#নিবিদ্রিতা_কাহন—–২১
®মেহরুমা নূর
★গত তিনদিনে আদ্রিতা কঠোর মনোভাবে চলছে।বেয়াদ্দপ মনকে ক্রাউন সিমেন্ট দিয়ে শক্ত মজবুত করে নিয়েছে।নিবিড়ের ওভাবে চড় মারায় রাগে,অভিমানে গত তিনদিন হলো আদ্রিতা নিবিড়ের মুখোমুখি না হওয়ার কঠিন পণে চলছে। নিবিড় যতক্ষণ বাসায় থাকে ততক্ষণ আদ্রিতা দরজা বন্ধ করে রুমে বসে থাকে।সকালে নিবিড় অফিস যাওয়ার পর বের হয় সে আবার রাতের খাবার আগেভাগেই খেয়ে নিজের রুমে চলে আসে। ওই পঁচা দৈত্য দানবের সামনে কোনোভাবেই যাবেনা সে। কেন যাবে? কীভাবে সবার সামনে মারলো তাকে! মানলাম নাহয় একটু না বলে কোথাও গিয়েছিলাম, বাসায় আসতে নাহয় একটু দেরি হয়েছে। তাই বলে ওভাবে মারবে! নিজেকে কি মনে করেন উনি! আদ্রিতার কি আত্মসম্মান নেই নাকি! তার কত খারাপ লাগলো অথচ ওই লর্ড গভর্নর টা একবারও সরিও বললো না৷ আস্ত একটা দৈত্য দানব! বেচারি আদ্রিতার সেদিন রাতের জ্বরের ঘোরে কাটানো সময়টা সকালের আলোয় স্মৃতি থেকে মুছে গেছে।
ফ্লোরে পা ভাজ করে চোখ বন্ধ করে পরমানন্দ নিয়ে বসে আছে আদ্রিতা। আর তার পেছনে নূরান খাটের উপর বসে, আদ্রিতার মাথায় তেল মালিশ করে দিচ্ছে। এই কাজটা নূর করতো। নূর যাওয়ার আগে নূরানকে এই কাজের দায়ভার দিয়ে গেছে। যদিও তানিও তেল মালিশ করে দিতে পারে। তবে ভাই বোনের এই মুহুর্তটাকে সে আলাদা করতে চায়না। আদ্রিতারও ভালো লাগে ভাইয়ের হাতে মাথায় তেল মালিশ করাতে। নূরান খুব আলতো করে আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছে। যাতে আদ্রিতা চুলে ব্যাথা পায়। আদ্রিতা মালিশ নিতে নিতে বলল,
“ওয়াও ভাইয়া, কত সুন্দর করে তেলের চাম্পি করো তুমি। একটা সেলুনের দোকান খুলে নাও। কসম নারিকেল তেলের, অনেক ফেমাস হয়ে যাবা। ক্যারিয়ার সেট।”
হালকা শব্দে হাসলো নূরান৷ তার বোনের কাছ থেকে বুদ্ধিমানের মতো কথা আশা করা আর গাধার মাথায় শিং আশা করা একই কথা। তবে ও এভাবেই ঠিক আছে। ওকে এভাবেই মানায়। বুদ্ধিমানদের জীবনে মুশকিল বেশি থাকে। তারা অল্পতে খুশি হয়না। বেশি পাওয়ার আশায় জীবনের মূল্যবান খুশিটাই হারিয়ে ফেলে। অবুঝ রা এক্ষেত্রে ভালো থাকে বেশি। কারণ তারা অল্পতেই খুশি থাকে। আর অরি খুশি থাকলে তার ভাইও খুশি। আল্লাহ যেন নূরানের ভাগের খুশিটাও আদ্রিতাকে দিয়ে দেয়, এমনটাই সবসময় চায় সে। তেল মালিশ শেষে নূরান আদ্রিতার চুল ভাগ করে দুই বেনি করে দিলো। এটাও নূর শিখিয়ে দিয়ে গেছে। এতে নাকি চুল লম্বা হয়। নূরানও মায়ের দেওয়া কাজ খুব সাবলীলভাবেই করছে। বেনি করা শেষে আদ্রিতা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নিজেকে আয়নায় দেখে ঠোঁট উল্টে বলল,
“আমাকেতো তেলটু বেগম লাগছে একদম। তেল দিয়ে একদম চিপচিপে ভূতনী করে দিয়েছ।”
নূরান বলে উঠলো,
“ধুরর, তোর চোখই নেই। উল্টো তেল দিয়ে দুই বেনি করায় তোকে আরও কিউট লাগছে। দেখবি এখন বের হওয়ার সাথে সাথে সবাই তোর গাল টানাটানি শুরু করে দিবে। জানিস আমি দাদীর অনেক গুলো ছবি দেখেছি। দাদীও এমন দুই বেনি করে রাখতো। তোকে একদম দাদীর মতো লাগছে। আমাদের রূপসী দাদী। দাদু ঠিকই বলে তুই একদম দাদীর মতো দেখতে হয়েছিস। এইজন্যই তো দাদু তোকে সবার থেকে বেশি ভলোবাসে। তার রূপসী বউ আবার ফিরে এসেছে বলে কথা।”
আদ্রিতা হাসলো। দুই বেনি ধরে কতক্ষণ নাচালো। তারপর নূরানের কাছে এসে বলল,
“আচ্ছা, এবার আমার পালা। এখন তোমার চুলে তেল মালিশ করে দিবো।”
নূরান মুচকি হেঁসে নিচে বসলো। আদ্রিতা এবার খাটে বসে নূরানের চুলে তেল মালিশ করে দিলো। চুলের আঙুল দিয়ে ভালো করে মালিশ করে দিচ্ছে। নূরান আরাম পেয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। আদ্রিতার মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। সে আস্তে করে নূরানের বন্ধ চোখের আড়ালে তার চুলেরও দুই বেনি করে ফেললো। তারপর ফোন বের করে ফট করে নূরানের একটা ছবি তুলে ফেললো। নূরানের এমন ফানি লুক দেখে নিজের হাসি আঁটকে রাখতে পারলোনা আদ্রিতা। ফিক করে হেঁসে দিলো সে। তার হাসির শব্দে চোখ খুলে তাকালো নূরান। আদ্রিতার করা কারসাজি চোখে পড়লো তার। তা দেখে নূরান অসহায় সুরে বলল,
“অরি!! কি করেছিস এসব! দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে মজা। আজ তোর খবর আছে।”
অবস্থা বেকায়দা দেখে আদ্রিতা ভোঁ দৌড় দিয়ে হাসতে হাসতে দরজা দিয়ে ছুটে বেড়িয়ে গেল। নূরান যেতে নিয়েও গেলনা। এই অবস্থায় বাইরে গেলে সবার বিনোদনের উপকরণ হয়ে যাবে সে। তাই আগে নিজেকে ঠিক করতে ছুটলো সে।
আদ্রিতা হাসতে হাসতে নূরানের রুম থেকে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলেই আচমকা কারোর সাথে গিয়ে ধাক্কা খেল সে। ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই সেই ব্যক্তির বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে আদ্রিতার কোমড় পেঁচিয়ে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলো। আদ্রিতাও চোখ খিঁচে বন্ধ করে সামনের ব্যাক্তির দুই কাঁধ চেপে ধরলো পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে। আদ্রিতার নাক গিয়ে ঠেকলো তার প্রশস্ত বুকে। তৎক্ষণাৎই নিঃশ্বাসে প্রবেশ করলো সেই সুপরিচিত মনমাতানো ঘ্রাণ। আদ্রিতার বুকে সৃষ্টি হলো মৃদু কম্পন। যার কাছ থেকে গত তিনদিন হলো পালিয়ে বেড়াচ্ছে শেষমেশ কিনা তার বুকেই এসে পড়তে হলো! হঠাৎ কান্না পেল কেমন আদ্রিতার। অভিমান গুলো মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠছে। আদ্রিতা উপর দিকে মুখ তুলে তাকালোনা। নিবিড়ের কাঁধ চেপে ধরা হাত দুটো আস্তে করে নামিয়ে নিলো। মাথা নিচের দিকে রেখেই ধীরে ধীরে নিবিড়ের হাতের বাঁধন থেকে সরে এসে নিবিড়ের পাশ কেটে চলে যেতে লাগলো। এক কদম এগুতেই চুলের বেনিতে টান পড়লো। চুলে হাত রেখে মৃদু কন্ঠে “আহ্” করে আর্তনাদ করলে সে। পাশে আরচোখে তাকিয়ে দেখলো নিবিড় তার চুলের বেনি টেনে ধরেছে। আদ্রিতা কিছু না বলে তার বেনি নিবিড়ের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কথা না বলার পণ এতো সহজে এবার ভাঙবে না সে। কিন্তু নিবিড় ছাড়লো না তার বেনি। বরং আরও জোরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে আদ্রিতাকে ওর সামনে নিয়ে এলো। ব্যাথায় এবার আদ্রিতার চোখে পানিই চলে এলো। এখনো মাথা নিচু করেই আছে সে। নিবিড়ের চাপা রাগী কন্ঠে শোনা গেল,
“মাথা তোল।”
মাথা তুলল না আদ্রিতা। সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। নিবিড় এবার রেগে গিয়ে আদ্রিতার দুই বেনি দিয়ে ওর গলা পেঁচিয়ে ধরে মুখটা উপরে তুলল। এবার উপরে তাকাতে বাধ্য হলো আদ্রিতা। অশ্রুভেজা চোখে তাকালো সে নিবিড়ের পানে। নিবিড়ের মুখের দিকে তাকাতেই কিছুটা চমকে গেল সে। নিবিড়কে কেমন বিবর্ণ দেখাচ্ছে। সর্বদা ফিটফাট থাকা নিবিড় ভাইয়াকে আজ কেমন ছন্নছাড়া অগোছালো দেখাচ্ছে।চোখ দুটো নেশাগ্রস্তদের মতো লাল হয়ে আছে। দাঁড়ি গোঁফ দিয়ে কেমন “কবির সিং” মুভির শাহেদ কাপুরের মতো লাগছে। নিবিড়কে এভাবে দেখে আদ্রিতার বুকের মাঝে অজান্তেই ধুক করে উঠলো। কিন্তু এবার সে ডিসট্রাক হবে না। এই লোকের কোনো কিছুতেই ধ্যান দিবেনা সে। দৈত্য দানবের সেই কঠোরতা এতো সহজে ভোলার না। তাই মুখে কুলুপ এঁটে রইলো আদ্রিতা। বেনির প্যাঁচ আরেকটু টাইট করে নিবিড় চোয়াল চিবিয়ে বলল,
“এতো দেমাগ কই পাস তুই! তোর যন্ত্রণায় জীবন যৌবন সব ছারখার হয়ে গেল আমার। পুরো তন্দুরি বানিয়ে ফেললি। এখুনি মেরে ফেলি তোকে! জঞ্জালই শেষ। না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশি। কি বলিস!”
এবারে ভয় পেয়ে গেল আদ্রিতা। মেরে ফেলবে মানে কি! আর আমি তাকে কি যন্ত্রণা দিলাম! আমি কি তার খাবারে জামাল ঘোটা মিলিয়ে দিয়েছি নাকি! নাকি তার প্যান্টে লাল পিঁপড়া ছেড়ে দিয়েছি! আমিতো তার সামনেই যাইনা৷ তাতেও শান্তি নেই তার। এখন আমাকে কে বাঁচাবে! এই দৈত্য দানব তো সত্যি সত্যিই আমার জান কবজ করে ফেলবে। কাল সকালের পেপারে ব্রেকিং নিউজ আসবে। বেনিতে পেঁচিয়ে মৃ,ত্যুবরণ হলো এক তরুণীর। আর ছবিতে আমার এই তেলটু বেগম ওয়ালা লুক থাকবে। ছি ছি কি বিচ্ছিরি দেখাবে! সোনা মা, চাচ্চু কেউতো বাঁচাও! তোমার মেয়েকে মেরে ফেললো এই জালেম দৈত্য।
হঠাৎ নিচ থেকে তানির কন্ঠ ভেসে এলো,
“অরিইই, জলদি ডিনার করতে আয়। আজ কিন্তু রুমে খাওয়া চলবেনা।”
মায়ের কন্ঠ শুনে নিবিড়ের হাত একটু ঢিলা হয়ে এলো। সুযোগ বুঝে আদ্রিতা নিবিড়কে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা আঁটকে দিলো। অল্পের জন্যে বেঁচে গেছে আজ৷ নিবিড়ের উপর আদ্রিতার রাগ, অভিমান আরও বেড়ে গেল। তার মতে নিবিড় এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ লোক বলে গুনিত। আদ্রিতা তার কথাও ভাবতে চায়না। অমন ক্রুর লোকের কথা ভেবে নিজের মন বিষন্ন করতে চায়না৷ তার পরিবর্তে আদ্রিতা নূরানের ছবিটা নিয়ে কারসাজি করতে বসে গেল।
__
নিজের চুলগুলো আবার ঠিক করে বিছানায় এসে বসতেই টুং করে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। নূরানের ঠোঁটে অস্পষ্ট সেই হাসি ফুটল। তার ফোনে টোন বাজার সাথেই এই হাসি তার আপনাআপনি চলে আসে। হাসি বজায় রেখে ফোন হাতে নিলো। ম্যাসেজ ওপেন করতেই সেই হাসিটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল ফট করে। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল বেচারা। নূরানের দুই বেনি করা ছবিটা ওর স্টোরিতে কখন এলো! আর নীলাম্বরী সেই ছবিতে একগাদা হাসির ইমোজি দিয়েছে। তার বদমাশ বোনটা কি অঘটন করে ফেলেছে!মান, ইজ্জত সব শেষ! নূরান দ্রুত ছবিটা ডিলিট করে দিলো। আর নিজের ফেইসবুক পাসওয়ার্ড টাও চেঞ্জ করে দিলো সাথে সাথে। এই অরি পাগলীর ভরসা নেই। যদিও নূরানের তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই। তবে এখন যে তার স্পেশাল কেউ আছে সেটাতো আর অরি জানে না৷
নীলাম্বরীর ম্যাসেজ এলো আবার,
“ছবি ডিলিট করলেন কেন? কত্তোওওও কিউট লাগছিলো। একদম নায়িকা জরিনা সুন্দরী ফেইল।”
হাসলো নূরান। আজ তো এই মেয়ে ইচ্ছেমতো মজা নিবে তার। পাজি বোনটা তাকে জব্বর ফাঁসিয়ে দিয়েছে। নূরান রিপ্লাই করলো,
“মজা নেন! আরে ওটা আমার দুষ্টু বোনের কাজ।”
“আপনার বোনও আছে!”
“হ্যাঁ আছেতো। আমরা জমজ। মায়ের পেটেই আমার সাথে ভাগ বসিয়েছে পাজিটা।”
“ওয়াও! জমজ! নিশ্চয় একইরকম দেখতে আপনারা! আপনাদেরও কি মুভির মতো হয়! একজন ব্যাথা পেলে, আরেকজনও পায়।একজন কাঁদলে আরেকজনও কাঁদে। একজনের অসুখ হলে আরেকজনেরও অসুখ হয়। এমন হয় আপনাদের সাথে!”
“মনে হচ্ছে অনেক বেশি সিনেমা দেখেন৷ তাইতো হ্যাংওভার যায়নি৷ এসব শুধু ফিল্মেই হয়। বাস্তবে এসব হয়না। আমাদের তো স্বভাবই মেলেনা। দুইজন ভিন্ন স্বভাবের। আমি শান্তশিষ্ট। আর অরি হলো এবাড়ির অঘোষিত বাঁদর। সারাদিন দুষ্টুমি করে সবাইকে জ্বালিয়ে মারাই ওর কাজ৷ তবে আমার সাথে বাড়ির সবার প্রাণও ওই। বাড়ির সবার আদরের।”
“হাউ সুইট, আমারতো শুনেই দেখতে মন চাচ্ছে তাকে। দেখতে কেমন আপনার বোন! নিশ্চয় অনেক আদুরে!”
“আস্ত একটা পরী। পরীর চেয়েও সুন্দর আমার বোন।”
“আপনি কতো লাকি! আপনার বোন আছে। আমার কোনো ভাইবোন নেই। আমার একটা ভাইয়ের কতো শখ জানেন! মা বাবাকে কতো বলি আমাকে একটা ভাই এনে দাও৷ মা বিরক্ত হয়ে বলে, ” তোর বাপের সময় নাই ভাই বোন আনার। তোরেই আনছে তাতেই সে টায়ার্ড।” বলেন কেমনডা লাগে! আমি ভাইয়ের জন্য কতো হায় হায় করি। যারে দেখি তারেই ভাই বানাতে মন চায়। আমার কলেজের ফ্রেন্ডদেরও ভাই বানাতে চাইলাম কতো। কিন্তু কেউ আর পরদিন সামনেই আসে না।ভাই বানাতে চাই বলে আমার বাসায় কোনো ছেলে আত্মীয়ই আসে না। ভাই বানানোর এতো ইচ্ছে যে ফেইসবুকে ছেলের আইডি দেখলেই ভাই বানাতে লেগে পড়ি। কিন্তু কেউ হতেই চায়না। ভাই বানানোর কথা বললেই সবাই ব্লক মেরে দেয়। কি অমানবিক লোকজন! এই মাছুম মেয়েটা একটা ভাইইতো চায়। তাতেই সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয় কেন বুঝি না। আপনিই বলেন, আমি কি অন্যায় কিছু চেয়েছি! কাউকে ভাই বানাতে চাওয়া কি গুনা! আপনাকে কেউ ভাই বানাতে চাইলে কি আপনি এমন করতেন!”
বার্তা খানা পড়ে নূরানের বিষম উঠে গেল। খুক খুক করে কাশতে শুরু করলো সে। এই ভাই-বোন প্রীতি যে এমন বেগতিক দিকে মোড় নিবে তা জানলে নূরান আজ ফোনই হাতে নিতো না। আর না অরির কথা বলতো।নূরান বুঝতে পারলো আজ আর এগুনো যাবে না।এখানেই ইতি না টানলে নীলাম্বরীর মনোভাব আজ নূরানের স্বাস্থ্যের জন্য বৃহৎ হানিকর সাব্যস্ত হবে। তাই মুহূর্ত ব্যয় না করে নূরান টেক্সট করলো,
“সরি, আমার একটা জরুরি কাজ আছে। পরে কথা বলবো আপনার সাথে।”
টেক্সট ডিলিভার হতে দেরি, অফলাইনে যেতে দেরি করলোনা নূরান। এইটুকু সময়েই বেচারার ঘাম ছুটে গেছে। পানির বোতল টা হাতে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পুরোটা ঢকঢক করে সাবার করে ফেললো। পানি খেয়ে নূরান একটু লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। পানির বোতলটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ করেই হেঁসে উঠলো সে৷ আজকের মতো অবস্থা বোধহয় নূরানের জীবনেও হয়নি। নিজের পরিস্থিতিতে নিজেই মজা পেল যেন সে।
__
কলেজের জন্য রেডি হয়ে বের হতে নিয়ে আদ্রিতা দেখলো নিবিড়ও অফিসের জন্য তখনই বের হচ্ছে। বের হতে হতে আদ্রিতার দিকে না তাকিয়েই সে বলল,
“গাড়িতে গিয়ে বোস,আমি কলেজ নামিয়ে দিবো।”
বলেই বেড়িয়ে গেল নিবিড়। আদ্রিতার রাগ এখনো কমেনি। সে এই লোকের সাথে মোটেও যাবে না৷ সেদিনের ওই ঘটনার পর থেকে আদ্রিতার উপর এক রায় জারি করা হয়েছে। আদ্রিতা এখন থেকে আর একা কলেজে যেতে পারবে না। কেউ না কেউ তাকে নামিয়ে দিয়ে আসবে আবার নিয়েও আসবে। আদ্রিতা ভালোই জানে তার উপর এই রায় জারি করার পেছনে নির্ঘাত এই লোকটাই দায়ী। তারজন্য আদ্রিতার আরও বেশি রাগ হয়। তাইতো সে নিবিড়ের সাথে কখনও যাবে না৷ গত তিনদিন নিবিড়ের সামনে পড়েনি তাই তার সাথে যাওয়ার দরকারও হয়নি। তবে আজতো সামনে পড়ে গেল! তাতে কি হয়েছে! অরি এই দৈত্য দানবের সাথে যাবে না, তো যাবে না।
আদ্রিতা বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখলো নিবিড় গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। তখনই আবিরও বের হলো অফিসের উদ্দেশ্যে। তাকে দেখে ফট করে এগিয়ে গিয়ে আবিরের গাড়িতে বসে পড়লো। হাসিমাখা মুখ করে আবিরকে বলল,
“চাচ্চু, তোমার সাথে যাবো আমি।”
“নিবিড় না নিয়ে যেতে চাইলো তোমাকে! ”
“কিন্তু, আমিতো আমার কিউট, হ্যান্ডসাম চাচ্চুর সাথে যাবো। জানো তোমাকে দেখলেই আমার বান্ধবীরা বলে,”এতো হ্যান্ডসাম লোকটা কে? আমার বড়ো ভাই নাকি!” তুমি যে আমার চাচ্চু সেটা শুনলে সবাই অবাক হয়ে যায় জানো! আমার তখন অনেক প্রাউড ফিল হয়। তুমি আমার চাচ্চু বলে।”
আদ্রিতার মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন গ্যাস ভরায় আবির ফুলতে ফুলতে গাড়ির ছাদে ঠেকে যাওয়ার উপক্রম।ছাদ না থাকলে এতক্ষণে উড়ে মহাকাশে চলে যেত নির্ঘাত। ভাতিজির আলু পামে গলে আলু ভর্তা হয়ে গেল সে। সগর্বপূর্ণ হাসি দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ তা ঠিকই বলেছিস। আমি একটু বেশিই হ্যান্ডসাম কিনা! কি আর করার! আচ্ছা ঠিক আছে মামুনি,তোর ইচ্ছে কি আমি অপূরণ রাখতে পারি! চল নিয়ে যাই।”
আদ্রিতা এক গাল হেঁসে আবিরের দুই গাল টেনে দিয়ে বলল,
“আমার কিউট চাচ্চু।”
আবির হেঁসে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আদ্রিতা সাইড মিররে তাকিয়ে দেখতে পেল নিবিড় ওদের গাড়ির দিকেই কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। থাক, তাতে আমার কি! রাগ শুধু উনার একার কপিরাইট না, হুহ্ !
চলবে………