নাম_না_জানা_এক_পাখি পর্ব ৩৮+৩৯+৪০

#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ৩৮

৬৩.
হলুদের জন্য লনে স্টেজ সাজানো হয়েছে। চারিদিকে ফটোগ্রাফার। একেক জনের একেক ভঙিতে ছবি তোলার যেন প্রতিযোগিতা চলছে।

তপসী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার দিকে নিবিষ্ট তার নজর। বাবার আসার কথা সবাই কে নিয়ে আজ। এখনো আসলো না তো!

ডায়াল প্যাডে নম্বর তুলে কল করলো বাবাকে তপসী। ফোন রিসিভ করতেই তপসী ব্যস্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি ব্যাপার কই তোমরা এখনো? অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে যাচ্ছে।

—— আসবো না মা আজ।

—— আসবে না মানে কি? কেন আসবে না?

—— তোর নিতা আন্টির মাথা ধরেছে বিকেল থেকে। কাল চলে আসবো আমরা।

তপসীর ভীষণ রাগ হলো। সে জামে না মাথা ধরাটা সত্য কিনা মিথ্যা।
তবুও তপসীর রাগ রাগলো। বির বির করে বললো,

—— এই মহিলা নিশ্চয়ই না আসার জন্য ভঙ ধরেছে।

তপসী রাগে ফোস ফোস করতে করতে বাড়ির ভিতরে আসলো। দরজার কাছে আস্তেই সুব্রতের দেখা পেল। সুব্রত অমায়িক হেসে জিজ্ঞেস করলো,

—— বাবা রা আসছে কখন?

—— আজ আসবে না।

—— কেন?

—— কারন তোমার শ্বশুরের বউ এর মাথা ধরেছে। আস্তে পারবে না। অসহ্য। তাকে আসতে কে বলেছে?

—— কুল ডাউন বউ। কাল তো আসবেই। হয়তো অনেক অসুস্থ।

—— অসুস্থ না ছাই। সব ঢং। আমাকে কষ্ট দেওয়ার উপায়। তুষারের জন্য মন আমার ভীষণ কাঁদছে।

—— আচ্ছা আমি কাল সকালে গিয়েই তাদের নিয়ে আসবো। এখন হাসো।

তপসী হাসলো না। মুখ গোমড়া করেই বললো,

—— চলো, স্টেজের দিকে যাই। ওদিকের কাজ কতোটা এগোলো কে জানে!

—— সব ঠিক ঠাকই হচ্ছে।

—— তবুও চিন্তা থাকে।

,
সুব্রতরা স্টেজের সামনে এসে রনিতকে কানে কানে জিজ্ঞেস করলো,

—— কিরে, হবু বউয়ের ছবি দেখেছিস?

—— না।

—— আরেহ ভাই নিয়ে নে। বয়ফ্রেন্ড হিসেবে তো আর বেশি কথা বলার সুযোগই পাবি না।

—— ইচ্ছে করছে না ভাই। আর কতোক্ষণ বসে থাকতে হবে?

—— মাত্র তো শুরুই হলো। এখনো অনেক বাকি। বসে থাক। এই জন্যই সুহানার সাথে কথা বল। টাইম কেটে যাবে।

তপসী জিজ্ঞেস করলো,

—— ওহ, আপনি তাহলে টাইম পাস করার জন্য আমার সাথে কথা বলেছিলেন, ছবি দেখতে চেয়েছিলেন?

—— মোটেও তা না। তোমায় দেখরে ইচ্ছা করছিলো। কথা বিলতে ইচ্ছা করছিলো। তাই ফোন করেছিলাম।

—— তখন তো বলেছিলেন মায়ের জন্য চেয়েছিলাম।

—— ওতো এমনিই বলেছিলাম। প্রথম বার কথা৷ বলছিলাম তো, একটু লজ্জা পেয়েছিলাম তাই।

—— আপনি লজ্জা পান তা আজ প্রথম জানলাম।

২_[[\৭৯

গাড়ি থেকে নেমে সবাই একটু আশ্চর্যই হলো। বর‍যাত্রী চলে এসেছে অথচ কনে বাড়ির কেউ সামনে আসলো মা! কমিউনিটি সেন্টার যদিও সুসজ্জিত তবুও কোনো মানুষের আনাগোনা বুঝা যাচ্ছে না।

কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকার সময় আরো আশ্চর্য হলো সবাই। প্রচলিত আনন্দ কার্য গেইট ধরা। কিন্তু কেউ ই আসে নি। না দেখা যাচ্ছে মামুষ জন৷ না কেউ এগিয়ে আসছে বরণ করার জন্য।

সুব্রতের মা হড়বড়িয়ে ভতরে ঢুকলো
পর মুহূর্তেই এক দম দৌড়ে ফিরে আসলো। বললো,

—— সেন্টারের ভিতর তো কেউ ই নাই। এমন অবস্থা কেন?

সুব্রত সুহানার বাবার নাম্বারে ফোন দিতে লাগলো। কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। রনিতের মুখ খানা চুপসে আছে৷ কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে ন্স।

সুব্রত একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে। রনিত চুপ করে বসে আছে। এমন হলো কেন?
সুহানা কি শেষ পর্যন্ত ফ্লিপ করলো।

হাজার রকমের চিন্তার মাঝেই রনিতের ফোন বেজে উঠলো। সুহানার নাম্বার। রনিত দ্রুত রিসভ করে কানে লাগালো। সুহানা নিশ্চয়ই অনেক বড় কোনো সমস্যায় পড়েছে।

রনিত কাপা কাপা গলায় বললো,

—— সুহানা এদিকে কি হচ্ছে?

সুহানা কি করলো কে জানে।গম্ভীর ভাবে বললো,

—— সবাইকে চলে যেতো বলো।

—— কোথায়?

—— বাসায়, আবার কোথায়?

—— পাগল হলে? কি হয়েছে বলো। এখানে এই পরিস্থিতি কেন?

—— রনিত, কাম ডাউন বেবি। সবাইকে বাসায় চলে যেতে বলো তো আগে।

—— সুহানা হেলামি বেশি করছো। বিয়ের নাম করে ডেকে এনে কি অমপমান করছো তুমি?

—— অপমান কই করলাম?

—— তাহলে এখানে কেউ নেই কেনো?

—— কে বলেছে নেই? ছাদে চলে আসো তো।

—— তুমি রুফটপে?

—— চলে এসেই দেখো।

কথা শেষ করেই সুহানা লাইন কেয়ে দিলো। রনিত সবার নজরের আড়াল হয়ে ছাদে চলে গেল। আজ সব হিসেব নিকাশ খুলতেই হবে। অবশ্যই।
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ৩৯

৬৪.
বউ সাজে সুহানাকে প্রতিমা রূপী লাগছে। চোখে মুখে কেমন মন মাতানো সৌন্দর্যের আভা। রনিত কয়েক পল তাকিয়ে রইলো সুহানার দিকে। অবচেতন মন কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলেই গেল যে নিচে তাদের কেউ রিসিভ করে নি। এমন কি ওয়েটার গুলো ছাড়া আর কেউ ই নেই।

ছাদে এখানে শুধু চাঁদের আলো এসে পড়ছে। দুইদিকে দুইটা বড়ো গোল এলইডি আছে কিন্তু এতো বড়ো ছাদের জন্য নিতান্তই কম। আবছা আলোয় সুহানা দাঁড়িয়ে আছে।

রনিত কম্পিত স্বরে ডাকলো,

—— সুহানা!

সুহানা দুই কদম সামনে এসে দাঁড়ালো। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি, চলে এসেছো বিয়ে করতে?

—— এখানে এসব কি হচ্ছে সুহানা?

—— প্রতিশোধের খেলা হচ্ছে গো। এই, দেখো তো আমার ব্রাইডাল লুক টা কেমন হয়েছে? ভাবলাম নাটক হোক আর যাই হোক, বেচারা আমার জন্য বর সেজে আসবে আমিও তাহলে নব বধূর মতো সেজে থাকি। তাহলে তোমার বুকের ব্যাথাটা আরো জোড়ালো ও হবে।

—— এর কারণ কি? সুব্রত তোমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো বলে এইসব করেছো?

—— আহা, এসব কথা বার্তা পরেও হবে। আগে তুমি যে ১৫ টা মাইক্রো করে তোমার জাত গুষ্টি সব নিয়ে এসেছো তাদের বিদেয় করো প্লিজ৷ তারা কি খেয়ে যাবে? খাবারের ব্যবস্থাও কিন্তু আমি করিয়েছি।

—— সুহানা। তুমি কি আমায় বিট্রেই করলে? আমি তোমায় কি করতে পারি এখন তুমি কি তা জানো?

—— করলে তো অনেক কিছুই করতে পারো। কিন্তু আমি জানি তুমি করবে না। এখন প্লিজ তোমার আত্নীয় দের বিদেয় করো। আমি তো তোমার সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতেই পারছি না।

—— কোয়ালিটি টাইম? তুমি কি ফান করছো? দেখো সুহানা এমন মজা করার ফল কিন্তু ভয়াবহ হবে।

—— তোমার কি মনে হয় আমি মজা করছি? আমার পরিবারের মানুষ কে এখানে কোথাও লুকিয়ে থাকতে বলেছি? তোমাদের সারপ্রাইজ করার জন্য? শোনো, এতো ন্যাকা সেজো না।

—— আমি তো সারপ্রাইজড ই। তোমার এমন রূপ কখনো দেখতে পারবো তা কি ভেবেছিলাম? ইউ টোটালি সারপ্রাইজড মি।

—— এখন কি তুমি তোমার বরযাত্রীদের বিদেয় করবে? না-কি না!

রনিত কিছু একটা ভাবলো। সুব্রত কে কল করলো। সুব্রত দ্রুতই রিসিভ করলো। রনিত ভনিতা ছাড়াই বলে উঠলো,

—— সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দে। মা কে ফোন করে বল খাবারের ব্যবস্থা কর‍তে। এতোগুলো মানুষ তো সারারাত অভুক্ত থাকতে পারে না আর!

সুব্রত ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় বলে উঠলো,

—— মজা পেয়েছিস ব্যাটা? তোর শ্বশুর বাড়ির লোক নেই একজনও। তুই এখন বলছিস সবাইকে ফেরত পাঠিয়ে দিতে। মানে কি এসবের?

—— বিয়ে যখন হবেই না তাহলে তারা আমার শ্বশুর বাড়ির লোক কিভাবে হলো? আর বিয়ে হবে না বলেই তারা এখানে নেই। তুই প্লিজ সবাইকে ব্যাক পাঠা। রায়াকে আগেই পাঠিয়ে দে। জ্যাঠু, বাবা, জ্যাঠিমা সবাই কে পাঠিয়ে দে। তুই আর তপসী থাকিস। আমি তোদের সাথে একটু পর যাবো।

কথা বলতে বলতে রনিতের গলা খানিক ভিজে এলো। সুব্রত আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি হয়েছে ভাই? কই তুই? আমায় বল কি হয়েছে? তুই কি কান্না করছিস? গলা ভেজা কেন তোর? বিয়ে কেন হবে না!

—— এতো কথা এখন বলতে পারছি না। তুই সবাইকে আগে বাড়ি পাঠা৷ এরপর বলছি।

—— কোনো সমস্যা হলে তুই বল আমায়। আমি সমাধান করবো। এভবে বিয়ে করবি না কেন বলছিস?

—— ভাই আমি তো বাচ্চা না, কি বলছি কি করছি সব বুঝি। বাবাদের বলবি চ্যাঁচাতে না। চুপচাপ সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দে।

—— সমস্যাটা বল ভাই। এরা কই সবাই। বিয়ের ব্যাপারে কোনো সমস্যা হয়েছে? তুই কই বল। আমি এখুনি আসছি। সব সলভ করে দিবো, প্রমিস। বিয়ে কেনো ভাঙবে?

—— সব সলভ হলেও আমি বিয়ে করবো না। যা বলছি তা ই কর। সবাইকে বাড়ি পাঠা।

—— কি বলবো সবাইকে?

—— সত্যি টাই বলবি। কি আর বলবি? বলে দে বিয়ে হবে না, আপনারা চলে যান।

রনিত আর অপেক্ষা করলো না সুব্রতের কথা বলার জন্য। কল কেটে দিলো। সিড়িকোঠার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়লো। সুহানা ঠিকই বলেছিলো, সু্হানাকে বউ সাজে দেখে বুকে ভীষণ ব্যাথা শুরু হয়েছে। চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করছে। কান্না উপচে পড়তে চাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করলো রনিত। কিছুতেই এখন কান্না করা যাবে না। একদম সুহানার সামনে ভেঙে পড়া চলবে না। কি আশ্চর্য অভিনয় করে মেয়েটা! এতোদিনে একবারও রনিত টের পেলো না সবটা সাজানো নাটক, সবটা মিথ্যা।

৬৫.
আকাশে তারার মেলা। চাঁদের জোৎস্নাতে চারিপাশ আলোকিত। সামনে দাঁড়ানো প্রেয়সী। যাকে খুব বেশিই ভালোবাসে। তবুও রনিতের কাছে এসব কিছুই বিশ্রী লাগছে।

সুহানা রেলিং এ হাত রেখে দাঁড়িয়ে গুন গুন করছে,

—— চাঁদের সাথে আমি দিবো না,
তোমার তুলনা!

রনিত কাঠ কাঠ গলায় জিজ্ঞেস করলো,

—— কেন করলে এসব? সুহানা!

সুহানা গুনগুন করতে করতেই ফিরে তাকালো রনিতের দিকে। মুখ দিয়ে আফসোস করার মতো শব্দ বের করে সুহানা রনিতের সামনে এসে দাঁড়ালো।

বললো,

—— বিনা কারণে নিশ্চয়ই কিছু করি নি, রনিত সোনা। আর তুমি তো জানোই আমি এসব কেন করেছি। প্রত্যাখ্যানের বদলে প্রত্যাখ্যান।

—— তুমি আমার নামটা প্লিজ উচ্চারণ করবে না। প্লিজ করবে না। আমার ইচ্ছে করছে তোমায় ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিতে।

—— উপস, বেবি বয়! কষ্ট হচ্ছে? ভাইয়ের বুকে গিয়ে কান্না করবে? করো প্লিজ। আমি চাই তোমার ভাই তোমার এই শোকে পাগল হয়ে যাক। ভীষণ ভালোবাসা না তোমাদের মাঝে?

—— কি জন্য এমন নাটক করলে? এমন বাজে ভাবে আমার পরিবার কে অপদস্ত করার কোনো মানে নেই।আমার পরিবার তো কখনো তোমার কোনো ক্ষতি করে নি।

—— সুব্রত তোমার পরিবারের বাহিরের কি? ওকে কষ্ট দেওয়া থেকে আমার মনে হয়েছে ওর খুব আপন কাউকে ভেঙে গুড়িয়ে দেই। যাকে দেখে ও নিজে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি চাইলে তপসীর সাথেই কিছু একটা করে দিতে পারতাম কিন্তু ওই ন্যাকা ষষ্ঠীর চেয়ে তোমাকে টার্গেট করা টা আমার কাছে বেশি মজার মনে হয়েছে।

—— সুব্রত তো তোমাকে অপমান করে নি!

সুহানা পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়ালো রনিতের দিকে। মনে তার কুৎসিত আনন্দ হচ্ছে। আজ প্রতিশোধ নিতে পেরে শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছে।

বাঁকা হেসে সুহানা বললো,

—— রনিত তুমি তো জানোই , আমি অনেকটা ভালোবাসতাম সুব্রত কে। আমার ট্রেনিং এর প্রথম দিন থেকে ওর জন্য পাগল ছিলাম। এতো টা ভালো আমি কখনো নিজেকেও বাসি নি। কতো ভাবে বুঝিয়েছি ওকে যে কি ভীষণ ভালোবাসি আমি ওকে। ও বুঝেও না বুঝে থাকতো। জানো আমি মানসিক ভাবে এতো বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। খুব সস্তা ভাবে আমাকে অফার ও করে ফেলেছিলাম তাকে। কিন্তু সব ভাবেই প্রত্যাখ্যান। আমি সত্যিই এতো অপমান মেনে নিতে পারি নি। ছোট থেকে আমি কোনো কিছুতে কারো কাছে কখনো না শুনি নি। আর তোমার ভাই আমাকে এতোটাই সস্তা পেয়ে বসেছিল!

রনিত শান্ত স্বরে বললো,

—— ও বিয়ে করেছে, ও তপসীকে ভালোবাসে। তোমার মানসিক সমস্যা আছে, এই জন্যই তুমি এতোটা নিচু মানসিকতা দেখালে। এইযে বরযাত্রার ২০০ জন মানুষের সামনে আমার পরিবারকে এইভাবে অপমান করলে, এর জন্য তুমি অবশ্যই শাস্তি পাবে সুহানা। খুব সহজে মুক্তি নেই তোমার।

—— চ্যালেঞ্জ করছো আমায়? আমি তোমার এই দুই পয়সার চ্যালেঞ্জ কে ভয় পাই না। তোমার ভাই বৌদিকে ডেকে আনো না, আমি আজ তোমার ভাইয়ের চেহারা দেখতে চাই।

—— তুমি কি জানো তুমি একটা সুদর্শন? সুদর্শন চিনো তো? গোবরের পোকা। নামটা শুনতে সুন্দর হলেও ও বিশ্রী। তেমনি তুমি দেখতে সুন্দর হলেও কুৎসিত।

—— সে হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট। আমি এসব গায়ে মাখছি না।

—— কথা গায়ে মাখার মতো লজ্জা থাকলে কি এই কাজ টা করতে? তুমি এমনিতেও আমায় বিয়ের আগে মানা করে দিতে পারতে। কষ্ট তো আমি তখনও পেতাম। শুধু শুধু আমার পরিবারের সম্মান মাঝখানে টেনে এনে যে অপরাধটা করেছো, আই প্রমিস ইউ, আমি তোমায় ছাড়বো না।

—— আমিও ওইটাই চেয়েছিলাম। এতো বড়ো বিয়ের নাটক করতে চাই নি প্রথমে। এই জন্যই সেদিন তোমায় ইনিয়ে বিনিয়ে কথায় কথায় বলেছিলাম আমি সুব্রতকে আগে ভালোবাসতাম। বাট ইউ পোর বয়, তোমার তো তাও বিয়ে করতেই হবে।

—— আমি ভেবেছিলাম তুমি খুব সরল হবে। আর এইজন্যই বিয়ের আগে সুব্রতের কথা আমার কাছে বলেছো। আমি ভেবেছিলাম তুমি খুব লয়াল। আর সবাই পার্টনার হিসেবে একজন খুব লয়াল মানুষ কেই চায়। তাই সত্য শুনে কষ্ট হলেও সবয়া মেনে নেই। আমি কি জানতাম তুমি এমন পর্যায়ের কীট?

—— জানলে ভালো হতো। আগে যদি জানতে তাহলে তোমার ঝুলিতে শুধু কষ্ট থাকতো, এই অপমানটা পোহাতে হতো না।

—— এতো কথা বলে লাভ নেই এখন। তুমি যা করেছো এর শাস্তি অবশ্যই পাবে। তুমি ভেবো না পাড় পেয়ে যাবে । আমি সত্যিই তোমায় ছাড়বো না। এমন অবস্থা করবো, কান্না করে কুল পাবে না।

—— যা করার করো। আমিও দেখতে চাই তোমাদের দুই ভাইয়ের ক্ষমতা। ভগবান শুধু সুন্দর চেহারাই দিয়েছে নাকি একটু বুদ্ধিও দিয়েছে!
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ৪০

ঝঙ্কার তোলা কন্ঠের গর্জনে সুহানা কেঁপে উঠলো। ছাদের দরজার দিকে তাকালো। সুব্রত তাকিয়ে আছে তার দিকে। রাগে তার সারা শরীর দরদর করে কাঁপছে। সারা মুখমন্ডল লাল বর্ণ ধারন করেছে।

সুহানার কানে এখনো সুব্রতের খানিক মুহূর্ত আগে করা চিৎকার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

—— তোমায় একদম ধূলোয় মিশিয়ে দিবো সুহানা, যেভাবে আমার পরিবারের সম্মান তুমি মিশিয়েছো।

সুহানা অনেকটাই ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু মুখের ভাব সে সহজ রাখতে চাইলো। ভয়ার্ত চেহারা দেখতে পেলেই দুই ভাই তাকে পেয়ে বসবে। সুহানার এখন আফসোস হচ্ছে, কেন সে কোনো সেফটির ব্যবস্থা করলো না!

সুব্রত সুহানার দিকে তেড়ে যেতে নিলেই রনিত হাত টেনে থামায় সুব্রতকে। সুব্রত চোখ রাঙিয়ে তাকালো রনিতের দিকে। রনিত এ পর্যায়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো। এবার আর সহ্য করতে পারছে না সে।

রনিত মনে মনে সুব্রতের বলা কথা আওড়ালো।
“পরিবারের সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে!”

রনিতের মনে হতে লাগলো সবটার জন্য সে-ই দায়ী। না সে এই মেয়ের মিষ্টি মিষ্টি কথায় ভুলতো আর না এমন ভাবে তার পরিবারকে অপদস্ত হতে হতো।
ভালোই তো ছিল বিদেশের মাটিতে একলা একা!

সুহানা সুব্রতকে তেড়ে আসতে দেখে রেলিঙের সামনে থেকে সরে আসলো। যেকোনো সময় সুব্রত তাকে ধাক্কা দিয়ে দিতে পারে। রনিত নিজের রাগ সামলে নিলেও এই ছেলে নিশ্চয়ই নিবে না।

সুহানা মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন করে বললো,

—— কি ব্যাপার? রাত বিরাতে এমন ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছো কেন? ম্যানারস নেই তোমার?

—— না, একদম ম্যানারস নেই সুহানা আমার। আমি ম্যানারলেস। আর এইজন্যই এখন তোমার কি অবস্থা হবে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। আর একজন ম্যানারলেস ছেলের জন্য তোমার মতো কোনো মেয়ের গায়ে হাত তোলা কোনো বড়ো ব্যাপার না।

সুহানা ভড়কে গেলেও নিজের অভিব্যক্তি লুকিয়ে সাহস দেখিয়ে বললো,

—— তুমি আমায় মারতে চাইলেই কি পারবে সুব্রত? আমি ডিফেন্সের অফিসার। ডিফেন্স আমি অবশ্যই পারি।

সুব্রত দ্বিগুণ রাগী স্বরে বললো,

—— আমিও দেখতে চাই নিজের মেজরের থেকে কতোটা ভালো ডিফেন্স তুমি পারো।

সুহানা ভয়ে কেঁপে উঠলো। সে জানে সুব্রতের সাথে কোনো মতেই সে পারবে না। এখান থেকে পালানোর কোনো রাস্তাও নেই। রনিতের হাতের বাঁধন থেকে সুব্রত অনেকটাই নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে। এক পর্যায়ে সুব্রত তেড়ে আসলো। সুহানার গলা চেপে ধরলো সে। সুহানা এতটাই ভড়কে গেল যে পিছিয়ে যাওয়ার কথাও বেমালুম ভুলে গেল।

সুহানার মনে হলো এই বুঝি ভিতরের সব উগলে আসবে। কি যন্ত্রণা! কেন যে আসতে গেল প্রটেকশন ছাড়া! তপসী যেন দেবদূত হয়ে ছুটে এলো তখন কোথা থেকে। সুব্রতের হাত টেনে ধরলো সে।

সুব্রতকে বললো,

—— ছাড়ো সুব্রত। প্লিজ, এমন কাপুরুষের মতো আমার স্বামী না। ছেড়ে দাও একে।

—— তপসী সরো। ও আমায় ম্যানারলেস বলেছে, আমি ওকে ম্যানার শিখিয়ে ছাড়বো। আমার ভাই, আমার পরিবার, আমার সম্মান, অনুভূতি নিয়ে খেলার সাহস করেছে ন? পরিণাম তো ভুগতেই হবে।

—— গলা ছেড়ে কথা বলো। সুব্রত, আমার দিব্যি। ছাড়ো ওকে।

সুব্রত রাগী চোখে তাকালো তপসীর দিকে। তপসীর মনে হলো সুব্রতের চোখের চাহনিতে সে বুঝি ভস্ম হয়ে যাবে।

সুব্রত গলা ছেড়ে দাড়ালো সুহানার। সুহানা কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে কাশতে লাগলো। গলায় আঙুলের লাল ছাপ বসে গেছে। কাশির সাথে সাথে গলায় ব্যথা বাড়তে লাগলো তার।

রনিত ধীর পায়ে হেটে আসলো সুব্রতের সামনে। সুব্রতকে উদ্দেশ্য করে শান্ত স্বরে বললো,

—— বাসায় চল, ভাই। এখানে আর ভালো লাগছে না। বাসায় নিয়ে চল আমায়।

সুব্রত তেজী গলায় বললো,

—— আগে আমি এই গিরগিটির থেকে শুনতে চাই এতো কিছু করার কারণ কি?

সুহানা কাশি থামিয়ে কোনোমতে বললো,

—— পুরো কারণটাই তুমি সুব্রত। তুমি না আমায় ফিরিয়ে দিতে আর না এগুলো হতো। ইউ আর দ্যা মেইন কালপ্রিট। এন্ড ইউ আর সাফারিং ফর ইউর ওউন ফল্ট।

—— একদম চড়িয়ে দাঁত সব ফেলে দিবো অসভ্য মেয়ে! আমার ফল্ট? তোর সাথে নোংরামিতে মত্ত হয়নি এটা তো আমার দোষই বটে!

—— সুব্রত! মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। আমি ভালোবেসেছিলাম তোমাকে। আমার ভালোবাসাকে নোংরামির নাম তুমি দিতে পারো না তুমি! ইউ হ্যাভ নো রাইট। ইউ যাস্ট কান্ট ডু ইট।

—— ওরে ভালোবাসা! তুমি শুরু থেকেই নোংরামি করে এসেছো। এখন যা করলে তার চেয়ে বেশি অসভ্যতা আমি কখনো দেখি নি।

—— তোমার দেখার আর জানার ভুল আছে। বলে না “এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার”! আমার ক্ষেত্রেও সবটা ফেয়ার।

—— তোমার সাথে না আমার ভালোবাসা ছিল আর না যুদ্ধ। তুমি এখন যুদ্ধ শুরু করেছো। এবং আমি এভ্রি পসিবল ওয়ে ফলো করবো টু পানিশ ইউ।

—— ভালোবাসা নেই কে বলেছে? আমার পক্ষ থেকে ছিল।

রনিত অন্যমনস্ক হয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎই কথার মাঝে বললো,

—— তোমার একপাক্ষিক ভালোবাসার দায় কেন সুব্রত নিতে যাবে?

—— ও কেন আমায় ভালোবাসলো না? এর দায়ভার অবশ্যই ওর নিতে হতো।

—— হাসালে সুহানা। বাচ্চাদের মতো কথা বলো না। ভালোবাসা কখনো একতরফা হয় কখনো দুই তরফা। এক তরফা ভালোবাসায় যে ভালোবেসে ফেলে দায় তারই হয়। অপরপক্ষের মানুষের কেন দায় হবে? জোর করে কি ভালোবাসা হয়? তুমি ভালোবাসলেই তোমাকেও সেই ব্যক্তির ভালোবাসতে হবে এটা কোনো ল’ তে নেই। ভালোবাসা যদি শুধু দুই তরফাই হতে হতো তাহলে ভালোবাসার রুলস টাই ওটা হতো।
দুইজন মানুষ এক সাথে প্রেমে পড়তো।

—— আমায় এসব ভারী ভারী কথা শুনাবে না তো রনিত। আমায় এখান থেকে যেতে দাও।

তপসী এ পর্যায়ে সুহানার পথ আটকালো। দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো,

—— আপনাকে তো বাড়ির ছোট বউ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। এমনিতে কি করে ফিরে যাবো? এক্ষুনি বিয়ে করিয়ে বাসায় নিয়ে যাবো।

তপসীর এহেন কথায় দাঁড়িয়ে থাকা অপর তিনজনই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল। বিস্ময় ভাব নিয়ে সুহানা জিজ্ঞেস করলো,

—— মানে?

—— মানে আবার কি? এখনই বিয়ে হবে। নিচে পন্ডিত মশাই অপেক্ষা করছে। যলদি আপমার বাবা মা কে ফোন করুন।

—— শাটাপ ইউ ষ্টুপিড। এত কিছুর পরও বিয়ে হবে ভাবলে কীভাবে?

—— বাকি সব যেভবে ভাবি এটাও সেভাবেই ভাবলাম।

রনিত তপসীকে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি বলছো এসব? আমি এই জঘন্য মেয়েকে কিছুতেই আর বিয়ে করবো না।

সুব্রত কৃত্রিম হাই তোলার ভান করে বললো,

—— করেই ফেল বিয়ে। কষ্ট করে বর সেজে এলি, বিয়ে না করেই চলে যাবি?

রনিত হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি বলছিস তোরা?

—— বিয়ে করতে।

—— এটা আদৌ সম্ভব?

—— বলছি যখন করেই ফেল বিয়ে! না ভেবে তো বলছি না আর!

চলবে…………r
চলবে………..
চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here