ধর্ষিতা বউ পর্ব ১৪+১৫

#ধর্ষিতা_বউ ১৪+১৫
#পর্ব_ ১৪

ছাদে তারা একপাশ দুইজন দুইজনের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো।তারপর প্রাপ্তি তূর্যকে বলল,
-দেখ তূর্য তুই তো সবই জানিস।কিন্তু তারপরেওক কেনো আমায় বিয়ে করতে চাস?
-প্রাপ্তি তুই তো জানিস সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমি তোকে কতটা পছন্দ করি।আমাদের বিয়ের জন্যও বলেছে মা।কিন্তু তোর বাবা মা-ই রাজি হয়নি।
-হ্যাঁ আমি জানি।কিন্তু….
-কোনো কিন্তু না প্রাপ্তি আমি তোকে ভালোবাসি।আর তোর সাথেই সারাজীবন থাকতে চাই।
-সায়ান মিন্তু এখনো ডিভোর্স পেপারে সাইন করে নি।ও তো পরে ঝামেলা পাকাবে অনেক।
-তার জন্য আমি আছি তো নাকি?তুই রাজি কিনা খালি সেটা বল।
-তূর্য বুঝার চেষ্টা কর।তুই আরো বেটার কাউকে পাবি।
-আমার বেটার কেউ লাগবে না।আমার তোকেই লাগবে।
-তোর মাথাটা আছে না গেছে?সায়ান যদি আমাকে ডিভোর্স দিয়েও দেয় তুই একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করবি?একটা বার ভেবেছিস মানুষ কি বলবে?
-Don’t be silly Prapti..সেদি তো খুব বড় বড় করে বলছিলি সমাজ নিয়ে।তাদেরকে তুই কেয়ার করিস না।এখন এই একথা বলছিস?
প্রাপ্তি আর কিছু বলে না।তূর্য বলে
-কিছু বলবি না?
-নিচে সবাই ওএট করছে। নিচে চল।
তারপর দুইজনে নিচে গেলো।তারপর তূর্য আর ওর মা খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলো।বিকালে মোনা প্রাপ্তিকে কল দিলো,
-হ্যালো প্রাপ্তি,কেমিন আছো?
-এইতো আপু ভালোই আছি।তুমি কেমন আছো?
-এইতো ভালোই।তোমাকে একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি।
-কি কথা আপু?
-সায়ান আমাকে কল দিয়েছিলো গতকাল।
-কি বলল?
-ও তোমাকে ওর ঘরে তুলে নিতে চায়।তুমি নাকি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছো।ও ডিভোর্স দিবেনা বলছে।আমাকে বলল তোমাকে বুঝিয়ে বলার জন্য।
-ওহহ।
-এতগুলো কথার উত্তর শুধু ওহ?কিছু বলার নেই?
-কি বলবো?আমি ওর কাছে ফিরে যেতে চাইনা আপু।তুমি তো সবই জানো এর কারণস্বরূপ।
-হ্যাঁ।তো এখন কি করবে তুমি?আমিও চাইনা তুমি ওর কাছে ফিরে যাও।
-তূর্যের সাথে বিয়ের কথা চলছে!!
-ওহ গ্রেট!ছেলেটা খুব ভালো যতটুকু বুঝলাম।
-আমার ইচ্ছে নেই আপু।
-কেনো?কি প্রব্লেম?
-আমি এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনা আপু?
-ও না তোমার ছোট বেলার বন্ধু?
-হ্যাঁ।কিন্তু সেও তো সায়ানের মতো পুরুষ।
-চিন্তা ভাবনা করে করো যা করার।
-হ্যাঁ আপু দোয়া করো।
-আচ্ছা রাখছি তাহলে।
কিছুদিন পর,
প্রাপ্তিদের বাসায় একটা ডাক চিঠি আসলো।খামটা খুলে প্রাপ্তি অনেকটাই অবাক হয়ে গেলো। সায়ান ডিভোর্স লেটারে সাইন করে দিলো।এতো জলদি!!বিষয়টা প্রাপ্তির মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিলো।ওর মা জিজ্ঞেস করলো কিসের এটা।ও বলল সায়ান ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে।প্রাপ্তির মা খুশি হয়ে গেলেন।প্রাপ্তি তূর্যকে কল দিয়ে বলল
-হ্যালো তূর্য..
-হ্যাঁ প্রাপ্তি বল।
-সায়ান….
-কি করেছে সায়ান?বল?
-সায়ান ডিভোর্স লেটারে সাইন….
-ওসব নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।ও সাইন করে দিবে।আমি তো আছি নাকি?এতো…
-আমার কথাটা তো শেষ হতে দিবি?
-আচ্ছা বল।
-ও ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে।একটু আগেই পিয়ন এসে দিয়ে গেলো সেটা!
-কি??এতো সহজে?
-সেটাই বুঝতে পারছি না।
-আচ্ছা আমি এখন মিটিংয়ে আছি।আমি তোকে পরে কল দিচ্ছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর বিকালে তূর্য প্রাপ্তিদের বাসায় গেলো।প্রাপ্তি আর প্রাপ্তির সাথে বসে কথা বলল।সায়ানের এতো সহজে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যাপারটা কেমন যেনো লাগছিলো তাদের কাছে।যা-ই হোক তূর্য বলল
-এবার তো তুই রাজি?
-কে বলল আমি রাজি?
-মানে তুই বিয়েতে রাজি না?
-না।
-কেনো প্রাপ্তি?
-তূর্য এখন যা তুই আমার ভালো লাগছে না।
-প্রাপ্তি তুই কি বেশি বাড়াবাড়ি করছিস না?সবকিছুতে এমন করছিস কেনো তুই?(মা)
প্রাপ্তি কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।রাতে নিজের পড়াশুনো শেষ করে ডিনার করতে গেলো।তখন প্রাপ্তির বাবা বলল
-কিরে কোনো সিদ্ধান্ত নিস নি এখনো?
-কিসের সিদ্ধান্ত বাবা?
-তূর্যর সাথে বিয়ের কথা চলছে ভুলে গেছিস?
-বাবা প্লিজ!তোমরা সবাই আমাকে এইভাবে প্রেসার দিও না।আমার ভালো লাগেনা আর এসব।
বলেই প্রাপ্তি অর্ধেক খাবার রেখেই রুমে চলে গেলো।
রাতে সায়ান কল দিলো।সাথে সাথেই প্রাপ্তি রিসিভ করলো,
-এতো সহজে পেপারে সাইন করলেন,আবার কোন প্ল্যানিং করছেন আমাকে খুন করার?
-প্রাপ্তি আমি তোমাকে ভালোবাসি!
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি একটা অট্টহাসি দিয়ে বলল
-ভালোবাসা??এই শব্দটা আপনার মুখে মানায় না সায়ান চৌধুরী। ভালোবাসা মানে বুঝেন তো?
-এইভাবে বলছো কেনো প্রাপ্তি?
-আপনার কাছে ভালোবাসা মানে শারীরিক চাহিদা,নিজের স্ত্রীকে বৈধভাবে ধর্ষণ করা,আর অন্য মেয়েদের নিয়ে রাত কাটানো।
-প্লিজ প্রাপ্তি এইভাবে বলো না।
-আপনি কি জানেন আমি আপনার কি হই?
-তুমি আমার বিবাহিতা বউ প্রাপ্তি।যদিও এখন আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-ভুল বললেন মিস্টার সায়ান চৌধুরী।আমি আপবার বউ না।আমি আপনার ধর্ষিতা বউ ছিলাম।যে কিনা নিয়মিত তার স্বামী দ্বারা বৈধভাবে ধর্ষিত হতো।কি করে ভাবেন আমাকে আবার সেই নরকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য?আমাকে খুন করার চেষ্টা পর্যন্ত চালিয়েছেন।তবুও কি আপনার স্বাধ মিটে নি।
-প্রাপ্তি চুপ করো!আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি।আমি চাই তুমি যার সাথেই থাকো ভালো থাকো।
বলেই সায়ান ফোন কেটে দিলো। সায়ানের কথাটা প্রাপ্তিকে খুব তাড়া করছিলো।প্রাপ্তি ভাবছিলো “তারমানে সায়ান জানে আমার আর তূর্যর বিয়ের কথা চলছে!”
কিছুক্ষন পরেই মোনা কল দিলো।বলল,
-প্রাপ্তি আমি সায়ানকে সব খুলে বলেছি।তুমি নাকি ওর ফোন রিসিভ করো না ঠিকমতো তাই আমি বললাম ওকে সব বুঝিয়ে।ও বলেছে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবে।
-আপু সায়ান সাইন করে দিয়েছে।কিন্তু বিয়ের কথাটা কেনো বললে ওকে?
-কেনো কোনো সমস্যা?
-আমি বিয়েতে রাজি না।আমার ইচ্ছা নেই আর কারো ঘরে বউ হয়ে যাওয়ার।
-প্রাপ্তি পাগলামী করো না।সায়ান তোমাকে মুক্তি দিয়েছে।তূর্য তোমাকে ওর করে নিতে চায়।এখন তো কোনো বাধা নেই আর।
-কিন্তু এইযে বাচ্চাটা!!তূর্য যদি পরে কখনো এসব নিয়ে আমাকে খোটা দেয় বা কিছু বলে?
-তুমি তো ওকে আমার থেকে ভালো জানো।ছোট বেলা থেকেই চিনো ওকে।
-হ্যাঁ আমি জানি ও ওমন না।কিন্তু….
-ভেবেচিন্তে কাজ করো।তোমার অনাগত সন্তানও আর কারো কথার সম্মুখীন হবে না যে তোমার বাবা কে।তোমাকে সমাজ মেনে নিতে বাধ্য।ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো সবকিছু।রাখছি।
প্রাপ্তি আবার দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলো।কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
সকাল উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলো।তারপর ভার্সিটি তে গেলো প্রাপ্তি।ভার্সিটি থেকে দুপুরে ফেরার পথে হঠাৎ করেই প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
চোখ মেলেই প্রাপ্তি নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে।উঠে বসার চেষ্টা করে।তখনই সায়ান এসে ওকে যত্ন করে উঠিয়ে বসায়।পেছনে বালিশ উঁচু করে দিয়ে প্রাপ্তিকে হেলান দেওয়ায়।প্রাপ্তি সায়ানকে দেখেই রেগে যায়।বলে
-আপনি এখানে কি করছেন?আর আমি এখানে কেনো?কি হয়েছিলো আমার?
-শান্ত হও প্রাপ্তি।এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?
-আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন আগে।
-তুমি মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলে রাস্তায়।মানুষের ভীড় দেখে আমি গাড়ি থামালাম।তারপর তোমাকে দেখি সেখানে।
-আপনি ওই সময় ওখানে কি করছিলেন??
-তেমন কিছু না।
-বুঝেছি।আমাকে ফলো করছেন তাইনা?
ডাক্তার এসে বলল,
-আপনার ভাগ্য ভালো আপনার হাজব্যান্ড সময়মতো আপনাকে নিয়ে এসেছেন।সকাল থেকে মনে হয় কিছুই খান নি আপনি!তাই এমন হয়েছে।
-খেয়েছিলাম সকালেই।
-এখন এতো কম খেলে চলবে না।আপনার ভেতরে আরেকটা প্রান আছে।তারও খাবারের প্রয়োজন।তাই কিছুক্ষন পরপরই আপনাকে খেতে হবে সামান্য পরিমানে।৫ মাস চলছে এখন।সে হিসেবে বাচ্চা খুব একটা ডেভেলপ করছে না।
-মানে?আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
-হ্যাঁ বাচ্চা ঠিক আছে আল্লাহ্‌র রহমতে।কিন্তু আপনাকে আরো সচেতন হতে হবে।মেন্টালি ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে হবে,সময়মতো খাওয়াদাওয়া করতে হবে।
-জ্বী খেয়াল রাখবো।আমি কি এখন বাসায় যেতে পারবো?
-হ্যাঁ পারবেন।
তারপর তারা হসপিটাল থেকে বের হলো।প্রাপ্তি একাই চলে যাচ্ছিলো।সায়ান ওর হাত চেপে ধরে বলে
-আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।প্লিজ একা যেও না।তোমার শরীর ভালো নেই।
-আমার হাত ছাড়ুন।
বলে প্রাপ্তি ঝাড়ি দিয়ে ওর হাত ছাড়িয়ে নিলো।তারপর বলল
-আমার জন্য আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবেনা।আমি এখন আপনার কেউ না।আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ কিন্তু তোমার গর্ভের বাচ্চাটা তো আমারও।
-মোটেই আপনার না।এই বাচ্চাটা শুধু আমার।ওর উপরে আপনার কোনো অধিকার নেই।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি চলে যাচ্ছিলো।সায়ান দৌড়ে ওর সামনে পথ আগলে দাঁড়ালো। ওকে বারবার আটকাচ্ছিলো।প্রাপ্তি বলল
-দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।আশেপাশে লোকজন দেখছে।
-লোকজনকে দেখানোর দরকার কি প্রাপ্তি।প্লিজা গাড়িতে উঠো।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠলো।সারাটা রাস্তা ও চুপ করেই বসে ছিলো বাসার সামনে আসা মাত্রই প্রাপ্তি নেমে যেতে নিলো।কিন্তু দেখে গাড়ি লক করা।সায়ানকে বলল,
-লক খুলুন।আমি বাসায় যাবো।
-আমার কথা শুনো প্রাপ্তি প্লিজ।
-আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা।প্লিজ খুলুন।
তারপর সায়ান লক খুলে দিলো।প্রাপ্তি গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাসায় চলে গেলো।বাসায় গিয়ে দেখে তূর্য বসে আছে ড্রইং রুমে।তূর্য প্রাপ্তিকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
-কোথায় ছিলি তুই?আমি পুরা ভার্সিটি খুজে এলাম তোকে।তোর নাম্বার বন্ধ কেনো?
প্রাপ্তি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তূর্য আবার বলল
-কথা বলছিস না কেনো?তুই এখন কি অবস্থায় আছিস তার কোনো ধারনা আছে তোর?কোথায় ছিলি তুই?বল?
তারপর প্রাপ্তি কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো।নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।
বসে বসে সায়ানের কথাগুলো ভাবছিলো।সায়ান কি সত্যি চেঞ্জ হয়ে গেছে নাকি আমার বাচ্চাটাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য এমন ভালো হওয়ার অভিনয় করছে!!নাকি আবার আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে ও!!এগুলো চিন্তা করতে করতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লো নিজেও জানেনা।
বিকালে অনেকবার দরজায় নক করার পরে প্রাপ্তির ঘুম ভাঙে। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে।দেখে সায়ান আর প্রাপ্তির মা। সায়ানকে দেখেই প্রাপ্তির আবার রাগ লাগলো।
প্রাপ্তির মা বলল
-দুপুরে তোর কি হয়েছিলো এজটু জানানোরও প্রয়োজন মনে করলি না?আমরা কি তোর কেউ না?তোর এই অবস্থায় আমরাই তো তোর খেয়াল রাখবো। আর তুই যদি এইভাবে চুপসে থাকিস তাহলে আমরা বুঝবো কিভাবে?সায়ান যদি এখন এসে না বলতো তাহলে তো আমরা জানতেই পারতাম না এসব কিছু।
-মা আমি ঠিক আছি।
-তোর ফোন বন্ধ কেনো?
-জানিনা।চার্জ নেই মনে হয়।
-আয় খেয়ে নে।দুপুরে এসেই রুমে ঢুকে পড়েছিস।
-ডাক্তার এইভাবে বলার পরেও তুমি কিছু খাওনি এখনো?কেনো এমন পাগলামী করো প্রাপ্তি?
-দয়া করে আপনি এখান থেকে চলে যান।আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন প্লিজ!!
সায়ানের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো প্রাপ্তির প্রতিটি কথার আঘাতে,অবহেলা,অবজ্ঞায়।
সায়ান অসহায়ের মতো চলে গেলো বাসা থেকে।নিচে নামতেই তূর্যের সাথে সায়ানের দেখা হলো।সায়ান তূর্যকে দেখে না চিনলেও তূর্য সায়ানকে ঠিকই চিনেছে।

তূর্য সায়ানকে দেখে বলে
-সায়ান চৌধুরী?
-হ্যাঁ।আপনি?
-তূর্য রহমান।
নামটা শুনেই সায়ান তূর্যর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষন।তারপর বলল,
-আপনার সাথেই প্রাপ্তির বিয়ের কথা হচ্ছে তাহলে?
-জ্বী।
-আপনি জানেন না সব?
-হ্যাঁ আমি সবই জানি।
-তবুও ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেনো?আপনি তো ওর থেকে ভালো কাউকে পেতে পারতেন।
-প্রাপ্তি আমার ছোট বেলার বন্ধু।ওকে আমি অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।এখনো ভালোবাসি।তাই আমি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছি।
-বিয়ে করতে চাচ্ছেম নাকি করুনা করছেন,নাকি ওর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাচ্ছেন?
-How dare you Mr.Shayan Chowdhury??
-গলা নিচে।এটা রাস্তা।
-কেনো গলা নিচে করবো?
-আপনার সন্মান না থাকলেও আমার একটা আতসন্মানবোদ আছে।
কথাটা শুনেই তূর্য খিলখিল করে হেসে উঠলো।বলল,
-Come on Mr.Shayan.আপনার আবার আত্নসন্মান!!যে নিজের বউকে রাস্তার কুকুরের চেয়েও বেশ অবহেলা অবজ্ঞা করে,তাকে ভোগ করে,তাকে ধর্ষণ করে তার আবার আত্নসন্মান কিসের!!
কথাটা শুনেই সায়ান চুপসে গেলো।তূর্য বলল
-কি হলো চুপ করে গেলেন কেনো?
সায়ান কিচ্ছু বলে না।তূর্য আবার বলে
-এখন মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা?নিজেকে অনেক বড় ভাবেন আপনি তাইনা?আসলে আপনি একটা কাপুরুষ যে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে,তাকে মর্যাদা দিতে জানেনা।
-প্রাপ্তিকে দেখে রাখবেন।আমার দেওয়া কষ্টগুলো ভুলিয়ে ওকে নিয়ে ভালো থাকবেন।
কথাটা বলেই সায়ান গাড়িতে উঠে চলে গেলো।তূর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।তারপর উপরে চলে গেলো।
তূর্য উপরে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি খাচ্ছিলো।পাশে ওর মা ওকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলো।তূর্য ওর পাশে চেয়ার টেনে বসলো।বলল
-আচ্ছা তোর সমস্যাটা কি বল তো?আমাদেরকে কিছু বলিস না চুপ চুপ থাকিস!এইভাবে হলে চলবে?বাচ্চাটার কথা ভাব একটা বার।নিজের জন্য না হলেও ওর স্বার্থে তো আমাদেরকে কিছু বলতে পারিস নাকি?
-হুম সবার তো এই বাচ্চাকে নিয়েই চিন্তাভাবনা।আমাকে নিয়ে কে ভাবে!
-দেখ প্রাপ্তি কথা উলটা বুঝবি না।তোকে কোন দিক থেকে আমরা কেয়ার কম দিচ্ছি বল তো!আন্টি আপনি ওকে একটু বুঝান!
-আমি কি আর কম বলি বাবা?ও না বুঝলে কি করবো এখন বলো তো!(মা)
প্রাপ্তি আর কিছু বলে না।চুপচাপ খেয়ে রুমের দিকে হেটে যায়।তূর্য কিছুক্ষন প্রাপ্তির মায়ের সাথে কথা বলল।তারপর প্রাপ্তির রুমের দিকে গিয়ে দেখে ও শুয়ে আছে।
-কিরে এইভাবে শুয়ে আছিস যে?খারাপ লাগছে?
-না তেমন কিছুনা।(উঠে বসতে বসতে)
-উঠতে হবে না।শুয়েই থাক।
কিছুক্ষন চুপ থেকে তূর্য বলল
-নিচে সায়ানের সাথে দেখা হয়েছিলো আসার সময়।
-কি বলল তোকে?
তূর্য সব খুলে বলল।তারপর প্রাপ্তি বলল,
-এইভাবে বলে গেলো কেনো শেষ কথাটা?
-জানিনা।এগুলা নিয়ে ভাবিস না তুই।আর শুন কালকে সকালে রেডি থাকিস,তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।
-আজকেই তো মেডিকেল থেকে আসলাম।
-আরে ওইট তাও নরমাল।তুই তো আর চেকাপ করাস নি আজকে।তাই কালকে চেকাপ করিয়ে আসবি আমি নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর তূর্য প্রাপ্তির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।প্রাপ্তির মায়ের থেকে বিদায় নিচ্ছিলো,
-আন্টি আমি এখন আসি।
-সেকি এই সময়ে আসছো কিছু না খেয়েই চলে যাবা?
-হ্যাঁ আন্টি।
-রাতে ডিনার করে যেও একবারে।থাকো।
-না আন্টি কালকে সকালে আসবো আবার।প্রাপ্তিকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো চেকাপ করাতে।
তারপর প্রাপ্তির মা তূর্যের আরেকটু আছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো।বলল
-আমার মেয়েটা সত্যি অনেক ভাগ্যবতী।এতো বড় একটা দূর্ঘটনার পরেও কেউ ওকে বিয়ে করতে চাইছে,ওর এতোটা খেয়াল রাখছে প্রতিটি মূহুর্তে।(চোখে পানি টলমটল করছিলো)
-ওমনি আমি কেউ হয়ে গেলাম?জামাই বলে ডাকবেন এখন থেকে।(চোখের পানি মুছে দিয়ে)
-কিন্তু মেয়েটা যে এখনো রাজি হচ্ছে না। সেদিন বলছিলো ও কখনো বিয়েই করবে না।
-আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না।ওকে আমি রাজি করাবো।এখন আসি আন্টি।
-হুম জামাই ডাকতে বলে এখন নিজেই আমাকে আন্টি বলছো!
তূর্য সামান্য লজ্জা পেয়ে বলল-আচ্ছা বলবো।
তারপর তূর্য চলে গেলো।রাতে প্রাপ্তি বসে পড়ছিলো।তখন মাথায় কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো।তাকিয়ে দেখে ওর দাদী।দাদী বলল
-কিরে এত রাত পর্যন্ত কি পড়ছিস?
-তেনন কিছু না দাদী।এতক্ষন ভালো লাগছিলো না তাই শুয়ে ছিলাম।একটু আগেই পড়তে বসেছি।
-বেশি রাত জাগিস না দিদিভাই।শরীর খারাপ করবে।একটা কথা বলি দিদিভাই?
-হ্যাঁ দাদী বলো।
-এদিকে আয়।
প্রাপ্তির দাদী ওকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে বেডে বসালো।তারপর নিজেও ওর পাশে ওর দিকে ফিরে বসলো।তারপর বলল
-আমি জানতাম না রে দিদিভাই যে সায়ান এতটা খারাপ ব্যবহার করবে তোর সাথে।তোর ফুফু তো তোকে খুব আদর করে তাইনা?
-হ্যাঁ দাদী
-আমি জানি।কিছু সায়ান যা করলো তার কারনেই হয়তো তোর মনে রাগ।আমি জানি ও তোকে অবেক বেশি কষ্ট দিয়েছে।
-বাদ দাও না ওসব দাদী।
-আমার কথাটা শুন দিদিভাই।একবার তোর জীবনটাকে আমরা সবাই মিলে নরকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম এখন আবার আমরাই বলছি আরেকবার বিশ্বাস কর আমাদেরকে।তূর্য কে বিয়ে করে নে দিদিভাই।ও তোকে খুব ভালোবাসে।সেটা তো তুই ভালো করেই জানিস।ভেবে দেখিস দিদিভাই।আর ঘুমিয়ে পড়।অনেক রাত হয়েছে।বাচ্চার খেয়াল রাখ কোনো সমস্যা হলে আমাদেরকে বলিস।আমি আসি।
তারপর দাদী চলে গেলেন।প্রাপ্তি উঠে বই খাতা গুলো গুছিয়ে রাখলো।তারপর শুয়ে পড়লো।হালকা ঠান্ডা পড়ছে।প্রাপ্তি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।ও একবার সায়ানের কথাগুলো ভাবে আবার বাকী সবার কথা।
সায়ানের কথা ভেবে লাভ নেই।কারন আমি চাইনা দ্বিতীয়বার ওই নরপিশাচ কে বিশ্বাসের জায়গাটা দিতে।তূর্য কতো খেয়াল রাখে আমার।কত যত্ন নেয়।পাশাপাশি আমার পরিবারের সবারও কত খেয়াল রাখে ও।ওকে তো আমি ছোট বেলা থেকেই চিনি।অনেক আগে থেকেই আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে ও।উফফফ আমার মাথায় কিছু আসছে না।এসব নিয়ে আর ভাবতে চাইনা।
এগুলো ভাবতে ভাবতেই যে কখন প্রাপ্তি ঘুমিয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না।সকালে তূর্যর ডাকে ওর ঘুম ভাঙল। প্রাপ্তি চোখ খুকেই দেখে তূর্য ওর পাশে বসে ওকে ডাকছে।ঘুম জড়ানো চোখে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বলল
-কিরে এতো সকালে তুই এখানে কি করছিস?
-ম্যাডাম আজকে কোথায় যাওয়ার কথা মবে আছে কিছু?
-আজ তো শুক্রবার।ভার্সিটি বন্ধ।কোথায় যাবো আর!
-প্রাপ্তি তুই আগে ভালো করে চোখ মেলে দেখ।এতো ঘুম তোর চোখে!!
তারপর প্রাপ্তি উঠার চেষ্টা করলো।তূর্য সাথে সাথে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তিকে যত্ন করে উঠিয়ে ওর পেছনে একটা বালিশ রেখে হেলান দিয়ে বসালো।তারপর বলল
-কি মহারানীর ঘুম গফহে নাকি এখনো আছে?
-সকাল সকাল ফাজলামো করিস না তো তূর্য!
-যা বাবা কি করলাম আবার।এতো খিটখিট করছিস কেনো তুই?(রাগী স্বরে)
-কি আমি খিটখিট করছি?যা এক্ষুনী বের হ আমার রুম থেকে।অসভ্য কোথাকার।
-ধ্যাত!!যা গেলাম আর আসবো না।
তূর্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ড্রইং রুমে বসে ছিলো।প্রাপ্তির মা কে বলল
-মা প্রাপ্তিকে তৈরি হয়ে নিতে বলুন।আমি বসছি কিছুক্ষন।
-কিছু মনে করো না বাবা।আমি দেখেছি ও তোমার সাথে কেমন আচরন করেছে।আসলে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এমন হয়।আর তুমি তো জানোই ও এখনো ওর অতীতকে ভুলতে পারেনি।
-কি যে বলেন না মা।আমি বুঝি।আর ওর কথায় আমি কখনো রাগ করিনা।আপনি নিশ্চিত থাকুন।
দুইজনে বের হলো একসাথে।প্রাপ্তি বলল
-আমি গাড়িতে যাবো না।
-কেনো?
-ইচ্ছা করছে না।
-তাহলে কিসে যাবি?
-রিক্সা নে।
-হ্যাঁ এই ঢাকার ভাঙা চুরা রাস্তা দিয়ে এই অবস্থায় তোরকে রিক্সা করে নিয়ে যাবো আমি না?আমায় কি পাগল পাইছিস?
-চিল্লাবি না আমার সাথে।আমি রিক্সা দিয়েই যাবো।
-প্লিজ প্রাপ্তি বোঝার চেষ্টা কর।তোর পেটে আঘাত পাবি।
কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে প্রাপ্তি গাড়িতে উঠে বসলো।চুপচাপ দুজনেই গাড়িতে।কেউ কোনো কথা বলছে না।
সব চেকাপ শেষ করে ডাক্তার বলল
-আপনার সব কিছুই ঠিকভাবে যাচ্ছে।তবে আরেকটু সচেতন হতে হবে।
-সচেতন বলতে কেমন?(তূর্য)
-মানে উনি হয়তো মেন্টালি একটু ডিপ্রেসড।আর খাওয়া দাওয়া সমস্য মতো করেন না।
তূর্য আড় চোখে প্রাপ্তির দিকে তাকালো।তারপর আবার ডাক্তারকে বলল
-আপনি একটা চার্ট করে দিন।সে অনুযায়ী চলবে এখন থেকে।
-ওএট দিচ্ছি।খেয়াল রাখবেন যেনো বাইরের খোলা খাবার না খায়।
মেডিকেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় প্রাপ্তির চোখ পড়ে ফুচকা স্টলের দিকে।তূর্য কে বলল
-তূর্য দেখ ফুচকা!!
-হ্যাঁ তো কি হয়েছে?
-আমি খাবো।প্লিজ আয় না।
-ডাক্তার কি বলল ভুলে গেলি?বাইরের খোলা খাবার খাওয়া নিষেধ।
তারপর হঠাৎ করেই প্রাপ্তির মন খারাপ হয়ে গেলো।
-কিরে খেতে না করলাম বলে রাগ করলি আবার??
-না।চল বাসায় যাবো।(গাড়িতে উঠতে উঠতে)
তূর্য গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।প্রাপ্তির চোখে পানি এসে পড়েছিলো।তূর্য বলল
-কি হয়েছে বলবি তো!
-সেদিন এই ফুচকা খাওয়ার পরেই সায়ান আমাকে…
-ব্যাস!আর কিছু বলতে হবেনা।ভুলে যা ওসব আজ ৫ টা মাস হয়ে গেলো।তোর বাচ্চাটার জন্য অন্তত তোর মনে সাহস থাকাটা জরুরি।
বাসা এসে গেছে। প্রাপ্তিকে তূর্য বাসায় দিয়ে চলে গেলো।
অন্যদিকে আজকাল সায়ান সারাদিন মদ,সিগারেট খায়।যদিও এখন কোনো মেয়ের নেশ নাই।সারাদিন অফিস করে এসে মদ সিগারেটে এখন নিজের ভালো থাকা খুঁজে নেয়।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।বাইরে ঠান্ডা বাতাস বইছিলো।হালকা শীত লাগছিলো।প্রাপ্তি কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে আছে। প্রায় রাত ১১:৩০ এর দিকে প্রাপ্তির ফোন এ কল আসলো। ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সায়ানের নাম্বার।তাই রিসিভ করে নি।বেশ কয়েকবার কল বাজার পর প্রাপ্তি রাগে ফোন টা রিসিভ করে বলল
-প্রব্লেম কি আপনার?কেনো কল দিচ্ছেন আমাকে এইভাবে বারবার?ডিভোর্স হয়ে গেছে আমাদের আর কি চান এখন আবার?
-প্রাপ্তি শান্ত হ।কি যা তা বলছিস।আমি তূর্য।
প্রাপ্তি চুপ হয়ে গেলো।বলল
-সরি।এতক্ষন সায়ান কল দিচ্ছিলো।আমি ভাবলাম এটাও..
-It’s ok… আচ্ছা শুন একটা ছাদে যেতে পারবি?
-এতো রাতে ছাদে?১২ টা বাজে এখন।
-যা না প্লিজ!!
-কেনো সেটা তো বলবি।
-তুই গেলেই বুঝবি।যা।আর সাবধানে যাবি।লিফটে করে যা সমস্যা হবেনা।আর চাদর মুড়িয়ে নিবি ভালো করে শরীরে।ঠান্ডা পড়ছে হালকা।
-আচ্ছা যাচ্ছি।
-ফোন টা সাথে নিয়ে যাস কিন্তু।
-ওকে।
এতো রাত তাই ছাদের গেট লক করা ছিলো।প্রাপ্তি ছিটিকিনিতে হাত দিতেই সেখানে একটা চিরকুট পায়।নীল চিরকুটে কালো কালিতে লেখা ছিলো “দরজাটা খুলে ছাদে ঢুকতেই হাতে বাম পাশে তাকাবি”
প্রাপ্তি দরজা খুলে বাম পাশে তাকাতেই দেখে আরেকটা লাল চিরকুট।সেখানে কালো কালিতে লেখা ছিলো “একটু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ”
প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকাতেই দেখে এক ফালি ফানুস উড়ে বেড়াচ্ছে রাতের এই হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে।আহ কি অপূর্ব মনোরম দৃশ্য।কি রোমাঞ্চকর। চোখের পলক পড়তে চায়না যেনো।তারপর একটু সামনে এগুলোতে প্রাপ্তি আরেকটা নীল চিরকুট পায়।সেখানে লেখা ছিলো “আমি কি তোর অনাগত বাচ্চার বাবা হতে পারবো?”
প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছিলো।চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।হঠাৎ পেছন থেকেই ও কারো উপস্থিতি অনুভব করে।

#পর্ব_১৫

প্রাপ্তি পেছনে তাকিয়ে দেখে তূর্য এক গুচ্ছ শিশির ভেজা লাল গোলাপ নিয়ে প্রাপ্তির দিকে হাটু গেড়ে হাত বাড়িয়ে আছে।
-প্রাপ্তি আমি তোকে অনেক ভালোবাসি রে।আমি তোর ওই অনাগত বাচ্চার বাবা হতে চাই।একটা সুযোগ দিবি প্লিজ?
-তুই এতোরাতে ছাদে কি করে এলি?
-পানির পাইপ টপকে।
-তোর তো দেখি কলিজাটা অনেক বড় হইসে রে।
-ধুর এসব বাদ দে তো।আমার উত্তর দে তুই আগে।
-তুই আগে উঠে দাড়া।
-না তুই এই ফুলগুলো নিবি,একটা উত্তর দিবি তারপর আমি উঠবো।প্লিজ জলদি বল।পায়ে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।
প্রাপ্তি ফুলগুলো হাত থেকে নিয়ে কিছু না বলেই একপাশে গিয়ে দাঁড়ালো আর বলল
-এইদিকে আয়।
তারপর তূর্য উঠে প্রাপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল
-কিছু বলবি না?
-দেখ তূর্য সায়ান যতকিছুই করুক না কেনো ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।আমার গর্ভে এখন ওর সন্তান।আমি ওর সাথে ৬ টা মাস সংসার করেছি।ও যত অত্যাচারই করুক না কেনো দিনশেষে তাও ও আমার হাজব্যান্ড তাইনা?
-তুই কি বলতে চাচ্ছিস প্রাপ্তি?তোদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ তা তো হয়ে গেছে কিন্তু…
-কিন্তু কি প্রাপ্তি?তুই কি তোর লাইফে মুভ অন করতে চাস না?তুই কি চাস না তোর অনাগত বাচ্চাটা কাউকে বাবা বলে ডাকুক?
-তূর্য প্লিজ।আমাকে এতো ডিপ্রেসড করিস না।
-দেখ প্রাপ্তি আমি সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তোকে ভালোবাসি।সেটা তুইও ভালো করে জানিস।
-কবে বিয়ে করবি আমায়?
তূর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো প্রাপ্তির দিকে।
-তুই রাজি?
-কবে বিয়ে করবি আমায়?
-তুই চাইলে এখনই।
-থাক এতো ভালোবাসা দেখাতে হবেনা এখন।কালকে আন্টিকে নিয়ে বাসায় আসিস।
-আন্টি কে রে?
-তোর মা মাথামোটা!!
-এখনো আন্টি বলে ডাকবি?
প্রাপ্তি কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিলো তূর্য এর হাতটা চেপে ধরে পেছন থেকে।
-আমার উত্তরটা দিবি না?.-সেটা এখনো পাস নি বুঝি?
-তবুও আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই সেটা।
-তূর্য হাত ছাড়।
-না আগে বল।
এই বলে তূর্য প্রাপ্তির সামনে এসে দাঁড়ালো।বলল,
-বলনা তুই আমায় ভালোবাসিস?
-হ্যাঁ বাসি।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি তূর্য কে সরিয়ে চলে গেলো।তূর্যর খুশির সীমা ছিলোনা।দুইহাতে মেলে আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে তার সব ভালোলাগাকে উপভোগ করছে।
সকালে তূর্য আর ওর মা আসলো প্রাপ্তিদের বাসায়।বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে।সবাই ড্রইং রুমে বসে ছিলো।বিয়ের কথা হচ্ছে।প্রাপ্তির এই পরিস্থিতিতে বিয়েটা কিভাবে দিবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা কেউ।তারপর তূর্য বলল
-বিয়েতে কোনো জাঁকজমক অনুষ্ঠান করার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি চাই ঘরোয়াভাবে সব মিটে যাক।আর যেহেতু প্রাপ্তির এই অবস্থা তাই আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বিয়ে করে নিতে যেতে চাই।
-কি এই অবস্থায় ওকে এখন….(প্রাপ্তির মা)
-আপনি চিন্তা করবেন না মা।প্রাপ্তি যথেষ্ট স্ট্রং আল্লাহ্‌র রহমতে।আর ও তো বেশি লোড নিতে যাচ্ছেনা।রেগুলার যেমন ভার্সিটি তে যাচ্ছে,ক্লাস করছে,সময়মতো পড়াশুনো, নামাজ-কালাম সবই করছে।আর বিয়েটা আমি ঘরোয়াভাবে করতে চাচ্ছি তাই কোনো সমস্যা হবেনা।
সবাই রাজি হলো।বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হয়ে গেলো।৫ দিন পরে ওদের বিয়ে।
সাধারন দিনগুলোর মতোই যাচ্ছে ওদের দিনগুলো।এর মধ্যেই একদিন সায়ান আর ওর মা আসলো।ভার্সিটি থেকে এসেই প্রাপ্তি দেখে তারা ড্রইং রুমে বসে কথা বলছে প্রাপ্তির মায়ের সাথে।সায়ানের মাকে সালাম দিলো।সালাম দিয়েই নিজের রুমে যেতে নিচ্ছিলো তখনই সায়ানের মা প্রাপ্তিকে তার কাছে ডাকলো।প্রাপ্তির ভেতরে কেনো জানি মোচড় দিয়ে উঠলো কি যেনো একটা ভয়ে।তবুও প্রাপ্তি তার কাছে গেলো। যাওয়ার পর তিনি প্রাপ্তিকে তার পাশে বসালেন।বললেন
-কি অবস্থা এখন তোর শরীরের?
-এইতো ফুফু ভালোই আছি।
-ডাক্তারের কাছে যাস ঠিকমতো?
-হ্যাঁ সেদিনই চেকাপ করিয়ে আসছি।
-আচ্ছা।খেয়াল রাখিস নিজের।যা ফ্রেশ হয়ে নে।আমরা তোর সাথে দেখা করতে এসেছি শুধু।সায়ান বাইরে চলে যাবে।আর আমিও এখানে আর থাকবো না।রাজশাহী চলে যাবো
-ওহ।আমার বিয়েতে এসো।
প্রাপ্তির এই কথাটা সায়ানের বুকে চিন করে উঠলো।মনে হচ্ছিলো যেনো ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।বলল
-বিয়ে???
-হ্যাঁ,বিয়ে।
-তারমানে তুমি রাজি হয়ে গেছো বিয়েতে?
-মা তুমি বলোনি?(মায়ের দিকে তাকিয়ে)
তারপির প্রাপ্তি আবার বলে
-সায়ান আপনি যা করেছেন তার কোনো ক্ষমা নেই।আপনি ক্ষমার যোগ্য না।রাস্তার কুকুরের সাথেও মানুষ ওমন আচরন করে না যা আপনি আমার সাথে করেছেন।যাখানেই যান ভালো থাকবেন সবসময়।
বলেই প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেলো।
সন্ধ্যায় তূর্য কল দিলো।
-কি ব্যাপার কোনো খোজ খবর নাই যে আমার মহারানীর?
-খোঁজখবর নাই তো কি আছে?নিজে কল দিছিস একবারও?
-এইযে দিলাম এখন সারাদিন তোর কোনো খবর না পেয়ে।
-এই ফোন রাখ তো।
-যা বাবা আবার কি হলো?
-তুই ফোন রাখবি???(রেগে)
-আচ্ছা তোর কি হয়েছে বলবি একটু?একটুতেই এতো রেগে যাস কেনো তুই বল তো?
প্রাপ্তি চুপ।
-দেখ আমি জানি তুই প্রেগন্যান্ট। তাই তোর মেজাজ এখন খিটখিটে থাকে।তাই বলে এমন করবি?
-কি বললি তুই??অসভ্য কোথাকার!!আমার মেজাজ খিটখিটে তো আমায় নিয়ে করতে চাস কেনো যত্তসব!!
বলেই ফোন টা কেটে দিলো প্রাপ্তি।
উফফ এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।এখনই এমন করে বিয়ের পরে যে কি করবে আমার সাথে সৃষ্টিকর্তা ভালো জানে।
তূর্য একাএকাই বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।রাতে পড়াশুনো শেষ করে প্রাপ্তি শুয়ে পড়লো।তার কিছুক্ষন পরেই সায়ান কল দিলো।বেশি চিন্তাভাবনা না করে প্রাপ্তি কল রিসিভ করলো।
-ভালো থেকো তুমি সবসময়।
-হুম
-আমি যে কষ্টগুলো দিয়েছি সেগুলো যেনো তূর্যর ভালোবাসা দিয়ে ও তোমাকে ভুলিয়ে দিতে পারে।
-হুম।
-পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
-হুম।
-খালি হুম হুম করবা কিছু বলবা না?
-সব বাজে অভ্যেস ত্যাগ করে নতুন করে শুরু করেন।
-কাকে নিয়ে শুরু করবো?সেরকম কেউ তো নাই।আর আমার দরকারও নাই।আমি হয়তো কারো যোগ্য না।
-আচ্ছা আমি রাখছি।আমার কল আসছে বারবার।
বলে প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো।তূর্য কল দিচ্ছিলো।রিসিভ করতেই
-কি ব্যাপার বিজি ছিলো কেনো?
-সায়ান কল দিয়েছিলো।
-কি বলল
-বাইরে চলে যাবে।আজকে এসেছিলো ফুফু সহ।এখন আমাকে শুভ কামনা দিচ্ছিলো।
-ওহ আচ্ছা।রাগ কমেছে মহারানীর?
-আমি রাগ করলাম কখন আবার?
-ওমা সন্ধ্যায় তো আমার সাথে এতগুলা ঝগড়া করলি।
-হ্যালো মিস্টার ঝগড়া আমি না আপনি করেছেন!
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আমি করেছি।আচ্ছা শুয়ে পড়েছিস?
-হুম কেনো?
-একটু কষ্ট করে বারান্দায় আসবি প্লিজ?
-পারবোনা।
-দেখ এই ঠান্ডায় আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তোর জন্য আয় না প্লিজ।একটু দেখেই চলে যাবো।
-বিয়ের পরে দেখলে হবে না?
-আরে তখন দেখা আর এখন দেখায় তফাৎ আছে।আয় না প্লিজ!!!
-আচ্ছা দাড়া আসছি।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোর পর দেখে তূর্য নিচে দাঁড়িয়ে আছে।নিচে থেকে ইশারা দিয়ে বলল ফোন কানে নেওয়ার জন্য।ফোন টা আবার কানে নিয়ে বলল
-জানিস প্রাপ্তি আমি কখনোই ভাবিনি তোকে বিয়ে করতে পারবো আমি।আমি যে কতটা খুশি তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা রে।বিশ্বাস কর।আমি তোর জীবনের সব দু:খ কষ্ট ভুলিয়ে তোকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবো।আজ এই রাতে এই চাঁদ আর সৃষ্টিকর্তাকে সাক্ষী করে কথা দিচ্ছি।কখনো তোকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিবোনা।
-হুম।দেখবো নি কতটা ভালোবাসা দিবি আমাকে।
-এইভাবে বলিস কেনো রে বারবার।সকালটা হলেই আমাদের বিয়ে।বেশ কয়েক ঘন্টার ব্যাবধান মাত্র।কিন্তু আমার যে আর তর সইছে না।আমি পারছি না এই সময়গুলো কে ঠেলে পার করে দিতে।
-এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো?
-হু তুই তো আমাকে ভালোবাসিস না।তাই এমন করিস।
-হুম বাসি না।যা বিয়ে বসবো না তোর কাছে।
-এই এই এই ভুলেও এই কথা উচ্চারন করবি না আর মুখ দিয়ে বলে দিচ্ছি।
-তাহলে কি নাক দিয়ে করবো!!
-উফফ প্রাপ্তি!!আমি আসলে বুঝি না তোকে।কখন কি বলিস নিজেও জানিস না।পাগলি বউ আমার।
-এখনো বউ হইনি কিন্তু।
-হস নি তো হবি।শুধু কয়েকটা ঘন্টার পার্থক্য।
-হুমমম।(বড় নিশ্বাস ফেলে)
-কিরে কোনো সমস্যা?এতো বড় নিশ্বাস ফেললি যে?
-না না কিছুনা।
-তুই কি মন থেকে রাজি হয়েছিস বিয়েটার জন্য নাকি সবার চাপে পড়ে?
-অনেক রাত হয়েছে তূর্য। আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।ঘুমাবো।
প্রাপ্তি ফোন টা কেটে দিয়েই রুমে চলে গেলো।তূর্য আরো কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো।
পরদিন সকালে সবাই আসলো।তূর্য ওর মা আর কাজী আসলো।সবাই ড্রইং রুমে বসলো!প্রাপ্তি তখনো রেডি হয়নি।তূর্য ওকে একটা গোল্ডেন পাড় গাঢ় লাল রাঙা শাড়ী আর প্রয়োজনীয় গয়নাগাটি দিলো।প্রাপ্তি কিছুই পরে নি সকাল থেকে।গোসলটাও করে নি।চুপ করে খাটের এক কোনায় বসে ছিলো।ওর মা এসে এই অবস্থা দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো।বলল
-কিরে এখনো তৈরি হলি না কেনো?সবাই তো এসে পড়েছে।ড্রইং রকমে সবাই অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ড্রইং রুমে চলে আয়।
-আমার জীবনটা এমন কেনো হলো মা?আমি কি কোনো পাপ করেছিলাম আগে?

________(((চলবে))))_________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here