#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ০৫
৮.
সকাল দশটা নাগাদ বধূ বরণ শেষ হলো। তপসীর ননদ এসে তাকে একটা ঘরে নিয়ে গেল।
—— বৌদি তুমি ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। এরপর খাবার খেয়ে নিবে।
তপসী মাথা তুলে তাকালো। মেয়েটা বাড়ির পোশাকেই আছে। বিবাহিত সে। গায়ে সুতি শাড়ি জড়ানো। তপসী জিজ্ঞেস করলো,
—— তুমি কি বিয়েতে যাও নি!
—— আরে না বৌদি। আমার তো দুই মাসের একটা ছোট পুচকো আছে। একে নিয়ে কিভাবে যাই বলো।
তপসী আহ্লাদী হয়ে উঠলো। বললো,
—— একটু নিয়ে আসবে ওকে? আমি দেখবো!
—— ও তো ঘুমোচ্ছে। উঠে যাবে হয়তো। তুমি ফ্রেশ হও আমি নিয়ে আসি।
—— আমার গহনা গুলো একটু খুলে দাও না।
—— আচ্ছা বসো।
তপসীর ননদ রায়া। খুব যত্ন সহকারে গহনা খুলতে শুরু করলো। হঠাৎ বললো,
—— দি, একটা মজার কথা কি জানো? আমার শুভ্র দেখতে একদম দাদা’র মতোন হয়েছে।
—— সত্যিই!
—— হ্যাঁ একদম। তুমি ফ্রেশ হও আমি এখনই শুভ্রকে নিয়ে আসছি।
,
তপসী ওয়াসরুম থেকে বের হলো ফ্রেশ হয়ে। শাড়ি বদলে নিয়েছে। ঘরে তার জন্য তার ননদ আর শ্বাশুড়ি অপেক্ষা করছিলো।
তপসী এগিয়ে এসে শ্বাশুড়ি কে প্রনাম করলো। শুভ্র কে কোলে তুলে নিল। শুভ্র চোখ দুটো একদম সুব্রতের মতো। ঠোঁট টাও। পার্থক্য টা শুধু নাকে, তাও সল্প পরিমান।
তপসী বিছানায় বসে শুভ্রের আঙুল নিয়ে খেলা শুরু করলো। সে কথা বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।
সুব্রতের মা বললো,
—— তপসী শোনো মা, আজ তুমি চেষ্টা কোরো সারাদিন এই ঘরেই থাকার। আজ তোমাদের কাল রাত তো। কিছুতেই সুব্রতের সামনে যেতে পারবে না৷ একটু খেয়াল রেখো কিন্তু।
তপসী সম্মতি জানালো।
রায়া বললো,
—— মা তোমরা বসো। আমি দি’র জন্য খাবার নিয়ে আসি।
—— যা। জলদি নিয়ে আয়৷
রায়া রুম থেকে চলে গেল। তপসী শুভ্র কে কোলে করেই উঠে দাড়ালো। ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা গহনার বক্সটা শ্বাশুড়ির সামনে রাখলো।
—— মা, এগুলো আপনার কাছে যত্ন করে রেখে দিন।
—— তোমার গহনা আমি কেন রাখবো? নিজের কাছে যত্ন করে রাখো।
—— মা আমি হারিয়ে ফেলবো নিশ্চিত। এখানের অর্ধেক গহনাই আমার মা’য়ের গহনা। এগুলো হারিয়ে গেলে আমি আমার মা’কেই হারিয়ে ফেলবো মা।
তপসীর শ্বাশুড়ির চোখ ভিজে এলো। মেয়েটা অনেক দুঃখ পেয়ে যে বিয়ের পিড়িতে বসেছে তা সে জানে। বিয়ের আগে সব ধরনের খোঁজই সে নিয়েছে। নিরঞ্জন ধর নিজেও তাকে বলেছে, ‘মেয়ে টা বাড়িতে থাকতে চায় না৷ বাচ্চা মেয়েটার জীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সে এখন এই বাড়িতে ভালোবাসা খুঁজে পায় না।’
গহনা গুলাও নিয়ে তপসীর শ্বাশুড়ি বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। তার নিজেরই কান্না পাচ্ছে। মেয়েটার জীবনও অনেকটাই শুভ্রের মতো। ভগবান ঠিক মিলিয়েই জোড়া বানিয়েছেন।
তপসী একা একা শুভ্রের সাথে খেলতে লাগলো। শুভ্রের ছোট হাতের মাঝে নিজের আঙুল গুঁজে দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করতে লাগলো।
রায়া খাবার নিয়ে এলো। তপসী খাওয়া শেষ করতেই রায়া নিজের মোবাইল এগিয়ে দিলো।
—— মোবাইল এনেছো দি? না আনলে আমার টা দিয়ে বাড়িতে ফোন করো৷
তপসী হাত বাড়ালো না। কাকে ফোন করবে? মা বলতে তার কেউ নাই। আর বাবা! সে নিজেই পারতো না কি একবার ফোন করে খোঁজ নিতে। অভিমানে বুক ভারী হয়ে এলো তপসীর। কান্না পাচ্ছে। চোখ ভিজে এলো তার।
রায়া অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
—— কান্না করো না দি। আচ্ছা পরে ফোন কোরো বরং তুমি। সারারাত তো ঘুম হয়নি। ঘুমিয়ে নাও একটু। শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে নয়তো।
—— ঘুমাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আচ্ছা তোমার নাম তো জানা হলো না।
—— আমি রায়া৷ তোমার একমাত্র ননদ। আমরা কিন্তু দুই ভাই বোনই ছিলাম। একটা অবশ্য কাকাতো ভাই আছে। সে আমেরিকান প্রবাসী।
—— বিয়েতে আসে নি?
—— না।
—— তোমার বিয়ে হয়েছে কবে?
—— তিন বছর হলো এবার। জানো আমার বিয়েতে কি হলো? বিয়ের পরেরদিন মানুষের গিজগিজে আমি ঘুমাতেই পারলাম না। রাতেও ঘুম হলো না অচেনা জায়গায় প্রথম দিন। এরপর বৌভাতের দিন সবার সামনে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
নিজের কথা শেষ করেই রায়া হাসিয়ে ফেটে পড়লো। তপসীর ও হাসি পেল। সাথে চিন্তাও হলো। তার নিজেরও অচেনা জায়গা বলে ঘুমাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ক্লান্ত শরীরে যদি সেও সবার সামনে ঘুমে ঢলে পড়ে।
রায়া হাসির পালা শেষ করে বললো,
—— তুমিও ঘুমাও নয়তো এমন নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হবে। আমি যাই, শুভ্রকে খাওয়াতে হবে।
৯.
সুব্রত রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়েই ঘুমে তলিয়ে গেছে। এক ঘুমে একদম দুপুর কভার হয়ে গেছে৷ বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠলো সুব্রত। তার বন্ধুরা নিচে হৈ হৈ করছে।
সুব্রত হাত মুখ ধুয়ে নিচের তলায় নামলো। হঠাৎ তপসীর কথা মনে পড়লো। মেয়েটা কি আবার কেঁদেছে। একবার দেখা করলে ভালো হতো। বাসার মানুষের সাথে কথাও বলেছে কি না কে জানে।
সুব্রত আবার উপরের দিকে রওনা দিলো। তপসীর সাথে কথা বলে আবার ফিরে আসা যাবে। সুব্রত সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই তার বন্ধু চয়ন এসে থামালো।
—— কিরে ভাই, বিয়ে করে এসে যে ফুরুৎ হলি আর তো তোর দেখাই পাওয়া গেল না।
—— আমি ঘুমাচ্ছিলাম। আমি আর্মড পারসন। বডি ফিটনেস ঠিক রাখতে হবে তো।
—— হ্যাঁ হয়েছে, বুঝেছি। উদ্ধার করেছো তুমি। তা এখন কোথায় যাস?
সুব্রত সহজ ভাবেই বললো,
—— তোদের বৌদির কাছে যাচ্ছিলাম।
চয়ন রসিকতা করে উঠলো,
—— আহা, বিয়ে করেই বউয়ের জন্য মন আনচান করছে নাকি!
চয়ন কথাটা জোরেই বললো। ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো। সুব্রতের কাকি পাশেই ছিল। তিনি সামনে এসে বললেন,
—— যতই মন আনচান করুক, আজ তো বাবা বউয়ের কাছে যেতে পারবে না।
সুব্রত ভ্রু কুঁচকে বললো,
—— আমার দরকার আছে। যেতে পারবো না কেন?
—— কি দরকার আছে আমায় বল। আমি তপসীকে বলে দিচ্ছি।
—— আরে কাকি,,,,, আচ্ছা শোনো, ও কি আবার কান্না করেছিল?
—— নতুন বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে এসেছে, কান্না তো করবেই।
—— তার মানে করেছিলো?
—— হ্যাঁ।
—— ওহ, ওকে। আর ও কি বাসার কারো সাথে কথা বলেছিল?
—— রায়া বলেছিল ও ওর মোবাইল দিয়েছিল। কিন্তু কথা বলে নি।
—— আচ্ছা তুমি আমার টা নিয়ে যাও। কথা বলিয়ে দাও তো!
সুব্রতের কাকি ফোন নিয়ে চলে গেল। কাকি চলে যেতেই চয়ন পিঞ্চ করার স্বরে বললো,
—— বাহ, বউয়ের তো দারুণ খেয়াল রাখছিস!
সুব্রত চয়নের পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বললো,
—— বউয়ের খেয়াল রাখবো না তো কি তোর খেয়াল রাখবো শালা! যা সর।
—— বাব্বাহ, এখন আমায় মারছিসও।
—— না তুই তো আমার প্রেমিকা যে তোকে মারা যাবে না।
চয়ন সুব্রতের দিকে এগিয়ে আসলো। ফিসফিস করে বললো,
—— তোর কলিগ মিস সুহানার কি হলো রে? প্রেমিকা শুনে তার কথা মনে পড়লো।
—— তার সাথে কি আমার প্রণয় ছিল? কেউ আমায় নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখলে আমার তাতে কি করার আছে?
—— মেয়েটা কি সেই ছিল, এক্কেবারে,,,,
—— একদম বাজে কথা বলবি না। মেয়েদের অসম্মান করা আমার একদম পছন্দ না।
—— ভাই ক্ষ্যামা দে। আমি বলতে চাচ্ছিলাম, শী ইজ ভেরি প্রিটি। এই আরকি, অন্য কিছুই না।
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ০৬
১০.
আজ বৌভাত। রাতে তপসী তার সাথে আসা দূরসম্পর্কের এক কাকির সাথে ঘুমিয়েছে। কাকি কে সে বিকেল বেলা প্রথম দেখেছে এ বাসায় । মহিলা কে তার সাথে পাঠানো হয়েছে তপসীর খেয়াল রাখার জন্য। অথচ তপসী তাকে দেখতেই পায় নি বাসায় আসার পর।
সকাল বেলা স্নান সেড়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় বসে ছিল তপসী। রায়া তাড়াহুড়ো করে এলো। বললো,
—— দি তোমার সোনাবস্ত্রের শাড়ি কোন ব্যাগে? যলদি করে চলো, পার্লারে যাবে।
তপসী লাগ্যাজ থেকে বেনারসি বের করতে করতে বললো,
—— বাসায় সাজালে হয় না?
—— বাসায় কেনো সাজবে? যলদি চুল বাঁধো, নিচে ড্রাইভার কাকা গাড়ি বের করে বসে আছে।
—— এতো ভারী মেকাপ প্রতিদিন ভালো লাগে না। আচ্ছা চলো।
—— এই সাজ তো সারাজীবন ছবির সাথে স্মৃতি হয়ে থাকবে দি। একটু মানিয়ে নাও।
,
রায়ার সাথে হাতের ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতেই সুব্রত পিছন থেকে ডাকলো।
—— তপসী!
তপসী থমকে দাঁড়ালো। পিছন ঘুরে মানুষ টার মুখশ্রী দেখতেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তপসীর মুখে। সুব্রতের ঠোঁটের কোণেও সেই চিরচেনা মুচকি হাসি।
সুব্রত হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—— ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম?
তপসী আমতা আমতা করে বললো,
—— রায়া দি’র সাথে পার্লারে যাচ্ছিলাম।
—— ওহ মাই গড! ইউ লুক ভেরি প্রিটি ইন ন্যাচারাল লুক। পার্লারে সাজতে হবে না।
তপসী অসহায় নজরে রায়ার দিকে তাকালো। রায়া সুব্রতের সামনে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। আঙুল তুলে শাসানোর ভঙ্গিতে বললো,
—— একদম তোর জ্ঞান জাড়বি না। তোর বউ কে বাসরে তোর সামনে ন্যাচারাল বিউটি প্যাক করে দিবো। এখন ফুট এখান থেকে।
সুব্রত ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো। রায়া মুখ ভেঙচি দিয়ে তপসীকে নিয়ে চলে গেল।
,
স্টেজের উপর চিন্তিত মুখে বসে আছে তপসী। পাশে সুব্রত হাসি হাসি মুখ নিয়ে বসে আছে। তপসীর বাড়ির কেউ ই এখনো অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছায় নি।
তপসী চুপসে যাওয়া মুখ নিয়ে বললো,
—— আমার বাসায় একটা কল করুন না। এখনো কেউ কেনো এলো না?
—— আসবে। রাস্তায় জ্যাম আছে হয়তো। তুমি নিজে কল করো। এই নাও।
কথা শেষ করে সুব্রত নিজের মোবাইল তপসীর দিকে এগিয়ে দিল।
তপসী বাবার নম্বরে কল করলো। অপরপাশ থেকে রিসিভ করতেই তপসী জিজ্ঞেস করলো,
—— এখনো আসো নি কেন বাবা? কোথায় তোমরা?
—— আমি তো আসছি না রে মা। তোর মাসি, কাকি এরা সবাই গেছে। আমি ফোন করে জানাচ্ছি কোথায় এরা। তোদের বাড়িতে তো এতোক্ষণে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
কল কেটে দিলো তপসী। ‘তোদের বাড়ি’ কথা টা বার বার কানে যেন প্রতিধ্বনিত হুচ্ছে তপসীর।
বিয়ে নামক সংস্কার টা একদম অদ্ভুত। হঠাৎ করেই বিয়ের বাধনে বাধলেই কি সুন্দর একটা পরিবার, এক গুচ্ছ মানুষের উপর অধিকার বোধ সৃষ্টি হয়ে যায়।
অচেনা এই বাড়িটা আজ তার হয়ে গেছে। পাশে বসে থাকা মানুষ টা দুইদিনেই তার সবচেয়ে আপন মানুষের জায়গা দখল করে নিয়েছে।
এই দুই দিনেই কি ভালোবাসা সম্ভব! সে তো সুব্রতের প্রেমে পড়েছে, সে তাতে নিশ্চিত। কিন্তু এতো যলদি কি ভালোবাসার ঘর বাঁধে মনে? এটা কি লাভ এট ফার্স্ট সাইটের মতো কিছু!
তপসীর আর কিছু ভাবতে পারলো না। কারন তার হাত নিজের মুষ্টি তে আবব্দ করে নিয়েছে সুব্রত। তপসী থমকে গেল। তার শরীরের প্রতি রন্দ্রে রন্দ্রে শিরায় শিরায় সে ভালোবাসার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। এক অসহনীয় সুখ তাকে ঘিরে ধরেছে।
সুব্রত কানের সামনে এসে ফিসফিস করে বললো,
—— এই বাচ্চা, এতো কাঁপা-কাঁপি কিসের হ্যাঁ? এখন কি শীতকাল?
তপসী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
—— আমি মোটেও কাঁপছি না।
সুব্রত হাসলো। হাত টা সুব্রত নিজের কোলে নিয়ে আসলো।
—— এখন তো সময় ভালোবাসার, এখন তো সময় কাছে আসার।
লজ্জা পেলে কি হবে বউ?
—— মানুষ দেখছে তো। হাতটা প্লিজ,,,,
—— এইজন্যই তো বাচ্চা বলি তোমায়।
—— আমি আবার কি বাচ্চামো করলাম?
—— বাচ্চামো নয়তো কি? ফটোশুট চলছে। সুন্দর করে হাসি দিয়ে থাকো শুধু। কথা বলবে না এখন একদম।
১১.
সুব্রতের পুরো বিছানাটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। তপসীকে বসানো হয়েছে বিছানার ঠিক মাঝখানে। রায়া সামনে বসে ঝিমুচ্ছে।
তপসী রায়ার সুবিধার কথা ভেবে একবার বললো,
—— রায়া দি তুমি বরং ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকো। আমি ভয় পাবো না।
—— আরে না, তোমায় একা ছাড়া যাবে না। মা বকবে।
—— মা বকবে কেন?
—— আমি জানি না ভাই। দাদা আসলে তারপর যেতে পারবো। ওর তো কোনো খবরই নাই।
—— হয়তো কোথাও ব্যস্ত।
—— আরে ব্যস্ত ফ্যস্ত কিচ্ছু না। ওর কতোকগুলো বাঁদর বন্ধু আছে না, তারা নিশ্চিত আটকে রাখছে।
—— আচ্ছা সমস্যা নেই৷
,
রাত সাড়ে এগারোটার সময় সুব্রত আসলো ঘরে। সে পিছন দিকে খেয়াল না করেই দরজা আটকে দিল।
রায়া চ্যাঁচিয়ে উঠলো,
—— এ্যাই বলদ, আমাকে বের হতে তো দিবি। নাকি আমাকে সামনে রেখেই বাসর করবি!
সুব্রত ভ্যাবাচেকা খেল।
—— তুই এই ঘরে কি করছিস?
—— তোর বউ পাহারা দিচ্ছিলাম।
—— বউ পাহারা কেন দিতে হবে?
—— যা মাকে জিজ্ঞেস কর।
—— আয় তো, জিজ্ঞেস করে আসি।
রায়া সুব্রতের হাতে ঘুষি মারলো। সুব্রত হেসে উঠলো। রায়া দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়ে বললো,
—— নে ভাই, এবার লাগা দরজা।
সুব্রত দরজা আটকে দিল। তপসীর ভাই বোনের এমন খুনসুটি দেখে মন ভালো হয়ে গেল। তুষারের কথাও মনে পড়ছে। ভাই টা তার আজও যাওয়ার সময় কান্না করেছে।
সুব্রত বিছানার সামনে আসতেই তপসী হুরমুর করে বিছানা থেকে নেমে গেল। সুব্রত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—— আরে কই যাও?
—— দাঁড়ান আপনি।
তপসী সুব্রতের পা ধরে প্রনাম করলো। সুব্রত পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো। বক্স থেকে ব্রেসলেট নিয়ে হাতে পড়িয়ে দিলো তপসীর।
সুব্রত জিজ্ঞেস করলো,
—— পছন্দ হয়েছে?
তপসী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। দুধের গ্লাস এগিয়ে দিল। সুব্রত বিনাবাক্যে তা পান করে টেবিলে রেখে দিল।
সুব্রত তপসীকে হাত ধরে বিছানায় নিয়ে বসালো। নিজে পিছন দিকে গিয়ে বসলো।
মাথা থেকে ক্লিপ খুলে ওড়না নিচে রেখে দিল। বললো,
—— সারাদিন এগুলো নিয়ে কিভাবে ছিলে বউ?
—— সমস্যা হয় নি।
সুব্রত যত্ন সহকারে মাথার টিকলি থেকে শুরু করে সব গহনা খুলে দিলো।
—— যাও ওয়াসরুম থেকে শাড়ি চেঞ্জ করে আসো। শরীর হালকা লাগবে।
তপসী উঠে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো সুব্রত ট্রাউজার আর টি-শার্ট পড়ে বসে আছে।
তপসীকে দেখা মাত্রই সুব্রত হাত নেড়ে বললো,
—— হাই সুইট গার্ল।
তপসী মুখ তুলে তাকালো। সুব্রত এমন কেন করছে। সে লজ্জায় জমে যাচ্ছে।
তপসী আড়ষ্টতা নিয়ে বিছানায় বসলো।
সুব্রত বললো,
—— শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
—— আপনি ফ্রেশ হয়েছেন?
—— তুমি ঘুমাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
—— আপনি যান। আমি অপেক্ষা করছি।
সুব্রত ফ্রেশ হতে চলে গেলো। তপসী শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো সুব্রতের। সুব্রত ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে তপসীর পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
তপসীর কানের সামনে এসে বললো,
—— ঘুমাও বউ। আমি আজ কাছে আসছি না। সময় নাও। এমনিতেও আমার ছুটি শেষ দুইদিন পর। এখন কাছাকাছি এসে আমার মনের ব্যাকুলতা বাড়বে শুধু।
তপসী চোখ বন্ধ করে হাসলো। সুব্রত তাকে জড়িয়ে ধরলো। কপালে গলায় কতোকগুলো চুমু খেল। তপসী চোখ বন্ধ করে রইলো। আজ কি চাইলেই তার ঘুম আসবে দু’নয়নে!
চলবে……
চলবে……..