#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (২৩)
আতিশ পালককে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে পাপড়ির গলা শুনতে পেলো।
“” ভাইয়া দেখতো,কাল আমি কোন শাড়ীটা পড়ে বউ সাজবো?””
আতিশ পেছনে ঘুরতেই পাপড়ির হাতে লাল আর খয়েরী কালারের পাথর আর সুতোর ভারী কাজ করা শাড়ী দেখতে পাচ্ছে। মুখে তার সেই মনভোলানো চিকচিক হাসি। তবে কি পালক সত্যি কথাই বলেছে? পাপড়ি অন্য কারো জন্য বউ সাজবে? ভাবতেই আতিশের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠছে!
পাপড়ি দরজার কাছটা থেকে সরে এসে পালক আর আতিশের মাঝখানে ঢুকে পড়েছে। পালকের মুখোমুখি হয়ে দাড়ানোর ফলে আতিশ পাপড়ির পেছন সাইড দেখতে পাচ্ছে। পাপড়ি আরো উৎসাহী ও আদুরী গলায় বললো,,
“” ভাইয়া দেখনা,উনি তো দুটো বেনারশী পাঠিয়েছে। এখন আমি কোনটা পড়বো বুঝতে পারছিনা। তুই বলে দেতো!””
পালক কিছুক্ষন দুটো শাড়ীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,
“” আমি বুঝতে পারছিনা। দুটোতেই তোকে অনেক সুন্দর লাগবে। তুই বরং আতিশকে জিজ্ঞেস কর!””
পাপড়ি তাৎক্ষনিক অনেকটা লাফানো ভঙ্গিমাই উল্টো ঘুরে গিয়েছে। আতিশের দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,,
“” আতিশ ভাইয়া,তুমি বলো তো কোনটাতে আমায় বেশি সুন্দর লাগবে?””
আতিশ ভেতরে ভেতরে রেগে ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে পাপড়িকে কষে দুটো চড় মারতে। এতো বড় সাহস আমার কাছে জিজ্ঞেস করে ও অন্যের জন্য কোন শাড়ী পড়ে বউ সাজবে? তোর বউ সাজা আমি ছুটাচ্ছি!
আতিশ অন্তরের রাগ অন্তরেই আটকে রেখে নরম সুরে বললো,,
“” পাপড়ি ভেতরে যাও। আমার পালকের সাথে কথা আছে!””
“” কিন্তু আমার শাড়ী!””
পেছন থেকে পালক বলে উঠলো,,,
“” যার জন্য বউ সাজবি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নে।””
“” Good idea.””
পাপড়ি যেমন চিকচিক হাসি নিয়ে আতিশের সামনে এসেছিলো ঠিক তেমনি চিকচিক হাসি নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে,তবে এখনকার চিকচিকটার মধ্যে কিছুটা লাজুকতা মিশ্রিত!
পাপড়ি চলে যেতেই আতিশ পালককে উদ্দশ্যে করে বললো,,
“” আর ৯ দিন পর ওর এইচ.এস.সি পরীক্ষা আর তোরা এখন ওকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিচ্ছিস? ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে?””
পালক বিছানায় ধপাস করে বসে পড়েছে,সাইড থেকে একটা বালিশ নিয়ে ওটাতে কাধটা ভর দিয়ে আতিশকে বললো,,
“” আমি কেন ওকে বিয়ে দিতে যাবো? ও তো নিজেই বিয়ের জন্য নাচ্ছিলো।””
“” নিজে নাচ্ছিলো মানে?””
পালক এবার কাধের ভরটা ছেড়ে দিয়ে আরাম করে শুয়ে বললো,,
“” আরে,ওর নতুন টিউটরটা আসার পর থেকেই দেখি বোন আমার তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এমনি হাবুডুবু খাচ্ছে যে আমাকে স্ট্রেইট জানিয়ে দিলো,যদি এখনি ওদেরকে বিয়ে দিয়ে না দেই তাহলে নাকি পরীক্ষা দিবেনা। নাওয়া খাওয়াও বন্ধ। এখন তুই ই বল আমি একজন খাটি প্রেমিক হয়ে আমার বোনের প্রেমকে কি করে ফেলে দেই?””
আতিশ পালকের পাশে এসে বসে পড়েছে,কিছুটা অসস্থিরতা ও ধমকানির সুরে বললো,,
“” তাই বলে এখনি বিয়ে? পরীক্ষাটা শেষ হলে দেওয়া যেতোনা?””
“” আমার বোন আমার মতোই অধৈর্য্য রে আতিশ!””
“” ছেলে কি করে? কোথায় থাকে? নাম কি?””
“” আমার ঘুম পাচ্ছে,তুই পাপড়ির কাছ থেকে জেনে নে।””
আতিশের ইচ্ছে হচ্ছে শুধু পাপড়িকে না এই পালককেও কষে দুটো চড় মারতে। এইদিকে আমি অস্থিরতায় মরে যাচ্ছি আর ও ঘুম নিয়ে পড়ে আছে?? যাকে দেখার জন্য এতোটা আকুলতা নিয়ে আসলাম সেই কিনা বিয়ের জন্য টেই টেই করে নাচ্ছে??
আতিশকে অবাক করে দিয়ে পালক সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আতিশ পালকের রুম ছেড়ে পাপড়ির রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। দরজাটা মনে হচ্ছে ভেতর থেকে বন্ধ। দরজা বন্ধ করে কি করছে ও? নতুন টিউটরের সাথে ফুসুরফুসুুর? ফোনে কথা বলতে হলে কি দরজা বন্ধ করে নিতে হয়?? আতিশ দরজায় নক দিতে গিয়েও দিলোনা। একটা চাপা অভিমান কাজ করছে। এতোটা দিন ধরে যে মেয়েটা এতোটা ভালোবেসে এসেছে,সে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতো পাল্টে গেলো কি করে?? তাহলে কি ওগুলো সত্যিই অল্প বয়সের আবেগ ছিলো? আমার কি বুঝতে ভুল হয়েছিলো?? হয় তো তাই হবে,নাহলে ও কিভাবে অন্য কারোর বউ সাজার কথা ভাবতে পারে? ওর চোখে মুখে নতুন কারোর উপস্থিতির যে আলো জ্বলজ্বল করছে তা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে ঐ মানুষটাকে পেয়ে ও কতটা খুশি!
আতিশের ব্যথা হচ্ছে,বুকের ভেতরে। যে ব্যথা অন্য কাউকে দেখানো যায় না,অন্য কাউকে বলাও যায় না। এটা হলো না বলতে পারার কথাগুলোর ব্যথা! এই ব্যথাগুলো কখনোই প্রকাশ করা যায়না। প্রকাশ করা উচিতও না। কেননা,যাকে বলার প্রয়োজন তাকেই যদি না বলা হয়ে থাকে,তাহলে অন্য কাউকে কেন বলবে? এটা বুঝানোর জন্য যে সে কতটা ব্যর্থ??
আতিশ না চাইতেও চোখের কোনে পানি জমে যাচ্ছে। এই পানিগুলোকে এই কোনেই আটকে রাখতে হবে,বাহিরে আসতে দেওয়া যাবেনা। কখনোই না।
অন্ত্রীশার ডাকেই পালকের ঘুম ভেঙেছে,ঘুমঘুম চোখে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে পালক।
জাম কালার সুতির শাড়ী পড়েছে ও। কানে সোনার দুল,হাতে চিকন সোনার চুড়ি আর নাকে নাকফুলে পুরো নতুন বউ। কিন্তু তার সাথে খালি গলাটা মানাচ্ছেনা। একটা সোনার চিকন চেইন হলে বেশ হতো!
অন্ত্রীশা পালকের পাশে বসে পড়েছে। উল্টো দিকে ঘুরেই ওর দিকে একটা চেইন এগিয়ে দিয়ে বললো,,
“” এটা পড়িয়ে দিনতো!””
পালক তখনো অন্ত্রীশার বউরুপে দেখায় মগ্ন। তার বউটা যে এতো সুন্দর তাতো আগে বুঝেনি। বউ তো সে অনেক আগে থেকেই কিন্তু তখন তো ওকে এমন বউ বউ লাগেনি,আজ কেন লাগছে?? ভালোবাসি বলে??
“” কি হলো? আপনি কি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন?””
অন্ত্রীশার ডাকে পালক উঠে বসেছে। ওর হাত থেকে চেইনটা নিতেই বুঝতে পারলো এটাতে তারই দেওয়া সেই লকেটটাও ঝুলছে। ঠোটের কোনে হাসি নিয়ে অন্ত্রীশার চুলে হাত দিতেই ও বলে উঠলো,,
“” আমি আপনাকে চেইন পড়িয়ে দিতে বলেছি,আমাকে ছুতে নয়। আমার শরীরের কোনো অংশেই যেন আপনার টাচ না লাগে বুঝতে পেরেছেন?””
অন্ত্রীশার অমন কথায় পালকের মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়েছে।
অন্ত্রীশা নিজের হাতে নিজের চুলগুলো উচু করে ধরে রাখতেই পালক খুব সাবধানে চেইনটা পড়িয়ে দিয়েছে।
অন্ত্রীশা বসা থেকে উঠে বললো,,
“” নো কথা,নো ছোয়া। অনলি কলঙ্কিত! ওকে?””
পালকের চুপসা মুখ দেখে অন্ত্রীশার খুব হাসি পাচ্ছে। সে তো নিজেও চেইনটা পড়তে পারতো,কিন্তু পালককে একটু জ্বলতে দেখার জন্যই ওর কাছাকাছি এসেছে। ভালোবাসায় একটু একটু না জ্বললে খাঁটি হবেটা কি করে???
এতো বছর পর নিজের পত্রীকন্যাকে এতো কাছে পেয়েও ছুয়ে দেখতে পারছেনা,একটু মনভরে ভালোবাসার কথা বলতে পারছেনা,একটু বুকে নিতে পারছেনা,এই কষ্ট পালক কোথায় রাখবে?? আজ সোফাটাকে মনে হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন,শক্ত,ধারালো বস্তু যা একটু পরপর খুচিয়ে বলছে পত্রীকন্যার কাছে গিয়ে শুতে। ঘুম আসছে তার,মনটা কেমন আনচান আনচান করছে,শরীরের মধ্যে এক নতুন উত্তেজনা উকি দিতে চাচ্ছে।
পালক শোয়া থেকে উঠে অন্ত্রীশার কাছে এসে দাড়িয়েছে। টুপ করে মেঝেতে হাটু ভাজ করে বসেও পড়েছে। হাতদুটো খাটের ধারটাতে ভাজ করে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে। জাগ্রত অবস্থায় তো তোমার কাছেও ঘেষতে দাওনা। কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় ঠিকই ঘেষবো। তোমাকে ছুতে না পারি,মন ভরে দেথতে তো পারবো?? আমার পত্রীকন্যাকে দেখে দেখেই আজ সারাটারাত পার করবো।
পালক অন্ত্রীশার ঘুমন্ত চেহারায় তাকিয়ে পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে। এ যেন কোনো রুপকথার ঘুমন্ত রাজকুমারী। কি মায়াবী আর নিষ্পাপ চেহারা! মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে,,,এতো অপেক্ষা,এতো রাগ,এতো অভিমান,এতো ভুল শেষে আজ যখন দুজনদুজনার হলাম তখনই তোমাকে এতো বড় শর্ত জুরে দিতে হলো পত্রীকন্যা?? আমি কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখবো?? আমিতো তোমার প্রেমের আগুনে পুড়ে কবেই কলঙ্কিত হয়ে গিয়েছি তা তুমি বুঝতে পারছোনা?? আবার নতুন করে কিভাবে কলঙ্কিত হবো?? আমারতো মন,প্রান,শরীর,মাথা কিছুই কাজ করছেনা। সারাক্ষন তোমাকে একটু দেখার জন্য উফালপাথাল হয়ে যাচ্ছে,এমন অবস্থায় কলঙ্কিত কিভাবে হবো তা খুজেই পাচ্ছিনা। আমার সব বুদ্ধী আমি যে তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছি!
অন্ত্রীশার ঘুম ভাঙতেই পালককে নিজের পাশে আবিষ্কার করেছে। হাতের উপর ভর দিয়ে ঘুমিয়ে আছে,মাথাটা এক সাইডে কাত হয়ে পড়ে আছে। অন্ত্রীশা ঠোটটিপে হেসে নিয়ে একটা বালিশ পালকের কাছটাতে রেখেছে। আলতো করে ওর মাথাটা উঠিয়ে বালিশটা নিচে গুজে দিয়ে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
“” কিরে বাপ,তোর কি শরীর খারাপ? অপিসে যাবিনা?””
আতিশ চোখ না মেলেই শোয়াবস্থায় বললো,,
“” না।””
“” আজকে কি বন্ধ?””
“” জানিনা। আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে দাওতো আম্মু!””
দিলরুবা বেগম ছেলের মাথার কাছটাতে বসে চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,,
“” রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়েই পড়লি,এতোবেলা করে ঘুমাচ্ছিস,কিছু কি হয়েছে?””
“” না।””
“” তাহলে আমার সাথে পালকের বাসায় চল,আজতো পাপড়ির গায়ে হলুদ। ওখানে গেলেই মনটা ভালো হয়ে যাবে।””
পাপড়ির নামটা শুনতেই আতিশের চোখ খুলে গিয়েছে। চোখে একরাশ বিরক্ত নিয়ে উঠে বসলো,,,
“” আমি তো কোথায়ও যাবোনা আর তুমিও যাবোনা।””
“” ওমা কেন? পালক এতো বার করে বলে গেলো,না গেলে খারাপ দেখাবেনা??””
“” সে আমি দেখে নিবো। তুমি যাবা না মানে যাবা না। ক্ষুধা লাগছে যাও ভাত বারো।””
আতিশ টাওয়াল নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো।
“” এসব কি শুনছি অনতি?””
অরিদ্রার হাতে মেহেদী পড়াতে পড়াতে অনিকশার কথার উত্তর দিচ্ছে অন্ত্রীশা,,,
“” কি আপু?””
“” তুই নাকি পালককে বলেছিস কলঙ্কিত পুরুষ হয়ে দেখাতে?””
“” হুম!””
অনিকশা এবার সিরিয়াসমুডে বললো,,
“” নিজের বরকে কেউ অন্য মেয়ের কাছে ছেড়ে দেয়?””
“” অন্য মেয়ের কাছে ছাড়তে যাবো কেন?””
“” অন্য মেয়েকে না ছুলে কলঙ্কিত হবে কিভাবে?””
অরিদ্রার হাত থেকে মনোযোগ সরিয়ে অনিকশার দিকে তাকিয়েছে অন্ত্রীশা।
“” শুধু অন্য মেয়েকে ছুলেই কলঙ্কিত হওয়া যায়? আর কোনোভাবে হওয়া যায় না?””
“” আর কিভাবে হবে?””
অনিকশার প্রশ্নের উত্তরে ছোট্ট করে হাসি উপহার দিয়েছে। ওর হাতটা টান দিয়ে নিজের কোলে রেখে অন্ত্রীশা বললো,,
“” তোমার হাতে মেহেদী পড়লে অনেক সুন্দর লাগবে আপু। অরিদ ভাইয়া কখন আসবে??””
পালক যতটা পারছে অন্ত্রীশার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করছে। ওর আশেপাশে থাকলেই কেমন জানি চুম্বকের মতো টান অনুভব হয়। আর সেই টান অগ্রাহ্য করা কতটা কঠিন সেটা একমাত্র ও ছাড়া আর কেউ উপলব্ধী করতে পারবে না। তার মধ্যে কলঙ্কিত হওয়ার উপায়টাও এখনো খুজে পাচ্ছেনা। আর কত সে নিজেকে আটকে রাখবে,উফ! এতো সমস্যা আমাকেই কেন ফেইস করতে হয়??
পালক ভাবনার তালে রুমে ঢুকতেই একটা ছেটখাটো হার্টঅ্যাটাক হয়ে গেলো। অন্ত্রীশা ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে দাড়িয়ে আছে। এই মেয়েটা আমাকে জীবিত অবস্থায় মেরে ফেলবে,একবার ব্লাউজ ছাড়া শাড়ী পড়ছে তো আরেকবার শাড়ী ছাড়া ব্লাউজ পড়ছে। পালক চট করে ঘুরে বেড়িয়ে যেতে নিলেই পেছন থেকে ডাক পড়ে।
“” চলে যাচ্ছেন কেন? আমি তো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। শাড়ী পড়ার আগেই মেহেদী পড়ে ফেলেছি। এখন শাড়ীটা কিভাবে পড়বো? ঐদিকে পাপড়িকে হলুদের স্টেজেও নিয়ে যেতে হবে আর মেহেদীও এখনো শুকায়নি। শাড়ীটা আপনি পড়িয়ে দিনতো!””
পালক যেমন চট করে ঘুরে গিয়েছিলো আবারও তেমন চট করেই অন্ত্রীশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে সে সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি!
“” এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনি শাড়ী পড়াবেন নাকি এভাবেই বেড়িয়ে যাবো?””
পালক বিছানা থেকে শাড়ীটা হাতে নিয়ে অন্ত্রীশার কোমড়ে গুজতে গিয়ে থমকে গিয়েছে। ধবধবে সাদা মেদহীন পেটটার মধ্যে গর্তহীন নাভী!
“”হাত দিয়ে ছুতে পারছেননা বলে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন?””
অন্ত্রীশার ধমকানিতে পালকের হুশ এসেছে। পালক অসহায় দৃষ্টিতে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই ও বললো,,
“” নো কথা,নো ছোয়া। অনলি কলঙ্কিত! ওকে???””
সারাদিন নিজের সাথে যুদ্ধ করে রুমের মধ্যে নিজেকে আটকে রেখেছিলো আতিশ। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই বুকের ভেতর হারানোর ঝড় উঠেছে। যে ঝড়ে সে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা। বারবার শুধু পাপড়ির একটা কথায় মাথায় আসছে,আপনি তুমি করে বললে নিজেকে আপনার বউ বউ লাগে!
যে মেয়েটা শুধু তুমিতেই নিজেকে আমার বউ ভাবতো সে কিভাবে এখন এতো রঙঢঙ সেজে অন্যকারো বউ হবে? কেন? ও শুধু আমার বউ হবে,শুধু আমার। ওর হলুদ মাখা আমি ছুটিয়ে ছাড়বো। শুধু হলুদ কেন? সাথে মরিচ,ধনিয়া,জিরা,আদা,রসুন সব মাখাবো!
আতিশ রাগে গজগজ করতে করতে পালকের বাড়ি এসে হাজির। চারপাশে মানুষের চিল্লাচিল্লি,রঙঢঙ,লাইটের আলো,ফুলের গন্ধ সবকিছুই যেন আতিশের রাগকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে সব ভেঙে চুড়মার করে দিয়ে চিৎকার করে বলতে,পাপড়ি আমার বউ হবে। ওকে কোনো হলুদ লাগাতে হবেনা। আমি নিজেই হলুদ হয়ে ওর মধ্যে মেখে যাবো।
আতিশ বড় বড় পা ফেলে স্টেজের সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। স্টেজে হলুদ শাড়ী আর ফুলের গয়নায় সেজে বসে আছে পাপড়ি। ঠোটে তার খুশি আর লাজুকতার হাসি।
“” আতিশ ভাই,এতো দেরি করলেন যে? পাপড়িকে হলুদ দিবেননা?””
অন্ত্রীশা আতিশকে টেনে পাপড়ির সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে। হাতে একদলা হলুদ নিয়ে পাপড়ির গালে মাখতে মাখতে ভাবছে,এমন হলদে পাখিটার দিকে তাকিয়ে যে রাগ করতে পারবে তাকে শুলে চড়ানো উচিত!
গায়ে হলুদের পার্ট চুকিয়ে সবকিছু সামাল দিয়ে রুমে ফিরতে ফিরতে প্রায় মাঝরাত হয়ে এসেছে। চোখে,মুখে হাজারও ক্লান্তির ভিড় অন্ত্রীশার। বিছানায় শরীরটা মেলে দিতে না পারলে হয়তো এখনি ঢুলে পড়ে যাবে। অন্ত্রীশা ধীর পায়ে রুমের কাছে এসে থেমেছে। দরজাটা লাগানো। ভেতর থেকে কেমন একটা বাজে গন্ধ আসছে। অন্ত্রীশা কপাল কুচকে দরজা খুলতেই কাঁশি উঠে গিয়েছে। রুমে ড্রিমলাইটের আলো। তাও ধোয়ায় ঢেকে রয়েছে। চারপাশে ধোয়ারা উড়ে বেড়াচ্ছে। সিগারেটের এমন তীব্র গন্ধ অন্ত্রীশা সহ্য করতে পারছেনা। শুধু কেঁশেই যাচ্ছে। চোখে জ্বলাও ধরেছে।চোখ খুলতে পারছেনা। তবুও মেলার চেষ্টা করে ভেতরে তাকাতেই মেঝেতে পালককে বসে থাকতে দেখলো।
পালকের চারপাশে সিগারেটের টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। অন্ত্রীশা ওগুলোতে চোখ বুলিয়ে চিল্লিয়ে উঠলো,,,
“” এগুলো কি করেছেন আপনি? রুমের এ অবস্থা কেন? আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন?””
“” তুমি যে গেমটা শুরু করেছো সেটা আজ আমি শেষ করতে চলেছি!””
“” মানে?””
পালক বসা থেকে উঠতে উঠতে বললো,,
“”ভালোবাসার খেলায় দুজনেই পারটিসিপেট করেছি,তাহলে আমি একা কেন পারফর্ম করবো? তোমাকেও পারফর্ম করতে হবে,পত্রীকন্যা!
চলবে