ধূসর রঙের প্রজাপতি পর্ব অন্তিম

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_53 [ সমাপ্তি পার্ট ]

বাসায় ফেরা হয়েছে আজ সপ্তাহ খানেক। এখনো চোখে হাওর ভাসে। কি সুন্দর সে দৃশ্য। কচি ঘাসের নরম বিছানার কাছে দামি বেড শিট নিছক ই ঠুনকো। পানসে আর্টিফিশিয়াল জিনিসের প্রতি একদম ই ঝোঁক নেই অভিনবর। সে যদি বনের ভেতরে থাকা কোনো রাজ্যের অধিবাসী হতো তাহলে সব থেকে বেশি ভালো হতো। বিষয় টা এমন লাগলে ও বিষয় টা সম্পূর্ন ভিন্ন। আসলে মানুষ বড্ড অভাগা প্রানী। যা আছে তাঁতে সুখ খুঁজে পায় না। যা নেই তাঁর পেছনেই ছুটে যায়। কাঁচের গ্লাস গলিয়ে মৃদু আলো চোখে পরে। সময় টা বোধহয় সকাল সাত টা কি আটটা। সাধারনত এতো বেলা অব্দি ঘুমায় না অভিনব। তবে সপ্তাহ খানেক ধরে ঘুম যেন জেকে বসেছে। পাশ ফিরতেই চোখে পরে নিষ্পাপ মুখ খানি। ঘুমের মাঝে ও ঠোঁট গোল করে আছে মেয়েটা। অভিনবর ডাকতে ইচ্ছে হয় না। যেন সহস্র বছর এ মুখের পানে চেয়ে কাটিয়ে দেওয়া বা হাতের খেলা। ঢং করে ঘড়ির কাঁটা বেজে উঠে। অভিনবর কর্নপাত ঘটে সে শব্দ। দ্রুত ঝিলের বাহু তে হাত রাখে। আদুরে গলায় ডাকে
_ ঝিল উঠো অনেক বেলা হয়েছে। আজ থেকে এক্সারসাইজ এ মনোযোগী হবো। ঝিল

চোখ পিট পিট করে তাকায় ঝিল। অভিনব কে অস্পষ্ট দেখতে লাগছে। হাত উঁচিয়ে আবার নামিয়ে নেয়। মুহুর্তেই ঘুমে তলিয়ে যায়। পুরো ঘটনা অভিনবর মাথার উপর দিয়ে যায়। মেয়েটা আস্ত ঘুম কাতুরে। অবশ্য গত সাত দিন সে নিজে ও ঘুমিয়েছে।

ফ্রেস হয়ে এসে দেখে ঝিল উঠে বসেছে। বার বার হাই তুলছে যেন মাত্র ই ঘুমিয়েছিলো। সদ্য ঘুম থেকে উঠা ঝিলের নাকের কোনে জমেছে তৈলাক্ত রেখা। চুল গুলো এলোমেলো এতে ও সৌন্দর্য খুঁজে পায় অভিনব।
ঝড়ের পর শান্ত হয়ে যাওয়া পরিবেশ টা যেমন লাগে ঠিক তেমনি লাগছে ঝিল কে। একটু এলোমেলো তবু ও সতেজ। টাওয়াল বাড়িয়ে দেয় অভিনব। মৃদু স্বরে বলে
_ দ্রুত ফ্রেস হয়ে আসো। আধ ঘন্টা এক্সারসাইজ করবো আমরা ।

_ আজ না করলে হয় না ?

_ গত সাত দিন এই করে করেই চলে গেছে। আর এভাবে বারন করা যাবে না। দ্রুত উঠো , আমরা শুধুই বাগানে চক্কর দিবো। জাস্ট জগিং দিয়ে শুরু করবো একটু পুশ আপ করবো দ্যান আবার জগিং।

_ আচ্ছা। তবে আমাকে ব্ল্যাক কফি বানিয়ে দিতে হবে।

_ আচ্ছা দিবো।

এক ঝটকায় উঠে যায় ঝিল। ওয়াসরুমের দিকে এগিয়ে আবার ফিরে আসে। অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরে পায়ের উপর পা রেখে টুপ করে চুমু খায়। এক মুহুর্ত ও দেরি করে না সে চলে যায়। অভিনব এক ফালি স্বচ্ছ হাসে , গত সাত দিন যদি কিছু আপডেট হয়ে থাকে তো সেটা হলো ঝিলের রোমান্টিকতা । মেয়েটা পুরো পাগল।

ঝিল ফ্রেস হয়ে দেখে কফি তে ব্রাউন সুগার দিচ্ছে অভিনব। সচকিত হয় মেয়েটা। প্রাণোচ্ছল চোখ মেলে দিয়ে শুধায়
_ না বলতে ও ব্রাউন সুগার দিলে যে।

_ এটা গিফ্ট ।

_ গিফ্ট !

_ একটু আগের মর্নিং হামির জন্য।

ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে ঝিল। ছেলেটার কাঁধে বাহু ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। হাত থেকে কফি নিয়ে এক চুমুক দিয়ে অভিনবর দিকে বাড়িয়ে দেয়। ঝিলের ঠোঁট ছোয়ানো স্থান থেকে ঠোঁট ছুঁইয়ে কফি পান করে অভিনব। সুন্নত গুলো মেনে চলার চেষ্টা করে দুজনেই। সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ও অগ্রসর হয়েছে। যদি ও ফজরের নামাজ প্রায় মিস হয়ে যায়। তবে কাজা পড়ে নেয়।

.

আধ ঘন্টা এক্সারসাইজ করার কথা হলে ও পঁয়তাল্লিশ মিনিট এক্সারসাইজ করে দুজনেই । নয়টায় নাস্তা সাড়ে সকলে। তাই আর এগোয় না অভিনব। ইশারায় কাছে ডাকে , ঝিল ক্লান্ত হয়ে যাওয়া শরীর টাকে নিয়ে বলে
_ কিইই

_ আজ আর করা লাগবে না । নাস্তার সময় হয়ে গেছে।

ফোঁস করে দম ফেলে ঝিল। অভিনব রুমাল বের করে ঝিলের মুখের ঘাম টুকু মুছে দেয়। মেয়েটার চোখ মুখের রঙ পাল্টে গেছে। একটু বেশি ই হয়ে গেলো।

নাস্তার টেবিলে সকলে উপস্থিত। নাস্তার সময় কেউ কোনো কথা বলে না। তবে ইববান শিকদার ইশারা করে সকলের অনুমতি নিয়ে কথা তুললেন
_ তোমাদের গেট টুগেদার টা কাল হতে চলেছে। যেহেতু সেরকম কিছুই করা হয় নি। তাই সমস্ত আয়োজন ই হবে , একদিনেই সম্পূর্ন করা হবে।

_ আচ্ছা আমার কোনো সমস্যা নেই।

_ ঝিল তোমার কোনো সমস্যা আছে ?

_ নাহ বড় মামা। যেটা ভালো হয় সেটাই করো।

সবাই বেশ খুশি হলো। ঝিলের ফ্যামিলি কে আজ বিকেলেই আসতে বলা হয়েছে। অনুষ্ঠান টা শিকদার বাড়ি তেই সম্পূর্ন হবে। মোটামোটি সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো। অহেদের রিলেটিভ ইউ এস এ তে। সবাই কে ইমার্জেন্সি আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেহেতু বেশ কিছুদিন ধরেই প্ল্যান চলছিলো তাই তেমন কোনো সমস্যা হয় নি। সকলে কাল সকালেই বি ডি তে পৌছে যাবে ।

ঝিল আর অভিনব শপিং করতে চাইছে না। তাই সকলে ওদের ছাড়াই শপিং এ চলে গেল। ঝিল অভিনবর গাঁয়ে ঠেস দিয়ে শুয়ে পরলো। অভিনব তাঁর ডান হাত ঝিলের চুলে গলিয়ে হাসে । মেয়েটার চোখে নিচে ডেবে গেছে। একটু রাগি স্বরে বললো
_ ঠিক মতো খাচ্ছো না তাই না ? মটু হয়ে গেলে ও সমস্যা নেই তবে অসুস্থ হলে সমস্যা আছে।

_ খাচ্ছি তো। আসলে আমার মনে হচ্ছে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারলে ভালো হতো।

_ আচ্ছা। স্বয়ং অভিনবর সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে না ?

_ তুমি এই সব উল্টো কথা ছাড়া আর কিছু জানো না ?

_ প্রেমের কথা বললেই উল্টো হয়ে গেল ? ভালোবাসাতে উল্টো কথা থাকবেই আর এটা স্বয়ং আল্লাহ তায়লা অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন।

ঝিল কথা বাড়ায় না। অভিনবর সাথে কথায় পারবে না সে। তাই ছেলেটার বুকে মুখ গুঁজে দেয়। মিষ্টি এক ঘ্রান নাকে আসে। নির্ঘাত দামী কোনো বডি স্প্রে দিয়েছে। ঝিলের পিঠে হাত রাখে অভিনব। একটু নড়ে চড়ে উঠে ঝিল। অভিনব সন্তর্পণে কাছে টেনে নেয়। ঝিলের মসৃন ঠোঁটে হাতের সপর্শ দিয়ে এগিয়ে যায়। ঝিল হাত দিয়ে বাঁধা প্রদান করে। অভিনবর প্রশ্ন বিধ্য মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে
_ এটা কালকের জন্য তোলা থাক।

হতভম্ব অভিনব কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। বিষয় টা মাথায় খেলে গেলেই বাঁকা চোখে তাকায়। দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলে
_ তৈরি থেকো তাহলে, ফুল দ্বারা সজ্জিত প্রথম বাসর হবে এটা।
আগের বারের মতো বরের ভালোবাসা উপেক্ষা করবে না তো ?

_ উহুহ করবো না।

কথা টা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে ঝিল।অভিনব হাসে , প্রাপ্তির রেখা ফুটে মুখে। ঝিল ছাড়া এক মুহুর্ত বাঁচা দুষ্কর হয়ে পরেছে। কে জানতো এই মেয়েটার মাঝেই অভিনব হারাবে।
.

ইহরিমা সহ তিন মামি শাড়ি গহনা দেখাচ্ছেন । সব কিছু ই চার সেট করে এনেছেন। কারন ঝিলের পছন্দের একটা বিষয় ও তো রয়েছে। ঝিল এটা ওটা মেলে দেখছে তবে কোনটা নিবে বুঝতে পারছে না। পরিশেষে ঠিক করলো অভিনব কে বলবে পছন্দ করে দিতে।
_ আম্মু অভিনব না হয় পছন্দ করে দিবে।

কথা টা বলেই মাথা নিচু করে নেয়। প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছে সে। কেউ সে বিষয়ে ঝিল কে লজ্জা দিলো না। বরং খুশি হলো স্বামীর পছন্দের মূল্য দিবে বলে। সমস্ত গহনা আর শাড়ি রেখে চলে গেলেন ওনারা। যাওয়ার আগে বলে গেলেন অভিনব কে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

মুক্ত আকাশে তাকিয়ে আছে ঝিল। জানালার গিলে মাথা ঠেকিয়ে পর পর নিশ্বাস ফেলছে। বিয়ে টা হয়ে গেলে ও কেমন বিয়ের আগের লজ্জা আড়ষ্ঠতা কাজ করছে। হঠাৎ করে অভিনবর হাতের স্পর্শ অনুভব করে। পেছন থেকে জড়িয়ে আছে অভিনব। অভিনবর হাতে হাত রাখে ঝিল। কিছুক্ষন এভাবেই কেঁটে যায়। অভিনবর খোঁচা দাঁড়ি তে গলায় সুরসুরি অনুভূতি হয়। তাতেই ঝিল চোখ বন্ধ করে নেয়। অভিনবর ঘন নিশ্বাসের সাথে গভীর স্পর্শে কেঁপে উঠে মেয়েটা। নিজে কে ছাড়িয়ে তুতলিয়ে বলে
_ একটা চয়েজ করে দাও।

_ ওয়েল,দেখছি।

পর পর চারটে শাড়ি ঝিলের গাঁয়ে মিলিয়ে অভিনব নিজে ও বিপাকে পরে যায়। প্রতি টা রঙ ই ঝিল কে গলিয়ে নিচ্ছে। অদ্ভুত ভাবে সব গুলো তেই পারফেক্ট লাগছে , নাকি অভিনবর চোখেই পারফেক্ট ঝিল। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলো গোল্ডেন কালারে সাথে লালের কম্বিনেশন করা শাড়ি টাই বেস্ট। এটার সাথে হালকা কিছু গয়না মিলিয়ে দেয় অভিনব। ঝিলের কপালে চুমু খেয়ে বললো
_ আমার বউ সব রঙেই মাশআল্লাহ। প্রতি টা জুয়েলারি তোমার কাছে খুব ই সামন্য।

লজ্জা হাসে ঝিল। অভিনবর বুকে ধীরে মাথা রাখে। তখনি দরজায় কড়া পরে। ভয় পেয়ে যায় ঝিল। ভেবেছে দরজা খোলাই ছিলো। অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে অভিনব বলে
_ এতো কাঁচা কাজ আমি করি না। তৈরি থাকুন কালকের জন্য।

অভিনবর কথা টা শেষ হতেই ঝিল ছুটে চলে যায়। এতো লজ্জা কেন লাগছে ? অভিনবর কাছে আসতেই বুকে ধিম ধিম আওয়াজ হচ্ছে। নতুন করে প্রেমের জোয়ার বইছে। এতো দিনের ভালোবাসার পর ও একি রকম লজ্জা কাজ করছে। এ কেমন যন্ত্রনা হলো ?

.

সকাল সকাল পুরো শিকদার বাড়ি মেহমানে টুইটুম্বর। প্রতি টা সদস্য ব্যস্ত সময় পার করছে। অতিথি দের নাস্তা দেওয়া , রেস্ট করার ব্যবস্থা সব কিছু মিলিয়ে এক সেকেন্ড ও দাঁড়ানোর সময় নেই। বাড়ির একটা ফাঁক ফোকর ও যেন বাকি নেই। চারিদিকে মানুষের সমাগমে মনে হচ্ছে মেলা বসেছে। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে করিডোরে পায়চারি করতে লাগলো। কাল রাতে রূপা আ মৌনতার সাথে থেকেছে ঝিল। অভিনব দু বার চোখ রাঙিয়েছিলো ঝিল সে দিকে পাত্তা দেয় নি।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ঝিল । পরনে হলুদের পোষাক। হলুদ শাড়ির সাথে কাঁচা ফুলের গহনা। ঠিক যেন বাগানের সদ্য ফোঁটা ফুটন্ত ফুল। মুখে হালকা মেকাপের ছোঁয়া। এতো টাই সূক্ষ্ম মেকাআপ যে মনে হচ্ছে পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে এসেছে। অভিনবর চাহনি দেখে কোথা থেকে যেন লজ্জা এসে ভর করলো ঝিল । হৃদয়ের ফাঁক ফোকর গলে ঢুকে গেল বসন্ত। পাশ কাটানোর সময় হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল সহস্রগুন। অভিনব হাত উঁচিয়ে বলল
_ ঝিল !

এই কন্ঠস্বর যেন ঝিলের অন্তরে তীর ছুঁড়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে পা দুটো কেউ খিচে ধরেছে । একটু ও নড়াচড়া করতে পারছে না। অভিনব আগালো , সামান্য ব্যবধান রেখে ঝিলের বাহুর উপরে হাত বুলালো। শির শির অনুভূতি তে ছেয়ে গেল মেয়েটার শরীর। কাঁপনি দিয়ে উঠলো। অভিনবর ঘোর লাগা চোখে নিজের অবয়র দেখতে পেলো। স্থির দৃষ্টি পাত তাঁকে ভস্ম্য না করে দেয়। অভিনব বললো
_ আবেদনময়ী লাগছে ঝিল। আজ আমি সত্যি ই তোমাতে পাগল হয়ে যাবো।

এক মুহূর্ত দেরি করে না ঝিল । শাড়ির কুঁচি ধরে ছুট লাগায়। প্রতি টা কদম বুকে এসে লাগে । অভিনব বা পাশের পাজর বরাবর হাত রেখে উচ্চারন করে ভালোবাসার সুমধুর কিছু বানী।
.

হলুদে মাখামাখি ঝিল। এতো টা হলুদ লাগিয়েছে যে নিজেকে হলদেটে পরি মনে হচ্ছে। অভিনবর পাশাপাশি রেখে হলুদ লাগানো হয়েছে তাঁকে । প্রথম হলুদের ছোঁয়া অভিনবর থেকেই পেয়েছে। তবে কাউকে বারন করতে পারে নি আর। কারন অভিনবর নেশাক্ত চাহনি তাঁকেই দেখছিলো যাহ উপেক্ষা করার শক্তি ঝিলের হয়ে উঠে নি।
তাঁর ফল স্বরূপ হলুদ ভূতে পরিনত করেছে তাকে।

সন্ধ্যা বেলার জন্য সাজানো হচ্ছে তাঁকে । হলুদের সময় ই অভিনব কে দেখেছিলো তাঁর পর লাপাত্তা অভিনবর দেখা মিলে নি। কোথাও একটা বেরিয়েছে। অবশ্য ঝিল মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ই ফেলেছে। কারন এখন তাঁর অবস্থা পালাই পালাই। এই বিচিত্র অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় সে।

পার্লারের মেয়েটা খুব হালকা মেকআপে সাজিয়েছে ঝিল কে। অভিনব বলেছে হালকা মেকআপ করতে । কারন সমেত বলেছে মেকআপ খেয়ে পেট খারাপ করতে চায় না । লাগাম ছাড়া কথা টা সবার মাঝে বলাতে লজ্জায় পরেছে ঝিল। অভিনবর ভাব খানা ছিলো ডোন্ট কেয়ার।

সন্ধ্যা সাত টার দিকে স্ট্রেজে তোলা হয় ঝিল কে। হঠাৎ করে পুরো স্ট্রেজে আঁধার নেমে আছে। লাইটিং পরে বাগানের মাঝ বরাবর। সোনালি পাঞ্জাবি পরে আসছে অভিনব। এই প্রথম পাঞ্জাবি তে অভিনব কে দেখলো সবাই। রূপকথার রাজ কুমারের থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না ছেলেটাকে। চোখ ধাঁধা নো সৌন্দর্যে ঝিল ঢোক গিলে নিলো।

ফুলের সমারোহে সজ্জিত ঘর। যাঁকে বাসর বলে আখ্যায়িত করা হয়। গাঁয়ে কাঁচা হলুদের গন্ধ লেগে আছে। প্রিয় মানুষ টার জন্য বসে আছে ঝিল। বুকের ভেতর অদ্ভুত লীলা খেলা চলছে। চন্দ্র মামা আজ নিভে আছে। অভিনব যেন আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আজ আমার আকাশে তোর প্রবেশ নিষেধ।

বেশ কিছুক্ষন পর দরজা খোলার শব্দ পায় ঝিল। কোথা থেকে সমীরন এসে তাঁর সর্বাঙ্গে শীতলতা নামিয়ে দেয়। অভিনব কে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। ভাই বোন সহ বড় শ্যালক রা ও আজ নেমেছে পথে। তাঁদের জোরালো দাবি ক্যাশে পেমেন্ট দিতে হবে কার্ড নট এলাউ। যাহ জোগাড় করতে দফা রফা অবস্থা।

এক পা দু পা করে এগিয়ে আসে ঝিল। বাঙালি বউ দের মতো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে না সে। বরং অভিনবর শিখিয়ে দেওয়া উপায়েই বলে
” আসসালামু আলাইকুম ”

” ওয়ালাইকুম আসসালাম ”

বহু দিন আগেই অভিনব বলেছিলো বিষয় টা। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা পছন্দ নয় তাঁর। জানালার কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকায় অভিনব। মেঘে ঢেকে আছে চাঁদ। অভিনব হাসে, চাঁদ থাকলে চাঁদের আলো ম্লান করতেই হতো। চাঁদ ও যেন অভিনবর পক্ষে আজ। ঝিলের দিকে তাকিয়ে ঝরঝর কেঁপে উঠে অভিনব। কাঁচা হলুদের সুবাস নাকে এসে লাগছে। নতুন বউ দের মতো ঘোমটা দেওয়া ঝিল যেন এক সাগর আবেদনময়ী।
একটু করে এগিয়ে যায় অভিনব। ঝিলের মুখ উঁচু করে নয়নাভিরাম প্রিয়তমা কে অবলেকন করে। এ মুখাশ্রি যেন পৃথিবীর সমস্ত মায়া নিয়ে এসেছে। যে মায়াতে ডুবে যাচ্ছে অভিনব। ঝিলের কোমল ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় অভিনব । ঝিল বাঁধা প্রদান করে না। তবে আজ সে মরেছে, যে অভিনবর বুকে মাথা রাখা তাঁর অভ্যাস সে অভিনবর একটু খানি ছোঁয়া তেই যেন তাঁর সর্বনাশ।
ভালোবাসায় সিক্ত হয় এ প্রহর। যাঁর মাঝে রয়েছে এক সমুদ্র ভালোবাসা।

পরিশিষ্ট: নিউইয়র্ক শহরের বিশাল প্যালেসের ছাঁদে সাধারন পাতলা কুর্তি পরে থরথর করে কাঁপছে ঝিল। কনকনে শীতে দাঁতে দাঁত লেগে গেছে। ইউ এস এ এসেছে মাস দুয়েক। অভিনবর চাঁপে পরে শীতের রাতে ঠান্ডা প্র্যাক্টিস করতে হচ্ছে। সামনের বছর সাইবেরিয়া যাবে । তাই এ বছর প্র্যাক্টিস চলছে। কুয়াশায় চাঁদ ঢেকে আছে। কাঁপতে কাঁপতে বললো ” আর কতোক্ষন থাকবো অভিনব ? ”

” আরো অনেকক্ষণ থাকতে হবে ”

” মরে যাবো আমি । প্লিজ আর না , একদম জমে গেছি আমি । ”

” উহহু থাকতেই হবে। না হলে সাইবেরিয়া যাবো কি করে ? ”

ঝিল আর কথা বাড়ায় না। সহস্র বার এ কথা বলেছে সে আর একি উত্তর দিয়েছি অভিনব। সাইবেরিয়ার বিখ্যাত হৃদ হলো “বৈকাল হৃদ”। সেখানের তাপমাত্রা -50 ডিগ্রির ওর বেশি হয়ে যায়। সাধারন মানুষ সেখানে টিকে থাকতে পারে না। তাই এ আয়োজন। ঝিল এবার কেঁদেই দিলো। অভিনব গলা ঝেরে বললো ” চিন্তা করো না কিছুদিনের মধ্যেই বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে নিবো আর তারপর সবাই মিলে আবার সাইবেরিয়া ঘুরবো কেমন ? ”
ঝিল রেগে যায়। অভিনব রাগ থামানোর চেষ্টায় মেয়েটাকে বুকে চেপে ধরে। সত্যি ই ঠান্ডায় বরফ হয়ে গেছে মেয়েটা। ফিস ফিস করে অভিনব বললো ” সমস্ত শীতল হাওয়া এ বুকের উষ্ণতায় নেমে যাক। প্রেমের জোয়ারে আরেক টা প্রহর হয়ে যাক। ”
দুজনের ভালোবাসা আবার একে অপরকে আঁকড়ে নিলো। আরেকটা প্রহর হয়ে গেল প্রেমময়। যাঁর স্বাক্ষী হলো স্বয়ং প্রকৃতি।

[ সমাপ্ত‍‍‌ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here