#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (১৭)
অনিকশা কথা শেষ করার আগেই ওর বা গালে ঠাস জরে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে অরিদ। চোখ,মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ওর। অনিকশাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে চিৎকার করতে করতে বললো,
“” বাপের বাড়ি যাবি নাকি পালকের কাছে যাবি সেটা তোর ব্যাপার। দাড়া আমি তোকে হ্যাল্প করছি!””
অরিদ রুমের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। একটা লাগেজ বিছানায় ফেলে তাতে আশেপাশে যা পাচ্ছে সব ঢুকানো শুরু করে দিয়েছে!
অনিকশা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। অরিদকে দেখছে অপলকে। কে এটা? এটাই কি তার সেই ভোলাভালা স্বামী? যে কিনা রাগ দেখাতেও জানতোনা?
অনিকশা পালকের এমন রুপে এতোটাই বিস্মিত যে কেউ চড় মারলে তাকে কাঁদতে হবে এটাও ভুলে গিয়েছে। শুধু মনে মনে এটাই ভাবছে,এটা তার অরিদ হতে পারেনা। নিশ্চয় অরিদের রুপে অন্য কেউ,ভুত নয় তো???
অরিদ হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই লাগেজে ঢুকিয়ে নিচ্ছে। আলমারী খুলে নিয়ে সেখান থেকে যা পারলো ব্যাগে রেখে ভরে ফেলছে। চেইন লাগাতে না পারায় ঠাস করে একটা লাথি মারলো লাগেজে।
লাগেজ বিছানা থেকে নিচে পড়ার শব্দে অনিকশার হুশ এসে গেছে। তার চোখ দিয়ে টপটপ করা পানি নিয়ে অরিদের কাছে যাচ্ছে!
আকাশটা মেঘেরা ছেয়ে আছে। বৃষ্টি নামার কোনো নামগন্ধ নেই,বাইরের বাতাসে শীতলতার ছোয়া আছে,যা একটু পরপর অন্ত্রীশাকে ছুয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির পরে তার এই আবহাওয়াটাও ভিষন পছন্দের।
“” তুমি এখনো ওখানে দাড়িয়ে আছো যে? তোমাকে না বললাম আমরা বেরোবো?””
অন্ত্রীশা,পালকের দিকে না তাকিয়েই বললো,
“” ইচ্ছে করছেনা। আপনার বেলকনিটা খুব সুন্দর। দক্ষিন সাইডে হওয়ায় বাতাসেরা সারাক্ষনি লুকোচুড়ি খেলে।””
পালক নিজের শার্টের বোতামটা লাগাতে লাগাতে অন্ত্রীশার পেছনে এসে দাড়িয়েছে,
“” ইচ্ছে না করলেও যেতে হবে। সবসময় নিজের ইচ্ছে কে গুরুত্ব দিতে নেই।””
অন্ত্রীশা পেছনে ঘুরতেই পালকের মুখোমুখি হয়ে গেছে,দুরত্বটাও খুব বেশি যে তা নয়,আবার খুব কাছেও না। মেঘ কালারের শার্টটাতে পালককে মেঘের রাজপুত্রের মতো লাগছে। মাত্রই কি গোসল করে এসেছে? মুখটা এতো পবিত্র লাগছে যে। যেন সে এক গোসলেই তার ভেতরের সবটা অপবিত্র ধুয়ে এসেছে। বাতাসের ঝাপটাই সুন্দর স্মেল ভেসে আসছে অন্ত্রীশার নাকে। পারফিউম মেখেছে কি? কিন্তু উনি তো পারফিউম লাইক করেননা,তবে কি এটা তার পুরুষত্বের অধিকারে থাকা বিশেষ আহবানের সুবাস??
হঠাৎই বাতাসের দমকা ছোয়াই অন্ত্রীশার পেছনে ছেড়ে দেওয়া চুলগুলো সামনে চলে এসেছে। অন্ত্রীশার মুখ পুরো ঢেকে গিয়েছে,অনেকটা ছোটবেলায় মজা করে চুল দিয়ে ভুত সাজার মতো দেখাচ্ছে অন্ত্রীশাকে।
পালকের ইচ্ছে হচ্ছে অন্ত্রীশার মুখটাকে চুলের আড়াল থেকে বের করে নিয়ে আসতে। অমন মিস্টি মুখের অধিকারী নারীর মুখ চুল দিয়ে কেন ঢেকে থাকবে? এই চুলগুলোও এতো কেন বেহায়া হয়? যখন তখন নানানভাবে ছুয়ে দেয়। পালকের ডান হাতটা অজান্তেই অন্ত্রীশার মুখের কাছে চলে যাচ্ছে। কিন্তু হাতটাকে সামলিয়ে নিয়েই পালক শব্দ করে হেসে উঠলো,,,
অন্ত্রীশা দুহাত দিয়ে নিজের চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে বললো,
“” আপনাকে বেশ উৎফুল্ল লাগছে। কারনটা কি?””
পালক ঠোটে হাসি রেখেই বা হাতের দুটো আংগুল দেখিয়ে বললো,
“”দুটো কারন!””
“” দুটো?””
পালক ডান হাত দিয়ে বা হাতের একটা আংগুল ভাজ করে নিয়ে বললো,
“” হুম।নাম্বার ওয়ান,অনিকশা আমার পত্রীকন্যা নয় তাই। নাম্বার টু,যেহেতু অনিকশা পত্রীকন্যা নই সেহেতু পত্রীকন্যা এখনো আমার।””
“” কিভাবে বুঝলেন পত্রীকন্যা এখনো আপনার? আপনাদের মধ্যে কিন্তু বিশাল গ্যাপ রয়েছে। এমনও তো হতে পারে,এতোদিনে ও বিয়ে করে,দুকন্যার বাপ সরি,মা হয়ে গিয়েছে।
অন্ত্রীশার কথায় পালক মুচকি হেসে নিয়ে ওর হাত চেপে ধরেছে। ওকে রুমের ভেতরে নিতে নিতে বললো,
“” এটা কখনোই সম্ভব না অন্ত্রীশা। আমার পত্রীকন্যা আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারেনা। আর দুকন্যা কিভাবে আসবে?””
“” এতো আস্থা?””
পালক খাটের উপরে রাখা একটা শপিং ব্যাগ থেকে একটা শাড়ী বের করে অন্ত্রীশা হাতে দিয়ে বললো,
“” আমার প্রাণ ও। প্রাণের বিশ্বাস না রাখলে কিভাবে হবে বলো? এখন এতো কথা বাদ দিয়ে যাও এটা পড়ে আসো। উই আর লেইট!””
অন্ত্রীশা হাতের সাদার মধ্যে লাল পাড়ের সিল্কের শাড়ী দেখতে পাচ্ছে। এ রকম শাড়ীগুলো হিন্দুরা বেশি পড়ে থাকে। অবশ্য তারও মাঝে মাঝে পড়তে অনেক শখ হতো। কিন্তু সত্যি সত্যি পড়বে এটা কখনো ভাবেনি।
“” আমি বাইরে ওয়েট করছি,ইউ হেভ অনলি ৩০ মিনিটস।””
পালক চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা পেছন থেকে বললো,
“” অন্যের জন্য কেনা শাড়ীটা আমাকে পড়তে দিচ্ছেন? কাগজ কলমের বউ হিসেবে এটলিস্ট একটা শাড়ীতো গিফট পেতেই পারি!””
অন্ত্রীশার এমন কথায় পালক দরজার কাছটাতে এসে থমকে গিয়েছে৷ পেছনে চট করে ঘুরতেই অন্ত্রীশাকে ওয়াশরুমে ঢুকে যেতে দেখতে পেলো। ও কিভাবে জানলো এটা ওর জন্য কেনা হয়নি? আমি তো ওকে এই ব্যাপারে কিছু বলিনি। হ্যা মানছি এটা আমি আমার পত্রীকন্যার জন্য কিনেছিলাম। মেয়েটার হাজারও শখের মধ্যে এটিও একটি। তার খুব শখ ছিলো পহেলা বৈশাখে এমন একটা সাদার মধ্যে লাল পাড়ের শাড়ী পড়ে খোপা করবে৷ খোপাতে ফুলও দিবে বলেছিলো,কিন্তু কি ফুল দিবে সেটা জানায়নি।
অনিকশার সাথে দেখা করার পর মনটা হালকা করতেই আতিশের বাসায় যাওয়া পালকের। ওখানে গিয়েই জানতে পারে আতিশের চাকরী হয়েছে। আর ও অফিসেই আছে। চাকরী পাওয়ার সাথে সাথে আন্টিকেও নিয়ে এসেছে। আন্টির সাথে বেশ কিছুক্ষন গল্পে গল্পে সময় কাটিয়ে উঠতেই আতিশের আগমন ঘটে। অনিকশার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা আতিশকে জানাতে জানাতে রাত হয়ে এসেছিলো। এতো রাতে শপিংমলে গিয়ে শাড়ী কেনা অসম্ভব তাও আবার একটা অজানা মেয়ের জন্য। যার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু সে জানেনা। তার কোন কালার ভালো লাগে,কোন ডিজাইন ভালো লাগে,কি ধরনের শাড়ী পছন্দ করে,আদৌ শাড়ী পছন্দ করে নাকি তাও জানেনা। তাই এতো রিস্ক না নিয়েই পালক বাসায় চলে এসেছিলো। নিজে ড্রেস চেন্জ করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াড্রবটা মেলতেই এই শাড়ীটা চোখে পড়েছিলো। যার জন্য অনিকশানামক এক বিরহ থেকে বের হতে পেরেছে সে, তাকে এই শাড়ীটা পড়তে দিলে কি তার পত্রীকন্যা রাগ করবে? কখনোই না আমার পত্রীকন্যা এতো ছোট মনমানসিকতার হতেই পারেনা৷ সেরকম চিন্তাভাবনা করেই পালক অন্ত্রীশাকে এই শাড়ীটা দিয়েছিলো। তাই বলে এভাবে অপমান করে দিবে? ওকে শাড়ী কিনে দেওয়ার জন্য স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তুলে আনার কি খুব প্রয়োজন ছিলো??
পালক কিছুটা মন খারাপ করেই বাইরে অন্ত্রীশার জন্য ওয়েট করছিলো। কিন্তু ত্রিশ মিনিটের জায়গায় এক ঘন্টা হতে চলাতেও যখন অন্ত্রীশার কোনো সাড়া পাচ্ছেনা তখন কিছুটা বিরক্তের ছাপ পড়েছে পালকের মুখে। টিভিটা অফ করে দিয়ে নিজের রুমের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে উত্তর এসেছে,,
“” পরপুরুষের মতো অভিনয় না করলেও হবে। ভেতরে আসুন।””
অন্ত্রীশার এমন তিক্ত কথায় পালক কিছুটা থতমত খেয়েই ভেতরে ঢুকে হা হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
অন্ত্রীশা ব্লাউজ বিহিন শাড়ীটাকে পেচিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। চুলগুলো এলোমেলোভাবে পেচিয়ে খোপা করে রাখায় কাধ আর গলার দিকটা বেশি নগ্ন লাগছে। আচ্ছা শুধু জামাকাপড়বিহীন হলেই মানুষকে নগ্ন বলা হয় নাকি বিশেষ বিশেষ জায়গায় কাপড় না থাকলেও নগ্ন বলা যায়??
অন্ত্রীশার এমন রুপ দেখে মনে হচ্ছে তার সামনে বসে রয়েছে সাদা আগুনের দেবী। যার দিকে তাকালেই সে ভস্ব হয়ে যাবে। সাদা আর লাল ভস্ব!
পালক অন্ত্রীশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও পারছেনা। মনে হচ্ছে সাদা আগুনের দেবী তার আগুনী যাদুতে তার চোর দুটোকে স্থির করে ফেলেছে। সে চাইলেও চোখের পাতা ফেলতে পারবেনা। চাইলেও চোখ সরিয়ে নিতে পারবেনা।
“” আপনি কি অমন হা করে দাড়িয়ে থাকার জন্য এসেছেন?””
“” হুম!””
“” কি?””
“” না মানে,আপনি এখনো রেডি হোননি কেন?””
অন্ত্রীশা যেন পালকের এই প্রশ্নের জন্যই এতক্ষন গালে হাত দিয়ে ওয়েট করছিলো। পালক যত দ্রুত সে তার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে তার থেকেও দ্বিগুন গতিতে তার দিকে তেড়ে এসে বললো,,,
“” আপনি যা দিয়েছেন তা দিয়ে তো রেডি হয়েছি,চলেন যাওয়া যাক।””
পালক চোখ দুটো চোখ বড় বড় করে বললো,
“” এভাবে?””
“” হুম, চলুন।””
“” আপনি কি সবাইকে ভস্ব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?””
অন্ত্রীশা ভ্রু কুচকে বললো,
“” মানে?””
“” আপনি আর কিছু পড়বেননা?””
“” আপনি কি আর কিছু দিয়েছেন?””
“” আমি দেইনি বলে পড়বেননা?””
অন্ত্রীশা উল্টোদিকে ঘুরে হাতদুটো একটা আরেকটার উপর রেখে পেট ও বুকের মাঝখানে ভাজ করে নিয়ে বললো,
“” না।””
পালক অন্ত্রীশার পিঠের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
“” একটা মেয়ের কতগুলো জায়গা নগ্ন হতে পারে?””
“” গুনে দেখতে চান?””
অন্ত্রীশার আকস্মিক কথায় পালকের গলা শুকিয়ে এসেছে। চোখের কাজটা ঠিকমতো করতে গিয়ে কি মুখের কাজটা ভুল করে ফেলেছি? নাহলে মনে মনে কথা ও কি করে শুনলো???
“” অন্ত্রীশা,আসলে হয়েছে কি আমিতো এতোকিছু ভেবে শাড়ী কিনিনি তাই আর…..”””
“” ব্লাউজ কেনা হয়নি তাইতো? কেন আপনার কি মনে হয়নি উইথআউট ব্লাউজ শাড়ী কিভাবে পড়বে?””
“” কি করে কিনবো,আমি তো পত্রীকন্যার….””
“” পত্রীকন্যার কি?””
পালকের আরো বেশি গলা শুকিয়ে এসেছে,তার পানি খাওয়া বড্ড প্রয়োজন। এভাবে আর কিছুক্ষন অন্ত্রীশার সামনে থাকলে সে সত্যি সত্যিই ভস্ব হয়ে যাবে।
“” কিছুনা। আচ্ছা আপনি অন্যকিছু পড়ে নিন। আপনার শাড়ী পড়া লাগবেনা।””
পালকের এ কথায় অন্ত্রীশা তেলেবেগুনে জ্বলে যাচ্ছে। পালকের একদম কাছটাতে এসে বললো,
“” কেন পড়বোনা? অবশ্যই পড়বো,এই শাড়ীটাই পড়বো,এইভাবেই পড়বো,আর আপনার সাথে বাইরেও যাবো।””
পালক চোখ বুঝে কিছুটা পেছনের দিকে ঝুকে আল্লাহ আল্লাহ ঝপতেছে৷ সে কি করে এভাবে ওকে বাইরে যেতে দিবে? সামান্য রেগে যাওয়ার ফলেই যে শাড়ীটা খুলে যাওয়ার উপক্রম সে শাড়ী পড়ে বাইরে যাওয়া অসম্ভব!
“” কি পাগলামী করছো অরিদ? কি হয়েছে বলবে তো?””
অরিদ ছলছল নয়নে অনিকশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“” তুমি চেয়েছিলেনা আমি তোমাকে মুক্তি করে দেই? তাই করছি। তোমাকে আজ মুক্তো করে দিবো আমি,তুমি একদম মুক্তো!””
অনিকশা অরিদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“” এমন করে বলছো কেন? আমার খুব ভয় হচ্ছে। তোমাকে দেখে আমার খুব ভয় লাগছে,অরিদ! আর কিসের মুক্তির কথা বলছো? আমি কোনো মুক্তি চাইনা,আমিতো আমার অরিদের খাচায় বন্দী হতে চাই।””
অরিদ একটানে অনিকশাকে সরিয়ে নিয়ে বললো,
“”তুমি কি চাও না চাও সব আমি জানি,তোমার থেকে ভালো করে জানি। আমাকে কাছে টেনে না নেওয়াতেও এতোটা কষ্ট ছিলোনা যতটা লুকিয়ে তুমি অন্যকারো বুকে পড়েছিলে।””
“” অন্যকারো বুকে মানে?””
অরিদ অনিকশার দিকে এগিয়ে ধমকাতে ধমকাতে বললো,
“”তুমি মানা করতে পারবে,পালক তোমাকে জড়িয়ে নেইনি?””
“” পালক!””
“” হ্যা! হ্যা!! হ্যা!!! পালক। তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড,সরি এক্স কেন হবে? প্রেজেন্ট এন্ড ফিউচার!””
অরিদ কথা শেষ করতেই অনিকশা ওর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
“” তোমার কাছে আমি এটা কখনো আশা করিনি অরিদ,কখনোনা। এতোবছর তোমাকে আমি আমার হৃদয়ের সর্বোচ্চ জায়গায় যে সম্মান দিয়ে বসিয়েছিলাম আজ তুমি একটা আঘাতে শেষ করে দিলে। তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিলো,কিন্তু এখন মনে হয়না আর কিছু বলা প্রয়োজন!””
অনিকশা চোখের পানি মুছতে মুছতে দরজা মেলে বেড়িয়ে গেলো। কষ্ট হচ্ছে তার খুব কষ্ট। যে ছেলেটা একফোটা ভালোবাসা না পেয়ে,এতো অবহেলার মধ্যেও এত ভালোবাসা দিতে পেরেছে,সে কিনা ছোট্ট একটা ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে এমনটা করতে পারলো? একবার কি তার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধ হয়নি???
অনিকশা চলে যেতেই অরিদ হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। ঘরের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে সে।
“” দুলাভাই,ঘরের এ অবস্থা কেন? আপনাকে এমন পাগল পাগল লাগছে কেন? আপু কোথায়? আমরাতো আপনাদের সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেরাই সারপ্রাইজ হয়ে যাচ্ছি। কি ঘটেছে এখানে? কিছু বলছেননা কেন??””
অন্ত্রীশা নিজের হাতের কেকটা খাটের উপর রেখে দিয়েছে। আজ অনিকশা আর অরিদের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী। পালক তাকে এখানেই নিয়ে আসার জন্য তাড়া দিচ্ছিলো। শুধু বিবাহ বার্ষিকির উইশ করার জন্যও পালক আসেনি। তার আরেকটা উদ্দেশ্য আছে। যে সম্পর্কটা তার আর অনিকশার একটা ভুল বুঝাবুঝির জন্য নড়বড়ে হয়ে আছে তা ঠিক করার জন্য। এই এক বছরে সে অনিকশাকে যতটুকু বুঝেছে তাতে এটা স্পষ্ট এতোদিনেও সে অরিদের কাছে কিছুই বলেনি। আর এই না বলার ব্যর্থতার জন্যই হয়তো তারা এতোটা কাছাকাছি থেকেও অনেকটা দুরে। এই দুরত্বটাকে সরিয়ে দিয়ে ওদের দুজনকে মিশিয়ে দেওয়াই মেইন উদ্দেশ্য পালকের। সেটা কোনো বিশেষ দিনে হলে মন্দ হয়না তাই পালক আজকেই এসেছে,অরিদের সাথে কথা বলবে বলে।
অন্ত্র্রীশা অরিদের দিকে এগুতেই ও বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেছে। চোখের তীক্নদৃষ্টি পালকের দিকে।
অন্ত্রীশা অরিদের দিকে হাত বাড়াতেই ওকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে পালকের দিকে ঝাপিয়ে পড়ে। অরিদের এমন হঠাৎ আক্রমনে তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতেই উল্টিয়ে পড়ে গিয়েছে পালক। সাথে অরিদও।
অন্ত্রীশা ভয়ে দৌড়ে এসে অরিদের হাত থেকে পালককে ছুটানোর চেষ্টা করছে,,
“” কি করছেন,দুলাভাই? পালককে কেন মারছেন? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? ছাড়ুন! ব্যথা পাবেন তো!””
পালক নিজেকে সামলে নিয়ে অন্ত্রীশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
“” অন্ত্রীশা তুমি ব্যথা পাবে সরে যাও। অরিদ ভাইয়ার এখন মাথা ঠিক নেই।””
অন্ত্রীশা পালকের কথা অগ্রাহ্য করেই অরিদের হাত ধরে টানতে থাকে। অরিদের দুটো হাতই পালকের গলা টিপে ধরে আছে।
পালক আবার চিৎকার করে বললো,
“” উনার পাগলামীর কারন হয়তো আমি বুঝতে পারছি,অন্ত্রীশা! উনাকে আমি সামলিয়ে নিচ্ছি। তুমি অনিকশাকে খুজো। দেরি হলে অনেক বড় কিছু ঘটে যেতে পারে। আমার কথাটা শুনো,প্লিজ অন্ত্রীশা!””
অন্ত্রীশা অরিদের কাছ থেকে সরে দরজার কাছে এগিয়ে আবার ওদের দুজনের দিকে তাকাতেই পালক চোখের ইশারায় বললো,
“” যাও!””
অন্ত্রীশা সেখানে আর এক মুহুর্তও দাড়ায়নি। পুরো ফ্লাটে অনিকশাকে খুজা শুরু করে দিয়েছে। কোথাও না পেয়ে ছাদের দিকে পা বাড়িয়েছে।
অরিদ রাগে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলেছে,চোখ,মুখ,নাক,গাল সব লালরং ধারন করে ফোলে উঠেছে। পালক অনেক কষ্টে নিজের গলা থেকে অরিদের একট হাত সরালেও সে থমকে যায়নি। ডান হাতটা মুঠো করে পালকের মুখের দিকে আনতেই পালক নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,
“” সেদিন যে কারনে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আজ সেই একি কারনে আমার গলা টিপে ধরেছেন,তাইনা বড় ভাই???””
চলবে