নিশ্চুপ_ভালোবাসা পর্ব ৫

গল্পের নামঃ- #নিশ্চুপ_ভালোবাসা
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ-০৫

আধার লাইব্রেরিতে যাওয়ার পর, আধারদের ক্লাস টিচার বলে।

—আধার,কালকে ভার্সিটির ছুটির পর কি হয়েছে? তারপর আধার স্যারকে সব খুলে বলে। তখন স্যার বলে

—-তুমি যাও, আমি ভার্সিটির হেডের সাথে কথা বলে দেখবো। তারপর আধার নিজের ক্লাসে ফিরে আসার পথে তার আদ্রিয়ানের সাথে দেখা। আদ্রিয়ান আধারকে দেখে বলে

—-তুমি এখন এখানে কি করো? আধার বলে

—-গরু চরাচ্ছি। আদ্রিয়ান বলে

—-কি গরু কোথায় থেকে আসলো এখানে,,,তুমি তো লাইব্রেরি দিক থেকে আসছো? আধার বলে

—-দেখছেনই তো, তাহলে জিজ্ঞেস করেন কেন? বলেই হাটা দিলো আদ্রিয়ান পিছন থেকে বলে

—-পাজি মেয়ে একটা, কথার ধরন কি, তোমাকে টাইট দিতে হবে আধু।বলেই সেও নিজ কাজে চলে গেলো।

দেখতে দেখতে টুরে যাওয়ার দিন চলে এলো, সবাই বাসে উঠেছে। কিন্তু বিপত্তি হলো তখন যখন আধার দেখে সে তাদের ক্লাসমেটদের সাথে, যেই বাসে যাওয়ার কথা সেখানে একটা সিটও খালি নেই। তিনজনেরই মাথায় হাত এখন!!! তারপর স্যারকে জিজ্ঞেস করলে তারা সব বাস চেক করে দেখে আদ্রিয়ানদের বাসে তিনটা সিট খালি,তাই বাধ্য হয়ে তারা সেই বাসেই যায়। মিম বসে আশিকের সাথে আর মারিয়ার সিট খালি পায় দিহানের পাশে। কিন্তু আধারের পাশের সিট টা খালি। এখন সে আসেনি? তাতে আধারের কি সে ফোন নিয়ে নিউজফিডে ঘুরছে। হাঠাৎ করেই তার মনে হলো গুগোলে তারা যে সাজেক যাচ্ছে জায়গটা কেমন তা সার্চ করা যাক। তখনই কেউ তার পাশে বসে পরে। কিন্তু আধারের বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই সেটা কে? দেখার জন্য। তাই সে তার ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। একটু পরেই বাস চলতে থাকে আপন গতিতে। মিম চিপস খাচ্ছে আর ডোরিমোন দেখছে। আশিক বলে

—-এই তুমি কি বাচ্চা যে কার্টুন দেখছ? মিম ফোনটা ওফ করে বলে

—-আমার যা ইচ্ছে দেখব, আপনার সমস্যা হোলে চোখগুলো খুলে আপনার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন, যত্তসব। বলেই নিজের চিপস খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। আশিক মিম এর হাত থেকে চিপসের প্যাকেট টা নিয়ে নেয়, আর একটা পিস চিপস মুখে পুরে খেতে খেতে বলে

—-মিম তোমায় ডিম বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিব। মিম বলে

—-আশিক তোমায় আমি বাশি বানিয়ে সাজেক গিয়ে বাজাবো, বলেই আশিকের কাছ থেকে চিপসের প্যাকেট টা কেড়ে নিল। আশিক আবার চিপসের প্যাকেট নিতে গেলে মিম বলে

—–লজ্জা করে না একটা মাসুম অবলা বাচ্চা মেয়ের চিপস খেতে। আরকে বার ধরলো খবর আছে হুহ। বলেই কার্টুন দেখাতে ব্যাস্ত আশিক মিমের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময় তারপর সেও ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যায়।

অপর দিকে দিহান মারিয়ার লম্বা বেনি করা চুলগুলো ধরে বেচারিকে জ্বালাচ্ছে। দিহান বলে

—-এই তুমি কি চুলে সার দাও নাকি? এতো মোটা আর ঘন কেনো তোমার চুল? মারিয়া বলে

—-একদম ঠিক ধরেছেন, আমি চুলে জৈব সার, ইউরিয়া, জিংক সালফেট, এ্যামোনিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম সব দেই। দিহান বলে

—- তাইতো বলি,আচ্ছা তোমার চুলগুলো যদি এখন কেটে দেই কেমন হয়? মারিয়া বলে

—-নাপিতদের এতো হাত খুটখুট করে আপনাকে না দেখলে জানতাম না। কথায় আছে যার বিয়ে তার হুশ নেই পাড়া-পর্শির ঘুম নেই, আপনার হয়েছে সেম,আমি একবারও বলেছি আমি চুল কাটবো কিনা। ছাড়ুন আমার চুল।

বলেই দিহানের হাত থেকে নিজের চুলগুলো ছাড়িয়ে নিল। দিহান বলে

—-আমি আবার কি করলাম, হুহ দেখে নিব তোমাকে আমি। মারিয়া তার দিকে ঘুরে বলে

—ওকে নিন এখনই দেখে নিন। বলে চোখে গুলো বারবার পলক ঝাপটাতে লাগল। দিহান বলে

—অহহহহহহ হাউ কিউট, পুরাই তেতুল গাছের সাত নাম্বার পেত্নীর মতো লাগছে তোমায়। মারিয়া বলে

—–আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম। দিহান বলে

—-আমি শিহরিত!!!! মারিয়া কিছু না বলেই অন্য দিকে তাকায়।

অন্য দিকে আধার এতটা সময় ফোন নিয়েই ব্যাস্ত ছিল হঠাৎ করে সে তার পাশের বসা মানুষটার দিকে তাকায় দেখে, আদ্রিয়ান সে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই দেখে সে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আধার তার দিকে এক ভ্রু উচু করে বলে

—-কি মিস্টার আদ্রিয়ান কি দেখেন? আদ্রিয়ান বলে

—-তুমি নিশ্চিত এই ফোন দেখে দেখে নিজের চোখ গুলোকে খেয়েছ? আধার বলে

—-আপনার মত আহাম্মক আমি আর দেখেনি, আমি যদি আমার চোখ খেতাম তাহলে আর আমার চোখগুলো দেখা যেত না। আদ্রিয়ান বলে

—-তুমি সোজা কথা বলতে পারো না তাই না? আধার বলে

—-সোজা কথার সোজা উত্তর দেই বাকা কথার ঠিক আঁকাবাঁকা উত্তর দেই বুঝতে পারছেন।

বলেই বাইরে তাকাতেই আধারের মুখ থেকে আপনাআপনি ওয়াও শব্দটা বেড়িয়ে আসে, আদ্রিয়ানও জানলার দিকে উুকি দিয়ে দেখে। পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে তাদের বাসটা শোঁ শোঁ করে দীঘিনালার দিকে এগিয়ে চলছে, তখন থেকেই প্রকৃতির অভ্যর্থনা বুঝতে পেরেছে তারা। সাপের মতন আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো সাপের মতনই ভয়ংকর। একটু অসাবধানতা কিংবা দুর্ঘটনা মুহূর্তেই খাদে ফেলে চিরতরে ঘুম পারিয়ে দেবে। যেটা নিয়ে অনেকটা ভয় কাজ করছিল সবার মনে। তবু চাপা উত্তেজনা। পরিবেশটা অনেক সুন্দর আর সাথে আছে তার প্রয়সী আর কি চাই? তাই আদ্রিয়ানের নিজের ফোন বের করে কয়েকটা পিক তুলে নিল যদিও আধারকে বুঝা যাচ্ছে না কারণ সে বাইরের দিকে মুখ করে আছে। আর আধারদের আদ্রিয়ানই এই বাসে আনিয়েছে যদিও এর জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আধার তো ব্যাস্ত প্রকৃতি দেখতে। হাঠাৎই কারো অনেক জোরে চিৎকার শুনা যায়, সেটা আর কেউ না মিম দিয়েছে। একসময় সে কার্টুন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল হাঠাৎ আশিক তাকে ডাক দেওয়াতে সে জেগে যায় সে আশিকের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আশিক ইশারা করে বাইরের দিকে তাকাতে। আর তখনই

—-ও মাই আল্লাহ আমরা সাজেক চলে আসছি ইয়াহু,,,, আশিক তো বেচারা ভয়ে লাফিয়ে উঠে। সবার নজর এখন মিমের দিকে। মিম তো নিজের মতো ছবি তুলতে ব্যাস্ত সে তার দুনিয়ায় চলে গেছে। সবাই কিছু সময় মিমের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান আধারকে বলে

—-মিম অনেক দুষ্ট তাই না? আধার বলে

—-হুমম অনেক কিন্তু মনে দিক দিয়ে ভালো। আধার আর আদ্রিয়ানকে দেখে একজন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সে আর কেউ না মৌ। মৌ এর পাশে বসেছে রাতুল আর সে নাক ডেকে মৌ এর কানের + মেজাজের ২ টারই ১৪টা বাজাচ্ছে। আদ্রিয়ান বলে

—-তোমার প্রকৃতি মেবি খুব পছন্দের, তা তুমি আগে কখনো সাজেক এসেছ? আধার বাইরের দিকে তাকিয়েই বলে

—-প্রকৃতির সৌন্দর্যের মোহে মানুষ বরাবরই নেশাগ্রস্ত। ব্যস্ততা, পড়াশোনা, হতাশা, চাপ, দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে মনের প্রশান্তি, সজীবতার জন্য ভ্রমণের বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। পায়ের নিচে মেঘ আর সবুজের চাদর বিছানো গল্প শুনেছি, ছবিতে দেখেছি অনেক। কিন্তু সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই এবার আর সেই সুযোগ হারাতে চাইনি। একবার ঢুঁ মেরে এসেই দেখি সেই ধবধবে সাদা মেঘেদের রাজ্য থেকে। আদ্রিয়ান বলে

—-বাহ বেশ ভালোই তো কথা বলতে পারো। আধার আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরে বলে

—-সব মানুষরাই কথা বলতে পারে, ইভেন পাখিরাও কথা বলে। আদ্রিয়ান বলে

—-বেশি বুঝ কেন? আধার বলে

—-তো আমার সাথে কথা বলেন কেন? আদ্রিয়ান বলে

—-একা একা বসে বোর হচ্ছিলাম, তাই। আধার কি কম চলাক সে বলে

—- ও তাহলে আপনি আশিক ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসেন আর মিমকে এখানে বসতে বলেন। আদ্রিয়ানের তো ইচ্ছে করছে আধারকে ধরে আছাড় মারতে তাও সে নিজেকে কোনন্ট্রল করে উঠে দাড়ায়। আর মিম কে ডাকতে গেলে আধার বলে

—-না থাক যেতে হবে না। আদ্রিয়ান মনে খুশি হয়ে যায় কিন্তু সে সেটা প্রকাশ না করে বলে

—-না থাক লাগবে না আমি মিম কে ডেকে দিচ্ছি। আদ্রিয়ান ভেবেছিল হয়তো আধার আবার বলবে না থাক কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সে বলে

—-ওকে। আদ্রিয়ানের এখন নিজে উপর রাগ লাগছে তারপর সে গিয়ে মিমকে এখানে আসতে বলে সেও চলে আসে। আশিক বলে

—-কিরে এখানে কেন তুই? আদ্রিয়ান বলে

—-সবই কপাল। আশিক হুহু করে হেসে দেয়। আদ্রিয়ান বলে।

—মজা লোও, লোও সমস্যা নাই আমিও নিব, আমারও দিন আসবে এইদিন দিন না।

চলবে

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছো। অনেকই বলছে গল্প নাকি প্রতিদিন দেই না এগুলা মানা যায়😒?? আমি প্রতিদিনই গল্প দেই। আর রোমজান মাস সবাই তো একটু বুঝবা!!! আমারও পড়ালেখা আছে মা-বাবা আছে তাদেরও তো একটু টাইম দিতে হবে তাই না? গল্পের জন্য পাগল হওয়া ভালো কিন্তু এতটাও না। কিছু দিন আগেও হাতের ব্যাথা নিয়ে গল্প লিখেছে, একদিন গল্প দেইনি নিশ্চয়ই কোন কারণ ছিল!? এই গল্প শেষ হলে আর ঈদের আগে কোনো গল্প লিখবো না….. কখন দিন আর কখন রাত হয় কিচ্ছু বুঝি না। যাই হোক হ্যাপি রিডিং 🙃 ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here