মা,সায়ান ওর ভুল বুঝতে পেরেছে।তুই ওর কাছে ফিরে যা।এটাই তোর জন্য মঙ্গল হবে সাথে তোর বাচ্চার জন্যও।(মা)
-না মা।আমি কোনো অবস্থাতেই ওই জানোয়ার নরপিশাচের কাছে ফিরে যাবোনা।যে আমাকে একবার খুন করতে চেয়েছে সে যে আরেকবার একই কাজ করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
-তোর গর্ভে ওর সন্তান আছে দিদিভাই।ও এই কাজ আর করবে না। বিশ্বাস রাখ।(দাদী)
-হ্যাঁ তোর মা ঠিকই বলছে।ওর কাছে ফিরে যাওয়াই তোর জন্য উত্তম হবে যেহেতু ও তোকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে।(বাবা)
-না বাবা আমি যাবো না।যদি আমাকে তোমাদের বাসায় রাখতে কোনো সমস্যা হয় তাহলে খোলাখুলি বলে দাও আমি আমার পথ বেছে নিবো।
-দিদিভাই এইভাবে বলিস না।স্বামী মেয়েদের জান্নাত।ও যখন ওর ভুল বুঝতে পারসে তুই ওর কাছে ফিরে যা।(দাদী)
-বাহ তোমরা সবাই দেখি সায়ান চৌধুরীর পক্ষে কথা বলছো। ও আমার সাথে কি করলো সেটা একবারও ভাবলে না?আমি কোনোভাবেই ওই নরকে ফিরে যাবোনা আর।এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।
বলেই প্রাপ্তি ওর রুমে চলে গেলো।রাত ১২ তা বাজে ওর চোখে ঘুম নেই।হঠাৎ করেই ফোন স্ক্রীনে চোখ পড়ে।তূর্য কল করছে।বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পর প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করলো।
-হ্যালো,কিরে তোকে এতো কল দেই কল রিসিভ করিস না কেনো?আমার উপর কি রেগে আছিস?
-না।রেগে থাকবো কেনো!
-গত কয়দিন ধরেই তুই আমার কল রিসিভ করছিস না ঠিকমতো।কি হয়েছে বল তো!
-কিছু না।
-তোকে বলতে বলেছি।বল কি হয়েছে।
তারপর প্রাপ্তি তূর্যকে সব খুলে বলল।
সকালে প্রাপ্তি ঘুম থেকে উঠেই রেডি হচ্ছিলো বাইরে যাওয়ার জন্য।ভার্সিটি যাবে।রেডি হয়েই ও বাইরে চলে গেলো।ভার্সিটি যাচ্ছে ক্লাস করছে ভালোই যাচ্ছে ওর দিনকাল।তূর্য এতোটা সাপোর্টিভ যা প্রাপ্তি কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।প্রতিটা পদে তূর্য ওকে হেল্প করে।
সায়ান প্রাপ্তিকে কল দিয়েই যায়।কিন্তু প্রাপ্তি রিসিভ করে না।বিরক্ত হয়ে ও সিম চেঞ্জ করে ফেলে।তারপর সায়ান যতই কল দেয় নাম্বার অফ।
দুইদিন পর সায়ান প্রাপ্তিদের বাসায় আসে।ওর হাতে একটা খাম ছিলো।রাগে গদগদ করতে করতে ও ভেতরে ঢুকলো।এসেই ডাকা শুরু করে প্রাপ্তিকে কে।প্রাপ্তি এসে বলে,
-কি সমস্যা?এটা ভদ্রলোকের বাড়ি।এটা আপনার চৌধুরী ভিলা না যে নিজের ইচ্ছামতো চিৎকার চেঁচামেচি করবেন।
-এটা কি?(হাতের খামটা উঁচিয়ে)
-কেনো দেখেন নি খুলে ওটা কি?
-দেখেছি।কিন্তু এসবের মানে কি প্রাপ্তি?
প্রাপ্তির মা আর দাদী সামনেই ছিলো।প্রাপ্তির মা জিজ্ঞেস করলো
-কি হয়েছে? কি ওটা?
-ডিভোর্স লেটার!(প্রাপ্তি)
-এসব কি দিদিভাই?ও তোর স্বামী।(দাদী)
-না দাদী।ও আমার কেউ না।ও আমার ধর্ষক স্বামী যে বৈধভাবে আমাকে রোজ ধর্ষণ করতো।কি করে বলো তোমারা ও আমার স্বামী?
তারপর তারা আর কিছু বলেনি।প্রাপ্তি সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমি পেপারস এ সাইন করে দিয়েছি আপনিও সাইনটা করে দিলে ভালো হয়।কোর্ট এ জমা দিতে হবে।
-আমি সাইন করবোনা।
-আপনাকে করতেই হবে।ভালোয় ভালোয় সাইন করুন নাহলে আমি আপনার নামে নির্যাতনের কেস করতে বাধ্য হবো।
-তুমি আমায় ভয় দেখাচ্ছো?সায়ান চৌধুরী কাউকে ভয় পায়না।কথাটা মাথায় রেখো।
বলেই সায়ান খামটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলো।
প্রাপ্তি আর কিছু না বলে রুমে এ চলে গেলো।বিকালে ওর মা আর দাদী ওকে অনেক বুঝালো।কিন্তু ও কিছুতেই রাজি হচ্ছিলোনা।ও ডিভোর্স চায়।প্রাপ্তির মা বলল
-দেখ প্রাপ্তি আমরা তোর ভালো চাই।তুই সায়ানকে ডিভোর্স দিচ্ছিস ভালো কথা।আমাদের আপত্তি নেই।কিন্তু ডিভোর্স দিলে তোর এই বাচ্চাটাও নষ্ট করতে হবে।হয় সায়ানের কাছে ফিরে যাবি নাহয় বাচ্চা নষ্ট করবি।আমরা তোকে কতদিন আমাদের ঘাড়ে বসিয়ে রাখবো?
-ওহহ।আমি তাহলে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি তোমাদের কাছে?
-বোঝা না।সমাজের সামনে…..
-সমাজ… সমাজ…সমাজ।এই সমা একদিন তোমাদের ধ্বংস করবে দেখে নিও।
কেউ আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো।প্রাপ্তি প্রচন্ডভাবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।তূর্যকে কাছে সব জানায়।
কিছুদিন কেটে যায় এইভাবে।সায়ান প্রাপ্তিকে ডিভোর্স দিচ্ছেনা।এদিকে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাপ্তির গর্ভের সন্তান বড় হতে লাগলো।ওর শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতে লাগলো।ভার্সিটি তে দিনদিন সবাই ওকে অবহেলা অবজ্ঞার চোখে দেখতে লাগলো।ওর কাছের দুই বন্ধুও ওকে কিছুটা এড়িয়ে চলছিলো।আরিয়ানের সাথে পরিচয়ের কিছুদিন পর থেকেই ও প্রাপ্তিকে পছন্দ করতে লাগলো।কিন্তু প্রাপ্তিকে এইভাবে দেখার পর ও সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়লো।ভার্সিটি তে সবাই ওকে এইভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কারনে ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।তারপর একদিন ও আরিয়ান আর জয়ার সাথে কথা বলে।ওদেরকে জানায় যে ও বিবাহিত।তারপর জয়া বলে
-এই কথা আগে বলতে পারতি তুই আমাদেরকে।অন্তত এইভাবে ভুল বুঝতো না কেউ তোকে।
প্রাপ্তি চুপ।তারপর জয়া আবার বলল
-ভাইয়া কে রে?কখনো তো দেখালিও না বললিও না।তোর সাথে যে ছেলেটা প্রায় সময় আসে সে??
-কোন ছেলেটা?
-ওইযে লম্বা করে,ঝাকড়া চুল, চশমা পরে,ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটা।
-তূর্য??
-নাম তো জানিনা ওনার।
-হ্যাঁ ওর কথাই বলছিস।না ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।ও আমার হাজব্যান্ড না।
-তাহলে কে তোর হাজব্যান্ড?
-ও মরে গেছে কয়েকমাস আগে।
-মরে গেছে মানে?(আরিয়ান)
-মানে আবার কি।মরে গেছে মানে মরে গেছে।
কেউ আর কোনো কথা জিজ্ঞেস করলোনা প্রাপ্তিকে।
প্রাপ্তি পথেঘাটে আসা যাওয়ার সময় অনেকেই অনেক কথা বলাবলি করে,ওর বাবাকে অনেকেই অনেক কিছু বলে।একদিন বিকালে ওর বাবা ওকে বলে,
-আমি বাসা থেকে বের হতে পারিনা লোকলজ্জার ভয়ে।শুধুমাত্র তোর কারনে।তুই কেনো ফিরে যাচ্ছিস না সায়ানের কাছে?
-আমি একবার আমার উত্তর দিয়ে দিয়েছি বাবা।তোমরা চিন্তা করো না।আমি চলে যাবো এখান থেকে।
-কোথায় যাবি?
-যেদিকে যেতে পারি।তোমরা তো তোমার সন্মান হারিয়ে ফেলছো আমার কারনে।আমি চাইনা আর কিছু হোক।
কথা বলার মধ্যেই তূর্য আর ওর মা আসলো প্রাপ্তিদের বাসায়।সবাই ড্রইং রুমেই বসে ছিলো।তারা এসে বসলো।তূর্যর মা মিষ্টি আর অনেক ফল নিয়ে এসেছিলো।তারা সবাই প্রথমে কুশল বিনিময় করে নিলো কিছুক্ষন কথা বলল।তারপর প্রাপ্তির বাবা বলল
-এতো মিষ্টি ফল আনার কি দরকার ছিলো আপা?
-নিয়ে আসবো না?বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলে কি খালি হাতে আসা যায় নাকি?
-মানে?বুঝলাম না আপা?(প্রাপ্তির মা)
-মানে এই যে আমি প্রাপ্তিকে আমার ঘরের লক্ষী করে নিতে চাই!
-আপা আপনি তো সব জানেন।তবুও?
-হ্যাঁ।সব জেনেও।প্রাপ্তির জীবনে যা হয়েছে তা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো।আমি চাই ও আবার নতুন করে সব শুরু করুক।অতীতকে ভুলুক।
এই কথাগুলো শুনেই প্রাপ্তি তূর্যকে বলল
-আমার সাথে একটু ছাদে আসবি প্লিজ?
তারপর……………………
____(((চলবে)))_____