নিয়তি পর্ব -০২

#নিয়তি
#নুসাইফা_আশরাফী_আনিফা
#পর্ব___০২

-না মানে, আ…আমি, আমি হা..হাফেজা হতে চাই। আমি কোরআন শরীফ মুখস্থ খতম করব। আ.. আপনি আমায় হেল্প করবেন?

মেহরাবের মুখ থেকে অটো বেরিয়ে এলো, আলহামদুলিল্লাহ। সবসময় আল্লাহর কাছে সে মেহেরের হেদায়েতর দোয়াই করেছে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে এতোটা পরিবর্তন হবে সে তা স্বপ্নেও ভাবেনি। নিজেকে সামলে মেহরাব কফিতে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলল,
-অবশ্যই, আমারও অনেক দিনের শখ এটা, কিন্তু..বাদ দাও। আজ থেকে আমরা দুজনে একসাথে কোরআন কে জানব, বুকে ধারণ করব ইনশাআল্লাহ।
-ইনশাআল্লাহ, তাহলে আজ থেকে স্টাডি শুরু করা যাক। মেহরাবকে লাফ দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল মেহের।
মেহরাব ওর কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলে,
-হুম…।

দেখতে দেখতে চলে গেছে প্রায় দুটি বছর। এর মধ্যে মেহেরের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। রেজাল্ট ভালোই হলো। মেহরাব তাকে কলেজে ভর্তি করাতে চাইলে সে অমত করল। ওসবে নাকি তার আর আগ্ৰহ নেই। এখন সে মা আয়েশা, খাদিজা, ফাতেমা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু এর জীবনের মতো নিজের জীবনকেও রাঙাতে চায়। এ কয়দিনে ওনাদের জীবনী সে পড়েছে আর ভেবেছে ইশ..আরো আগে যদি সে ইসলামের স্বাদটা পেতো। মেহরাবকে না পেলে হয়তো এখনো সে ঐ অন্ধকারেই ডুবে থাকত। মেহরাবই তাকে বইগুলো গিফট করেছিল। বিয়ের একসপ্তাহ পর একদিন সে অনেকগুলো বই নিয়ে বাড়ি ফিরল। মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-অবসরে বইগুলো পড়ে দেখতে পারো। আশা করি ভালো লাগবে,আর অনেক কিছু শিখতেও পারবে ইনশাআল্লাহ।
মেহের সেদিন অনেক খুশি হয়েছিল, ভেবেছিল তার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ বা অন্য কোন লেখকের গল্প-উপন্যাসের বই হবে হয়ত। কিন্তু যখন দেখল সবগুলোই ইসলামী বই, তখন ওর মনটা বেশ খারাপ হলো! তবে মন খারাপটা বেশিদিন স্থায়ী হলো না। যখন সে বইগুলো পড়তে শুরু করল তখন তার মনে এক অপার্থিব ভালো লাগা জন্ম নিল। এরপর প্রতি সপ্তাহেই মেহরাব ওকে নতুন নতুন ইসলামী বই এনে দিতো। আর মেহের খুশি মনে তা গ্ৰহন করতো। মেহরাব নামের মানুষটা যেন তার জীবনের মুড় ঘুরিয়ে দিল।

মেহের আজ খুব খুশি। সে তার শ্বশুরির রুমে এসে তাঁকে সালাম করে জড়িয়ে ধরল। তিনি মেহেরকে খুশি দেখে বলেন,
– কি ব্যাপার কি অইছে আমার পাগলিডার, এতো খুশি খুশি লাগতাছে?
-মেহের তাকে জড়িয়ে ধরেই বলে, মা জানেন আপনার ছেলে আজকে পূর্ণ হাফেজ হয়ে গেছেন। বলে সে মায়ের অনুভূতি দেখার জন্য তার দিকে তাকাল।

সালামা বেগম তার একমাত্র ছেলের বউয়ের মুখে এমন বোকা মার্কা কথা শুনে চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন। তারপর কিছু কাগজ হাতে ফিরে এলেন। ওগুলো মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,
-মামনি আমার পুলা আইজ থাইকা কুঁড়ি বৎসর আগে ওর জহন সাত বৎসর বয়স তহন পূর্ণ হাফেজ অইয়া পাগড়ি পাইছিল। এই তার সনদপত্রর।
মেহের শ্বাশুড়ির কথা শুনে থ মেরে গেল!

মেহরাব সেই কখন থেকে খাতা দেখে যাচ্ছে। প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে এলো। সেই যে এশার নামাজ থেকে ফিরে রাতের খাবার সেরে এক্সামের খাতা দেখতে বসেছে এখনো ওঠার কোনো নাম নেই।

মেহরাব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল প্রায় বারোটা বেজে গেছে। নাহ আর কাজ নেই, কাল ছুটির দিন কাল নাহয় বাকি খাতা দেখা যাবে। মেহরাব উঠে পড়ল।সামনে তাকাতেই দেখে মেহের এখনো বসে আছে,
-আরে তুমি এখনো বসে আছো কেন, ঘুমাওনি?
-ঘুম আসছে না..
-বললেই হলো, বেশি রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে, যাও ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে।
-আপনার বুঝি করবে না?
-….আরে বোকা আমি আর তুমি এক হলাম নাকি।আমাকে মাঝে মাঝে রাত জেগে এমন টুকিটাকি কাজ করতে হয়। এতে কিছু হবে না।
-আমারও কিছু হবে না। আপনিইতো বলেন, স্বামী আর স্ত্রীর সম্পর্ক হাত আর চোখের মতো…

মেহরাব চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। একটু পর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো।

-আপনি আমায় বলেননি কেন?
-কি বলিনি? বোকার মতো তাকিয়ে আছে মেহরাব।
-এই যে আপনি সাত বছর বয়সে কোরআন মুখস্ত খতম করেছেন।

-ওহ তাহলে এই কথা, এই কারণেই বুঝি মন খারাপ হ্যাঁ.. বলিনি তো কি হয়েছে, এখন তো জানলে।
-এখন জানা আর তখন জানা কি এক হলো? গাল ফুলিয়ে বলল মেহের।

মেহরাব ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল,
-মেহের তুমি খুব রূপবতী একটা মেয়ে তা কি তুমি জানো?
-এটা নতুন কি সবাই বলে!
-আমি কি বলেছি কখনো?
-এটাই তো দুঃখ…
-আজ বলছি সত্যিই তুমি রূপবতী, সুস্নিগ্ধা, গুণবতী, অসাধারণ একটি মেয়ে
মেহের চোখ মুছে বলে,
– আর আপনি?
-আমি সেই অসাধারণ মেয়েটির স্বামী। কপালে আলতো চুমু দিয়ে।
-নাহ, আপনি আমার আদর্শ স্বামী। বলে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল মেহের।
-তাই..
-হুম, মুখ তুলে চোখ মুছে বলে মেহের।

-আচ্ছা আপনি আমায় এতো ভালোবাসেন কেন?
-ভালোবাসতে পারলাম আর কোথায়। আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ, পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা আমি থাকে উজাড় করে দিতে চাই। কিন্তু বউটা আমায় সেই সুযোগটাই দিতে চায় না। মন খারাপের ভঙ্গিতে বলল মেহরাব।
-সুযোগ দিতে হবে কেনো? সুযোগ আদায় করে নিতে হয় জানেন…
বলেই নিজের জিভ কাটল মেহের, কি বলতে কি বলে ফেলল সে, এখন কি হবে!
-তাইতো…. আমি কি বোকা না, এই সহজ কথাটা আমার মাথায় এতো দিন এলো না কেন! যাক আজ তো এসেছে। আজ কিন্তু আমি আমার ভালোবাসা আদায় করে নেব কি বলো… মুচকি হেসে বলল মেহরাব।
মেহের লজ্জায় ওর বুকে মুখ লুকাল। শুরু হলো ভালোবাসার নতুন এক অধ্যায়। পবিত্র ভালবাসার সৌরভের ভরে উঠল মেহরাব-মেহজাবিনের ঘর।

সকাল দশটা। এক্সামের কিছু খাতা বাকি ছিল।এগুলোই দেখতে বসেছে মেহরাব। অল্প হওয়ায় আধঘন্টায় খাতাগুলো দেখা কমপ্লিট হয়ে যায় তার।ওর দু’চোখ এখন মেহেরকে খুঁজছে। সেই সকাল থেকেই লক্ষ্য করছে মেহের ওর চোখ ফাঁকি দিয়ে চলার চেষ্টা করছে, ‘বাহ বউটা দেখছি ভীষণ লজ্জাবতী, মাথা চাপড়ে মুচকি হাসে মেহরাব?

-মামনি যাও তো মেহেরাবরে একটু আমার কাছে আওনের লাইগা কও। তুমিও আসবা।
এতক্ষণ ও মেহরাবের চোখ এড়িয়ে চলছিল। কিন্তু এখন তো না গিয়ে উপায় নেই। মেহরাবকে ডাকতে মাথা নিচু করে ঘরে প্রবেশ করল সে,
-আপনাকে মা ডাকছেন..
-যাক বাবা… রাণী লজ্জাবতী লতার দেখা পেলাম তবে।তা কি ব্যাপার আমায় ইগনোর করা হচ্ছে নাকি।
-কি যা তা বলছেন, ই…ইগনোর করব কেন। কাজ ছিলো ত..তাই।
-বাহ, এখন কিন্তু তোমার ওসব চালাকি চলবে না।
-চা.. চালাকি
-হুম চালাকি..কারণ ভালোবাসা কিভাবে আদায় করে নিতে হয় তুমি তা আমায় শিখিয়ে দিয়েছ..
মুচকি হেসে চোখ টিপ্পনী দিয়ে বলল মেহরাব।

-ম..মা অ..

চলবে ইন শা আল্লাহ্…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here