#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (৬)
অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন পালকের রুমের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে ছিলো। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে এসেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিড়ানোই আছে। কেউ আসবেনা ভেবে পালকের রুমটা ঘুরে ঘুরে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। প্রতিটা জিনিসের গন্ধ নিতে নিতে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। ৩ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো রাত হয়ে গেলো উনি এখনো এলেননা?? কখন আসবেন উনি?? হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে অন্ত্রীশা দৌড়ে বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। বড় করে ঘোমটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকটা ঢিপঢিপ করছে! নিশ্বাসটা বন্ধ করে অন্ত্রীশা পায়ের আওয়াজ শুনতে লাগলো। পুরো মনোযোগটাই দরজার দিকে। পায়ের আওয়াজটা আসতে আসতে জোরালো হতে লাগলো,আর তার সাথে তাল মিলিয়ে অন্ত্রীশার হৃদস্পন্দনরাও জোরালো হচ্ছে। অন্ত্রীশার চোখ দুটো আরো গভীরভাবে টিপ দিয়ে ধরে আছে,যার ফলে চোখের পাপড়ির সাথে সাথে,কপাল আর ব্রু দুটোও কুচকিয়ে আছে৷ হাতদুটো দিয়ে শাড়ীটা মুঠো করে ধরে আছে। নিশ্বাস আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করলে তা আরো বেশি ঘন হয়ে আসছে। যেন সে এক কঠিন থেকেও কঠিনতর কাজ করে হাপিয়ে পড়েছে।
পালক অন্ত্রীশাকে বাড়িতে রেখেই সাথে সাথে গাড়ী ঘুরিয়ে ফেলেছিলো। সবাই নতুন বউকে নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলো যে পালকের দিকে কারো নজর পড়েনি। এত ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে খুব অসহায় লাগবে ভেবেই পালক আতিশের বাড়িতে গিয়ে উঠলো। পালককে দেখে আতিশ কোনো রিয়েকশনই দেখালোনা। এমন একটা ভাব যেন সে জানতো পালক এখনি আসবে। আতিশের সাথে গল্প করতে করতে পালকের চোখ লেগে আসে। তখনি আতিশ ওকে ডেকে তুলে বললো,
“” বউকে রেখে আমার সাথে ঘুৃমাবি নাকি? বাসরটাও কি আমার সাথে সারবি ভেবেছিস?””
পালক দুষ্টুমী করে আতিশকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বললো,
“” তুই মেয়ে হলি না কেন রে,আতিশ? তাহলে আমাকে এত পেরেশানিতে থাকতে হতোনা। আমি তোকেই বিয়ে করে নিতাম!””
আতিশও দুষ্টুমীর ছলে একটু ভাব নিয়ে বললো,
“” তোর কি মনে হয় না আমি মেয়ে হলে হাজারটা রাজকুমার আমার পিছে লাইন ধরে থাকতো? আমি ওমন হাজারটা রাজকুমার রেখে তোকে বিয়ে করতাম? আমার পছন্দ এতোটাও খারাপ না পালক!””
পালক আতিশকে ছেড়ে উঠে বসে পড়লো, আতিশের পেটের উপর উঠে বললো,
“” তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমি দেখতে কুৎসিত?””
“” কুৎসিত না কিন্তু রাজকুমারও না!””
“” তুই জানিস,আমি চাইলে প্রতিদিন ডজনখানেক প্রেম করতে পারতাম? শুধু একজনেতে আটকে গিয়েছিলাম দেখে!””
“” আমার পেছনে তো এখনো লাইন লেগে আছে। আর সে তোর থেকে কম সুন্দরী না!””
“” মানে? কে?””
আতিশ কথার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো,
“” তোর বউ তোর জন্য ওয়েট করে আছে পালক! তাকে ভালোবাসবি কিনা সেটা তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু তাকে কষ্ট দেওয়ার তোর কোনো অধিকার নেয়। সেতো ইচ্ছে করে তোর কাছে আসেনি বরং তুই জোর করে এনেছিস। তোর কি মনে হচ্ছে না তার মনে বুনা হাজারটা স্বপ্ন তুই চুরমার করে দিচ্ছিস??””
আতিশের কথায় পালকের হাসি হাসি মুখটা নিভে গেলো। ওর কাছ থেকে সরে এসে ফোনে হাত দিতেই দেখলো ২২ টা মিসড কল। নিজের কথা ভাবতে গিয়ে সে শুধু তার নববধুকে না তার মা,আর বোনকেও টেনশনে ফেলে দিয়েছে। কি করছি এসব আমি?
পালক মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই আতিশের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। বাসায় ঢুকেই আম্মুর বকা খেয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ফোনের লাইটটা অন করতেই দেখে ৩ টা বেজে ৩৩। এতক্ষনে অন্ত্রীশা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে নিয়েছিলো পালক। কিন্তু রুমে ঢুকেই আড়াইহাত ঘোমটা টেনে বসে থাকা তার নববধুকে দেখতো পেলো। রীতিমত চমকে উঠে পালক। এখনো জেগে আছে? কোন আশায় জেগে আছে?? আমি তো তার কোনো আশাই বাসা বেধে দিতে পারবোনা।
পালকের নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। যে মেয়েটাকে নিজের বউ হিসেবে কখনো স্বীকৃতি দিতে পারবেনা সে মেয়েটাকে কেন সে ঘরে তুললো?
পালক রুমের দরজা লাগিয়ে ভাবতে থাকে, আমার কি ওকে সরি বলা উচিত? যদি রেগে যায়? রাগলে রাগবে ভুল যখন করেছি সরি তো বলতেই হবে। যতই হোক ওর সময়ের সাথে খেলা করার আমার কোনো অধিকার নেই, বেচারী আমার অপেক্ষায় এখনো ঘুমাইনি!
পালক অন্ত্রীশার পাশে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকেও মুখ থেকে একটা শব্দ বের করতে পারলোনা। মনে হলো সে কথা বলা ভুলে গেছে, ঠোটঁদুটোও পাথর হয়ে একটা আরেকটার উপর বসে আছে। কিন্তু মনে মনে হাজারটা সরি বলে মেঝেতে শুয়ে পড়লো।
অন্ত্রীশা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেলো,চোখ বন্ধ করে রাখতে রাখতে পাপড়ি ব্যথা হয়ে উঠলো,হাত দিয়ে শাড়ি খামচে রাখতে রাখতে আংগুলগুলো ফুলে গেলো। বিরক্তের জায়গায় এবার রাগ এসে জমাট বেধেছে। রাগে ফুসতে ফুসতে এক টানে ঘোমটা খুলে ফেললো অন্ত্রীশা । কিন্তু রুমে তো কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু সে স্পষ্ট কারো পায়ের আওয়াজ পেয়েছিলো,আর সে নিশ্চিত ওটা তার চুমুবাবুর পায়ের আওয়াজই হবে। তাহলে কি উনি আমার উপর রাগ করে চলে গেলেন? কিন্তু কোথায় গেলেন? অন্ত্রীশা মুখটা কালো করে বিছানা থেকে নামতে নিলেই চোখ আটকে গেলো, নিচে বালিশ ছাড়া গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা পালকের উপর।
অন্ত্রীশার কালো মুখটা আরো কালো হয়ে আসলো। মনে হচ্ছে এখনি তুমুলধারায় বৃষ্টি নামবে।
বিছানায় শুয়ে থেকেই অন্ত্রীশা পালকের দিকে চেয়ে রইলো। ইচ্ছে করছে নিজে চাদর হয়ে উনাকে জড়িয়ে নিতে। এত কেন ইচ্ছে হয় আমার? যে মানুষটা আমার পাশে শুয়ার থেকে মেঝেকে বেছে নিতে পারে তার পাশে আমার কেন শুতে ইচ্ছে করবে?? এটাতো উনার অপছন্দীয় অন্যায় হয়ে যাবে! আর সেটা আমি কখনোই হতে দিতে পারিনা!
অন্ত্রীশা ভারী সাজগোজ,ভারী শাড়ী,ভারী গয়নাসহই শুয়ে রইলো। কিছুই চেন্জ করতে ইচ্ছে করছেনা তার। খুব আলসেমী লাগছে!
বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকলেও অন্ত্রীশার চোখে ঘুম আসলোনা উল্টো পেটের ভেতর কুটকুট আওয়াজ হচ্ছে। মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে থাকা ইদুরগুলো খুদার জ্বালায় অন্ত্রীশার পেটের নাড়ীভুরি সব কেটে খেয়ে ফেলছে। অন্ত্রীশা শুয়া থেকে উঠে পড়লো। উফ! এত ক্ষুধা নিয়ে ঘুৃমানো যায়? পালকের দিকে চোখ পড়তেই অন্ত্রীশার মায়া হলো,এভাবে বালিশ ছাড়া মানুষটা কিভাবে ঘুমাচ্ছে? দেখে তো মনে হচ্ছে বেঘুরে ঘুমাচ্ছে। আর আমি ক্ষুধার জ্বালায় মরছি।
কিছু একটা ভাবতেই অন্ত্রীশার ঠোটে হাসি ফুটে উঠলো। বিছানা থেকে নেমে এসে পালকের পাশে বসে পড়লো। চোখটা বন্ধ করে পালকের শেরওয়ানির পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো। মনে মনে ভাবছে,যদি হিসাবনিকাশ সব ঠিক থাকে,ইনশাল্লাহ হাতে কিছু উঠে আসবে। অন্ত্রীশা পকেটে ভালো করে হাত ঢুকাতেই হাত ভর্তি চকলেট নিয়ে পকেট থেকে বের করলো। চকলেট দেখে অন্ত্রীশার চোখ চকচক করছে! আমি জানতাম আপনি ভুলবেননা!
সকালের মিস্টি আলোর ছোয়া চোখে পড়তেই অন্ত্রীশার ঘুম ভেংগে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে পাপড়ি দুটো মেলতেই অন্ত্রীশা অবাক!
সাদা পান্জাবী,আর মাথায় সাদা টুপি পড়ে সিজদাহই আলিংগন করছে পালক।
পালক সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরলো। কি বলছে অন্ত্রীশা কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। কেন জানি তার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে। তাই কানদুটো আরেকটু খাড়া করে বিছানার কর্নারে চলে এলো।
পালক মোনাজাতে বসে একসময় নিশব্দে কেঁদে উঠে,চোখে বয়ে যাওয়া পানি নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলছে,
“” আমি কি করছি,কেন করছি কিছু জানিনা। বিবেক বলছে অন্যায় করছি কিন্তু মন বলছে ঠিক করছি। বিবেক আর মনের দোটানার সাথে আমি পেরে উঠছিনা,আল্লাহ! তুমি আমাকে এই দোটানা থেকে মুক্তি দাও। আমি মুক্তি চাই,আল্লাহ,মুক্তি!””
পালক মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করতে নিলেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,
“” পুরুষের সৌন্দর্য পরিপুর্নভাবে ফুটে উঠে কখন জানেন?””
পালক ভাবতে পারেনি এতো সকালে অন্ত্রীশা জেগে যাবে। ওর কন্ঠ পেয়ে কিছুটা ভড়কে গিয়ে আড় চোখে পেছনে ঘুরে তাকালো।
অন্ত্রীশা শুয়া থেকে উঠে বললো,
“” সাফমনে মোনাজাতে বসা অবস্থায়। বিবেক আর মন সবসময় দুইরকম ফলাফল প্রদান করে। কেন জানেন?””
অন্ত্রীশার দ্বিতীয় প্রশ্নে পালক একটু ঘাবড়ে গেলো। তবে কি ও সব শুনে ফেলেছে??? অন্ত্রীশার ব্যাখ্যার অপেক্ষা না করেই পালক রুম ত্যাগ করলো। অন্ত্রীশা হা করে পালকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন চোরের মতো পালালো কেন? আমি কি উনার চুরি করা দেখে ফেলেছি???
পাপড়ি ঘুম থেকে উঠেই আতিশের নাম্বারে কল দিলো। মানুষটার ভালোবাসা নাই পেলাম,বকাগুলো তো পাবো? উনার বকার মধ্যেই আমি ভালোবাসা খুজে নিবো। বেশ কয়েকবার রিং হলেও আতিশ পাপড়ির কল রিসিভ করলোনা। আতিশের এই অভ্যাসটা পাপড়ির খুব বিরক্ত লাগে। সে কখনোই প্রথমবার কলে আতিশকে পাইনা। কম করে হলেও পাঁচ,ছয়বার কল দেওয়ার পর পাবে তাও উনি কল ব্যাক করবেন। পাপড়ির কল কখনোই রিসিভ করতে পারেনা৷ পারবে কিভাবে? উনার মাথায়তো ইন্টারভিউয়ের বোঝা চাপানো। বোঝা নামাতে নামাতেই উনি ঘেমে একাকার! তার কল রিসিভ করার সময় কোথায়?
পাপড়ির ভাবনা বিচ্ছেদ ঘটে ফোনের রিংটোনে।
“” তোমাকে না মানা করেছি,আমাকে কল দিতে? আবার কেন কল দিছো? তুমি কি ঘুমের সাথে আমার বকা হজম করে ফেলো?””
“” হুহ!””
“” আবার হুহ! কি? কিছু বললে বলো না বললে কেটে দাও। তুমি যদি ভাবো শুধু হুহ! বলার জন্য কল দিয়ে আমাকে বিরক্ত করবে তাহলে আমি তোমার হুহ! কে…””
“” আজকে পড়াতে আসবেননা?””
“” পড়াতে আসবো মানে? বিয়ের রং কি একদিনেই কেটে গেলো? আর হঠাৎ করে মাথায় পড়ার ভুত ঢুকলো কিভাবে? এমনিতে তো পড়া গুলিয়ে খাওয়াই দিলেও গিলোনা। আজ হঠাৎ বিয়ের আমেজ না কাটতেই পড়ার কথা বলছো?””
“” সামনে আমার টেস্ট পরীক্ষা তো তাই!””
“” তোমার পরীক্ষাতো আমি কি করবো? তোমার পড়া আমি পড়ে দিবো? আমার কি জন্মই হয়েছে শুধু পরীক্ষার পড়ার জন্য? এখন চাকরীর পড়া বাদ দিয়ে তোমার পড়া পড়ে দিতে হবে?””
“” হুম!””
“” আবার হুম! বলা হচ্ছে? কাল আসতেছি! তবে পড়ানোর জন্য না তোমার হুমের বারোটা বাজানোর জন্য!””
আতিশ টুস করে ফোনটা কেটে দিলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে পাপড়ি হেসে ফেললো। ফোনের স্ক্রিনে কয়েকটা চুমু খেয়ে বললো, আপনার কাছে পড়ার জন্য শুধু বিয়ে কেন,আমি তো আমার সব স্পেশাল ডে গুলোকেও ভুলে যেতে পারি। আমার কাছে আপনার সাথে কাটানো একএকটা সেকেন্ড এক একটা স্পেশাল ডে।
অন্ত্রীশাকে গোসল করিয়ে একটা লাল টকটকে জামদানী শাড়ী পড়ানো হয়েছে। হালকা মেকাপ আর সোনার গয়না পড়ানো হয়েছে। একটু পর পর নতুন বউ দেখার বাহানায় ওর উপর হামলে পড়ছে নতুন নতুন মেহমান। এদিকে সারাদিনে আর একবারও পালকের দেখা পাইনি সে। উনি কি আমার কোনো সাজই দেখবেননা???
মিসেস তানিয়া বেগম একটু পরপর এসে অন্ত্রীশার সাথে ফিসফিস করে নানান জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন,আর ইশারায় সালাম করতে বলছেন। সালাম করতে করতে মনে হচ্ছে কোমড় ভেংগে যাবে। তবুও তার সালাম করা শেষ হবেনা। এখন তো দাড়াতেও ভয় লাগছে,মনের ভেতর খুতখুত লাগছে। অন্ত্রীশা মনে মনে গুনে গুনে দেখলো পিরিয়ডের ডেট আসতে এখনো দুদিন বাকি। তাহলে এখনি এমন লাগছে কেন? সবার সামনে আবার লজ্জা পেতে হবেনা তো?? অন্ত্রীশার নতুন মেহমানদেরকে দেওয়া কৃত্রীম হাসিটাও এখন আর আসছেনা। আশেপাশে তাকিয়ে শ্বশুড়বাড়ির কাউকে দেখতেও পাচ্ছেনা। কি যে হবে? ভাবতেই পালক রুমে ঢুকলো।
অন্ত্রীশার মেঘে ঢাকা মুখটা নিমিষেই রোদে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে ভরা রুমেই ডেকে বসলো,
“” এই যে শুনছেন? একটু এদিকে আসবেন? আমার একটা ইয়ে লাগবে!””
অন্ত্রীশার কথায় শুধু পালক নয় রুমে উপস্থিত সকলেই হা করে তাকিয়ে রইলো। নানাজন নানা কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো। তাতে যেন অন্ত্রীশা হাফ ছেড়ে বাচলো। বিছানা থেকে নেমে পালকের মুখোমুখি হয়ে বললো,
“” আমার একটা ইয়ে লাগবে।””
পালক বেশ বিচলিত হয়ে বললো,
“” ইয়ে মানে?””
পালকের পাল্টা প্রশ্নে অন্ত্রীশা থতমত খেয়ে গেলো। তাড়াহুড়ো আর টেনশনে সে এসব কি বলছে? তার কি লাগবে এখন সে কিভাবে বলবে?
পালক তখনো অন্ত্রীশার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে দেখে অন্ত্রীশা আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কি বলবে,কিভাবে বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ জপতে লাগলো। চোখ খুলতেই দেখলো পালক নেই। যাহ! উনি কই গেলো? এখন আমার কি হবে?
পালক বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ীর কাছে এগুতেই একটা বাচ্চা আংকেল বলে ডাক দিলো। পালক পেছনে ঘুরতেই বাচ্চাটা ওর হাতে একটা কাগজ দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
কাগজের ভাজ খুলতেই পালক দেখতে পেলো
***I need a pad an emergency***
ইতি
অন্ত্রীশা
পালক এক লাইনের ইংলিশ লেখাটি দেখে যতটা না বিব্রত হয়েছে তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে নিচে ইতি লিখে নাম লিখার পুর্বে কিছু একটা লিখে কেটে দিয়ে আবার নামটা লিখা হয়েছে। বাচ্চাদের মতো কেটেকেটে কালো দলা পাকিয়ে রেখেছে। কেউ যে নিজের নাম লিখতে ভুল করে তা পালক এটা নিয়ে দুজনকে দেখলো। কাগজটি হাতে নিয়েই পালক নিজের অতীতে হারিয়ে গেলো।
চলবে