“নিষিদ্ধ সে”
(৩)
নির্মা আপুর দিকে আড়চোখে তাকালাম। আপু হাসছে মিটিমিটি। সাপোর্ট পেয়ে এবার তেড়ে গেলাম সায়র ভাইয়ের দিকে। এতেই ঘটলো বিপত্তি। আমি যে বিছানার শেষ মাথায় ছিলাম তা খেয়ালে ছিলো না। বিছানা থেকে পরলাম তো পরলাম সামনে সায়র ভাই দাঁড়িয়ে ছিলো তাকে সহ নিয়ে পরলাম। কপাল কপাল বারি খেয়ে ঠোঁট ছুয়ে গেলো দুজনের। নিচে পরে ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনই ঠোঁট লাগা অবস্থায় স্ট্যাচু হয়ে আছি। যখন বুঝতে পারলাম কি সিচুয়েশনে বর্তমানে আছি ছিটকে সরে এলাম দুজন দুজনকে ধাক্কা দিয়ে! ভয় নিয়ে ঠোঁট ঘষতে ঘষতে নির্মা আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি শান্ত অথচ মুখটা শক্ত করে বসে। হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। যে কারোরই এমন অবস্থায় মাথা গরম হবে! আমি হলে তো সবার সামনে বয়ফ্রেন্ডকে ডিভোর্স দিতাম! যাতে ডিভোর্সি হয়ে পরে কোন মেয়ের সাথেই রিলেশনে যেতে না পারে! সায়রি হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে। রনক ভাইয়া সেই আগের ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে। সায়র ভাই চলে গেলো গটগট করে! আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে এদের অবস্থা দেখছি।
নির্মাঃ আমি আসছি।
নির্মা আপু চলে গেলে বিছানায় বসে গেলাম। কান্না পাচ্ছে খুব নির্মা আপুর ভয়ে! যেমন চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছিলো মনে হচ্ছিলো এখুনি জান বের করে নিবে আমার।
সায়রিঃ এখানে কি একটু আগে কিছু হয়েছিলো ভাইয়া?
রনক ভাই কাধ দুটো উঁচু করে না জানার সাইন দেখিয়ে চলে গেলো। সায়রি হতভম্ব হয়ে এবার আমার দিকে তাকালো।
সায়রিঃ এখানে_____
রেগে চোখ মুখ শক্ত করে তাকালাম। ঠোঁটে এক আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে গেলো। রেগে বাথরুমে এলাম। ঠোঁট সাবান দিয়ে ইচ্ছেমতো ঘষছি আর ঐ হনুমানকে বকছি! না খেয়ে ঘুমিয়েছি সন্ধ্যা বেলায়। আন্টি, সায়রি এসে অনেকবার ডেকেছিলো। উঠিনি। সারারাত জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি এক্সকিউজ দেখিয়েছি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো। উঠে বসলাম। এই এক সমস্যা যতো জলদি ঘুমাবো ঠিক ততো জলদি মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙবে! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় চুলে চিড়ুনি করলাম। বেডে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে সায়রি। গলায় উড়না পেঁচিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। গন্তব্য না পেয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সায়র ভাইয়ের সামনে যাবো কিভাবে ভেবেই জমে যাচ্ছি! যখনই সায়র ভাইকে মনে পরছে ঠোঁট হাতের উল্টো পিঠে ঘষে নিচ্ছি। শেষ সারির সিড়িতে এসে দেখি ছাদের দরজা হাট করে খোলা। আন্টি কি আজকে দরজা বন্ধ করে ঘুমায়নি? আমি তো আরো ভয় পাচ্ছিলাম সিড়ি থেকে না আমাকে ঘুরে যেতে হয় ছাদের দরজা বন্ধ বলে। ছাদে পা রাখতে রনক ভাইয়ের কণ্ঠ ভেসে এলো কানে।
রনকঃ ঘুমাতে যা! এভাবে ফুলে ফেপে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকলে তুই আর দেখতে চার্মিং থাকবি না!
সায়রঃ সর ইয়ার! লাইফের ফার্স্ট কিস স্পয়েল হলো ঐ জঙলির জন্য! ভেবেই তো মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে। নির্মা কি পরিমাণ রেগে আছে তুই ভাবতে পারছিস? নির্মাকেই আমি এখনো কিস করিনি! আর ঐ জঙলি_____
আমায় দেখে থেমে গেলো। রেগে ফোস ফোস করতে করতে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় ছাদে থাকা একটা টবে এমনভাবে লাথি দিলো সে জায়গায় আমি থাকলে একদম গুড়াগুড়া হয়ে যেতাম। রনক ভাইয়া শান্ত ভঙ্গিতে পকেটে হাত রেখে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো।
আমিঃ রনক ভাই!
দরজার কাছে থেমে গিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমিঃ সরি ভাইয়া ঐটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছে করে___
রনকঃ আমি ভুল বুঝিনি তোমায়।
আমিঃ কিন্তু আপনি রেগে আছেন নিশ্চিত আমার উপর!
রনকঃ আমি রেগে থাকতে যাবো কেন?
আমিঃ কারন আমি ভুলে ভুলে সায়র ভাইকে কি____
রনকঃ কৈফিয়ত দিতে হবে না। অন্যের বিষয়ে আমার আগ্রহ নেই!
শান্ত কণ্ঠে তিরস্কারে আরো লজ্জা লাগলো। চুপ করে আছি। রনক ভাইয়া চলে গেলো। এমন হবে জানলে ঝগড়াই করতাম না সায়র ভাইয়ের সাথে। রাতের আকাশে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকাতে লাগলাম। ফোন চেক করে দেখি আব্বু আম্মুর অনেকগুলো কল এসে বসে আছে। জোরাজোরি করে রেগে এখানে এসেছ। আব্বু অবশ্য সহমত কিন্তু আম্মু ছিলো না। সাত সাতদিন নাকি অনেক ডিফারেন্স! পিছিয়ে যাবো পড়ালেখা থেকে!
.
.
.
সায়রিঃ ঐ মেয়ে উঠ! ঐ ঐ উঠ না! নিষ্ঠার বাচ্চা! ঐ উঠ!
কাধ থেকে সায়রির হাত সরিয়ে পাশ ফিরে ঘুমালাম। সায়রি আরো ধাক্কিয়ে আমাকে ডাকতে লাগলো। না পেরে চোখ মেলে তাকালাম। এবার চোখ টেনে ধরলো আমার।
সায়রিঃ এতো ঘুমায় কেউ? কখন ঘুমিয়েছিস জানিস তুই? সেই সন্ধ্যায়! আর এখনো ঘুমাচ্ছিস। [কোমড়ে খোচা দিয়ে] আগে তো শুধু খেতি। এখন ঘুমও এড করে নিয়েছিস রুটিনে?
আমিঃ সর তো ঘুম হয়নি গতকাল!
সায়রিঃ ও মোর খোদা! কি বলে এই মেয়ে! ঘুম হয় নাই তোর? তোর হয় নাই?
আমিঃ ঢং বাদ দিয়ে আমার উপর থেকে সর।
সায়রিঃ [চোখ টেনে ধরে] আবার ঘুমাতে যাচ্ছিস! তোর আব্বু আম্মু কল করে তোর ফোনের ভাইব্রেশনে কান খতম করে দিলো উঠ!
উঠে গেছি না পেরে। চুল নিচু করে খোপা করে ফোন হাতে গলায় উড়না পেচানি দিয়ে বারান্দায় এলাম। রিং হচ্ছে ফোন। বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফোন ধরার আশায় নেতিয়ে আছি। সামনে কিছু চুল এসে বারবার থুতনি ছুয়ে বিরক্ত করছে। তবু নাক মুখ কুচকে চোখ বন্ধ করে আছি। অনেকক্ষন রিং হবার পর ফোন তুললো আব্বু।
আব্বুঃ হ্যালো মা, কেমন আছো? গতকাল ফোন তুলোনি যে? সব ঠিকঠাক ঐদিক?
আমিঃ হুম! তোমাদের অবস্থা? নিভৃত ভাইয়া কি বাসায় আছে?
আব্বুঃ ভালোই! না নেই সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে। কি করো?
আমিঃ মাত্র উঠেছি আব্বু। আম্মু____
বলতে বলতে আম্মুর কণ্ঠ ভেসে এলো। “ঐ মেয়ে ফোন করেছে না? দেখি দাও ফোনটা দাও! একবার আসুক বাসায়। পিটিয়ে চামড়া তুলে ফেলবো। ফোন না তুলে কিভাবে দেখবো! দেখি!” মনে হলো আব্বুর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। আব্বু কি কি জানি বলছে।
আম্মুঃ তুই একবার বাসায় আয়! থাপড়ে তোর আমি ব্যাবস্থা করবো। জন্মের_____
ফোন কেটে দিলাম। সকালটা আবারো আম্মু বকায় শুরু হলো। অলস ভঙ্গিতে চোখ খুলে নিচে তাকিয়ে দেখি সায়র ভাই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরক্তি দেখিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। ভ্রু কুচকে তাকালাম। একটু পর সায়র ভাইয়ের এমন গট গট করে সামনে থেকে চলে যাওয়ায় রনক ভাই উপরে তাকালো। বারান্দা ছেড়ে এসে গেলাম।
.
.
.
আপেল খেতে খেতে সোফায় বসে থাকা নির্মা আপু আর সায়র ভাইয়ার কর্মকান্ড দেখছি। সায়র ভাই বারবার ইশারা করে কান একহাতে ধরে সরি বলছে। নির্মা আপু দেখেও না দেখার ভান করছে। একটু চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকাতে শান্ত ভঙ্গিতে রনক ভাইকে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দেখলাম। মানুষটা সব সময়ই কেমন শান্ত ভঙ্গি নিয়ে থাকে। হাসি এসে গেলো। অলস মানুষ! রনক ভাই আমাকে তাকাতে চোখ গোল গোল করে তাকালো। হেসে চোখ সরিয়ে দেখি সায়র ভাই কটমট করে তাকাচ্ছে আমার দিকে। কিছুক্ষন পর উনি জায়গা বদল করে আমার পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে কানে ফিসফিস করে গেলো।
সায়রঃ এতো খুশি হওয়ার কারন নেই! নির্মার সাথে আমি সব ঠিক করে নিবো দেখিস! তুই ছোটবেলার রিভেঞ্জ নিচ্ছিস তো? আমিও নিবো আমার সময়ে।
তার যাওয়ার দিকে আক্কেলগুড়ুম হয়ে চেয়ে আছি। কি বলে গেলো? আমি এদের ভাঙ্গনে হাসছি? হাহ! যে যেমন সে তেমনই চিন্তা ভাবনা করে! নির্মা আপুকে একা পেয়ে এগিয়ে গেলাম। আমাকে নির্মা আপুর দিকে এগোতে দেখে সায়র ভাই রেগে কটমট করে তাকাচ্ছে। চোখ দিয়েই হয়তো ওয়ার্নিং দিচ্ছে যেনো উল্টা পাল্টা কিছু না করি। আন্টি, আঙ্কেলরা আছে বলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে না। আমিও যা ভাবছে তাই সত্যি করতে যাচ্ছি বোঝাতে পৈশাচিক হাসি দিলাম তার উদ্দেশ্যে। এবার পুরো মুখটাই বিকৃত করে ফেললো। হাসতে হাসতে নির্মা আপুর কাছে এগিয়ে গেলাম।
আমিঃ নির্মা আপু!
আপু আমার দিকে তাকালো। চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছি না আমার সাথে রেগে আছে নাকি স্বাভাবিক। কেমন জানি চেহেরা গোমট গোমট ভাব।
নির্মাঃ কিছু বলবে?
আমিঃ [ঠোঁটে হাসি নিয়ে] আপু একটু ঐদিকে সরে কথা বলি?
আপু মাথা নেড়ে সায় দিলো। সিড়ির কাছে নির্মা আপু আর আমি বসে আছি। লম্বা দম টেনে আপুর দিকে তাকালাম।
আমিঃ আপু সরি। আমি ভাবি নাই ঐরকম কিছু হয়ে যাবে। সরি প্লিজ আমার জন্য সায়র ভাইয়ার উপর রেগে থেকো না। আমি বুঝি নাই এক্সিডেন্টলি_____
নির্মাঃ [হালকা হেসে] একই কথা বারবার বলতে হবে না। আমি ঐটার জন্য রেগে নেই।
আমিঃ সায়র ভাইয়ার সরি এক্সেপ্ট করে নাও আপু। [মাথা নিচু করেই] আমি কথা ঘুরিয়ে বলতে গেলে কথাটা বলাই হয় না। তাই সরাসরি বলছি রাগ লাগছে? রাগ লাগলে আমার উপর ঝারো। হেজিটেট করছো কেন? আমি থাকলে তিন চারটা লাগিয়ে দিতাম।
আপু হেসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আপুর একশনের জন্য চোখ বন্ধ করে নিলাম।
নির্মাঃ সত্যি বলতে আমার জেলাস লেগেছে খুব তোমার প্রতি। আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে অনেক। পাতানো বোন হবা?
আমিঃ [নাক মুখ কুচকে] পাতানো বোন?
নির্মাঃ [ভেবাচেকা খেয়ে] কেন আমাকে পছন্দ না তোমার?
আমিঃ তাই বলে পাতানো বোন? তোমাকে তো সোল সিস্টার বানাবো! ব্লাড কানেকশন না থাকলেও সোল কানেকশন থাকবে। হিহিহিহি।
আপু আমার মাথায় মেরে নিজেও হাসতে লাগলো। অনেকক্ষন গল্প করলাম। আজকে নাকি ঘুরতে যাবো সবাই।
আমিঃ [উঠে দাঁড়িয়ে] সায়র ভাইয়ের সরি গ্রান্টেড করবা না আপু?
নির্মাঃ [আমার গাল টেনে] তোমার প্রথম আবদার অবশ্যই গ্রান্টেড করবো।
চলবে_____🖤
@এ্যাগ্নেস মার্টেল